ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গায় বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁঝ!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / ৩০ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:

আলমডাঙ্গায় পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আগামী এক মাস বাজারে পেঁয়াজের এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী মার্চের শেষে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে, তখন হয়ত দাম কমতে পারে। এতে করে নিত্যপণ্য নিয়ে ভোক্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। নিত্যপণ্যের দাম জানতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এও ফোন করছেন ভোক্তারা। ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিনে জিনিসপত্রের দাম কেন কমছে না, জানতে চেয়ে শতাধিক ফোন পেয়েছে তারা। যারা ফোন করেছেন, তাঁদের অধিকাংশের প্রশ্ন ছিল, সবজির দাম কবে কমবে? রোজায় পণ্যের দাম কমবে নাকি বাড়বে?

আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে তাঁদের বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা। গতকাল শুক্রবার তা পাইকারি বাজারেই বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আর গত সপ্তাহে শহরের বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।

পেঁয়াজচাষী জেলার খাসকররা গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে অনেকেই চালান তুলতে পারেননি। কয়েক মাস আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ তাঁরা ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আগামী মার্চের শেষের দিকে বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম সহনীয় হয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।

আব্দুল হাকিম আরও বলেন, এ বছর কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই জমি থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলেছেন। ফলে এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। বর্তমানে তাদের ৯০ শতাংশ পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ তাঁদের হাতে পেঁয়াজের মজুদ নেই।

অন্য আরেক পেঁয়াজ চাষি জানান, পেঁয়াজ আবাদের ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি। কীটনাশক থেকে শুরু করে বীজের দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক চড়া। বর্তমানে ৪০০-৪৫০ টাকার নিচে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুন চাষে এগিয়ে আসবে না। গত সপ্তাহের খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা। যা গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণের কারণে প্রসেস লস হয় ২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রসেস লস হয় ৮-১০ শতাংশ। দেশে বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন। বাজার যাতে অস্বাভাবিক না বাড়ে, সে জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে।

এ বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলেন, পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু ঠিক আগের জায়গায় আছে। সামনে রমজান মাস আসছে, দিনে দিনে এভাবে বাজারে দাম বাড়তে থাকলে ক্রয় ক্ষমতা মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এখনই সরকারে প্রয়োজন এ বিষয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গায় বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁঝ!

আপলোড টাইম : ০৯:৪৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা:

আলমডাঙ্গায় পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি বেড়েছে ৭ টাকা। আগামী এক মাস বাজারে পেঁয়াজের এই সংকট থাকবে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। তাঁদের বক্তব্য, আগামী মার্চের শেষে বাজারে হালি পেঁয়াজ আসবে, তখন হয়ত দাম কমতে পারে। এতে করে নিত্যপণ্য নিয়ে ভোক্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন। নিত্যপণ্যের দাম জানতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এও ফোন করছেন ভোক্তারা। ৯৯৯ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিনে জিনিসপত্রের দাম কেন কমছে না, জানতে চেয়ে শতাধিক ফোন পেয়েছে তারা। যারা ফোন করেছেন, তাঁদের অধিকাংশের প্রশ্ন ছিল, সবজির দাম কবে কমবে? রোজায় পণ্যের দাম কমবে নাকি বাড়বে?

আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে তাঁদের বাজারে মানভেদে প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল ৩৬-৩৮ টাকা। গতকাল শুক্রবার তা পাইকারি বাজারেই বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকায়। অর্থাৎ পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। আর গত সপ্তাহে শহরের বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৫-৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা।

পেঁয়াজচাষী জেলার খাসকররা গ্রামের আবদুল হাকিম বলেন, এ বছর পেঁয়াজ আবাদ করে অনেকেই চালান তুলতে পারেননি। কয়েক মাস আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ তাঁরা ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেছেন। বর্তমানে এই পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। আগামী মার্চের শেষের দিকে বাজারে নতুন হালি পেঁয়াজ উঠবে। তখন দাম সহনীয় হয়ে আসতে পারে বলে জানান তিনি।

আব্দুল হাকিম আরও বলেন, এ বছর কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে নষ্ট হওয়ার ভয়ে অনেকেই জমি থেকে আগেভাগে পেঁয়াজ তুলেছেন। ফলে এই মুড়িকাটা পেঁয়াজ বেশি দিন ঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। বর্তমানে তাদের ৯০ শতাংশ পেঁয়াজের মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজারে দাম বাড়লেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। কারণ তাঁদের হাতে পেঁয়াজের মজুদ নেই।

অন্য আরেক পেঁয়াজ চাষি জানান, পেঁয়াজ আবাদের ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি। কীটনাশক থেকে শুরু করে বীজের দাম অনেক বেড়েছে। শ্রমিকের মজুরি অনেক চড়া। বর্তমানে ৪০০-৪৫০ টাকার নিচে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকেরা পেঁয়াজ-রসুন চাষে এগিয়ে আসবে না। গত সপ্তাহের খুচরা বাজারগুলোতে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫ টাকা। যা গতকাল শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা। যা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫৩ টাকায়।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের মোট চাহিদা ২ লাখ মেট্রিক টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৯ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। সংরক্ষণের কারণে প্রসেস লস হয় ২৫ শতাংশ। আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রসেস লস হয় ৮-১০ শতাংশ। দেশে বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬-৭ লাখ মেট্রিক টন। বাজার যাতে অস্বাভাবিক না বাড়ে, সে জন্য সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে।

এ বিষয়ে সাধারণ ভোক্তারা বলেন, পণ্যের দাম বাড়লেও মানুষের আয় কিন্তু ঠিক আগের জায়গায় আছে। সামনে রমজান মাস আসছে, দিনে দিনে এভাবে বাজারে দাম বাড়তে থাকলে ক্রয় ক্ষমতা মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এখনই সরকারে প্রয়োজন এ বিষয়ে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।