ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এক সময়ের চুয়াডাঙ্গার সুনামধন প্রদীপন বিদ্যাপীঠ নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা

শিক্ষকদের তিন পক্ষের অভিযোগ-প্রতিবাদে পরিস্থিতি জটিল

শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা সচেতন মহলের

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৯:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

এক সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ছিল প্রদীপন বিদ্যাপীঠ। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এতটাই সমাজ স্বীকৃত ছিল যে, প্রদীপন বিদ্যাপীঠে সন্তানকে পড়ানো অভিভাবকের জন্য ছিল আগ্রহের, স্বপ্নের, গর্বের। এখন চুয়াডাঙ্গার সেই প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অধ্যক্ষের পারিবারিক বিষয় থেকে শুরু করে এখন প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ উঠছে। তৈরি হয়েছে জটিল তিন পক্ষের অভিযোগ, প্রতিবাদ, অনুরোধের খেলা। সচেতন মহল বলছে, জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রক্ষায় শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে হবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী একটি পারিবারিক মামলা করেন। মামলাটিতে অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীন বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। মো. শাহাবুদ্দীন গত ১৮ আগস্ট তারিখে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যহতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে গুঞ্জন ওঠে মো. শাহাবুদ্দীন আবারও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপিও দেন। ওই স্মারকলিপিতে অধ্যক্ষের নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত করার দাবি করা হয়।

এদিকে, অভিভাকদের দেয়া স্মারকলিপির একটি লাইনের বিরোধিতা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অতিথি শিক্ষকগণসহ শিক্ষকদের একাংশ। জেলা সুনামধন্য একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন এসব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে তিনটি পক্ষ। সাবেক অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক, অভিভাবক আর তাদের ছোট-বড় তিনটি পক্ষ। গুঞ্জনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অন্যতম একটি চাহিত বিষয়, প্রতিষ্ঠান থেকেই পদোন্নতির মাধ্যমে করতে হবে অধ্যক্ষের নিয়োগ। যদিও সে গুঞ্জনের ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রাইভেট বাণিজ্য নিয়ে আছে আলোচনা-সমালোচনা।
১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে জমা দেয়া স্মারকলিপির ‘তার (অধ্যক্ষের) মনোনীত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান’ লাইনটি ভিন্নমত পোষন করেছেন অতিথি শিক্ষকরা। অতিথি শিক্ষক শাহীনা আক্তার, ইসরাত জাহান, ফাতেমা তুজ জোহরা, মোছা. সুমাইয়া নাঈম ও আখিতারা ইসলাম লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘তার (অধ্যক্ষের) মনোনীত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান’ কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তবে অতিথি শিক্ষকরাই আবার বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিক মতো বেতন দেয়া হয়নি। বর্তমানে দুই মাসের বেতনও বন্ধ আছে। অতিথি শিক্ষক শাহীনা আক্তার, ইসরাত জাহান, সুমাইয়া নাঈম ও আখিতারা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর নিলেও ঠিকমতো বেতন দেয়া হয়নি। যা ওঠানো হয়েছে, তার থেকে সামান্যই আমাদের হাতে পৌঁছেছে। সর্বশেষ দুই মাসের কোনো বেতন আমাদের প্রদান করা হয়নি। একটি পক্ষ সুবিধা লুফে নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষের অপকর্মের সাথে অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ জড়ানোর চেষ্টা করছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের বেশ কয়েকজন অভিভাবক দাবি করেন, শিক্ষকদের একটি অংশ বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ান। প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরির সুবাদে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবদের নানাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন অভিভাবক বলেন, কোনো কোনো শিক্ষক শুধুমাত্র কোচিং করানোর জন্য আলাদাভাবে নিজেরা বাড়িতে শিক্ষক রেখেছেন। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটিতে কোচিংয়ের দিকে ঝোকা শিক্ষার্থী বাড়ছে। শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ওই অভিভাবক।

সচেতন মহল বলছেন, একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ করা হচ্ছে। শিক্ষক হোক, প্রভাবশালী অভিভাবক হোক, আর সাবেক বা বর্তমান অধ্যক্ষ হোক, প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সবার আগে ভাবতে হবে। জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কেউ দোষী হলে তদন্তপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আর ক্ষুণœ করার সুযোগ নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এক সময়ের চুয়াডাঙ্গার সুনামধন প্রদীপন বিদ্যাপীঠ নিয়ে এখন আলোচনা-সমালোচনা

শিক্ষকদের তিন পক্ষের অভিযোগ-প্রতিবাদে পরিস্থিতি জটিল

শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা সচেতন মহলের

আপলোড টাইম : ০৮:২৯:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এক সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ছিল প্রদীপন বিদ্যাপীঠ। প্রতিষ্ঠানটির সুনাম এতটাই সমাজ স্বীকৃত ছিল যে, প্রদীপন বিদ্যাপীঠে সন্তানকে পড়ানো অভিভাবকের জন্য ছিল আগ্রহের, স্বপ্নের, গর্বের। এখন চুয়াডাঙ্গার সেই প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অধ্যক্ষের পারিবারিক বিষয় থেকে শুরু করে এখন প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হওয়ার অভিযোগ উঠছে। তৈরি হয়েছে জটিল তিন পক্ষের অভিযোগ, প্রতিবাদ, অনুরোধের খেলা। সচেতন মহল বলছে, জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম রক্ষায় শিক্ষার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে হবে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীনের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী একটি পারিবারিক মামলা করেন। মামলাটিতে অধ্যক্ষ মো. শাহাবুদ্দীন বর্তমানে হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন। মো. শাহাবুদ্দীন গত ১৮ আগস্ট তারিখে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যহতি চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছিলেন। এরমধ্যে গুঞ্জন ওঠে মো. শাহাবুদ্দীন আবারও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পাঁয়তারা করছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এ নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি স্মারকলিপিও দেন। ওই স্মারকলিপিতে অধ্যক্ষের নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্ত করার দাবি করা হয়।

এদিকে, অভিভাকদের দেয়া স্মারকলিপির একটি লাইনের বিরোধিতা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির অতিথি শিক্ষকগণসহ শিক্ষকদের একাংশ। জেলা সুনামধন্য একটি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন এসব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে তিনটি পক্ষ। সাবেক অধ্যক্ষ, শিক্ষক, অতিথি শিক্ষক, অভিভাবক আর তাদের ছোট-বড় তিনটি পক্ষ। গুঞ্জনে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের অন্যতম একটি চাহিত বিষয়, প্রতিষ্ঠান থেকেই পদোন্নতির মাধ্যমে করতে হবে অধ্যক্ষের নিয়োগ। যদিও সে গুঞ্জনের ভিত্তি পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির প্রাইভেট বাণিজ্য নিয়ে আছে আলোচনা-সমালোচনা।
১৭ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবরে জমা দেয়া স্মারকলিপির ‘তার (অধ্যক্ষের) মনোনীত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান’ লাইনটি ভিন্নমত পোষন করেছেন অতিথি শিক্ষকরা। অতিথি শিক্ষক শাহীনা আক্তার, ইসরাত জাহান, ফাতেমা তুজ জোহরা, মোছা. সুমাইয়া নাঈম ও আখিতারা ইসলাম লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ‘তার (অধ্যক্ষের) মনোনীত শিক্ষক দ্বারা পাঠদান’ কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই অতিথি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তবে অতিথি শিক্ষকরাই আবার বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিক মতো বেতন দেয়া হয়নি। বর্তমানে দুই মাসের বেতনও বন্ধ আছে। অতিথি শিক্ষক শাহীনা আক্তার, ইসরাত জাহান, সুমাইয়া নাঈম ও আখিতারা ইসলাম বলেন, ‘আমাদের স্বাক্ষর নিলেও ঠিকমতো বেতন দেয়া হয়নি। যা ওঠানো হয়েছে, তার থেকে সামান্যই আমাদের হাতে পৌঁছেছে। সর্বশেষ দুই মাসের কোনো বেতন আমাদের প্রদান করা হয়নি। একটি পক্ষ সুবিধা লুফে নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষের অপকর্মের সাথে অতিথি শিক্ষকদের নিয়োগ জড়ানোর চেষ্টা করছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে প্রদীপন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠের বেশ কয়েকজন অভিভাবক দাবি করেন, শিক্ষকদের একটি অংশ বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ান। প্রতিষ্ঠানটিতে চাকরির সুবাদে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবদের নানাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগকারীদের মধ্যে একজন অভিভাবক বলেন, কোনো কোনো শিক্ষক শুধুমাত্র কোচিং করানোর জন্য আলাদাভাবে নিজেরা বাড়িতে শিক্ষক রেখেছেন। দিন দিন প্রতিষ্ঠানটিতে কোচিংয়ের দিকে ঝোকা শিক্ষার্থী বাড়ছে। শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে বলে দাবি করেন ওই অভিভাবক।

সচেতন মহল বলছেন, একটি সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণœ করা হচ্ছে। শিক্ষক হোক, প্রভাবশালী অভিভাবক হোক, আর সাবেক বা বর্তমান অধ্যক্ষ হোক, প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সবার আগে ভাবতে হবে। জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কেউ দোষী হলে তদন্তপূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আর ক্ষুণœ করার সুযোগ নেই।