ঈদের আগে পোশাক খাতে শ্রমিক বিক্ষোভের শঙ্কা
- আপলোড টাইম : ১০:০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
- / ৬৪ বার পড়া হয়েছে
প্রতি বছর ঈদের আগে দেশের তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া রাখা, শুকি ছাঁটাই, হুটহাট কারখানা বন্ধ করে দেওয়াসহ নানা ধরনের নিপীড়নকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। এরই মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক বিক্ষোভ হয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার আগেই তৈরি পোশাকসহ সব খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করতে মালিকপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, মালিকপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলেও আশ্বস্ত করেছে। কিন্তু এ ঘোষণা আসার দিনই গাজীপুরে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। গতকাল দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে টিআরজেড পোশাক কারখানা লিমিটেডের দুই শতাধিক শ্রমিক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন জানান, টিআরজেড পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত ফেব্রুয়ারির বেতনের ৭৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করলেও পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। তবে শ্রমিকের বেতন ২৫ ভাগ বকেয়া থাকলেও স্টাফদের বেতন ৪ মাসের বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক ও স্টাফ মিলে একসঙ্গে আন্দোলন করছে। এদিকে, বিগত বছরগুলোতেও ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটেছে। এ বছরও ঈদুল ফিতরের আগে দেশের অন্তত ৪১৬টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা ও বোনাস হাতে পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে তারা পাওনা বুঝে না পেলে এবারও চরম শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এতে কারখানা অধ্যুষিত শিল্প এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাকশিল্প কারখানা। যার অর্ধেকের বেশি বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) ও বিকেএমইএ (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন)’র সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানা। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রয়াদেশ কমে যাওয়া, গ্যাস সংকটসহ অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক নানা কারণে চাপে আছে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প। যার প্রভাব পড়ছে শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধে। মার্চ মাস শেষ হতে চললেও এখনো ফেব্রুয়ারির বেতন দিতে পারেনি অনেক কারখানা। তার ওপর যুক্ত হচ্ছে ঈদ বোনাস। সংকট আছে অন্য খাতসমূহের কারখানায়ও। শিল্প পুলিশের হিসাবে, দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরে ১৩২টি কারখানা রয়েছে। তিন হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ।
শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠের তিন পাশে শিল্পাঞ্চল। এসব পথ ধরেই ঈদে গ্রামে ফিরবে ঘরমুখো মানুষ। পোশাক কারখানার মালিকরা ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ না করলে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে। এতে সড়ক অবরোধসহ সহিংস পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এসময়ে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে সড়কে দুর্ভোগে পড়তে হবে ঈদযাত্রীদের। জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাকশিল্পে সংকট অনেক বেশি। নানা সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে কারখানাগুলো। ব্যাংকের সঙ্গে নানা রকম সংকট, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অর্ডার কম, রপ্তানি কম- এ ধরনের প্রতিকূলতাও রয়েছে। অন্যদিকে সবকিছুর দাম বেড়েছে। গ্যাসের দাম বেড়েছে, অথচ কারখানাগুলোতে ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। এ কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি করা যায় না। এতে নির্ধারিত সময়ে টাকাও হাতে আসে না। তখন বেতন-বোনাস দিতে সমস্যা হয়। তিনি বলেন, নগদ প্রণোদনা বাবদ সরকার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ঈদের আগে এই টাকা পেলে সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
২০২৪ সালকে দেশের পোশাকশিল্পের জন্য আরও কঠিন বছর উল্লেখ করে বিজিএমইএ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব বলেন, বর্তমান অবস্থায় ভালো কারখানাগুলোর মালিকেরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানা মালিকরা কখনো বেতন-বোনাস বকেয়া রাখতে চান না। সবাই চান ঈদের আগে অন্তত শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করে তাদের ঈদের ছুটি দিতে। বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘ঈদের আগে কোনো পোশাক মালিক বেতন-ভাতা দিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প কোনো উপায় বের করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। বিশৃঙ্খলা হতে পারে- গোয়েন্দা তথ্য পর্যালোচনা করে সম্ভাব্য এ রকম কারখানা শনাক্ত করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মালিক, পুলিশ প্রশাসন- কার কী করণীয় সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে।’
গাজীপুরে বিক্ষোভ:
গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে টিআরজেড পোশাক কারখানা লিমিটেডের দুই শতাধিক শ্রমিক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে। গতকাল বুধবার দুপুরে টঙ্গী কলকারখানা অধিদফতরের সামনে শ্রমিকরা এ আন্দোলন করে। গাজীপুর শিল্প- পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।