ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ; আমাদের সজাগ থাকতে হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৩৪:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১০ বার পড়া হয়েছে

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার দেশের সশস্ত্রবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বাইরের কোনো দেশ যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করলে বা উসকানি দিলে এমন আহ্বান জানাতেই পারেন তিনি। যুদ্ধের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকা সশস্ত্রবাহিনীর কাজ। তাই রাজনাথের আহ্বান অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নাম ধরে যেভাবে এ আহ্বান জানান তা নিঃসন্দেহে শিষ্টাচারের খেলাপ। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশে ভারতের তাঁবেদার সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশটির পক্ষে এ দেশে যা ইচ্ছা তাই করার এবং বলার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে অবাধে বাংলাদেশ ও এর জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করেছে দিল্লি।
যেনতেনভাবে প্রহসনের নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেয়াই অপরাধমূলক কাজ। বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি অসম্মান জানানো মূলত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরোক্ষ যুদ্ধের শামিল। অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার, সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা, স্বাধীন বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রায় বিনা মাসুলে ট্রানজিট করিডোর সুবিধা নেয়া, বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নিজের অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত সব সুবিধা আদায় ইত্যাদি সবই যুদ্ধ ডেকে আনতে যথেষ্ট। হাসিনা সরকার টুঁ শব্দ করার দরকার মনে করেনি। ক্ষমতায় থেকে অবাধে লুটপাট চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজ ছিল না। সেটি তারা করেছে। ক্ষমতালোভী হাসিনার মেরুদণ্ড সামান্য সোজা থাকলে ভারত এসব করতে পারত না।
সঙ্গত কারণে বলা যায়, হাসিনার পতন ভারতের জন্য বিরাট ক্ষতি। এমন সোনার ডিম পাড়া হাঁস বা উপনিবেশ আর কোথায় পাবে? সুতরাং ভারতের মর্মবেদনা বোধগম্য। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য সে মর্মবেদনার প্রতিফলন। কিন্তু ভারত যদি সেসব দিন ফেরানোর চেষ্টা করে, তা হলে আরো বৈরিতার জন্ম দেবে। সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলে কাজ হয়নি। নিরাপত্তা কার্ড খেলেও হবে না।
রাজনাথের পরোক্ষ হুমকি নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপি, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কথা বলেছেন। এখনো অর্ন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্ক হতে হবে নিয়ম অনুযায়ী দু’টি স্বাধীন দেশের সম্পর্ক যেমন হয় তেমনি। উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে সুসম্পর্ক থাকবে, এর বাইরে নয়।
বাংলাদেশ ভারতের প্রতি বৈরী নয়; কিন্তু কেউ বৈরী আচরণ করলে সমুচিত জবাব দেয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা যেমনটি বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে ওদেরও একই পরিণতি হবে। অরুনাচলে চীনের হাতে এরই মধ্যে ৬০ বর্গমাইল ভূমি খুইয়েছে ভারত। লাদাখে বড় অংশ বেহাত। সেখানে সীমান্তে বিপুল সেনা প্রস্তুত রেখেছে চীন। মনিপুর দেড় বছর ধরে অশান্ত। সেখানকার সবশেষ খবর, যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পথে যাচ্ছে। বিদ্রোহীরা মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে আক্রমণ শাণাচ্ছে। তাই বলতে চাই, বাংলাদেশ নয়, রাজনাথের নজর দেয়া দরকার নিজের ঘর সামলানোর দিকে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ; আমাদের সজাগ থাকতে হবে

আপলোড টাইম : ০৭:৩৪:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তার দেশের সশস্ত্রবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। বাইরের কোনো দেশ যুদ্ধের হুমকি সৃষ্টি করলে বা উসকানি দিলে এমন আহ্বান জানাতেই পারেন তিনি। যুদ্ধের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকা সশস্ত্রবাহিনীর কাজ। তাই রাজনাথের আহ্বান অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের নাম ধরে যেভাবে এ আহ্বান জানান তা নিঃসন্দেহে শিষ্টাচারের খেলাপ। স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গত প্রায় দুই দশক ধরে বাংলাদেশে ভারতের তাঁবেদার সরকার ক্ষমতায় থাকায় দেশটির পক্ষে এ দেশে যা ইচ্ছা তাই করার এবং বলার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার বিনিময়ে অবাধে বাংলাদেশ ও এর জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করেছে দিল্লি।
যেনতেনভাবে প্রহসনের নির্বাচনে হাসিনাকে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ দেয়াই অপরাধমূলক কাজ। বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি অসম্মান জানানো মূলত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরোক্ষ যুদ্ধের শামিল। অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার, সীমান্তে নির্বিচারে বাংলাদেশীদের হত্যা, স্বাধীন বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে প্রায় বিনা মাসুলে ট্রানজিট করিডোর সুবিধা নেয়া, বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে একতরফাভাবে নিজের অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক নিরাপত্তাসংক্রান্ত সব সুবিধা আদায় ইত্যাদি সবই যুদ্ধ ডেকে আনতে যথেষ্ট। হাসিনা সরকার টুঁ শব্দ করার দরকার মনে করেনি। ক্ষমতায় থেকে অবাধে লুটপাট চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের কোনো কাজ ছিল না। সেটি তারা করেছে। ক্ষমতালোভী হাসিনার মেরুদণ্ড সামান্য সোজা থাকলে ভারত এসব করতে পারত না।
সঙ্গত কারণে বলা যায়, হাসিনার পতন ভারতের জন্য বিরাট ক্ষতি। এমন সোনার ডিম পাড়া হাঁস বা উপনিবেশ আর কোথায় পাবে? সুতরাং ভারতের মর্মবেদনা বোধগম্য। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য সে মর্মবেদনার প্রতিফলন। কিন্তু ভারত যদি সেসব দিন ফেরানোর চেষ্টা করে, তা হলে আরো বৈরিতার জন্ম দেবে। সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলে কাজ হয়নি। নিরাপত্তা কার্ড খেলেও হবে না।
রাজনাথের পরোক্ষ হুমকি নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিএনপি, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন দলের নেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কথা বলেছেন। এখনো অর্ন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মনে রাখা জরুরি, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্ক হতে হবে নিয়ম অনুযায়ী দু’টি স্বাধীন দেশের সম্পর্ক যেমন হয় তেমনি। উভয়ের স্বার্থ রক্ষা করে সুসম্পর্ক থাকবে, এর বাইরে নয়।
বাংলাদেশ ভারতের প্রতি বৈরী নয়; কিন্তু কেউ বৈরী আচরণ করলে সমুচিত জবাব দেয়ার প্রস্তুতি থাকতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা যেমনটি বলেছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা হলে ওদেরও একই পরিণতি হবে। অরুনাচলে চীনের হাতে এরই মধ্যে ৬০ বর্গমাইল ভূমি খুইয়েছে ভারত। লাদাখে বড় অংশ বেহাত। সেখানে সীমান্তে বিপুল সেনা প্রস্তুত রেখেছে চীন। মনিপুর দেড় বছর ধরে অশান্ত। সেখানকার সবশেষ খবর, যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির পথে যাচ্ছে। বিদ্রোহীরা মিসাইল ও ড্রোন দিয়ে আক্রমণ শাণাচ্ছে। তাই বলতে চাই, বাংলাদেশ নয়, রাজনাথের নজর দেয়া দরকার নিজের ঘর সামলানোর দিকে।