ইপেপার । আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিচু এলাকা প্লাবিত,সড়কে জলাবদ্ধতা, ফসলে ক্ষতি

চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টিতে তিন দিনে ১৮২.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

আজ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে: চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড টাইম : ১২:৪২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে


টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ১৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে জেলা শহরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট এবং ফসলি জমিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের অন্তত ২০টি পরিবার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার। এর মধ্যে গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় ৮৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার সকালের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। দুপুরের পর অথবা বিকেলে সূর্যের দেখা পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে, বৃষ্টির কারণে চুয়াডাঙ্গার শহরতলীর শান্তিপাড়া এবং আশপাশের এলাকার অনেক রাস্তা পানিতে ডুবে আছে। ফলে এ এলাকার মানুষজন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অন্তত ২০টি পরিবাররের কর্মজীবী সদস্যরা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য পানি মাড়িয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে চলাচল করছেন। শান্তিপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘শান্তিপাড়ার এই এলাকাটা নিচু হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষাকালে উচু এলাকার পানি জমে চলাচলের পথসহ কয়েকটি বাড়ির মধ্যেও হাঁটু সমান পানি জমে যায়। অন্য বছরের মতো এবছরও মূল শহরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে থাকায় এই এলাকার ২০টি পরিবারে সদস্যরা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়ায় জন্য পরিবারের অভিভাবকদের হাঁটু সমান পানিতে ডুবে চলাচল করতে হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের নিচু এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়ে স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শারমিন আক্তর বলেন, ‘আমি সম্প্রতি পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। ইতোমধ্যে শান্তিপাড়া ও ফার্মপাড়ার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির সম্পর্কে জেনেছি। মূলত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং উঁচু এলাকার পানি জমার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ওই এলাকায় কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আমি কাল (সোমবার) সংশ্লিষ্টদের এলাকাটি পরিদর্শনের জন্য পাঠাবো।’তিনি আরও বলেন, পৌর শহরের বাসিন্দাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আমরা সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারবো বলে আশা করছি।


এদিকে, শুধু শহরেই নয়, টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে জেলা ও এ বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিতেও। ধান ও সবজির জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে আমন ধান এবং পেঁপে বাগানে পানি জমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনের বর্ষণে জীবননগরের বিভিন্ন মাঠের ফসল ও মাছের পুকুরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং ফসলি জমিতে পানি জমে আছে। এতে আমন ধান ও সবজিতে পচন ধরার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের পাথিলা গ্রামের কৃষক মকসেদ আলী জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে তার দুই বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি কমলে ধানের চারা পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের কৃষক হায়াত আলী বলেন, তার তিন বিঘা জমিতে মাস কলাই ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গেছে এবং কিছু গাছে পচন দেখা দিয়েছে। রোদ না উঠলে এবং যদি আবার বৃষ্টি হয়, তবে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

হরিহরনগর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আব্দুল ওয়াদুদ জানান, দুই দিনের বৃষ্টির কারণে তার পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে গেছে, যা পেঁয়াজের চারা নষ্ট করার শঙ্কা তৈরি করেছে। জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে তার মাছের পুকুর ডুবে গেছে। পুকুরের মাছ বিলের দিকে চলে গেছে, ফলে তার মাছ চাষে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি, তবে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, মাস কলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নিচু এলাকা প্লাবিত,সড়কে জলাবদ্ধতা, ফসলে ক্ষতি

চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টিতে তিন দিনে ১৮২.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড

আজ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে: চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস

আপলোড টাইম : ১২:৪২:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪


টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, এ সময়ের মধ্যে ১৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর ফলে জেলা শহরের নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট এবং ফসলি জমিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শহরের অন্তত ২০টি পরিবার গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত তিন দিনে চুয়াডাঙ্গায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার। এর মধ্যে গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টায় ৮৭ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তিনি বলেন, সোমবার সকালের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। দুপুরের পর অথবা বিকেলে সূর্যের দেখা পাওয়া যেতে পারে।

এদিকে, বৃষ্টির কারণে চুয়াডাঙ্গার শহরতলীর শান্তিপাড়া এবং আশপাশের এলাকার অনেক রাস্তা পানিতে ডুবে আছে। ফলে এ এলাকার মানুষজন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। অন্তত ২০টি পরিবাররের কর্মজীবী সদস্যরা নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য পানি মাড়িয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তারা হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবে চলাচল করছেন। শান্তিপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘শান্তিপাড়ার এই এলাকাটা নিচু হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষাকালে উচু এলাকার পানি জমে চলাচলের পথসহ কয়েকটি বাড়ির মধ্যেও হাঁটু সমান পানি জমে যায়। অন্য বছরের মতো এবছরও মূল শহরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে থাকায় এই এলাকার ২০টি পরিবারে সদস্যরা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজন এবং কর্মক্ষেত্রে যাওয়ায় জন্য পরিবারের অভিভাবকদের হাঁটু সমান পানিতে ডুবে চলাচল করতে হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের নিচু এলাকার জলাবদ্ধতার বিষয়ে স্থানীয় সরকারের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শারমিন আক্তর বলেন, ‘আমি সম্প্রতি পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। ইতোমধ্যে শান্তিপাড়া ও ফার্মপাড়ার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির সম্পর্কে জেনেছি। মূলত অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং উঁচু এলাকার পানি জমার কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ওই এলাকায় কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি নিষ্কাশনেরও ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। আমি কাল (সোমবার) সংশ্লিষ্টদের এলাকাটি পরিদর্শনের জন্য পাঠাবো।’তিনি আরও বলেন, পৌর শহরের বাসিন্দাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ পেলে আমরা সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পারবো বলে আশা করছি।


এদিকে, শুধু শহরেই নয়, টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে জেলা ও এ বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিতেও। ধান ও সবজির জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে আমন ধান এবং পেঁপে বাগানে পানি জমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনের বর্ষণে জীবননগরের বিভিন্ন মাঠের ফসল ও মাছের পুকুরে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টিতে অনেকের পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং ফসলি জমিতে পানি জমে আছে। এতে আমন ধান ও সবজিতে পচন ধরার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের পাথিলা গ্রামের কৃষক মকসেদ আলী জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে তার দুই বিঘা জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানি কমলে ধানের চারা পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের কৃষক হায়াত আলী বলেন, তার তিন বিঘা জমিতে মাস কলাই ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে গেছে এবং কিছু গাছে পচন দেখা দিয়েছে। রোদ না উঠলে এবং যদি আবার বৃষ্টি হয়, তবে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

হরিহরনগর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আব্দুল ওয়াদুদ জানান, দুই দিনের বৃষ্টির কারণে তার পেঁয়াজের জমিতে পানি জমে গেছে, যা পেঁয়াজের চারা নষ্ট করার শঙ্কা তৈরি করেছে। জীবননগর উপজেলার কয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিতে তার মাছের পুকুর ডুবে গেছে। পুকুরের মাছ বিলের দিকে চলে গেছে, ফলে তার মাছ চাষে ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ক্ষয়-ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি, তবে মাঠপর্যায়ে কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, মাস কলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নেমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে।