ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা ছাত্র-জনতা মৈত্রী সফরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দল, দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন

‘দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হলেও ফ্যাসিজম ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

যেখানে অনিয়ম অন্যায় হয়েছে সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে-ডিসি কিসিঞ্জার চাকমা
মানুষের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে ভবিষ্যৎ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলব-পুলিশ সুপার গোলাম মওলা
ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে- শরীফুজ্জামান শরীফ
৫৩ বছরের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপসংস্কৃতি এক দিনে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়- রুহুল আমিন

চুয়াডাঙ্গায় দিনব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৈত্রী সফরে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। ছাত্র-জনতার সাথে মতবিনিময়, সুধীজন, প্রশাসনসহ নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ, আহতদের পরিবারবর্গের সাথে সাক্ষাৎসহ সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। আলোচনায় জেলার নানা সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। ছাত্র প্রতিনিধিরা সমস্যা থেকে উত্তোরণে উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা:

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতার মৈত্রী সফরে আসা সমন্বয়করা স্থানীয় প্রশাসন, নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন, গণমাধ্যমকর্মী ও ছাত্র আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনারদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার হোটেল সাহিদ প্যালেসের রাফেল কনভেনশন সেন্টার অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে এ মতিবিনময় সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান ও চুয়াডাঙ্গার অন্যতম আন্দোলনকারী খুশবু, সিরাজুম মনিরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ফ্রন্টলাইনার আন্দোলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় প্রশাসন, সুধীজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে নানা সমস্যা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার একমাত্র কারাবরণকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘আমার পূর্ববর্তী দুজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তাদের বক্তব্যে বলেছেন, আমদের মুখের ও অন্তরের কথা এক হতে হবে। আমি এর সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমাদের মুখের কথা যদি অন্তরের না হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা যেমন অসাধারণ একটি জেলা, এ জেলার মানুষের আচরণ, ঐতিহ্যও অসাধারণ। ১ বছর ২ মাস কর্মসূত্রে চুয়াডাঙ্গাতে আমার বসবাস করার সুযোগ হয়েছে। এর আগে এই জেলাতে কখনো আসা হয়নি। এই স্বল্প সময়ে চুয়াডাঙ্গার মানুষ এবং তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে জেনেছি।’

ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আজকের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সর্বসাধারণের মতবিনিময় সভায় অনেক বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। তিনি জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় থেকে টেকসই উন্নয়ন ও সকলের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান পর্যায়ের সকলকে সহযোগিতার জন্য প্রতিটি মানুষের সাহায্য করার আহ্বান জানান।

ইতোপূর্বে টিসিবি কার্ড থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে অনিয়ম অন্যায় হয়েছে, সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যে সকল সংস্কার প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গণমাধ্যম আমরা সকলে মিলে যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে এই জেলা ও দেশকে সুন্দররূপে পড়ে তোলা সম্ভব। প্রশাসনিক সংস্কার শুরু হয়েছে, কোথাও অনিয়ম ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বেশকিছু সমস্যা ছিল, সেখানেও প্রশাসনিক সংস্কার করা হয়েছে। আরও যা ত্রুটি আছে, তা সমাধানেরও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলা থেকে মাদক ও দখল দূর করতে প্রশাসক ও যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যহত রয়েছে, কোথাও অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান চালিয়ে তা সমাধান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা জেলাকে আরও সমৃদ্ধ ও সুন্দররূপে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বক্তব্যের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহতের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমি এ জেলার প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চাই। মানুষের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলব। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, এই প্রচলিত কথাটি আমরা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই।

চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের টেকশই উন্নয়নের জন্য সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য যা দেশের প্রতিটি মানুষ স্বীকার করেন। বাংলাদেশ পুলিশ তথা আমি বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যেও সংস্কার প্রয়োজন, সে জন্য আমরা কাজ করছি। সে বিশ্বাসকে ধারণ করে এ জেলায় যোগদানের পরেই আমি সকল পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। পুলিশের মনবল বৃদ্ধি করা এবং পুলিশ যেন মানুষের আস্থা বজায় রেখে ন্যায়ের পথে থেকে কাজ করতে পারে, যে জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখনো পুলিশের সদস্য যারা থানায় আছেন, আমাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমি যতদূর জানতে পেরেছি হয়ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সে সকল স্থানেও পরিবর্তন আনা হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, যারা নতুনভাবে কাজ করবে, তাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ মাদক, চোরাচালানসহ পুলিশের ব্যবহার নিয়ে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, অত্যান্ত নৈতিকতার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি এখানে পালন করতে এসেছি। নৈতিকতার বিষয়ে আমার দিক থেকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমি বেশকিছু বিষয় ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছি। এরমধ্যে ট্রাফিকে সমস্যা রয়েছে। স্ট্যান্ড থাকলেও বাস-ট্রাকগুলো যথাযথভাবে পার্কিং হয় না। জেলার সকল ইজিবাইক শহরে চলাচল করলে এখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কামনা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, বিগত স্বৈরাচার শাসন ব্যবস্থায় যেন দেশের মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের মানুষের মধ্যে তাদের নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ন্যায়ের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আপনারা জানেন, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমাদের রাস্তায় বের হতেও দেয়া হয়নি। ২৭ জুলাই আমি ঢাকায় অবস্থান করাকালে আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমার সন্তান আহত হয়েছে। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে আমি চুয়াডাঙ্গায় চলে আসি।

শরীফুজ্জামান বলেন, বিগত দিনে পুলিশ প্রশাসনে যত দুর্নীতি হয়েছে, তা আর হতে দেয়া হবে না। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। অনেকে বলেছেন, একটি পক্ষ গিয়েছে অপর পক্ষ এসেছে, কিন্তু পরিস্থিতি একই আছে। আমি সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমার নেতা তরেক রহমান বলেছেন, যে মানুষের ওপর জুলুম করবে, সে বিএনপির কেউ নয়। বিএনপির একজন নেতা-কর্মীর কোনো অপরাধও মেনে নেয়া হবে না। আমরা ইতিমধ্যে বিএনপির যে নেতাদের বিরুদ্ধে ছোট অভিযোগও পেয়েছি, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি। বিএনপির চাওয়া দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলা, সেখানে প্রতিটি মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।

তিনি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন থানা ও ক্যাম্পে এখনো যে সকল পুলিশ সদস্যরা কর্মরত আছেন, যারা বিগত দিনে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হয়েছেন, নিজেদের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করে সেখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এসময় তিনি চুয়াডাঙ্গাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পুলিশ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে এবং সার্বিক সহযোগিতা করে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. রুহুল আমিন বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এরপর বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট আমরা এই স্বৈরাচার শাসনের পরাধীনতা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই আন্দোলনে শহীদদের আমরা চিরকাল স্মরণ করতে চাই।

রুহুল আমিন বলেন, আজ ঢাকাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যারা চুয়াডাঙ্গাতে এসেছেন, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই ছাত্র-জনতার আন্দেলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিচয় দ্রুত সময়ের মধ্যে তুলে ধরে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণখচিত হোক। যারা আহত হয়েছেন বা এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের ইতিহাসও যেন কেউ ভুলে না যায়। এটি দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে, অন্যথায় সাপে কেটে মারা যাওয়া কাউকেও ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হতে পারে।

তিনি বলেন, বিগত ৫৩ বছরে যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপসংস্কৃতি এ দেশে গড়ে উঠেছে, তা এক দিনে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। তবে প্রতিদিন একটু একটু করে এই অপসংস্কৃতি দেশ থেকে চিরতরে ভেঙে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে, অন্যথায় কোনো আইন, কোনো আদালত আমাদের এই স্বাধীনতা টেকসই করতে পারবে না। দখলবাজী, মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ সকল দুর্নীতির ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জামায়াত কাজ করেছে, যতদিন জামায়াত আছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাবে।

