ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনজীবন অতিষ্ঠ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে শহরেও চলছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বির্ভ্রাট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬
  • / ৬৩১ বার পড়া হয়েছে

গাংনী অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে শহরেও চলছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বির্ভ্রাট। দিন রাতে অন্তত ৮/১০ বার এ বিদ্যুত বিভ্রাটে পড়ে এলাকাবাসি। এতে একদিকে যেমন জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে। তেমনই সরকারী অফিস গুলোর কাজ, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, চলতি রোপা আমনের সম্পূরক সেচ কাজ বিঘিœত হচ্ছে ও মাত্র ৪ থেকে ৫ মাস পর এসএসসি পরীক্ষা  সেই পরীক্ষার্থীরা আরও বেশি বিপাকে পরেছে এই লোডশেডিং ও বিদ্যুাৎ বিভ্রার্টে । তবে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ বেশী ভোগান্তির শিকার। তবে বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বলছে- পুরাতন লাইন ছাড়াও বিভিন্ন গাছপালা ভেঙ্গে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বিদ্যুত বিভ্রার্ট ঘটে থাকে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের হিসেব মতে, গাংনী এলাকায় পিক আওয়ারে ৬.৫ মেগাওয়াট ও অফ পিক আওয়ারে ৫.৫ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সিস্টেম লস ১৪%। অথচ গাংনী বাসি পাচ্ছেন পিক আওয়ারে ৪.৪৪ এবং অফ পিক আওয়ারে ৩.৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুত। নানা কারণে গ্রাহকরা বিদ্যুত বঞ্চিত হচ্ছেন। পুরাতন লাইন ও বৈদ্যুতিক পোল এবং তার দিয়ে কোন মতে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টি ও সামান্য ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। গাংনী সাব স্টেশনের হিসেব মতে, গত ১০ দিনে ৮৫ ঘন্টা লোডশেডিং ও বিদ্যুত বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ৬ ঘন্টা, ৯ সেপ্টেম্বর ১০ ঘন্টা ১১ সেপ্টেম্বর ১১ ঘন্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ১৪ ঘন্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ৯ ঘন্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৭ ঘন্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর ১২ ঘন্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৫ ঘন্টা এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ ঘন্টা ছাড়াও ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘন্টা বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিং ছিল। গাংনীর বামন্দি সাব-স্টেশনে গত ১০ দিনে ৪৫ ঘন্টা লোড শেডিং দেখা দেয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা রাতে ও গভীর রাতে এ লোড শেডিংয়ের কারণে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বামন্দি বাজারে ৪টি ফ্লাওয়ার ও ওয়েল মিলসহ ১৫ টি কারখানা এবং একটি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। বিদ্যুতের বেহাল অবস্থার কারণে মিল গুলোতে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দীন জানান, এ উপজেলায় বিদ্যুত চালিত ৩৫টি গভীর নলকুপ ও একহাজার ৩৫টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। চলতি মৌসুমে সম্পুরক সেচের আওতায় রয়েছে ১২০০ হেক্টর রোপা আমন। অনাবৃষ্টির কারণে ফসলে সেচ দিতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে সিঁকি ভাগ ফসল নষ্ট হতে চলেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সবজিতে পানির চাহিদা পূরণে সেচ দিতে হয়।
গাংনীর নেভি স্টুডিওর স্বত্ত্বাধিকারী মশিউর রহমান মিনু জানান, বিদ্যুতের লোড শেডিং ও বারবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ফলে মেশিন চালু করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিন ব্যবসায় লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কারণে বাড়ীর ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান), রাইস  কুকার, কারী কুকার, মেজিক চুলা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ও ফটোষ্ট্যাট মেশিনসহ বৈদ্যুতিক নানান ধরণের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও এমকে রেজা জানান, গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে উপজেলা বহির্বিভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০০-৪০০জন লোক জ্বর,মাথা ব্যথা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরছেন। বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে বয়স্ক, শিশু ও সকল বয়সের মানুষ গরমের জন্য ঘুমাতে না পেয়ে বাড়ীর বাহিরে হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করে রাত পার করছেন । পেটের দায়ে মাঠ শ্রমিকরা গরমে কাজ করতে পারছেন না  মাঠে ঘাটে। তাপমাত্রা গত সোমবার ছিল ৪০ ডিগ্রী। বাতাসে জলীয় বাষ্প না থাকায় ভ্যাপসা গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। পেটের পীড়াসহ নানা প্রকার রোগে ভুগছে জনগণ।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডিজিএম শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, লোডশেডিং জাতীয় সমস্যার পাশাপাশি পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কোন মতে গ্রাহক সেবাটি চালানো হচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলে কিংবা বাতাসের গতি দেখে বিদ্যুত বন্ধ করতে হয়। গাছপালা ভেঙ্গে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়াও লোকবল সংকটও রয়েছে। তবে অতি শিঘ্রই এর সমাধান আশ্বাস দেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জনজীবন অতিষ্ঠ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে শহরেও চলছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বির্ভ্রাট

