ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয় সড়কে গণডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

পুলিশ বক্সের ভেতরে আটকে রাখা হয় ১০-১২ জনকে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০২:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে


জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে গণডাকাতির ঘটনায় উঠে এসেছে নানা তথ্য। ঘটনাস্থলের নিকটে পুলিশ বক্স থাকলেও সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। বরং পুলিশ বক্সের ভেতর ১০-১২ জনকে ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখে ডাকাত দলের সদস্যরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার এক কিলোমিটার দূরে সন্তোষপুর মোড়ে পুলিশ ছিল, অথচ তারা কিছুই জানতে পারল না। বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যকর। ফলে প্রশ্ন উঠেছে জীবননগর থানা পুলিশের কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে।

এদিকে, এ ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার নবাগত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ বক্সের ভেতর থাকা চেয়ারগুলো পুলিশ বক্সের পিছনে বাগানের মধ্যে সাজানো রয়েছে। সেখানে গাঁজা সেবনের সরঞ্জাম ও সিগারেটের কিছু অংশ পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাত দলের সদস্যরা বাগানের মধ্যে বসেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ বক্সের চাবি তারা কোথায় পেল, যদি পুলিশ বক্সের ভেতর পথচারীদের আটকে রাখে, তাহলে পুলিশ বক্সে আবার তালা দিল কে। বিষয়টা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের যে স্থানে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি পুলিশ বক্স ছিল। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশি টহল থাকার কথা। বৃহস্পতিবার শিয়ালমারি পশুহাট থাকায় পুলিশের টহল আরও জোরদার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সন্ধ্যারাতে সড়কে বেরিকেড দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী গণডাকাতি হলো, অথচ কোনো পুলিশ সদস্যের দেখা মেলেনি। ডাকাতি শেষে তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে।

জীবননগর উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি জীবননগর থেকে রাত ১০টার দিকে একটি মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। এসময় কয়েকজন লোক মুখোশ পরে আমাকে দাঁড় করিয়ে পুলিশ বস্কের ভেতর আটকে রাখে। সেখানে আরও ১০ জন আটক ছিল। তারা আমাদের বলল, আপনাদের কারো কিছু বলব না, একটা ফেনসিডিলের চালান আসছে, সেটা আটক করে আপনাদের ছেড়ে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জীবননগর থেকে বের হবার সময় ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে বের হয়েছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন রোডে পুলিশ আছে। কিন্তু আমি রাস্তায় কোনো টহল পুলিশ দেখতে পাইনি।’

ডাকাতের শিকার আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাকে যখন আটক করে, তখন তাদের সবার হাতে রাম দা ছিল। ওদের মধ্যে থেকে কেউ বলছে দাদা, আবার কেউ বলছে মাস্টার একটা বোম মারবো। আমরা তাদের অনুরোধ করলে তারা আমার নাম ধরে ডাকে, মনে হলো আমাকে ওদের মধ্যে কেউ চেনে। প্রায় ১ ঘণ্টা আমাদের আটক করে রাখলেও রাস্তায় কোনো পুলিশ আসেনি।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী অভি সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সড়কে অনেক দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এক মাসের মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে।’

এ বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ডাকাত সদস্যদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক দল। সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। দ্রুতই সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ বক্সের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্তোষপুর পুলিশ বক্সে নিয়মিত পুলিশ থাকে এবং ওই সড়কে টহল দেয়। ঘটনার দিনও পুলিশ সদস্যরা ছিল। তবে তারা পুলিশ বক্সের একটু দূরে সন্তোষপুর মোড়ে অবস্থান করছিল।’

ঘণ্টাব্যাপী গণডাকাতি হলো অথচ এত কাছে থেকেও পুলিশ কিছু জানতে পারলো না, এ বিষয়ে ওসি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা ঠিকমতো ম্যাসেজ পাইনি। ডাকাত দলের সদস্যরা সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, ফলে কেউ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।’

এদিকে, ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা বলা জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা পথচারী ও গাড়ি চালকদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া কিছুই নেয়নি। এমনকি কারো মোবাইল ফোনও নেয়নি। ডাকাতির শিকার দু-একজন ব্যক্তি পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের ফোনে পাইনি। ফলে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় সড়কে বেরিকেড দিয়ে প্রায় ২৫-৩০টি গাড়ি থামিয়ে ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় ডাকাত দলের সদস্যরা। পথচারী ও গাড়িচালক কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। পরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরের সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয় সড়কে গণডাকাতির ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য