রুহুল আমিন বলেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা শহর, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের ৪৭ জনের তালিকাও আমার কাছে আছে। আমি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, হামলাকারীদের ফুটেজ ভিডিও সবখানে আছে। এর বিচারের জন্য মামলার প্রয়োজন কেন হবে? হামলাকারীদের ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমার সন্তানদের মামলার বাদী হয়ে নতুন করে হয়রানির মুখোমুখি যেন হতে না হয়।

ছাত্র-জনতা মতবিনিময় সভা:

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতা মতবিনিময় সভা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১০ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দল। গতকাল বুধবার বিকেলে শহরের টাউন ফুটবল মাঠে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সমন্বয়করা। ছাত্র-জনতার প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এছাড়া ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার নির্দেশনাও দেন তারা।

চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম শিক্ষার্থী সাফ্ফাতুল ইসলামের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ওয়াহিদ উজ্জামান, আকরাম হোসাইন রাজ, আশরেফা খাতুন, আবু বক্কর খান, ফারহানা ফারিনা, মইনুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দত্ত, তৌহিদ ইসলাম শুভ, বাবু খান ও জান্নাত।

তারা বলেন, দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হলেও ফ্যাসিজম ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে। এক স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক দল দেশটাকে নিজেদের মালিকানা সম্পদ মনে করে নিয়েছে। ৫ আগস্টের আগেও যেভাবে চাঁদাবাজি দখলবাজি চলছিল, তা এখনো চলছে। নতুন বাংলাদেশে রাজনীতি করা এখন অত্যান্ত কঠিন। কেননা, দেশের ছাত্র সমাজ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে। এই ফ্যাসিবাদী সিস্টেম বাতিল করার জন্য ছাত্ররা এখনো মাঠে রয়েছে।

তারা আরও বলেন, জেলার কোথাও কোনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা ছাত্র প্রতিনিধির কমিটি দেয়া হয়নি। ভুয়া সমন্বয়ক সেজে অনেকে চাঁদাবাজি দখলদারিত্বের সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মতবিনিময় সভায় চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের কবর জিয়ারত ও পরিবারবর্গের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ:

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার দুই শহীদ শাহরিয়ার শুভ ও মাসুদ আলীর কবর জিয়ারত করেছেন ছাত্র-জনতা মৈত্রী সফরে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। গতকাল বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল স্থানীয় আন্দোলনকারীদের সাথে নিয়ে দুটি পৃথক দলে ভাগ হয়ে গোকুলখালী ও শংকরচন্দ্র গ্রামে গিয়ে কবর জিয়ারত করেন। এসময় দুই শহীদের পরিবারবর্গের সাথেও তারা আলোচনা করেন। এছাড়াও, চুয়াডাঙ্গায় আহত বা চুয়াডাঙ্গার সন্তান যারা ঢাকা বা বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছিলেন, তাদের সাথেও সাক্ষাৎ করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা ছাত্র-জনতা মৈত্রী সফরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দল, দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন

‘দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হলেও ফ্যাসিজম ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে’

আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যেখানে অনিয়ম অন্যায় হয়েছে সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে-ডিসি কিসিঞ্জার চাকমা
মানুষের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে ভবিষ্যৎ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলব-পুলিশ সুপার গোলাম মওলা
ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে- শরীফুজ্জামান শরীফ
৫৩ বছরের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপসংস্কৃতি এক দিনে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়- রুহুল আমিন

চুয়াডাঙ্গায় দিনব্যাপী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মৈত্রী সফরে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। ছাত্র-জনতার সাথে মতবিনিময়, সুধীজন, প্রশাসনসহ নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ, আহতদের পরিবারবর্গের সাথে সাক্ষাৎসহ সমন্বয়কদের সাথে আলোচনা করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। আলোচনায় জেলার নানা সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। ছাত্র প্রতিনিধিরা সমস্যা থেকে উত্তোরণে উদ্যোগ নিবে বলে জানিয়েছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা:

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতার মৈত্রী সফরে আসা সমন্বয়করা স্থানীয় প্রশাসন, নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, সুধীজন, গণমাধ্যমকর্মী ও ছাত্র আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনারদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গার হোটেল সাহিদ প্যালেসের রাফেল কনভেনশন সেন্টার অ্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারে এ মতিবিনময় সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ, জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির রুহুল আমিন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, জেলা শিক্ষা অফিসার আতাউর রহমান ও চুয়াডাঙ্গার অন্যতম আন্দোলনকারী খুশবু, সিরাজুম মনিরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম।

অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ফ্রন্টলাইনার আন্দোলনকারীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় প্রশাসন, সুধীজন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছে নানা সমস্যা তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার একমাত্র কারাবরণকারী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রান্তসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হওয়া শিক্ষার্থীরা।

মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ‘আমার পূর্ববর্তী দুজন রাজনৈতিক ব্যক্তি তাদের বক্তব্যে বলেছেন, আমদের মুখের ও অন্তরের কথা এক হতে হবে। আমি এর সঙ্গে একমত পোষণ করি। আমাদের মুখের কথা যদি অন্তরের না হয়, তাহলে প্রকৃতপক্ষে কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক এবং প্রাকৃতিক দিক থেকে চুয়াডাঙ্গা যেমন অসাধারণ একটি জেলা, এ জেলার মানুষের আচরণ, ঐতিহ্যও অসাধারণ। ১ বছর ২ মাস কর্মসূত্রে চুয়াডাঙ্গাতে আমার বসবাস করার সুযোগ হয়েছে। এর আগে এই জেলাতে কখনো আসা হয়নি। এই স্বল্প সময়ে চুয়াডাঙ্গার মানুষ এবং তাদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে জেনেছি।’

ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আজকের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সর্বসাধারণের মতবিনিময় সভায় অনেক বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। তিনি জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায় থেকে টেকসই উন্নয়ন ও সকলের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মেম্বার থেকে চেয়ারম্যান পর্যায়ের সকলকে সহযোগিতার জন্য প্রতিটি মানুষের সাহায্য করার আহ্বান জানান।

ইতোপূর্বে টিসিবি কার্ড থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে অনিয়ম অন্যায় হয়েছে, সকল ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় যে সকল সংস্কার প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, জনসাধারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং গণমাধ্যম আমরা সকলে মিলে যদি একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে এই জেলা ও দেশকে সুন্দররূপে পড়ে তোলা সম্ভব। প্রশাসনিক সংস্কার শুরু হয়েছে, কোথাও অনিয়ম ঘটলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বেশকিছু সমস্যা ছিল, সেখানেও প্রশাসনিক সংস্কার করা হয়েছে। আরও যা ত্রুটি আছে, তা সমাধানেরও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জেলা থেকে মাদক ও দখল দূর করতে প্রশাসক ও যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যহত রয়েছে, কোথাও অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান চালিয়ে তা সমাধান করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা জেলাকে আরও সমৃদ্ধ ও সুন্দররূপে গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বক্তব্যের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহতের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমার চাওয়া পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমি এ জেলার প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে চাই। মানুষের আস্থা অর্জনের মধ্যদিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলব। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, এই প্রচলিত কথাটি আমরা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাই।

চুয়াডাঙ্গা তথা দেশের টেকশই উন্নয়নের জন্য সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য যা দেশের প্রতিটি মানুষ স্বীকার করেন। বাংলাদেশ পুলিশ তথা আমি বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যেও সংস্কার প্রয়োজন, সে জন্য আমরা কাজ করছি। সে বিশ্বাসকে ধারণ করে এ জেলায় যোগদানের পরেই আমি সকল পুলিশ সদস্যকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। পুলিশের মনবল বৃদ্ধি করা এবং পুলিশ যেন মানুষের আস্থা বজায় রেখে ন্যায়ের পথে থেকে কাজ করতে পারে, যে জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখনো পুলিশের সদস্য যারা থানায় আছেন, আমাদের কিছুটা সময় প্রয়োজন। আমি যতদূর জানতে পেরেছি হয়ত দ্রুত সময়ের মধ্যে সে সকল স্থানেও পরিবর্তন আনা হবে।

