ইপেপার । আজ শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ইউএনওর নাম ভাঙ্গিয়ে বালি বিক্রির মহোৎসব!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের পর পাড় না বেধে বালু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পুকুরের পাশে অবস্থিত বসত ঘর বাড়ি ও দোকানপাট।

জানা যায়, সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (আইপিসিপি) আওতায় এবং এলজিইডির বাস্তবায়নে ২০২১ সালে ৩৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ১৭৭ টাকা ব্যয়ে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খনন ও ২টি সিড়ি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মের্সাস বাদশা ট্রেডার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুকুর পুন:খনন হলেও সিড়ির কাজ চলছে ধীর গতিতে। কাজ সমাপ্তির সময় ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি। কিন্তু সময়কাল শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি সিড়ির কাজও। অপর দিকে, পুকুরের পাড় না বেধে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)-এর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটায় গাড়ি প্রতি ২ হাজার ৫ শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বালু বিক্রি করছেন এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের পর পুকুরের পাড় না বাধায় চারিদিকে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আশপাশের ঘরবাড়ি ও মাদ্রাসার দোকানপাট।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘যখন পুকুর খনন করা হয়, তখন একটি চক্র এখান থেকে বালু বিক্রি করার চেষ্টা করে। তখন আমরা পুকুর পাড়ের লোকজন ইউএনও মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। তখন ইউএনও সাহেব বলেছিলেন, বালু বিক্রি করা হবে না। কিন্তু ঠিকাদাররা বিভিন্ন ইটভাটায় বালি বিক্রি করছে। আমরা বাঁধা দিলে, তারা বলছে ইউএনও সাহেব নাকি বালি বিক্রি করতে বলেছে। যেভাবে বালি তুলছে আমাদের ঘর বাড়ি যেকোনো মুহূর্তে পুকুরে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমরা গরীব মানুষ। এখানে আমরা বসবাস করি। আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে আমরা কীভাবে থাকবো এখানে?’

বালু বহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টরচালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘বাকা সড়কের কাজের জন্য এখান থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছি। আমাকে এখানে বালু নিতে পাঠিয়েছে পরশ নামের একজন ঠিকাদার। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। আমাকে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা করে দেন তিনি।’

মের্সাস বাদশা ট্রেডার্সের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি পরশের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘এই পুকুরটা খনন করা হচ্ছে এবং খননের বালু উপজেলা নির্বাহী অফিসার  (ইউএনও) বিক্রি করেছেন। বালি বিভিন্ন রাস্তার কাজে দেওয়া হচ্ছে।’

মাধবপুর মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শামসুদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার পুকুর অনেক আগে খনন হয়েছে। হঠাৎ দেখি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুকুর থেকে বালি তুলে শিক্ষক আ. হান্নানের জমিতে রাখছে। আমি তাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন ইউএনও মহোদয় নাকি বালি বিক্রি করে দিয়েছে। এই কথা শোনামাত্র আমরা ইউএনও সাহেবের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।’

জীবননগর উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. তাওহীদ আহম্মেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাধবপুর মাদ্রাসা পুন:খননের বিষয় আমি জানি, তবে বালি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে বলতে পারবো।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের যে বালি ছিল, সেগুলো সরকারি নিয়মনুযায়ী বিক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া এই বালি সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য বিশেষ করে রাস্তার কাজে দেওয়া হয়েছে। আর যদি কেউ ইটভাটায় এই বালি  বিক্রি করে থাকেন, তাহলে সেটা ভুল করেছেন। এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ইউএনওর নাম ভাঙ্গিয়ে বালি বিক্রির মহোৎসব!

আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ জুলাই ২০২২

জীবননগর অফিস: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের পর পাড় না বেধে বালু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পুকুরের পাশে অবস্থিত বসত ঘর বাড়ি ও দোকানপাট।

জানা যায়, সারাদেশে পুকুর, খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প (আইপিসিপি) আওতায় এবং এলজিইডির বাস্তবায়নে ২০২১ সালে ৩৬ লক্ষ ৭৬ হাজার ১৭৭ টাকা ব্যয়ে জীবননগর উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খনন ও ২টি সিড়ি নির্মাণের দায়িত্ব পায় মের্সাস বাদশা ট্রেডার্স নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পুকুর পুন:খনন হলেও সিড়ির কাজ চলছে ধীর গতিতে। কাজ সমাপ্তির সময় ছিল চলতি বছরের ২৮ ফেব্রয়ারি। কিন্তু সময়কাল শেষ হলেও এখনও পর্যন্ত শেষ হয়নি সিড়ির কাজও। অপর দিকে, পুকুরের পাড় না বেধে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)-এর নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটায় গাড়ি প্রতি ২ হাজার ৫ শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকায় বালু বিক্রি করছেন এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের পর পুকুরের পাড় না বাধায় চারিদিকে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আশপাশের ঘরবাড়ি ও মাদ্রাসার দোকানপাট।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘যখন পুকুর খনন করা হয়, তখন একটি চক্র এখান থেকে বালু বিক্রি করার চেষ্টা করে। তখন আমরা পুকুর পাড়ের লোকজন ইউএনও মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। তখন ইউএনও সাহেব বলেছিলেন, বালু বিক্রি করা হবে না। কিন্তু ঠিকাদাররা বিভিন্ন ইটভাটায় বালি বিক্রি করছে। আমরা বাঁধা দিলে, তারা বলছে ইউএনও সাহেব নাকি বালি বিক্রি করতে বলেছে। যেভাবে বালি তুলছে আমাদের ঘর বাড়ি যেকোনো মুহূর্তে পুকুরে বিলিন হয়ে যেতে পারে। আমরা গরীব মানুষ। এখানে আমরা বসবাস করি। আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে আমরা কীভাবে থাকবো এখানে?’

বালু বহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টরচালক সবুজ মিয়া বলেন, ‘বাকা সড়কের কাজের জন্য এখান থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছি। আমাকে এখানে বালু নিতে পাঠিয়েছে পরশ নামের একজন ঠিকাদার। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গায়। আমাকে প্রতিদিন তিন হাজার টাকা করে দেন তিনি।’

মের্সাস বাদশা ট্রেডার্সের নিয়োগকৃত প্রতিনিধি পরশের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘এই পুকুরটা খনন করা হচ্ছে এবং খননের বালু উপজেলা নির্বাহী অফিসার  (ইউএনও) বিক্রি করেছেন। বালি বিভিন্ন রাস্তার কাজে দেওয়া হচ্ছে।’

মাধবপুর মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শামসুদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসার পুকুর অনেক আগে খনন হয়েছে। হঠাৎ দেখি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুকুর থেকে বালি তুলে শিক্ষক আ. হান্নানের জমিতে রাখছে। আমি তাদের সাথে কথা বললে তারা বলেন ইউএনও মহোদয় নাকি বালি বিক্রি করে দিয়েছে। এই কথা শোনামাত্র আমরা ইউএনও সাহেবের কাছে বিষয়টি জানিয়েছি।’

জীবননগর উপজেলার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. তাওহীদ আহম্মেদের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাধবপুর মাদ্রাসা পুন:খননের বিষয় আমি জানি, তবে বালি বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বিষয়টি তদন্ত করে বলতে পারবো।’

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘মাধবপুর মাদ্রাসার পুকুর পুন:খননের যে বালি ছিল, সেগুলো সরকারি নিয়মনুযায়ী বিক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া এই বালি সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য বিশেষ করে রাস্তার কাজে দেওয়া হয়েছে। আর যদি কেউ ইটভাটায় এই বালি  বিক্রি করে থাকেন, তাহলে সেটা ভুল করেছেন। এ ধরনের কাজ যদি কেউ করে থাকেন তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’