আপলোড টাইম : ০২:০৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গাংনী অফিস: মেহেরপুরের গাংনীতে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শুরু করে শহরেও চলছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বির্ভ্রাট। দিন রাতে অন্তত ৮/১০ বার এ বিদ্যুত বিভ্রাটে পড়ে এলাকাবাসি। এতে একদিকে যেমন জনজীবন বিপন্ন হচ্ছে। তেমনই সরকারী অফিস গুলোর কাজ, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি, চলতি রোপা আমনের সম্পূরক সেচ কাজ বিঘিœত হচ্ছে ও মাত্র ৪ থেকে ৫ মাস পর এসএসসি পরীক্ষা  সেই পরীক্ষার্থীরা আরও বেশি বিপাকে পরেছে এই লোডশেডিং ও বিদ্যুাৎ বিভ্রার্টে । তবে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের মানুষ বেশী ভোগান্তির শিকার। তবে বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বলছে- পুরাতন লাইন ছাড়াও বিভিন্ন গাছপালা ভেঙ্গে যাওয়ায় সাময়িকভাবে বিদ্যুত বিভ্রার্ট ঘটে থাকে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের হিসেব মতে, গাংনী এলাকায় পিক আওয়ারে ৬.৫ মেগাওয়াট ও অফ পিক আওয়ারে ৫.৫ মেগাওয়াট চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সিস্টেম লস ১৪%। অথচ গাংনী বাসি পাচ্ছেন পিক আওয়ারে ৪.৪৪ এবং অফ পিক আওয়ারে ৩.৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুত। নানা কারণে গ্রাহকরা বিদ্যুত বঞ্চিত হচ্ছেন। পুরাতন লাইন ও বৈদ্যুতিক পোল এবং তার দিয়ে কোন মতে গ্রাহকদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া বৃষ্টি ও সামান্য ঝড়ে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে বিদ্যুত বিভ্রাট ঘটে। গাংনী সাব স্টেশনের হিসেব মতে, গত ১০ দিনে ৮৫ ঘন্টা লোডশেডিং ও বিদ্যুত বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর ৬ ঘন্টা, ৯ সেপ্টেম্বর ১০ ঘন্টা ১১ সেপ্টেম্বর ১১ ঘন্টা, ১২ সেপ্টেম্বর ১৪ ঘন্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ৯ ঘন্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর সাড়ে ৭ ঘন্টা, ১৫ সেপ্টেম্বর ১২ ঘন্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ১৫ ঘন্টা এবং ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ ঘন্টা ছাড়াও ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২ পর্যন্ত সাড়ে ৪ ঘন্টা বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিং ছিল। গাংনীর বামন্দি সাব-স্টেশনে গত ১০ দিনে ৪৫ ঘন্টা লোড শেডিং দেখা দেয়। বিশেষ করে সন্ধ্যা রাতে ও গভীর রাতে এ লোড শেডিংয়ের কারণে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া বামন্দি বাজারে ৪টি ফ্লাওয়ার ও ওয়েল মিলসহ ১৫ টি কারখানা এবং একটি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। বিদ্যুতের বেহাল অবস্থার কারণে মিল গুলোতে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার রইচ উদ্দীন জানান, এ উপজেলায় বিদ্যুত চালিত ৩৫টি গভীর নলকুপ ও একহাজার ৩৫টি অগভীর নলকুপ রয়েছে। চলতি মৌসুমে সম্পুরক সেচের আওতায় রয়েছে ১২০০ হেক্টর রোপা আমন। অনাবৃষ্টির কারণে ফসলে সেচ দিতে বিদ্যুতের বিকল্প নেই। বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে সিঁকি ভাগ ফসল নষ্ট হতে চলেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সবজিতে পানির চাহিদা পূরণে সেচ দিতে হয়।
গাংনীর নেভি স্টুডিওর স্বত্ত্বাধিকারী মশিউর রহমান মিনু জানান, বিদ্যুতের লোড শেডিং ও বারবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ফলে মেশিন চালু করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিন ব্যবসায় লাভের পরিবর্তে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কারণে বাড়ীর ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান), রাইস  কুকার, কারী কুকার, মেজিক চুলা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ও ফটোষ্ট্যাট মেশিনসহ বৈদ্যুতিক নানান ধরণের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও এমকে রেজা জানান, গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে উপজেলা বহির্বিভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০০-৪০০জন লোক জ্বর,মাথা ব্যথা নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরছেন। বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে বয়স্ক, শিশু ও সকল বয়সের মানুষ গরমের জন্য ঘুমাতে না পেয়ে বাড়ীর বাহিরে হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করে রাত পার করছেন । পেটের দায়ে মাঠ শ্রমিকরা গরমে কাজ করতে পারছেন না  মাঠে ঘাটে। তাপমাত্রা গত সোমবার ছিল ৪০ ডিগ্রী। বাতাসে জলীয় বাষ্প না থাকায় ভ্যাপসা গরমে মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। পেটের পীড়াসহ নানা প্রকার রোগে ভুগছে জনগণ।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডিজিএম শ্রী রমেন্দ্র চন্দ্র রায় জানান, লোডশেডিং জাতীয় সমস্যার পাশাপাশি পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কোন মতে গ্রাহক সেবাটি চালানো হচ্ছে। আকাশে মেঘ দেখলে কিংবা বাতাসের গতি দেখে বিদ্যুত বন্ধ করতে হয়। গাছপালা ভেঙ্গে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়াও লোকবল সংকটও রয়েছে। তবে অতি শিঘ্রই এর সমাধান আশ্বাস দেন তিনি।