পুলিশ সুপার বলেন, যারা নতুনভাবে কাজ করবে, তাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ মাদক, চোরাচালানসহ পুলিশের ব্যবহার নিয়ে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, অত্যান্ত নৈতিকতার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমি এখানে পালন করতে এসেছি। নৈতিকতার বিষয়ে আমার দিক থেকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আমি বেশকিছু বিষয় ইতিমধ্যে লক্ষ্য করেছি। এরমধ্যে ট্রাফিকে সমস্যা রয়েছে। স্ট্যান্ড থাকলেও বাস-ট্রাকগুলো যথাযথভাবে পার্কিং হয় না। জেলার সকল ইজিবাইক শহরে চলাচল করলে এখানে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আপনাদের সকলের সহযোগিতা আমাদের একান্ত কামনা।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, বিগত স্বৈরাচার শাসন ব্যবস্থায় যেন দেশের মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের মানুষের মধ্যে তাদের নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ন্যায়কে ন্যায় এবং অন্যায়কে অন্যায় বলার সাহস আমাদের থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ন্যায়ের সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। আপনারা জানেন, ৫ আগস্ট দুপুর ১২টা পর্যন্ত আমাদের রাস্তায় বের হতেও দেয়া হয়নি। ২৭ জুলাই আমি ঢাকায় অবস্থান করাকালে আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমার সন্তান আহত হয়েছে। তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে রেখে আমি চুয়াডাঙ্গায় চলে আসি।

শরীফুজ্জামান বলেন, বিগত দিনে পুলিশ প্রশাসনে যত দুর্নীতি হয়েছে, তা আর হতে দেয়া হবে না। এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। অনেকে বলেছেন, একটি পক্ষ গিয়েছে অপর পক্ষ এসেছে, কিন্তু পরিস্থিতি একই আছে। আমি সকলের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমার নেতা তরেক রহমান বলেছেন, যে মানুষের ওপর জুলুম করবে, সে বিএনপির কেউ নয়। বিএনপির একজন নেতা-কর্মীর কোনো অপরাধও মেনে নেয়া হবে না। আমরা ইতিমধ্যে বিএনপির যে নেতাদের বিরুদ্ধে ছোট অভিযোগও পেয়েছি, তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি। বিএনপির চাওয়া দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ে তোলা, সেখানে প্রতিটি মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে।

তিনি পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন থানা ও ক্যাম্পে এখনো যে সকল পুলিশ সদস্যরা কর্মরত আছেন, যারা বিগত দিনে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার হয়েছেন, নিজেদের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করেছেন, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বদলি করে সেখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে। এসময় তিনি চুয়াডাঙ্গাকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে পুলিশ ও প্রশাসনের সমন্বয়ে এবং সার্বিক সহযোগিতা করে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. রুহুল আমিন বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। এরপর বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার দেশকে স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট আমরা এই স্বৈরাচার শাসনের পরাধীনতা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই আন্দোলনে শহীদদের আমরা চিরকাল স্মরণ করতে চাই।

রুহুল আমিন বলেন, আজ ঢাকাসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা যারা চুয়াডাঙ্গাতে এসেছেন, আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই ছাত্র-জনতার আন্দেলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিচয় দ্রুত সময়ের মধ্যে তুলে ধরে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণখচিত হোক। যারা আহত হয়েছেন বা এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তাদের ইতিহাসও যেন কেউ ভুলে না যায়। এটি দ্রুত সময়ে সম্পন্ন করতে হবে, অন্যথায় সাপে কেটে মারা যাওয়া কাউকেও ছাত্র আন্দোলনে মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হতে পারে।

