ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

কেমন আছে ‘পাখিগ্রামের’ পাখিরা?

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

প্রতিনিয়ত গাছ কাটার ফলে ঝিনাইদহের “পাখিগ্রাম” হিসেবে পরিচিত শৈলকুপার আশুরহাটে বসবাস হাজারো শামখোল পাখি আবাসস্থল হারাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আধারে পাখি নিধন করার পাশাপাশি তাদের উৎপাত করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থলের চরম সংকটে পড়তে পারে এই পরিযায়ী পাখির দল। সেই সাথে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই পাখিদের অভয়ারণ্য।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসন ‘অতিথি পাখি’ রক্ষার নানা প্রতিশ্রুতি দলের তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলো সম্ভব হয়নি। আশুরহাট গ্রামের বাসিন্দা তাছিরুল ইসলাম জানান, ২০০৭ সালের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে এই গ্রামে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। ২০১৩ সাল থেকে পাখির দল স্থায়ীভাবে আশুরহাট গ্রামে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে হাজার হাজার শামখোল পাখি। পাখিদের এই হঠাৎ আগমনে গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্রের মালিকানা ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। সেই থেকে আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লোকমুখে পাখিদের এই কলরবমুখর পরিবেশের কথা ছড়িয়ে পড়লে দূরদূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমি মানুষ গ্রামটিতে ভিড় জমাতে থাকেন। পাখি দেখাকে কেন্দ্র করে আশুরহাট গ্রামে রাতারাতি খাবারের দোকান, সাইকেল ষ্ট্যন্ড ও মেলার আদলে বাজার বসতে থাকে।

২০১৩ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উপযুক্ত আবহাওয়া, খাবারের জোগান ও বসবাসের জন্য ব্যাপক গাছপালা থাকায় পাখিগুলো আশুরহাট গ্রামেই নিজেদের আস্থার জায়গা করে নেয়। গ্রামবাসী আব্দুর রাজ্জাক জানান, আষাঢ় থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শামখোল পাখি সেখানেই অবস্থান করে। এসময় তারা বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। বাচ্চা ফুটলে আহারের সন্ধানে পাখির দল আশুরহাট গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন বিল, বাঁওড় ও জলাশয়ে চলে যায়। সন্ধ্যা হলে আবারো নীড়ে ফিরে আসে। সরজমিন দেখা গেছে শামুকখোল পাখি ছাড়াও গ্রামটিতে পানকৌড়ি, বক, সারস, ঘুঘু, শালিক, টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির পাখির সহাবস্থান দেখা যায়।

গ্রামের বাসিন্দা সফর আলী জানান, গাছগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় প্রায় গাছের মালিক গাছ বিক্রি করেন। এতে আশ্রয় ও আবাসস্থল হারায় পাখি। তিনি বলেন, এভাবে গাছ কাটার ফলে পাখিদের আবাসন সংকটে পাখি শূন্য হয়ে পড়তে পারে গ্রামটি। শৈলকুপা উপজেলা বন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন,‘গাছ কাটার কথা আমি শুনেছি, এভাবে গাছ কাটলে পাখির অভয়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, জেলার একমাত্র পাখিগ্রাম হিসেবে অবশ্যই পাখিদের আবাসস্থল সু-নিশ্চিত করতে এবং পাখি অভয়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা গাছ কাটছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছি। ইতোমধ্যে পাখি রক্ষায় সেখানে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কেমন আছে ‘পাখিগ্রামের’ পাখিরা?

আপলোড টাইম : ০৪:৩৬:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিনিয়ত গাছ কাটার ফলে ঝিনাইদহের “পাখিগ্রাম” হিসেবে পরিচিত শৈলকুপার আশুরহাটে বসবাস হাজারো শামখোল পাখি আবাসস্থল হারাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে রাতের আধারে পাখি নিধন করার পাশাপাশি তাদের উৎপাত করা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থলের চরম সংকটে পড়তে পারে এই পরিযায়ী পাখির দল। সেই সাথে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র এই পাখিদের অভয়ারণ্য।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর শৈলকুপা উপজেলা প্রশাসন ‘অতিথি পাখি’ রক্ষার নানা প্রতিশ্রুতি দলের তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলো সম্ভব হয়নি। আশুরহাট গ্রামের বাসিন্দা তাছিরুল ইসলাম জানান, ২০০৭ সালের দিকে ঝাঁকে ঝাঁকে এই গ্রামে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করে। ২০১৩ সাল থেকে পাখির দল স্থায়ীভাবে আশুরহাট গ্রামে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে হাজার হাজার শামখোল পাখি। পাখিদের এই হঠাৎ আগমনে গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্রের মালিকানা ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। সেই থেকে আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। লোকমুখে পাখিদের এই কলরবমুখর পরিবেশের কথা ছড়িয়ে পড়লে দূরদূরান্ত থেকে পাখিপ্রেমি মানুষ গ্রামটিতে ভিড় জমাতে থাকেন। পাখি দেখাকে কেন্দ্র করে আশুরহাট গ্রামে রাতারাতি খাবারের দোকান, সাইকেল ষ্ট্যন্ড ও মেলার আদলে বাজার বসতে থাকে।

২০১৩ সালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রামটি পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উপযুক্ত আবহাওয়া, খাবারের জোগান ও বসবাসের জন্য ব্যাপক গাছপালা থাকায় পাখিগুলো আশুরহাট গ্রামেই নিজেদের আস্থার জায়গা করে নেয়। গ্রামবাসী আব্দুর রাজ্জাক জানান, আষাঢ় থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শামখোল পাখি সেখানেই অবস্থান করে। এসময় তারা বাসায় ডিম দিতে শুরু করে। বাচ্চা ফুটলে আহারের সন্ধানে পাখির দল আশুরহাট গ্রাম ছেড়ে বিভিন্ন বিল, বাঁওড় ও জলাশয়ে চলে যায়। সন্ধ্যা হলে আবারো নীড়ে ফিরে আসে। সরজমিন দেখা গেছে শামুকখোল পাখি ছাড়াও গ্রামটিতে পানকৌড়ি, বক, সারস, ঘুঘু, শালিক, টিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির পাখির সহাবস্থান দেখা যায়।

গ্রামের বাসিন্দা সফর আলী জানান, গাছগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হওয়ায় প্রায় গাছের মালিক গাছ বিক্রি করেন। এতে আশ্রয় ও আবাসস্থল হারায় পাখি। তিনি বলেন, এভাবে গাছ কাটার ফলে পাখিদের আবাসন সংকটে পাখি শূন্য হয়ে পড়তে পারে গ্রামটি। শৈলকুপা উপজেলা বন কর্মকর্তা মোখলেচুর রহমান বলেন,‘গাছ কাটার কথা আমি শুনেছি, এভাবে গাছ কাটলে পাখির অভয়ারণ্য হুমকির মধ্যে পড়বে। এ বিষয়ে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, জেলার একমাত্র পাখিগ্রাম হিসেবে অবশ্যই পাখিদের আবাসস্থল সু-নিশ্চিত করতে এবং পাখি অভয়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা গাছ কাটছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করছি। ইতোমধ্যে পাখি রক্ষায় সেখানে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।