ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্সিগঞ্জ নিগার সিদ্দিক ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা লেখক ও শিক্ষানুরাগী ডা. আবদুস সাত্তারের চিরবিদায়

প্রতিবেদক, আসমানখালী:
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

বার্ধক্যজনিত কারণে সুপরিচিত সমাজসেবক, চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী ও লেখক ডা. আবদুস সাত্তার ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি ১৯৩৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার দুধসর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সিদ্দিক হোসেন ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের স্কুল পরিদর্শক।

ডা. আবদুস সাত্তার ১৯৫৩ সালে মেহেরপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন এবং লন্ডনে ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি একটি ব্রিটিশ পরিবারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় লন্ডনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি লন্ডন প্রবাসে প্রথম ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং প্রবাসী চিকিৎসক সমিতির স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডা. আবদুস সাত্তার লন্ডনে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনহিতকর কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য দুর্যোগকালে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন।

তিনি মুন্সিগঞ্জে তাঁর পিতা-মাতা সিদ্দিক হোসেন ও নিগার বেগমের নামে ১৯৯৫ সালে ‘নিগার সিদ্দিক ডিগ্রি কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ‘ড. আবদুস সাত্তার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি শিক্ষাবৃত্তি চালু করেন।

গল্পকার ও ঔপন্যাসিক পিণ্টু রহমান তাঁর উপন্যাস পুরাণভূমিতে ডাক্তার আবদুস সাত্তারের পরিচয় দিয়েছেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, মুন্সিগঞ্জে উগ্রবাদী মুসলমানদের হাতে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হলে তারাপদ রায় ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় ডা. সাত্তারের পিতা সিদ্দিক হোসেন জমিজমা বিনিময়ের সুযোগ পান এবং তারাপদ রায়ের জমি কিনে মুন্সিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন।

ডা. আবদুস সাত্তার লন্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং লেখক হিসেবেও তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত পাঁচটি গ্রন্থ- দেশে দেশে, জাপান থেকে মেক্সিকো, আলাস্কা ও কানাডার রকি পর্বত থেকে ইন্দোনেশিয়া, লঙ্কা, লেনিন, হোচিমিন ও নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে মুর্শিদাবাদ ও শান্তিনিকেতন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মুন্সিগঞ্জ নিগার সিদ্দিক ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা লেখক ও শিক্ষানুরাগী ডা. আবদুস সাত্তারের চিরবিদায়

আপলোড টাইম : ০৮:১৫:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বার্ধক্যজনিত কারণে সুপরিচিত সমাজসেবক, চিকিৎসক, শিক্ষানুরাগী ও লেখক ডা. আবদুস সাত্তার ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনে অবস্থানকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তিনি ১৯৩৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার দুধসর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম সিদ্দিক হোসেন ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের স্কুল পরিদর্শক।

ডা. আবদুস সাত্তার ১৯৫৩ সালে মেহেরপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিক এবং ১৯৫৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি ইংল্যান্ড গমন করেন এবং লন্ডনে ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি একটি ব্রিটিশ পরিবারের ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় লন্ডনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি লন্ডন প্রবাসে প্রথম ‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং প্রবাসী চিকিৎসক সমিতির স্থানীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ডা. আবদুস সাত্তার লন্ডনে ‘বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ভারত-বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনহিতকর কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য দুর্যোগকালে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন।

তিনি মুন্সিগঞ্জে তাঁর পিতা-মাতা সিদ্দিক হোসেন ও নিগার বেগমের নামে ১৯৯৫ সালে ‘নিগার সিদ্দিক ডিগ্রি কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি ‘ড. আবদুস সাত্তার ফাউন্ডেশন’ নামে একটি শিক্ষাবৃত্তি চালু করেন।

গল্পকার ও ঔপন্যাসিক পিণ্টু রহমান তাঁর উপন্যাস পুরাণভূমিতে ডাক্তার আবদুস সাত্তারের পরিচয় দিয়েছেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, মুন্সিগঞ্জে উগ্রবাদী মুসলমানদের হাতে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার হলে তারাপদ রায় ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় ডা. সাত্তারের পিতা সিদ্দিক হোসেন জমিজমা বিনিময়ের সুযোগ পান এবং তারাপদ রায়ের জমি কিনে মুন্সিগঞ্জে বসতি স্থাপন করেন।

ডা. আবদুস সাত্তার লন্ডনের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন এবং লেখক হিসেবেও তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত পাঁচটি গ্রন্থ- দেশে দেশে, জাপান থেকে মেক্সিকো, আলাস্কা ও কানাডার রকি পর্বত থেকে ইন্দোনেশিয়া, লঙ্কা, লেনিন, হোচিমিন ও নেলসন ম্যান্ডেলার দেশে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে মুর্শিদাবাদ ও শান্তিনিকেতন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে, এক মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।