ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

কৃষকদের চাষের জমিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৫৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) কর্তৃক তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার প্রতিবাদে চাষের জমিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরস্থ বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে হায়দারপুর ও জাফরপুর গ্রামের মাঠে নিজেদের জমির সামনে কৃষকেরা এ মানববন্ধন করেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের মাঝখানে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ রোডে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর। ওখানে বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কৃষকদের দাবি, জাফরপুর ও হায়দারপুরের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজার যে জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা তিন ফসলি জমি। এসব জমিতে ১২ মাসে ৩টি ফসল হয় বলেও দাবি কৃষকদের। তাঁরা এ জমি অধিগ্রহণের জন্য দিতে রাজি নয়।

মানববন্ধনে আসা কৃষক রজব আলী বলেন, ‘জাফরপুর ও হায়দারপুরের গ্রামের মানুষেরা চাষাবাদ ও কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এ এলাকায় ধান, ভুট্টা, পান, ডাল ফসল, আলু, কপি এবং খেজুর গাছের রস উৎপাদন হয়, যা রাজধানীসহ সারা দেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। ৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজায় যে সকল চাষযোগ্য জমি রয়েছে, সেখানে ১৪ মাসে ৪ ফসল উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। জমি দিয়ে দিলে আমরা খাব কী।’

মানববন্ধনে আসা কৃষকেরা বলেন, ‘৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য বসত-বাড়িসহ প্রায় ৩০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হবে শোনা যাচ্ছে। আমরা আমাদের কৃষি জমি হারাতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন দেশের উন্নয়ন করতে যেয়ে ১ ইঞ্চিও কৃষি জমি নষ্ট করা হবে না, কোনো কৃষি জমিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে না। আমরা কোনো মূল্যেই আমাদের কৃষি জমি দিতে চাই না।’ এসময় কৃষকদের বিক্ষোভ মিছিলও করতে দেখা যায়। কৃষক-কৃষাণীরা বলেন, ‘আমাদের জমি নিয়ে নেওয়া চেষ্টা করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবো। কোনোভাবেই আমাদের থেকে জমি নিতে দেব না।’

কৃষক রবিউল মণ্ডল, সোহেল মণ্ডল, হামিদুল মণ্ডল ও মাজেদ আলী বলেন, বিজিবি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২৭৫ বিঘা ও হায়দারপুর মৌজায় ৭৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে আগেই। জেলা স্টেডিয়ামে নির্মাণের জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রীড সাব-স্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২০ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক বন বিভাগ অফিস ও নার্সারি প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ব্রাক ও গণসাহায্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা। সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামবাসীর ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর খাল খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রায় ৩৫০ বিঘা ফসলি জমিতে খাল খনন করা হয়েছে। ট্রেনিং সেন্টার খোলার নামে বর্তমানে বিজিবি বসত-বাড়িসহ প্রায় ৩০০ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যা বাস্তবায়ন হলে জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামে কৃষি জমি বলে কিছুই থাকবে না। আমরা গ্রামবাসীরা কোনোভাবেই কৃষি জমি আর দিবো না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কৃষকদের চাষের জমিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

আপলোড টাইম : ০৮:৫৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) কর্তৃক তিন ফসলি জমি অধিগ্রহণ করার প্রতিবাদে চাষের জমিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জাফরপুরস্থ বিজিবি ক্যাম্পের পিছনে হায়দারপুর ও জাফরপুর গ্রামের মাঠে নিজেদের জমির সামনে কৃষকেরা এ মানববন্ধন করেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামের মাঝখানে চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ রোডে চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর। ওখানে বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কৃষকদের দাবি, জাফরপুর ও হায়দারপুরের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজার যে জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারণ করা হচ্ছে, তা তিন ফসলি জমি। এসব জমিতে ১২ মাসে ৩টি ফসল হয় বলেও দাবি কৃষকদের। তাঁরা এ জমি অধিগ্রহণের জন্য দিতে রাজি নয়।

মানববন্ধনে আসা কৃষক রজব আলী বলেন, ‘জাফরপুর ও হায়দারপুরের গ্রামের মানুষেরা চাষাবাদ ও কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এ এলাকায় ধান, ভুট্টা, পান, ডাল ফসল, আলু, কপি এবং খেজুর গাছের রস উৎপাদন হয়, যা রাজধানীসহ সারা দেশে রপ্তানী হয়ে থাকে। ৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজায় যে সকল চাষযোগ্য জমি রয়েছে, সেখানে ১৪ মাসে ৪ ফসল উৎপন্ন করা হয়ে থাকে। জমি দিয়ে দিলে আমরা খাব কী।’

মানববন্ধনে আসা কৃষকেরা বলেন, ‘৩৮ ও ৩৯ নম্বর মৌজায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে ট্রেনিং সেন্টার করার জন্য বসত-বাড়িসহ প্রায় ৩০০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হবে শোনা যাচ্ছে। আমরা আমাদের কৃষি জমি হারাতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছেন দেশের উন্নয়ন করতে যেয়ে ১ ইঞ্চিও কৃষি জমি নষ্ট করা হবে না, কোনো কৃষি জমিতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে না। আমরা কোনো মূল্যেই আমাদের কৃষি জমি দিতে চাই না।’ এসময় কৃষকদের বিক্ষোভ মিছিলও করতে দেখা যায়। কৃষক-কৃষাণীরা বলেন, ‘আমাদের জমি নিয়ে নেওয়া চেষ্টা করা হলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবো। কোনোভাবেই আমাদের থেকে জমি নিতে দেব না।’

কৃষক রবিউল মণ্ডল, সোহেল মণ্ডল, হামিদুল মণ্ডল ও মাজেদ আলী বলেন, বিজিবি ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২৭৫ বিঘা ও হায়দারপুর মৌজায় ৭৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে আগেই। জেলা স্টেডিয়ামে নির্মাণের জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রীড সাব-স্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ২০ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। সামাজিক বন বিভাগ অফিস ও নার্সারি প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ১৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ব্রাক ও গণসাহায্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য জাফরপুর মৌজায় ৫ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা। সিএস, এসএ, আরএস রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামবাসীর ব্যক্তি মালিকানা জমির ওপর খাল খননের নামে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রায় ৩৫০ বিঘা ফসলি জমিতে খাল খনন করা হয়েছে। ট্রেনিং সেন্টার খোলার নামে বর্তমানে বিজিবি বসত-বাড়িসহ প্রায় ৩০০ বিঘা কৃষি জমি অধিগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যা বাস্তবায়ন হলে জাফরপুর ও হায়দারপুর গ্রামে কৃষি জমি বলে কিছুই থাকবে না। আমরা গ্রামবাসীরা কোনোভাবেই কৃষি জমি আর দিবো না।