তিনি বলেন, বিগত ৫৩ বছরে যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অপসংস্কৃতি এ দেশে গড়ে উঠেছে, তা এক দিনে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। তবে প্রতিদিন একটু একটু করে এই অপসংস্কৃতি দেশ থেকে চিরতরে ভেঙে দিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে, অন্যথায় কোনো আইন, কোনো আদালত আমাদের এই স্বাধীনতা টেকসই করতে পারবে না। দখলবাজী, মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ সকল দুর্নীতির ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জামায়াত কাজ করেছে, যতদিন জামায়াত আছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাবে।

রুহুল আমিন বলেন, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা শহর, জীবননগর ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে অনেক শিক্ষার্থী আহত হন, যাদের ৪৭ জনের তালিকাও আমার কাছে আছে। আমি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ করে বলতে চাই, হামলাকারীদের ফুটেজ ভিডিও সবখানে আছে। এর বিচারের জন্য মামলার প্রয়োজন কেন হবে? হামলাকারীদের ভিডিও দেখে চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। আমার সন্তানদের মামলার বাদী হয়ে নতুন করে হয়রানির মুখোমুখি যেন হতে না হয়।

ছাত্র-জনতা মতবিনিময় সভা:

কর্মসূচির অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র-জনতা মতবিনিময় সভা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১০ সদস্যের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দল। গতকাল বুধবার বিকেলে শহরের টাউন ফুটবল মাঠে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় সমন্বয়করা। ছাত্র-জনতার প্রশ্নের উত্তর দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা। এছাড়া ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার নির্দেশনাও দেন তারা।

চুয়াডাঙ্গায় ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী অন্যতম শিক্ষার্থী সাফ্ফাতুল ইসলামের পরিচালনায় এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ওয়াহিদ উজ্জামান, আকরাম হোসাইন রাজ, আশরেফা খাতুন, আবু বক্কর খান, ফারহানা ফারিনা, মইনুল ইসলাম, বিশ্বজিৎ দত্ত, তৌহিদ ইসলাম শুভ, বাবু খান ও জান্নাত।

তারা বলেন, দেশ দ্বিতীয় বারের মতো স্বাধীন হলেও ফ্যাসিজম ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে। এক স্বৈরশাসক বিদায় নিয়েছে। কিন্তু কতিপয় রাজনৈতিক দল দেশটাকে নিজেদের মালিকানা সম্পদ মনে করে নিয়েছে। ৫ আগস্টের আগেও যেভাবে চাঁদাবাজি দখলবাজি চলছিল, তা এখনো চলছে। নতুন বাংলাদেশে রাজনীতি করা এখন অত্যান্ত কঠিন। কেননা, দেশের ছাত্র সমাজ সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নজরদারিতে রেখেছে। এই ফ্যাসিবাদী সিস্টেম বাতিল করার জন্য ছাত্ররা এখনো মাঠে রয়েছে।

তারা আরও বলেন, জেলার কোথাও কোনো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা ছাত্র প্রতিনিধির কমিটি দেয়া হয়নি। ভুয়া সমন্বয়ক সেজে অনেকে চাঁদাবাজি দখলদারিত্বের সাথে জড়িত রয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে সজাগ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলব। মতবিনিময় সভায় চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলা থেকেই শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদের কবর জিয়ারত ও পরিবারবর্গের সাথে ছাত্র প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ:

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গার দুই শহীদ শাহরিয়ার শুভ ও মাসুদ আলীর কবর জিয়ারত করেছেন ছাত্র-জনতা মৈত্রী সফরে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। গতকাল বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল স্থানীয় আন্দোলনকারীদের সাথে নিয়ে দুটি পৃথক দলে ভাগ হয়ে গোকুলখালী ও শংকরচন্দ্র গ্রামে গিয়ে কবর জিয়ারত করেন। এসময় দুই শহীদের পরিবারবর্গের সাথেও তারা আলোচনা করেন। এছাড়াও, চুয়াডাঙ্গায় আহত বা চুয়াডাঙ্গার সন্তান যারা ঢাকা বা বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয়ে আহত হয়েছিলেন, তাদের সাথেও সাক্ষাৎ করে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল।