ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে টাইগারদের ইতিহাস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা
২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট ম্যাচে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটে হারিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করলেন বাংলা টাইগাররা। পাকিস্তানের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে তাদের দেশে গিয়ে এভাবে দাপটের সঙ্গে ধরাশায়ী করা নিঃসন্দেহে শান্ত-মিরাজদের জন্য বিরাট অর্জন। প্রথমটিতে পাকিস্তান হেরেছিল ১০ উইকেটে। বৃষ্টিতে প্রথম দিনের খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার পরেও দ্বিতীয় টেস্টে জিতেছে ৬ উইকেটে। ফলাফল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তান যখন বাংলাদেশকে শোচনীয় পরাজয় উপহার দেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল, তখন মিরাজ-লিটনের রেকর্ড রানের জুটিতে যেন দাবার চাল উলটে গেল! এখন পর্যন্ত কোনো দল টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ রানের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ এক অনন্য নজির স্থাপন করল।
এদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে ধবলধোলাই করে টেস্ট সিরিজ জয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিকেলে তিনি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ফোন করে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ দল দেশে ফেরার পর সংবর্ধনার কথাও বলেন তিনি।
গতকাল জয়ের জন্য যখন বাংলাদেশের দরকার ছিল আর মাত্র ৪ রান, তখন আবরার আহমেদের ফুলার লেন্থের বল কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি ছাড়া করেন সাকিব আল হাসান। বল বাউন্ডারির সীমানা ছোঁয়ার আগেই ধারাভাষ্যকারের আওয়াজ ভেদ করে শোনা যায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর চিত্কার। সেটি শুনে সত্যিকার টাইগারের গর্জনই মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে, শোচনীয় পরাজয়ের বেদনায় পাকিস্তানি অধিনায়ক শান মাসুদসহ দলের সবাই যেন মিশে যাচ্ছিলেন মাটির সঙ্গে। রাওয়ালপিন্ডির মাটিতে তখন বাজছে, ‘জ্বলে উঠো বাংলাদেশ, গর্জে উঠো বাংলাদেশ’ গান। শান্তদের সঙ্গে তখন গোটা বাংলাদেশও মেতেছিল উত্সবের আনন্দে। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে টাইগার বন্দনায় মেতেছেন ভক্তরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০১ সাল থেকে টেস্ট খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৮টি টেস্ট খেলে প্রতিটিতেই হেরেছিল টাইগার বাহিনী। এগুলোর মধ্যে ৪টিই ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার। ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেবার খুলনাতে জয় নয়, ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এরপরে আরও ৪টি হার দেখে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে জয়শূন্য ছিল টাইগার বাহিনী। এতদিনের অপেক্ষা শেষ হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। গত ২৫ আগস্ট আসে প্রথম টেস্ট জয়। সেখানেই থেমে থাকেননি শান্তরা। সিরিজও জিতে নিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত ১১টি দেশের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারানোর পরে এবার ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট জয় বাকি রইল।
এবারের পাকিস্তান সিরিজসহ বাংলাদেশ মোট ৭৬টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। এর মধ্যে মোট জয় ৯টি, ড্র ১০টি। বাকি ৫৭ সিরিজে পরাজয় হজম করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে পাকিস্তানকে হারানো ঐতিহাসিক ঘটনার পাশাপাশি বড় একটি সিরিজ জয়ও। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আগে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার বার (২০০৫, ২০১৪, ২০২০ ও ২০২১ সালে), ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই বার (২০০৯ ও ২০১৮) ও একবার করে আয়ারল্যান্ড (২০২৩) ও আফগানিস্তানের (২০২৩) বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টাইগার বাহিনী।
দেশের বাইরে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয় হলেও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জয়। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০৯ সালে উইন্ডিজকে হারালেও সেটি নিয়ে কথা রয়েছে। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল একাদশ না খেলায় কিছুটা এগিয়েই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার পাকিস্তানের মূল একাদশের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করে জয় তুলে নিয়েছেন শান্তরা। তাতে ভবিষ্যত্ ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে রাখল।
শেষ ম্যাচে চাপের মুখে গুরুত্বপূর্ণ ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন লিটন কুমার দাস। অন্যদিকে, দুই ম্যাচে ১৫৫ রান ও ১০ উইকেট তুলে নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করে টাইগারদের ইতিহাস

আপলোড টাইম : ০৯:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা
২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে টেস্ট ক্রিকেটে নতুন উচ্চতায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। সিরিজের দ্বিতীয় এবং শেষ টেস্ট ম্যাচে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটে হারিয়ে হোয়াইট ওয়াশ করলেন বাংলা টাইগাররা। পাকিস্তানের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিকে তাদের দেশে গিয়ে এভাবে দাপটের সঙ্গে ধরাশায়ী করা নিঃসন্দেহে শান্ত-মিরাজদের জন্য বিরাট অর্জন। প্রথমটিতে পাকিস্তান হেরেছিল ১০ উইকেটে। বৃষ্টিতে প্রথম দিনের খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার পরেও দ্বিতীয় টেস্টে জিতেছে ৬ উইকেটে। ফলাফল ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তান যখন বাংলাদেশকে শোচনীয় পরাজয় উপহার দেওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল, তখন মিরাজ-লিটনের রেকর্ড রানের জুটিতে যেন দাবার চাল উলটে গেল! এখন পর্যন্ত কোনো দল টেস্ট ক্রিকেটে ৫০ রানের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ এক অনন্য নজির স্থাপন করল।
এদিকে, পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে ধবলধোলাই করে টেস্ট সিরিজ জয়ে জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বিকেলে তিনি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ফোন করে ঐতিহাসিক বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশ দল দেশে ফেরার পর সংবর্ধনার কথাও বলেন তিনি।
গতকাল জয়ের জন্য যখন বাংলাদেশের দরকার ছিল আর মাত্র ৪ রান, তখন আবরার আহমেদের ফুলার লেন্থের বল কাভার ড্রাইভে বাউন্ডারি ছাড়া করেন সাকিব আল হাসান। বল বাউন্ডারির সীমানা ছোঁয়ার আগেই ধারাভাষ্যকারের আওয়াজ ভেদ করে শোনা যায় অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর চিত্কার। সেটি শুনে সত্যিকার টাইগারের গর্জনই মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে, শোচনীয় পরাজয়ের বেদনায় পাকিস্তানি অধিনায়ক শান মাসুদসহ দলের সবাই যেন মিশে যাচ্ছিলেন মাটির সঙ্গে। রাওয়ালপিন্ডির মাটিতে তখন বাজছে, ‘জ্বলে উঠো বাংলাদেশ, গর্জে উঠো বাংলাদেশ’ গান। শান্তদের সঙ্গে তখন গোটা বাংলাদেশও মেতেছিল উত্সবের আনন্দে। সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে টাইগার বন্দনায় মেতেছেন ভক্তরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০১ সাল থেকে টেস্ট খেলা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সাল পর্যন্ত ৮টি টেস্ট খেলে প্রতিটিতেই হেরেছিল টাইগার বাহিনী। এগুলোর মধ্যে ৪টিই ছিল ইনিংস ব্যবধানে হার। ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো রুখে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। তবে সেবার খুলনাতে জয় নয়, ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এরপরে আরও ৪টি হার দেখে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে ১৩ ম্যাচ খেলে জয়শূন্য ছিল টাইগার বাহিনী। এতদিনের অপেক্ষা শেষ হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। গত ২৫ আগস্ট আসে প্রথম টেস্ট জয়। সেখানেই থেমে থাকেননি শান্তরা। সিরিজও জিতে নিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত ১১টি দেশের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে হারানোর পরে এবার ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট জয় বাকি রইল।
এবারের পাকিস্তান সিরিজসহ বাংলাদেশ মোট ৭৬টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে। এর মধ্যে মোট জয় ৯টি, ড্র ১০টি। বাকি ৫৭ সিরিজে পরাজয় হজম করতে হয়েছে। সেই জায়গা থেকে পাকিস্তানকে হারানো ঐতিহাসিক ঘটনার পাশাপাশি বড় একটি সিরিজ জয়ও। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আগে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার বার (২০০৫, ২০১৪, ২০২০ ও ২০২১ সালে), ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই বার (২০০৯ ও ২০১৮) ও একবার করে আয়ারল্যান্ড (২০২৩) ও আফগানিস্তানের (২০২৩) বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে টাইগার বাহিনী।
দেশের বাইরে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সিরিজ জয় হলেও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জয়। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০০৯ সালে উইন্ডিজকে হারালেও সেটি নিয়ে কথা রয়েছে। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল একাদশ না খেলায় কিছুটা এগিয়েই ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার পাকিস্তানের মূল একাদশের বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করে জয় তুলে নিয়েছেন শান্তরা। তাতে ভবিষ্যত্ ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়ে রাখল।
শেষ ম্যাচে চাপের মুখে গুরুত্বপূর্ণ ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হন লিটন কুমার দাস। অন্যদিকে, দুই ম্যাচে ১৫৫ রান ও ১০ উইকেট তুলে নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ নির্বাচিত হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।