ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ; আগে চাই নিবিড় সংস্কার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১৫ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশে অভাবনীয় একটি সময় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে। সরকারের আরো যেসব উপদেষ্টা নেয়া হয়েছে তারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ কিংবা আদৌ অনুধাবন করেন কি না এমন কথাও বিপ্লব-সমর্থকদের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয়েছে। তাই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশার কতটা পূরণ সম্ভব হবে সামনের দিনগুলোতে তা স্পষ্ট হবে। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, সম্ভবত নির্বাচন কখন হবে। কেউ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন। কেউ বলছেন, যৌক্তিক সময়ের কথা। দৃশ্যত এসব কারণে প্রধান উপদেষ্টা সময়ক্ষেপণ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরুর তাগিদ বোধ করেন। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সাথে সংলাপ হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।

সংলাপে দলগুলো সরকারকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে, নিজেদের দাবি উত্থাপন করেছে। এসব পরামর্শ ও দাবির মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট ঐকমত্য দেখা গেছে। যেমন- কোনো দলই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। প্রতিটি দল প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ সম্পন্নের পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত। কী কী বিষয়ে সংস্কার করতে হবে সে বিষয়েও মোটামামুটি সব দল একমত বলে মনে হয়েছে। সংস্কারের কাজ কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বা করা সম্ভব- তা নিয়ে দলগুলো কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। বেশির ভাগ দল যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছেন। কেউ যৌক্তিকের সাথে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। যৌক্তিক সময় বলে বাস্তবে কিছু হতে পারে কি না আমরা সন্দিহান। কারণ সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়ে কত সময় লাগতে পারে সেটি এক কথায় বলা যায় না। সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন সেটিও বড় প্রশ্ন। এর বাইরে প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের বিষয় আছে। বস্তুত এটি হলো রাষ্ট্র মেরামত। তাতে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আর্থিক খাতসহ সব কিছু মেরামতের বিষয় অন্তর্ভুক্ত। কাজটি কয়েক মাসে বা এক দুই বছরে সম্ভব কি না সে প্রশ্ন উঠবে।

আশার কথা, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে তাড়াহুড়ার বা অধৈরে‌্যর প্রকাশ দেখা যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামতে জাতির জন্য সুবর্ণ সুযোগ এসেছে, এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সংস্কার হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই। দেশের মানুষ যাতে সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারেন। এটিই শেষ কথা। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলে একই নিঃশ্বাসে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাওয়ার বিষয়টি সুসামঞ্জস্য নয়। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেছেন, সব দলের প্রস্তাব যাচাই করে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের একটি রূপরেখা দেবেন। সে সংস্কার প্রস্তাবের ওপর নির্ভর করবে কবে নির্বাচন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। এটি নিশ্চিত যে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব। কিন্তু স্বৈরাচারের ধ্বংসাবশেষের ওপর জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি স্থাপন না করে নির্বাচন করার কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না। সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা পাওয়ার পর নতুন করে সংলাপ ও ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে। সে সময় পর্যন্ত সব দলের কাছে ধৈর্য ও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য, যাতে অর্জিত সুযোগ বিনষ্ট না হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ; আগে চাই নিবিড় সংস্কার

আপলোড টাইম : ০৭:৪১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর দেশে অভাবনীয় একটি সময় এসেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে দেশের সবচেয়ে খ্যাতিমান ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে। সরকারের আরো যেসব উপদেষ্টা নেয়া হয়েছে তারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ কিংবা আদৌ অনুধাবন করেন কি না এমন কথাও বিপ্লব-সমর্থকদের মধ্য থেকে উচ্চারিত হয়েছে। তাই সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশার কতটা পূরণ সম্ভব হবে সামনের দিনগুলোতে তা স্পষ্ট হবে। তবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, সম্ভবত নির্বাচন কখন হবে। কেউ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন। কেউ বলছেন, যৌক্তিক সময়ের কথা। দৃশ্যত এসব কারণে প্রধান উপদেষ্টা সময়ক্ষেপণ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ শুরুর তাগিদ বোধ করেন। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সাথে সংলাপ হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।

সংলাপে দলগুলো সরকারকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে, নিজেদের দাবি উত্থাপন করেছে। এসব পরামর্শ ও দাবির মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট ঐকমত্য দেখা গেছে। যেমন- কোনো দলই নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। প্রতিটি দল প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ সম্পন্নের পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একমত। কী কী বিষয়ে সংস্কার করতে হবে সে বিষয়েও মোটামামুটি সব দল একমত বলে মনে হয়েছে। সংস্কারের কাজ কত দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে বা করা সম্ভব- তা নিয়ে দলগুলো কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। বেশির ভাগ দল যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছেন। কেউ যৌক্তিকের সাথে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। যৌক্তিক সময় বলে বাস্তবে কিছু হতে পারে কি না আমরা সন্দিহান। কারণ সংবিধান সংস্কারের মতো বিষয়ে কত সময় লাগতে পারে সেটি এক কথায় বলা যায় না। সংবিধান সংশোধন নাকি পুনর্লিখন সেটিও বড় প্রশ্ন। এর বাইরে প্রতিটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের বিষয় আছে। বস্তুত এটি হলো রাষ্ট্র মেরামত। তাতে পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, আর্থিক খাতসহ সব কিছু মেরামতের বিষয় অন্তর্ভুক্ত। কাজটি কয়েক মাসে বা এক দুই বছরে সম্ভব কি না সে প্রশ্ন উঠবে।

আশার কথা, রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যে তাড়াহুড়ার বা অধৈরে‌্যর প্রকাশ দেখা যায়নি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রাষ্ট্র মেরামতে জাতির জন্য সুবর্ণ সুযোগ এসেছে, এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। সংস্কার হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই। দেশের মানুষ যাতে সংস্কারের সুফল ভোগ করতে পারেন। এটিই শেষ কথা। এ ক্ষেত্রে যৌক্তিক সময় দেয়ার কথা বলে একই নিঃশ্বাসে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাওয়ার বিষয়টি সুসামঞ্জস্য নয়। প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেছেন, সব দলের প্রস্তাব যাচাই করে তিনি রাষ্ট্র সংস্কারের একটি রূপরেখা দেবেন। সে সংস্কার প্রস্তাবের ওপর নির্ভর করবে কবে নির্বাচন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। এটি নিশ্চিত যে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব। কিন্তু স্বৈরাচারের ধ্বংসাবশেষের ওপর জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিত্তি স্থাপন না করে নির্বাচন করার কোনো তাৎপর্য আছে বলে মনে হয় না। সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা পাওয়ার পর নতুন করে সংলাপ ও ঐকমত্যের প্রয়োজন হবে। সে সময় পর্যন্ত সব দলের কাছে ধৈর্য ও দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য, যাতে অর্জিত সুযোগ বিনষ্ট না হয়।