পুলিশ বক্সের ভেতরে আটকে রাখা হয় ১০-১২ জনকে

আপলোড টাইম : ০২:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪


জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে গণডাকাতির ঘটনায় উঠে এসেছে নানা তথ্য। ঘটনাস্থলের নিকটে পুলিশ বক্স থাকলেও সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না। বরং পুলিশ বক্সের ভেতর ১০-১২ জনকে ঘণ্টাব্যাপী অবরুদ্ধ করে রাখে ডাকাত দলের সদস্যরা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঘটনার এক কিলোমিটার দূরে সন্তোষপুর মোড়ে পুলিশ ছিল, অথচ তারা কিছুই জানতে পারল না। বিষয়টি বেশ চাঞ্চল্যকর। ফলে প্রশ্ন উঠেছে জীবননগর থানা পুলিশের কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে।

এদিকে, এ ঘটনার পর গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গার নবাগত পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা। এসময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ বক্সের ভেতর থাকা চেয়ারগুলো পুলিশ বক্সের পিছনে বাগানের মধ্যে সাজানো রয়েছে। সেখানে গাঁজা সেবনের সরঞ্জাম ও সিগারেটের কিছু অংশ পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাত দলের সদস্যরা বাগানের মধ্যে বসেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশ বক্সের চাবি তারা কোথায় পেল, যদি পুলিশ বক্সের ভেতর পথচারীদের আটকে রাখে, তাহলে পুলিশ বক্সে আবার তালা দিল কে। বিষয়টা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কের যে স্থানে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, সেখানে একটি পুলিশ বক্স ছিল। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশি টহল থাকার কথা। বৃহস্পতিবার শিয়ালমারি পশুহাট থাকায় পুলিশের টহল আরও জোরদার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সন্ধ্যারাতে সড়কে বেরিকেড দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী গণডাকাতি হলো, অথচ কোনো পুলিশ সদস্যের দেখা মেলেনি। ডাকাতি শেষে তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেছে।

জীবননগর উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি জীবননগর থেকে রাত ১০টার দিকে একটি মিটিং শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। এসময় কয়েকজন লোক মুখোশ পরে আমাকে দাঁড় করিয়ে পুলিশ বস্কের ভেতর আটকে রাখে। সেখানে আরও ১০ জন আটক ছিল। তারা আমাদের বলল, আপনাদের কারো কিছু বলব না, একটা ফেনসিডিলের চালান আসছে, সেটা আটক করে আপনাদের ছেড়ে দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি জীবননগর থেকে বের হবার সময় ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে বের হয়েছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন রোডে পুলিশ আছে। কিন্তু আমি রাস্তায় কোনো টহল পুলিশ দেখতে পাইনি।’

ডাকাতের শিকার আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাকে যখন আটক করে, তখন তাদের সবার হাতে রাম দা ছিল। ওদের মধ্যে থেকে কেউ বলছে দাদা, আবার কেউ বলছে মাস্টার একটা বোম মারবো। আমরা তাদের অনুরোধ করলে তারা আমার নাম ধরে ডাকে, মনে হলো আমাকে ওদের মধ্যে কেউ চেনে। প্রায় ১ ঘণ্টা আমাদের আটক করে রাখলেও রাস্তায় কোনো পুলিশ আসেনি।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী অভি সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘এই সড়কে অনেক দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এক মাসের মধ্যে দুটি ঘটনা ঘটলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছে।’

এ বিষয়ে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান, ‘ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ডাকাত সদস্যদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক দল। সন্দেহভাজন একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। দ্রুতই সকল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ বক্সের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সন্তোষপুর পুলিশ বক্সে নিয়মিত পুলিশ থাকে এবং ওই সড়কে টহল দেয়। ঘটনার দিনও পুলিশ সদস্যরা ছিল। তবে তারা পুলিশ বক্সের একটু দূরে সন্তোষপুর মোড়ে অবস্থান করছিল।’

ঘণ্টাব্যাপী গণডাকাতি হলো অথচ এত কাছে থেকেও পুলিশ কিছু জানতে পারলো না, এ বিষয়ে ওসি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা ঠিকমতো ম্যাসেজ পাইনি। ডাকাত দলের সদস্যরা সবার কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, ফলে কেউ পুলিশের সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।’

এদিকে, ঘটনার দিন রাতে ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা বলা জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা পথচারী ও গাড়ি চালকদের কাছ থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার ছাড়া কিছুই নেয়নি। এমনকি কারো মোবাইল ফোনও নেয়নি। ডাকাতির শিকার দু-একজন ব্যক্তি পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের ফোনে পাইনি। ফলে এ ঘটনা নিয়ে পুলিশের কার্যক্রম ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জীবননগর উপজেলার সন্তোষপুর-আন্দুলবাড়ীয়া সড়কে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওই সময় সড়কে বেরিকেড দিয়ে প্রায় ২৫-৩০টি গাড়ি থামিয়ে ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায় ডাকাত দলের সদস্যরা। পথচারী ও গাড়িচালক কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করে তারা। পরে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল।