ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

রাজনৈতিক ঐক্য হলে রাষ্ট্রপতি অপসারণ

নতুন সাংবিধানিক শূন্যতা চায় না বিএনপি, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত হয়নি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে চাপ বাড়লেও এটি নিয়ে মাঠ গরম হোক তা চাইছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এ ইস্যুতে কোনো সাংবিধানিক জটিলতা চাইছেন না নীতিনির্ধারকেরা। সরকারের এ ধরনের অবস্থান নিতে ভূমিকা রাখছে রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও চাইছে না রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে নতুন কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা বা দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, কবর জিয়ারত (রাষ্ট্রের লঘু কাজ) ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোনো কাজ আছে বলে তো মনে করি না। তিনি তা করুন। তার অপসারণ নিয়ে এত চিন্তার কিছু নাই। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে প্রেসিডেন্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে মঙ্গলবার দিনভর বঙ্গভবন, শহীদ মিনারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের পর গতকাল বুধবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক করেন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও। তবে এসব বৈঠকের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুটি জড়িত কি না সেটি স্পষ্ট করেননি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং বিএনপি।
বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণের ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রচুর কথা হচ্ছে। এটার অংশ হিসেবে আজ বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো ডেভলপমেন্ট হলে আপনারা জানবেন। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তী ধাপে সরকারের কী পদক্ষেপ নিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে, আকার-ইঙ্গিতে যেসব উত্তর পাওয়া গেছে এবং তা থেকে যেটি জানা যাচ্ছে, তার সারমর্ম হচ্ছে- রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সরকার পথ হারাতে চায় না। জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- সেটি নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে; সরকার সেই ফাঁদে পা দেবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের যে অগ্রাধিকার রাষ্ট্রের সংস্কার ও একটি অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সেই লক্ষ্যেই স্থির থাকতে চায় সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এক উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রশ্ন করলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জরুরি। কেউ যেন এটাতে ব্যাঘাত না ঘটায় তা দেখছে সরকার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আইনি সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয় সিদ্ধান্ত হবে। এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সে সময় (৮ আগস্ট) আমরা সরকার গঠন করেছিলাম। কিন্তু জনগণ যদি মনে করে এই সেটআপের পরিবর্তন প্রয়োজন, সেটা নিশ্চয়ই সরকার দেখবে।
সরকারের এই মনোভাবের সঙ্গে মিল রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে এসে যমুনার সামনে নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যদি কোনো সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা করে তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তন সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে যে বিক্ষোভ ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে-সেটিও পছন্দ হয়নি নীতিনির্ধারকদের। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে একদল পুলিশ বঙ্গভবনের দিকে যাওয়ার প্রাক্কালে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি রাষ্ট্রে নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরাজিতপক্ষ সে সুযোগ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পরবর্তীতে যে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
জানা গেছে, বঙ্গভবনে মারমুখী জনতার পুলিশকে ধাওয়া দেওয়ার পরদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম এনডিসি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের বার্তা সে সময় স্পষ্ট করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে সে বিষয়েও সরকার জবাব দিতে চাইছে না। শুধু তাই নয়, বঙ্গভবনের সামনে কোনো ধরনের বিক্ষোভ হোক সেটিও চাইছে না সরকার।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যা বলেছেন, সে বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা উচিত। রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমাদের অবস্থান তো আপনারা দেখছেন। যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের বলেছি তারা যেন বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। গতকাল থেকে বঙ্গভবনের আশপাশের সিকিউরিটি বাড়িয়েছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

রাজনৈতিক ঐক্য হলে রাষ্ট্রপতি অপসারণ

নতুন সাংবিধানিক শূন্যতা চায় না বিএনপি, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সিদ্ধান্ত হয়নি : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

আপলোড টাইম : ১১:৩৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে চাপ বাড়লেও এটি নিয়ে মাঠ গরম হোক তা চাইছে না অন্তর্বর্তী সরকার। এ ইস্যুতে কোনো সাংবিধানিক জটিলতা চাইছেন না নীতিনির্ধারকেরা। সরকারের এ ধরনের অবস্থান নিতে ভূমিকা রাখছে রাজনৈতিক দলগুলো। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও চাইছে না রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ নিয়ে নতুন কোনো সাংবিধানিক শূন্যতা বা দেশে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হোক।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, কবর জিয়ারত (রাষ্ট্রের লঘু কাজ) ছাড়া রাষ্ট্রপতির আর কোনো কাজ আছে বলে তো মনে করি না। তিনি তা করুন। তার অপসারণ নিয়ে এত চিন্তার কিছু নাই। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে প্রেসিডেন্টের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে মঙ্গলবার দিনভর বঙ্গভবন, শহীদ মিনারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের পর গতকাল বুধবার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক করেন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গেও। তবে এসব বৈঠকের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুটি জড়িত কি না সেটি স্পষ্ট করেননি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং বিএনপি।
বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠক হয়েছে। রাষ্ট্রপতির অপসারণের ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রচুর কথা হচ্ছে। এটার অংশ হিসেবে আজ বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে। কোনো ডেভলপমেন্ট হলে আপনারা জানবেন। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে আইন উপদেষ্টার বক্তব্য এবং সরকারের একমত পোষণের পরবর্তী ধাপে সরকারের কী পদক্ষেপ নিচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে, আকার-ইঙ্গিতে যেসব উত্তর পাওয়া গেছে এবং তা থেকে যেটি জানা যাচ্ছে, তার সারমর্ম হচ্ছে- রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে সরকার পথ হারাতে চায় না। জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কারের যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে- সেটি নষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে; সরকার সেই ফাঁদে পা দেবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের যে অগ্রাধিকার রাষ্ট্রের সংস্কার ও একটি অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সেই লক্ষ্যেই স্থির থাকতে চায় সরকার।
অন্তর্বর্তী সরকারের এ অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এক উপদেষ্টা। রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রশ্ন করলে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এখন দেশের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা জরুরি। কেউ যেন এটাতে ব্যাঘাত না ঘটায় তা দেখছে সরকার। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আইনি সিদ্ধান্তের বিষয় নয়। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয় সিদ্ধান্ত হবে। এ প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সে সময় (৮ আগস্ট) আমরা সরকার গঠন করেছিলাম। কিন্তু জনগণ যদি মনে করে এই সেটআপের পরিবর্তন প্রয়োজন, সেটা নিশ্চয়ই সরকার দেখবে।
সরকারের এই মনোভাবের সঙ্গে মিল রয়েছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন বিএনপি নেতারা। বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বৈঠক শেষ করে বেরিয়ে এসে যমুনার সামনে নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে নতুন কোনো সাংবিধানিক বা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। যদি কেউ সেটা করতে চায় সেটাকে আমরা সবাই মিলে মোকাবিলা করব।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, পতিত ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসররা নানা কৌশলে নানাভাবে দেশে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যদি কোনো সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরির চেষ্টা করে তাহলে গণতন্ত্রকামী ও আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সংগঠন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। আমরা মনে করি, দীর্ঘদিন লড়াই করে বহু রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পরিবর্তন অর্জন করেছি, এই পরিবর্তন সুরক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা দরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে যে বিক্ষোভ ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলবার রাতে-সেটিও পছন্দ হয়নি নীতিনির্ধারকদের। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে একদল পুলিশ বঙ্গভবনের দিকে যাওয়ার প্রাক্কালে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষুব্ধ করেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি রাষ্ট্রে নতুন করে সহিংসতা সৃষ্টি করতে পারে এবং পরাজিতপক্ষ সে সুযোগ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পরবর্তীতে যে কোনো ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
জানা গেছে, বঙ্গভবনে মারমুখী জনতার পুলিশকে ধাওয়া দেওয়ার পরদিন সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম এনডিসি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের বার্তা সে সময় স্পষ্ট করা হয়েছে। এমনকি বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে সে বিষয়েও সরকার জবাব দিতে চাইছে না। শুধু তাই নয়, বঙ্গভবনের সামনে কোনো ধরনের বিক্ষোভ হোক সেটিও চাইছে না সরকার।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যা বলেছেন, সে বিষয়ে তাদের প্রশ্ন করা উচিত। রাষ্ট্রপতি অপসারণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমাদের অবস্থান তো আপনারা দেখছেন। যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের বলেছি তারা যেন বঙ্গভবনের পাশ থেকে সরে যান। গতকাল থেকে বঙ্গভবনের আশপাশের সিকিউরিটি বাড়িয়েছি।