ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শৈলকুপায় মূর্তিমান আতঙ্কের নাম মফিজ চেয়ারম্যান

চাঁদাবাজী, পরের জমি ও ইটভাটা দখলসহ অভিযোগের পাহাড় তার বিরুদ্ধে

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নজুড়ে দখলবাজী কায়েম করে এক আতঙ্কের জনপদ সৃষ্টি করেছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর ক্ষমতাকালে ওই ইউনিয়নে মফিজ ২৭টি গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনের বীভৎস ক্ষত চিহ্ন নিয়ে ইউনিয়নের মানুষ এখনো আতঙ্কে বসবাস করছেন। মফিজ মানেই যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ফলে হাসিনা সরকারের পতন হলেও মফিজ চেয়ারম্যানের নাম মুখে নিতে এখনো সবাই ভয় পায়।
তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ভাতিজা আসলাম, আলামিন, মিল্টন, শুকুর আলী, নাসিম, আলম ও মেহেদী এখনো গ্রামে গ্রামে ভয়—ভীতি দেখাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকার অনেক মানুষ মফিজের অত্যাচার নির্যাতনে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সরেজমিন ইউনিয়ন ঘুরে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের চাঁদাবাজী ও দখলদারির ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দীন জানান, তিনি ১৬ বছর বাড়ি যেতে পারেন না। তিনি ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করেন। গ্রামে বসবাসরত তার স্বজনরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের জমি দখল করেছে চেয়ারম্যান মফিজ। রঘুনন্দনপুর গ্রামের খায়রুল হোসেন মোল্লার ৩৫ বিঘা জমির ইটভাটা দখল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। এর আগে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এখনও তিনি কারাগারে বন্দি।
শুধু ইটভাটা দখল করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। গ্রামের মানুষের চাষের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে রীতিমত নদী বানিয়ে ফেলেছেন। ১৬ বছর ধরে ওই জমির মালিকরা চাষতো দূরের কথা, জমির ধারে কাছেও যেতে পারেনি। রঘুনন্দনপুর গ্রামের নগেন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন কুমার অভিযোগ করেন, তার জমি বলতে ১০ কাঠা জমি ছিল। সেটি জোরপূর্বক দখল করে বালি উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। সেই ১০ কাঠা জমি এখন ৬০ ফুট গর্ত।
একই গ্রামের লুৎফর বিশ্বাসের ছেলে নাজমুলের ৪ বিঘা, মসিউর রহমানের ছেলে মনোয়ারের ১৫ কাঠা, বিশারত আলীর ছেলে গোলাম সরোয়ারের ২২ শতক, ইদ্রিস আলীর ছেলে মিলনের ১৫ শতক, ইরাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলীর ১২ শতকসহ প্রায় ২৮ জন কৃষকের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, শৈলকুপা থানা পুলিশের সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস এই দখলবাজী করে গেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। রঘুনন্দনপুর গ্রামের আবুল কাসেম অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের ভাতিজা আসলাম তার ৭০ মণ শুকনা হলুদ জোর করে নিয়ে যায়, যার মূল্য ৭ লাখ টাকা। এই গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি হতদরিদ্র মানুষ। অথচ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস তার লোকজন দিয়ে ৮টি ছাগল ও একটি গরু নিয়ে ভুরিভোজ করে। নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামজুড়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিচার—সালিশ, তালাক—বিয়ের নামেও তিনি উভয় পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রঘুনন্দনপুর গ্রামের মিরা বেগম ও মজনু মিয়ার তালাক ও বিয়ের বিচার করার নামে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। গ্রামবাসী বলছেন, মফিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল হাইয়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ফলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তার টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে আছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। মফিজের অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শৈলকুপায় মূর্তিমান আতঙ্কের নাম মফিজ চেয়ারম্যান

চাঁদাবাজী, পরের জমি ও ইটভাটা দখলসহ অভিযোগের পাহাড় তার বিরুদ্ধে

আপলোড টাইম : ১২:৪৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নজুড়ে দখলবাজী কায়েম করে এক আতঙ্কের জনপদ সৃষ্টি করেছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর ক্ষমতাকালে ওই ইউনিয়নে মফিজ ২৭টি গ্রামে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তাদের অত্যাচার আর নির্যাতনের বীভৎস ক্ষত চিহ্ন নিয়ে ইউনিয়নের মানুষ এখনো আতঙ্কে বসবাস করছেন। মফিজ মানেই যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ফলে হাসিনা সরকারের পতন হলেও মফিজ চেয়ারম্যানের নাম মুখে নিতে এখনো সবাই ভয় পায়।
তার ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ভাতিজা আসলাম, আলামিন, মিল্টন, শুকুর আলী, নাসিম, আলম ও মেহেদী এখনো গ্রামে গ্রামে ভয়—ভীতি দেখাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এলাকার অনেক মানুষ মফিজের অত্যাচার নির্যাতনে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সরেজমিন ইউনিয়ন ঘুরে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের চাঁদাবাজী ও দখলদারির ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দীন জানান, তিনি ১৬ বছর বাড়ি যেতে পারেন না। তিনি ঝিনাইদহ শহরে বসবাস করেন। গ্রামে বসবাসরত তার স্বজনরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের জমি দখল করেছে চেয়ারম্যান মফিজ। রঘুনন্দনপুর গ্রামের খায়রুল হোসেন মোল্লার ৩৫ বিঘা জমির ইটভাটা দখল করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। এর আগে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠানো হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। এখনও তিনি কারাগারে বন্দি।
শুধু ইটভাটা দখল করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি। গ্রামের মানুষের চাষের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে রীতিমত নদী বানিয়ে ফেলেছেন। ১৬ বছর ধরে ওই জমির মালিকরা চাষতো দূরের কথা, জমির ধারে কাছেও যেতে পারেনি। রঘুনন্দনপুর গ্রামের নগেন চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন কুমার অভিযোগ করেন, তার জমি বলতে ১০ কাঠা জমি ছিল। সেটি জোরপূর্বক দখল করে বালি উত্তোলন করছেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। সেই ১০ কাঠা জমি এখন ৬০ ফুট গর্ত।
একই গ্রামের লুৎফর বিশ্বাসের ছেলে নাজমুলের ৪ বিঘা, মসিউর রহমানের ছেলে মনোয়ারের ১৫ কাঠা, বিশারত আলীর ছেলে গোলাম সরোয়ারের ২২ শতক, ইদ্রিস আলীর ছেলে মিলনের ১৫ শতক, ইরাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলীর ১২ শতকসহ প্রায় ২৮ জন কৃষকের ২২ বিঘা জমি দখল করে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, শৈলকুপা থানা পুলিশের সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস এই দখলবাজী করে গেছেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। রঘুনন্দনপুর গ্রামের আবুল কাসেম অভিযোগ করেন, ২০২১ সালে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের ভাতিজা আসলাম তার ৭০ মণ শুকনা হলুদ জোর করে নিয়ে যায়, যার মূল্য ৭ লাখ টাকা। এই গ্রামের মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি হতদরিদ্র মানুষ। অথচ ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস তার লোকজন দিয়ে ৮টি ছাগল ও একটি গরু নিয়ে ভুরিভোজ করে। নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের ২৭টি গ্রামজুড়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিচার—সালিশ, তালাক—বিয়ের নামেও তিনি উভয় পক্ষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
রঘুনন্দনপুর গ্রামের মিরা বেগম ও মজনু মিয়ার তালাক ও বিয়ের বিচার করার নামে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাস। গ্রামবাসী বলছেন, মফিজ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আব্দুল হাইয়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। ফলে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তার টিকি কেউ স্পর্শ করতে পারেনি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দীন বিশ্বাসের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সরকার পতনের পর তিনি পালিয়ে আছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানায়। মফিজের অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে শৈলকুপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। তবে কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।