ইপেপার । আজ বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ; বঞ্চিতদের পদায়নে অগ্রাধিকার দিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১২ বার পড়া হয়েছে

নিয়োগ, পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। একজন যুগ্মসচিবের সাথে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হট্টগোল হয়েছে। ডিসি পদে নিয়োগ না পাওয়া কর্মকর্তারা যুগ্মসচিবকে ঘেরাও করেছেন- এমন খবরে পুলিশ ও সেনাকর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তাদের হস্তক্ষেপের দরকার পড়েনি। ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী কর্মকর্তারা দাবি করেন, আওয়ামী সরকারের সময় গত ১৫ বছরে তারা তিনবার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান নেই। তাদের অভিযোগ- শুধু রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বিগত সরকার তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করে জুনিয়রদের অধীনে চাকরি করতে বাধ্য করেছে। অথচ এখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও ঘুরেফিরে সেই হাসিনার প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ডিসি পদে সম্প্রতি যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনের সুবিধাভোগী।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জনপ্রশাসনে যেসব নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে সেগুলো নিয়ে প্রায় বিতর্ক উঠছে। শিল্পকলা একাডেমিতে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যেটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় প্রতিটি মানুষ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। শিল্পকলা, বাংলা একাডেমি বা গ্রন্থকেন্দ্রের নিয়োগ জনপ্রশাসনের বিষয় নয়। কিন্তু এ থেকে যে প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে তা সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর জাতির আকাক্সক্ষার সাথে যায় না। সবশেষে ডিসিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এসব কর্মকাণ্ড জাতীয় আকাক্সক্ষার অনুকূলে নয়; বরং সেই পুরনো আওয়ামী দুরাচারদের পুনর্বাসনের প্রকল্প।

বিপদের কথা এই যে, কাজগুলো করা হচ্ছে খোদ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাহিদ ইসলাম সচিবালয় পরিদর্শনকালে বলে এসেছেন, কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে কিংবা কোনো কর্মকর্তা কোনোভাবে বঞ্চিত হলে বিষয়টি তাদের নজরে আনতে বলেছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে বৈঠক করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে তা সংশোধনের আশ্বাস দেন।

গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এবং সরকারের যাবতীয় অপকর্মে সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ রাজনৈতিক মতের চিহ্নিত করে হাজারো আমলাকে পদোন্নতিবঞ্চিত এবং বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এমনকি বিসিএস উত্তীর্ণ বহু মেধাবী তরুণকে চাকরিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি শুধু বিএনপি-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে। এমন গণবিরোধী সরকার সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। কোটা সুবিধার আওতায় ভয়ঙ্কর দলীয়করণের এমন প্রক্রিয়াও আর কখনো দেখা যায়নি।

জাতি আশা করে, এখন সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। কাউকে বিশেষ কোনো তকমা নিয়ে বঞ্চিত করা হবে না। কিন্তু সবার আগে গত ১৫ বছরের বঞ্চিত-নিপীড়িতদের বঞ্চনার অবসান ঘটাতে হবে। স্বৈরাচারের দোসরদের সব অন্যায় সুবিধা আদায়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তবে জনপ্রশাসন উপদেষ্টা কতটা এই নীতি অনুসরণ করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকের মনে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জনপ্রশাসনে বিশৃঙ্খলা ; বঞ্চিতদের পদায়নে অগ্রাধিকার দিন

আপলোড টাইম : ০৮:১৬:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নিয়োগ, পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। একজন যুগ্মসচিবের সাথে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের হট্টগোল হয়েছে। ডিসি পদে নিয়োগ না পাওয়া কর্মকর্তারা যুগ্মসচিবকে ঘেরাও করেছেন- এমন খবরে পুলিশ ও সেনাকর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে তাদের হস্তক্ষেপের দরকার পড়েনি। ক্ষুব্ধ প্রতিবাদী কর্মকর্তারা দাবি করেন, আওয়ামী সরকারের সময় গত ১৫ বছরে তারা তিনবার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কোনো তদন্ত বা অনুসন্ধান নেই। তাদের অভিযোগ- শুধু রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে বিগত সরকার তাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করে জুনিয়রদের অধীনে চাকরি করতে বাধ্য করেছে। অথচ এখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও ঘুরেফিরে সেই হাসিনার প্রশাসনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ডিসি পদে সম্প্রতি যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ বিগত ফ্যাসিস্ট শাসনের সুবিধাভোগী।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে জনপ্রশাসনে যেসব নিয়োগ ও পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে সেগুলো নিয়ে প্রায় বিতর্ক উঠছে। শিল্পকলা একাডেমিতে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে যেটি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের প্রায় প্রতিটি মানুষ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে নিয়েও অনেকের আপত্তি আছে। শিল্পকলা, বাংলা একাডেমি বা গ্রন্থকেন্দ্রের নিয়োগ জনপ্রশাসনের বিষয় নয়। কিন্তু এ থেকে যে প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে তা সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর জাতির আকাক্সক্ষার সাথে যায় না। সবশেষে ডিসিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, এসব কর্মকাণ্ড জাতীয় আকাক্সক্ষার অনুকূলে নয়; বরং সেই পুরনো আওয়ামী দুরাচারদের পুনর্বাসনের প্রকল্প।

বিপদের কথা এই যে, কাজগুলো করা হচ্ছে খোদ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাহিদ ইসলাম সচিবালয় পরিদর্শনকালে বলে এসেছেন, কোনো কর্মকর্তার বিষয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে কিংবা কোনো কর্মকর্তা কোনোভাবে বঞ্চিত হলে বিষয়টি তাদের নজরে আনতে বলেছেন। বঞ্চিত কর্মকর্তারা পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সাথে বৈঠক করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকলে তা সংশোধনের আশ্বাস দেন।

গত ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা সব সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে এবং সরকারের যাবতীয় অপকর্মে সহায়তা দিয়েছে। বিশেষ রাজনৈতিক মতের চিহ্নিত করে হাজারো আমলাকে পদোন্নতিবঞ্চিত এবং বছরের পর বছর ওএসডি করে রাখা হয়েছে। এমনকি বিসিএস উত্তীর্ণ বহু মেধাবী তরুণকে চাকরিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি শুধু বিএনপি-জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্টতার অজুহাতে। এমন গণবিরোধী সরকার সারা পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। কোটা সুবিধার আওতায় ভয়ঙ্কর দলীয়করণের এমন প্রক্রিয়াও আর কখনো দেখা যায়নি।

জাতি আশা করে, এখন সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলবে। কাউকে বিশেষ কোনো তকমা নিয়ে বঞ্চিত করা হবে না। কিন্তু সবার আগে গত ১৫ বছরের বঞ্চিত-নিপীড়িতদের বঞ্চনার অবসান ঘটাতে হবে। স্বৈরাচারের দোসরদের সব অন্যায় সুবিধা আদায়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তবে জনপ্রশাসন উপদেষ্টা কতটা এই নীতি অনুসরণ করতে পারবেন তা নিয়ে অনেকের মনে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে।