ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪

আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা: আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পৌর শহরের স্টেশন সংলগ্ন বাইপাস সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল-ইমরান উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আব্দুল জলিল জুড়োনের ছোট ছেলে। তিনি আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, আল-ইমরানের সাথে ৪-৫ মাস আগে গোবিন্দপুর বকাপাড়ার কয়েকজন যুবকের দ্বন্দ্ব হয়। পরে থানায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার কয়েকমাস পর গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আল-ইমরান স্টেশন সংলগ্ন বাইপাস সড়কের সাথে একটি বিল্ডিংয়ের কারেন্টের ওয়ারিং কাজ করার জন্য কাজ দেখতে যাচ্ছিলেন। বিল্ডিংয়ের কাছে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করে।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে ধারালো অস্ত্রসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ইমরানকে রক্তাক্ত জখম করে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় আল-ইমরানকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নিহত আল-ইমরানের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল কাজ দেখার উদ্দেশে। কিন্তু পথের মধ্যেই ওঁৎ পেতে থাকা মানুষরুপে হায়েনারা শেষ করে দিল আমার ছেলেকে। আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই, যেন এভাবে আমার মতো আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।’

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পূর্বশক্রার জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি। কুষ্টিয়াতে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। বিস্তারিত জানতে এবং অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চলছে। এছাড়া ঘটনার তদন্তে র‌্যাব, ডিবি, পিআইবিসহ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। তারা সকলেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এদিকে, নিহত আল-ইমরানের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর নিজ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা নিহত ইমরানের লাশ কাধে নিয়ে আলমডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ শেষে শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড় এলাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত ইমরানের খুনিদের ও এই হত্যাকাণ্ডের মদতদাতাদের শাস্তির দাবিতে বক্তব্য দেন বক্তারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিয়র রহমান মতি, সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সবুজ, আবু তাহের, সদর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও পৌর ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী ইমদাদুল হক সজল, পিণ্টু, আজমীর, কনক প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিয়র রহমান মতি বলেন, ‘ইমরান ছিল একজন সৎ ও ত্যাগী নেতা। তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার চাই। বিচার পাবার জন্য বিচারের দাবিতে আমাদের যতদূর যেতে হয়, আমরা যাব। কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি বলেন, ‘আমরা জানি আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার তাঁর ওপরেই ছেড়ে দিলাম। যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতর হত্যাকারীসহ মদতদাতাদের গ্রেপ্তার না করা হয়, তাহলে আমরা সমগ্র জেলাব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেব।’

এসময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইমরানের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মী ঘরে ফিরে যাবে না।

পরবর্তীতে জানাযা শেষে রাতেই গোবিন্দপুর মণ্ডলপাড়া কবরস্থানে নিহত আল-ইমরানের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। তাঁর জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহমেদ ডন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুকসহ আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২

ভ্রাম্যমাণ প্রতিবেদক, আলমডাঙ্গা: আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরানকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পৌর শহরের স্টেশন সংলগ্ন বাইপাস সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল-ইমরান উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আব্দুল জলিল জুড়োনের ছোট ছেলে। তিনি আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, আল-ইমরানের সাথে ৪-৫ মাস আগে গোবিন্দপুর বকাপাড়ার কয়েকজন যুবকের দ্বন্দ্ব হয়। পরে থানায় বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার কয়েকমাস পর গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আল-ইমরান স্টেশন সংলগ্ন বাইপাস সড়কের সাথে একটি বিল্ডিংয়ের কারেন্টের ওয়ারিং কাজ করার জন্য কাজ দেখতে যাচ্ছিলেন। বিল্ডিংয়ের কাছে পৌঁছানোর আগেই দুর্বৃত্তরা তাঁকে কুপিয়ে জখম করে।

প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে ধারালো অস্ত্রসহ কয়েকজন ঘটনাস্থলে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে ইমরানকে রক্তাক্ত জখম করে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে যায়। মারাত্মক আহত অবস্থায় আল-ইমরানকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে নিহত আল-ইমরানের বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল কাজ দেখার উদ্দেশে। কিন্তু পথের মধ্যেই ওঁৎ পেতে থাকা মানুষরুপে হায়েনারা শেষ করে দিল আমার ছেলেকে। আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক বিচার চাই, যেন এভাবে আমার মতো আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।’

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পূর্বশক্রার জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি। কুষ্টিয়াতে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আলমডাঙ্গা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। বিস্তারিত জানতে এবং অভিযুক্তদের আটকে অভিযান চলছে। এছাড়া ঘটনার তদন্তে র‌্যাব, ডিবি, পিআইবিসহ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা মাঠে নেমেছে। তারা সকলেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এদিকে, নিহত আল-ইমরানের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সন্ধ্যায় তাঁর নিজ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজনসহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা নিহত ইমরানের লাশ কাধে নিয়ে আলমডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভ শেষে শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড় এলাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। বিক্ষোভ সমাবেশে নিহত ইমরানের খুনিদের ও এই হত্যাকাণ্ডের মদতদাতাদের শাস্তির দাবিতে বক্তব্য দেন বক্তারা।

এসময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিয়র রহমান মতি, সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সবুজ, আবু তাহের, সদর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ, পৌর ছাত্রলীগের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও পৌর ছাত্র লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী ইমদাদুল হক সজল, পিণ্টু, আজমীর, কনক প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মতিয়র রহমান মতি বলেন, ‘ইমরান ছিল একজন সৎ ও ত্যাগী নেতা। তাঁর এই হত্যাকাণ্ডের আমরা বিচার চাই। বিচার পাবার জন্য বিচারের দাবিতে আমাদের যতদূর যেতে হয়, আমরা যাব। কোনোভাবেই এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।’ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি বলেন, ‘আমরা জানি আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার তাঁর ওপরেই ছেড়ে দিলাম। যদি আগামী ২৪ ঘণ্টার ভেতর হত্যাকারীসহ মদতদাতাদের গ্রেপ্তার না করা হয়, তাহলে আমরা সমগ্র জেলাব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেব।’

এসময় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইমরানের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মী ঘরে ফিরে যাবে না।

পরবর্তীতে জানাযা শেষে রাতেই গোবিন্দপুর মণ্ডলপাড়া কবরস্থানে নিহত আল-ইমরানের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। তাঁর জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালমুন আহমেদ ডন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুকসহ আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ।