ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
জীবননগরের আনছারবাড়িয়ায় তেলবাহী ট্রেনের ৮টি ট্যাংকার লাইনচ্যুত

১১ ঘণ্টা পর সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

ট্রেন বন্ধ থাকায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

জে আই মামুন, আন্দুলবাড়ীয়া:
  • আপলোড টাইম : ১১:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪
  • / ৩ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর উপজেলার আনছারবাড়িয়ায় তেলবাহী ট্রেনের ৮টি ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে আনছারবাড়িয়া স্টেশনের অদূরে খুলনাগামী ৮টি তেলের ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়। এতে সারা দেশের সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ট্যাংকারগুলো রেললাইন থেকে সরানো হলে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এদিকে, ট্রেন বন্ধ থাকায় চুয়াডাঙ্গা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদ বলেন, বুধবার সকাল ৭টা থেকে দুটি দল উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে লাইন থেকে ৮টি ট্যাংকার অপসারণ করা হয়। এরপর উদ্ধারকারী দল দুটি মালামাল গুছিয়ে চলে যায়। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। অপসারণ করা ট্যাংকারগুলো উদ্ধার করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
চাঁদ আহমেদ আরও বলেন, এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান হিসেবে আছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তদন্তের পর জানা যাবে এ ঘটনায় চালকের কোনো গাফিলতি আছে কি না।


উথলী রেল স্টেশনের মাস্টার মিণ্টু কুমার রায় জানান, আনছারবাড়িয়া রেল স্টেশনটি ক্লোজ ডাউন স্টেশন। সেখানে কোনো স্টেশন মাস্টার নেই। রাতে তেলবাহী ট্রেনটি ঈশ্বরদী থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। তবে ট্রেনটি আনছারবাড়িয়া রেল স্টেশনের ডাউন সিগন্যালের ১১ নম্বর পয়েন্টের কাছে পৌঁছালে ৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে খুলনাগামী চিত্রা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়েছে। খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল সকাল থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে পার হতে দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের। তাদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসার জন্য যাবেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কেউ যাবেন আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে, কেউ আবার নিজ বাড়িতে ফেরার আশায়, আবার ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রেন না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে দেখা গেছে। কাউকে বসে বিরক্তিভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়, আবার অনেককে পাটি পেড়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
মেহেরপুর জেলার মহাজনপুর গ্রামের সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী নাজমা খাতুন অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়ার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। ট্রেন না আসায় বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কবিখালি গ্রামের বাবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। শুনলাম আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেন আসবে না, তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

বাবর আলীর মেয়ে অসুস্থ ময়না খাতুন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহীর টিকেট না পেয়ে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দর্শনা থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটি। রাজশাহী যাওয়া হলো না, টিকেটের টাকাও ফেরত পেলাম না। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জুলফিকার আলী যাবেন উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলায়। মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টারের পরামর্শে তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায় তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্লাটফর্মে বসেছিলেন। প্লাটফর্মের মেঝেতে পাটি পেতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি দুপুরের খাবার সেরে নেন।
দামুড়হুদায় জামাই-মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন সান্তাহারের রাবেয়া বেগম ও তাদের পরিবারের অনেকে। সময়মতো ট্রেন না আসায় তিনি আবার জামাই-মেয়ের বাড়িতে ফিরে যান।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, সময় মতো ট্রেন না আসার কারণে সকাল থেকে যাত্রীদের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। প্রতিটা ট্রেনই বিলম্বে যাত্রা করেছে। ট্রেনের এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরের আনছারবাড়িয়ায় তেলবাহী ট্রেনের ৮টি ট্যাংকার লাইনচ্যুত

১১ ঘণ্টা পর সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক

ট্রেন বন্ধ থাকায় চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

আপলোড টাইম : ১১:৪১:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

জীবননগর উপজেলার আনছারবাড়িয়ায় তেলবাহী ট্রেনের ৮টি ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে আনছারবাড়িয়া স্টেশনের অদূরে খুলনাগামী ৮টি তেলের ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়। এতে সারা দেশের সঙ্গে খুলনার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ট্যাংকারগুলো রেললাইন থেকে সরানো হলে দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এদিকে, ট্রেন বন্ধ থাকায় চুয়াডাঙ্গা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।
চুয়াডাঙ্গার রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদ বলেন, বুধবার সকাল ৭টা থেকে দুটি দল উদ্ধার কাজ শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে লাইন থেকে ৮টি ট্যাংকার অপসারণ করা হয়। এরপর উদ্ধারকারী দল দুটি মালামাল গুছিয়ে চলে যায়। দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। অপসারণ করা ট্যাংকারগুলো উদ্ধার করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
চাঁদ আহমেদ আরও বলেন, এ ঘটনা তদন্তে চার সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে প্রধান হিসেবে আছেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। তদন্তের পর জানা যাবে এ ঘটনায় চালকের কোনো গাফিলতি আছে কি না।


উথলী রেল স্টেশনের মাস্টার মিণ্টু কুমার রায় জানান, আনছারবাড়িয়া রেল স্টেশনটি ক্লোজ ডাউন স্টেশন। সেখানে কোনো স্টেশন মাস্টার নেই। রাতে তেলবাহী ট্রেনটি ঈশ্বরদী থেকে খুলনার দিকে যাচ্ছিল। তবে ট্রেনটি আনছারবাড়িয়া রেল স্টেশনের ডাউন সিগন্যালের ১১ নম্বর পয়েন্টের কাছে পৌঁছালে ৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে খুলনাগামী চিত্রা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেন আটকা পড়েছে। খুলনার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল সকাল থেকেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে পার হতে দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের। তাদের মধ্যে অনেকে চিকিৎসার জন্য যাবেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, কেউ যাবেন আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে, কেউ আবার নিজ বাড়িতে ফেরার আশায়, আবার ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেশকিছু শিক্ষার্থীকে চুয়াডাঙ্গা রেল স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ট্রেন না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে দেখা গেছে। কাউকে বসে বিরক্তিভাব প্রকাশ করতে দেখা যায়, আবার অনেককে পাটি পেড়ে স্টেশনের প্লাটফর্মে বসে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে এমন চিত্র চোখে পড়ে।
মেহেরপুর জেলার মহাজনপুর গ্রামের সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী নাজমা খাতুন অসুস্থ। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেয়ার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। ট্রেন না আসায় বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।’ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কবিখালি গ্রামের বাবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে নিয়ে রাজশাহী যাওয়ার উদ্দেশ্যে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। শুনলাম আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেন আসবে না, তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।’

বাবর আলীর মেয়ে অসুস্থ ময়না খাতুন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, চুয়াডাঙ্গা থেকে রাজশাহীর টিকেট না পেয়ে আমার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দর্শনা থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটি। রাজশাহী যাওয়া হলো না, টিকেটের টাকাও ফেরত পেলাম না। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের জুলফিকার আলী যাবেন উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলায়। মোবারকগঞ্জ রেল স্টেশন মাস্টারের পরামর্শে তিনি চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে আসেন। আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনের অপেক্ষায় তিনি তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে প্লাটফর্মে বসেছিলেন। প্লাটফর্মের মেঝেতে পাটি পেতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে তিনি দুপুরের খাবার সেরে নেন।
দামুড়হুদায় জামাই-মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন সান্তাহারের রাবেয়া বেগম ও তাদের পরিবারের অনেকে। সময়মতো ট্রেন না আসায় তিনি আবার জামাই-মেয়ের বাড়িতে ফিরে যান।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মিজানুর রহমান বলেন, সময় মতো ট্রেন না আসার কারণে সকাল থেকে যাত্রীদের অনেক কথা শুনতে হয়েছে। প্রতিটা ট্রেনই বিলম্বে যাত্রা করেছে। ট্রেনের এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে।