ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাবি-দাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি; উদ্দেশ্যমূলক নয় তো!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০০:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৩ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে গত ৫ আগস্ট। এ অর্জন এসেছে শুধু আওয়ামী লীগের দলকানা নেতাকর্মী-সমর্থক ছাড়া বাদবাকি পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ায়। তবে বিপুল রক্তমূল্যে জাতিকে কিনতে হয়েছে এই গণ-অভ্যুত্থান। হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আহত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে ওঠেন হাসিনা। সেই তিনি জনরোষ থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে জানে বাঁচিয়েছেন। ফলে দেশ এখন দুঃশাসনমুক্ত। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসা হাসিনার অপশাসনের অবসানে রাহুমুক্ত বাংলাদেশের মানুষ।

নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে বা চিরস্থায়ী করতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশে প্রচলিত ক্ষমতার বন্দোবস্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে খেয়ালখুশি মতো দেশ চালান দেড় দশক। মসনদ টিকিয়ে রাখতে ভিন্ন মতের লোকজনকে গুম-খুনসহ হেন অপকর্ম নেই, যা হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা করেননি। আয়না ঘর এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে হাসিনার নিষ্ঠুরতার অনেক ঘটনা এখন প্রচারিত হচ্ছে।
দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে গেলে জাতির সামনে একমাত্র পথ খোলা থাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো। দেশের মুক্তিকামী মানুষ সেই পথে মুক্তি ছিনিয়ে এনেছে। বেহাত স্বাধীনতা ধরা দিয়েছে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে এখনো হাসিনার প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

শেখ হাসিনার সাজানো জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবখানে এখনো বহালতবিয়তে আছে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও রয়েছে যারা হাসিনা আমলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তারাও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সক্রিয়। এ কথা বলতে হচ্ছে এ কারণে যে, সরকারি বিভিন্ন দফতর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষত আনসার সদস্যরা দাবি-দাওয়া আদায়ে বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করছে। তারা গত রোববার চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে দিনভর সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে। তাদের প্রতিনিধিদলের সাথে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আলোচনার পরও তারা অসহিষ্ণু আচরণ করে। ছাত্রদের সাথে সংষর্ঘে জড়িয়ে পড়ে।

মাত্র ১৮ দিন বয়সী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সরকারি নানা দফতরের শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী ধরনা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকার জনপ্রশাসনে হাসিনার জঞ্জাল সাফ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে প্রমাণ হয়- অন্তর্বর্তী সরকার বঞ্চিতদের ন্যায্য প্রাপ্য ফিরিয়ে দিতে আন্তরিক। কিন্তু যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, তারা ভুলে গেছেন, দীর্ঘ বঞ্চনার অবসানে সময় প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক সময় দিতে হবে। কিন্তু দাবি-দাওয়া পেশকারীরা সময় দিতে অনিচ্ছুক। আনসার সদস্যদের যে আচরণ, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেও বলতে হয়, একটি নিয়মিত বাহিনী কিভাবে দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে পারে? তারা জেনে বুঝে, অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দাবি না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এমন মারমুখী আচরণে সন্দেহের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক যে, তারা কী আদৌ দাবি পূরণ চায়, নাকি অন্য মতলব আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দাবি-দাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি; উদ্দেশ্যমূলক নয় তো!

আপলোড টাইম : ১০:০০:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে গত ৫ আগস্ট। এ অর্জন এসেছে শুধু আওয়ামী লীগের দলকানা নেতাকর্মী-সমর্থক ছাড়া বাদবাকি পুরো জাতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ায়। তবে বিপুল রক্তমূল্যে জাতিকে কিনতে হয়েছে এই গণ-অভ্যুত্থান। হাজারো ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আহত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ।
আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিষ্ঠুরতার প্রতীক হয়ে ওঠেন হাসিনা। সেই তিনি জনরোষ থেকে জীবন বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে জানে বাঁচিয়েছেন। ফলে দেশ এখন দুঃশাসনমুক্ত। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথর হয়ে চেপে বসা হাসিনার অপশাসনের অবসানে রাহুমুক্ত বাংলাদেশের মানুষ।

নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে বা চিরস্থায়ী করতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশে প্রচলিত ক্ষমতার বন্দোবস্ত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। আইনের শাসন নির্বাসনে দিয়ে খেয়ালখুশি মতো দেশ চালান দেড় দশক। মসনদ টিকিয়ে রাখতে ভিন্ন মতের লোকজনকে গুম-খুনসহ হেন অপকর্ম নেই, যা হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা করেননি। আয়না ঘর এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে হাসিনার নিষ্ঠুরতার অনেক ঘটনা এখন প্রচারিত হচ্ছে।
দেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতার পালাবদল পুরোপুরি রুদ্ধ হয়ে গেলে জাতির সামনে একমাত্র পথ খোলা থাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান ঘটানো। দেশের মুক্তিকামী মানুষ সেই পথে মুক্তি ছিনিয়ে এনেছে। বেহাত স্বাধীনতা ধরা দিয়েছে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। কিন্তু এই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে এখনো হাসিনার প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

শেখ হাসিনার সাজানো জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবখানে এখনো বহালতবিয়তে আছে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীরা। ব্যবসায়ী গোষ্ঠীও রয়েছে যারা হাসিনা আমলে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। তারাও অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সক্রিয়। এ কথা বলতে হচ্ছে এ কারণে যে, সরকারি বিভিন্ন দফতর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিশেষত আনসার সদস্যরা দাবি-দাওয়া আদায়ে বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করছে। তারা গত রোববার চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে দিনভর সচিবালয় ঘেরাও করে রাখে। তাদের প্রতিনিধিদলের সাথে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আলোচনার পরও তারা অসহিষ্ণু আচরণ করে। ছাত্রদের সাথে সংষর্ঘে জড়িয়ে পড়ে।

মাত্র ১৮ দিন বয়সী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সরকারি নানা দফতরের শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী ধরনা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে সরকার জনপ্রশাসনে হাসিনার জঞ্জাল সাফ করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে প্রমাণ হয়- অন্তর্বর্তী সরকার বঞ্চিতদের ন্যায্য প্রাপ্য ফিরিয়ে দিতে আন্তরিক। কিন্তু যারা দাবি-দাওয়া নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন, তারা ভুলে গেছেন, দীর্ঘ বঞ্চনার অবসানে সময় প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই যৌক্তিক সময় দিতে হবে। কিন্তু দাবি-দাওয়া পেশকারীরা সময় দিতে অনিচ্ছুক। আনসার সদস্যদের যে আচরণ, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেও বলতে হয়, একটি নিয়মিত বাহিনী কিভাবে দাবি আদায়ে রাস্তায় নামতে পারে? তারা জেনে বুঝে, অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দিয়েছে। বিগত সরকারের আমলে দাবি না জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এমন মারমুখী আচরণে সন্দেহের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক যে, তারা কী আদৌ দাবি পূরণ চায়, নাকি অন্য মতলব আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।