ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

স্ক্রাপের মালামাল পরিমাণে কম দেখিয়ে টেন্ডার না দিয়েই বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে
  • অধ্যক্ষ বললেন, নীতিমালা আছে কি না, জানি না
  • নীতিমালা বলছে, কমিটির মাধ্যমে টেন্ডার করে মাল বিক্রি করতে হবে
  • এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে-যুগ্ম সচিব

চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের স্ক্রাপের মালামাল পরিমাণে কম দেখিয়ে টেন্ডার না দিয়েই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরেই তিনি কাজ করছেন বলে অভিযোগ। স্ক্রাপের সাড়ে ১৩শ কেজি লোহা সরকারি হিসেবে ৪৫০ কেজি দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে কম মূল্যে ভাংরিতে বিক্রি করে আলোচনায় এসেছেন এই অধ্যক্ষ। সরকারি বিধানে কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির নীতিমালা থাকলেও অধ্যক্ষ বলছেন, ‘আমরা এভাবেই বিক্রি করে থাকি।’ তবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সময় স্ক্রাপের মালামাল জমে। এই মালামাল বিক্রির জন্য সরকারি সম্পত্তি বিক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে। তবে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ দায়িত্ব নেয়ার পর এই নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ইচ্ছামতো যখন খুশি তেমন দামে তিনি মালামাল বিক্রি করে দেন। এবারও প্রায় ১৩শ কেজির ওপরে স্ক্রাপের লোহা-লক্কর হয়। এই মালামাল তিনি টেন্ডার বা পত্রিকায় নিলামের বিজ্ঞাপন না দিয়েই বিক্রি করে দেন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ ৪৫০ কেজি স্ক্রাপ বিক্রয় বাবদ প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে দেখিয়ে ১৮ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজস্ব জমা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক অভিন্ন ভাষায় বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। পছন্দসই মানুষের কাছে স্ক্রাপের লোহা বিক্রি করেছেন। তবে সেই লোহা অন্তত ১৩শ কেজির মতো ছিল। কিন্তু খাতা-কলমে দেখানো হয়েছে মাত্র ৪৫০ কেজি। আবার পরিমাণে কম দেখানোর পাশাপাশি বাজার দরের থেকেও কম দেখিয়েছেন। বাজারে এখন এই মালামাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খাতা-কলমে ৪০ টাকা দেখাচ্ছেন।
সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন স্থানের কয়েকজন অধ্যক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে কয়েকজন অধ্যক্ষ বলেন, টেকনিক্যালের স্ক্রাপের মালামাল বিক্রির জন্য কমিটি হবে, টেন্ডার হবে। সরকারি সম্পত্তি বিক্রি নীতিমালার আলোকেই এগুলো করতে হবে। টেকনিক্যাল তো সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ীই হবে। কোনো অধ্যক্ষ ৪ শ কেজি তো দূরের কথা, এক কেজিও মালামালও বিক্রি করতে পারে না। কমিটির মাধ্যমে বিক্রয় হবে। ৪ শ কেজিই যদি তিনি বলে থাকেন, মালামাল কম নয়, এটা অনেক। এটার জন্য জেলা প্রশাসক কমিটি করবেন। অনুমতির পর টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম হবে। উনি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, কিন্তু এটা ৪২-৫০ টাকা দরেও হতে পারতো। সরকারের স্বার্থের ক্ষতি হয়েছে নিশ্চিতভাবে। এটা অন্যায়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের কিছু রুটিন বেচাকেনা আছে। প্রাকটিক্যালে লোহা-লক্কর, পরীক্ষার খাতা হয়। প্রতিবছর আমাদের ৭০০-৮০০ কেজি লোহা-লাকরি বের হয়। আমরা কাগজ বিক্রি করার মতো বিক্রি করে টাকা চালান জমা দিয়ে দিই। নীতিমালা আছে কি না, জানি না। আমরা সাধারণত এটি করি। প্রতি বছর আমরা এভাবেই বিক্রি করি। এবারো তাই করেছি। হকার ডেকে বিক্রি করে দিয়েছি। স্ক্রাপ কোডে সরকারি চালান জমা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধরেন ১৩শ কেজি। না হয়, আর ২০ হাজার টাকা হয়েছে। তো এই টাকা আমি কী করবো। আমি অল্প কিছুদিন যোগদান করেছি। ২ বছর মতো হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানে গাঁজাখোর বসে। আমি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। লোহা-লাকরিগুলো ওরা চুরি করে। যেহেতু লোহা জাতীয় জিনিসটা সহজেই বিক্রি করা যায়। আর এখানে বিকেল হলে মাদক বিক্রি করাও হয়। ওরাই হয়ত এসব তথ্য ছড়াচ্ছে।’
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (ভোকেশনাল) ও সরকারের যুগ্ম সচিব মো. সালাহউদ্দীন আহাম্মদ বলেন, ৪৫০ কেজি অনেক মালামাল। এটার জন্য কমিটি করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারও কনসার্ন থাকতে হবে। এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

স্ক্রাপের মালামাল পরিমাণে কম দেখিয়ে টেন্ডার না দিয়েই বিক্রি

আপলোড টাইম : ১০:৪৬:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • অধ্যক্ষ বললেন, নীতিমালা আছে কি না, জানি না
  • নীতিমালা বলছে, কমিটির মাধ্যমে টেন্ডার করে মাল বিক্রি করতে হবে
  • এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে-যুগ্ম সচিব

চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের স্ক্রাপের মালামাল পরিমাণে কম দেখিয়ে টেন্ডার না দিয়েই বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গায়ের জোরেই তিনি কাজ করছেন বলে অভিযোগ। স্ক্রাপের সাড়ে ১৩শ কেজি লোহা সরকারি হিসেবে ৪৫০ কেজি দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে কম মূল্যে ভাংরিতে বিক্রি করে আলোচনায় এসেছেন এই অধ্যক্ষ। সরকারি বিধানে কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রির নীতিমালা থাকলেও অধ্যক্ষ বলছেন, ‘আমরা এভাবেই বিক্রি করে থাকি।’ তবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে বিভিন্ন সময় স্ক্রাপের মালামাল জমে। এই মালামাল বিক্রির জন্য সরকারি সম্পত্তি বিক্রয় নীতিমালা অনুসরণ করা হয়ে থাকে। তবে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ দায়িত্ব নেয়ার পর এই নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। ইচ্ছামতো যখন খুশি তেমন দামে তিনি মালামাল বিক্রি করে দেন। এবারও প্রায় ১৩শ কেজির ওপরে স্ক্রাপের লোহা-লক্কর হয়। এই মালামাল তিনি টেন্ডার বা পত্রিকায় নিলামের বিজ্ঞাপন না দিয়েই বিক্রি করে দেন।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ ৪৫০ কেজি স্ক্রাপ বিক্রয় বাবদ প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে দেখিয়ে ১৮ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রাজস্ব জমা দিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের কয়েকজন শিক্ষক অভিন্ন ভাষায় বলেন, বর্তমান অধ্যক্ষ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। পছন্দসই মানুষের কাছে স্ক্রাপের লোহা বিক্রি করেছেন। তবে সেই লোহা অন্তত ১৩শ কেজির মতো ছিল। কিন্তু খাতা-কলমে দেখানো হয়েছে মাত্র ৪৫০ কেজি। আবার পরিমাণে কম দেখানোর পাশাপাশি বাজার দরের থেকেও কম দেখিয়েছেন। বাজারে এখন এই মালামাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে খাতা-কলমে ৪০ টাকা দেখাচ্ছেন।
সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের বিভিন্ন স্থানের কয়েকজন অধ্যক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে কয়েকজন অধ্যক্ষ বলেন, টেকনিক্যালের স্ক্রাপের মালামাল বিক্রির জন্য কমিটি হবে, টেন্ডার হবে। সরকারি সম্পত্তি বিক্রি নীতিমালার আলোকেই এগুলো করতে হবে। টেকনিক্যাল তো সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ীই হবে। কোনো অধ্যক্ষ ৪ শ কেজি তো দূরের কথা, এক কেজিও মালামালও বিক্রি করতে পারে না। কমিটির মাধ্যমে বিক্রয় হবে। ৪ শ কেজিই যদি তিনি বলে থাকেন, মালামাল কম নয়, এটা অনেক। এটার জন্য জেলা প্রশাসক কমিটি করবেন। অনুমতির পর টেন্ডারের মাধ্যমে নিলাম হবে। উনি ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, কিন্তু এটা ৪২-৫০ টাকা দরেও হতে পারতো। সরকারের স্বার্থের ক্ষতি হয়েছে নিশ্চিতভাবে। এটা অন্যায়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের কিছু রুটিন বেচাকেনা আছে। প্রাকটিক্যালে লোহা-লক্কর, পরীক্ষার খাতা হয়। প্রতিবছর আমাদের ৭০০-৮০০ কেজি লোহা-লাকরি বের হয়। আমরা কাগজ বিক্রি করার মতো বিক্রি করে টাকা চালান জমা দিয়ে দিই। নীতিমালা আছে কি না, জানি না। আমরা সাধারণত এটি করি। প্রতি বছর আমরা এভাবেই বিক্রি করি। এবারো তাই করেছি। হকার ডেকে বিক্রি করে দিয়েছি। স্ক্রাপ কোডে সরকারি চালান জমা দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধরেন ১৩শ কেজি। না হয়, আর ২০ হাজার টাকা হয়েছে। তো এই টাকা আমি কী করবো। আমি অল্প কিছুদিন যোগদান করেছি। ২ বছর মতো হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানে গাঁজাখোর বসে। আমি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছি। লোহা-লাকরিগুলো ওরা চুরি করে। যেহেতু লোহা জাতীয় জিনিসটা সহজেই বিক্রি করা যায়। আর এখানে বিকেল হলে মাদক বিক্রি করাও হয়। ওরাই হয়ত এসব তথ্য ছড়াচ্ছে।’
এ বিষয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (ভোকেশনাল) ও সরকারের যুগ্ম সচিব মো. সালাহউদ্দীন আহাম্মদ বলেন, ৪৫০ কেজি অনেক মালামাল। এটার জন্য কমিটি করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারও কনসার্ন থাকতে হবে। এতো বেশি পরিমাণে মালামাল নীতিমালা অনুসরণ করে কমিটির মাধ্যমেই টেন্ডার করে বিক্রি করতে হবে। নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।