ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের অর্ধকোটি বন্যার্তের আহাজারি; চাই সমন্বিত ত্রাণ-উদ্ধার তৎপরতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫২:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় ধেয়ে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে সরকারি হিসাবে দেশের ১১ জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ¥ীপুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এর বাইরে বন্যাকবলিত রাঙ্গামাটি জেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় তিন দিনে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উল্লিখিত জেলাগুলোতে প্রায় ৯ লাখ পরিবার পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় অর্ধকোটি অর্থাৎ ৫০ লাখ মানুষ। তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে নিপতিত। দুর্গত মানুষের আহাজারিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
আকস্মিক বন্যায় অনেক এলাকা এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি জেলায় পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একই সাথে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার অন্তত ৩৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত ১২টি জেলার মধ্যে ফেনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত। ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী- এই ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি নাজুক।
প্রথম দিকে দুর্গত এলাকায় লোকজন বানের পানি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটলেও এখন খাদ্য ও পানের পানির অভাবে তাদের জীবন বিপন্ন। শুধু মানুষ নয়, খাবারের অভাবে গৃহপালিত প্রাণীরও জীবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত বাস্তবতায় চলমান এই বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলায় আকস্মিকভাবে নেমে আসা বিপর্যয়ের জন্য লোকজন মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে বন্যাকবলিত জনপদে সবার জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। দুর্গত এলাকায় এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
মানুষ মানুষের জন্য, সঙ্গতকারণে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে সবার হাত প্রসারিত করতে হবে; যাতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটিই মানবতার দাবি। তাই দেশের বন্যাকবলিত সব জেলার মানুষের পাশে আমাদের সবাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। তাদের দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে এখনকার কাজ। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণসহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ দেশের এতবড় বিপদ সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এর জন্য চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ বিতরণে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে; যাতে দুর্গতরা সঠিকভাবে সহায়তা পেয়ে উপকৃত হতে পারেন।
আশার কথা হলো, এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় এবারের বন্যায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এই প্রবণতা আশা জাগায়। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। আল্লাহ চাহেন তো আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দেশের অর্ধকোটি বন্যার্তের আহাজারি; চাই সমন্বিত ত্রাণ-উদ্ধার তৎপরতা

আপলোড টাইম : ১১:৫২:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

উজানে ভারতের ত্রিপুরায় বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় ধেয়ে আসা ঢল ও কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে সরকারি হিসাবে দেশের ১১ জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ¥ীপুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। এর বাইরে বন্যাকবলিত রাঙ্গামাটি জেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় তিন দিনে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উল্লিখিত জেলাগুলোতে প্রায় ৯ লাখ পরিবার পানিবন্দী। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় অর্ধকোটি অর্থাৎ ৫০ লাখ মানুষ। তারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে নিপতিত। দুর্গত মানুষের আহাজারিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।
আকস্মিক বন্যায় অনেক এলাকা এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কয়েকটি জেলায় পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একই সাথে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার অন্তত ৩৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত ১২টি জেলার মধ্যে ফেনী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপর্যস্ত। ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী- এই ছয় উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি নাজুক।
প্রথম দিকে দুর্গত এলাকায় লোকজন বানের পানি থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটলেও এখন খাদ্য ও পানের পানির অভাবে তাদের জীবন বিপন্ন। শুধু মানুষ নয়, খাবারের অভাবে গৃহপালিত প্রাণীরও জীবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রকৃত বাস্তবতায় চলমান এই বন্যায় দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলায় আকস্মিকভাবে নেমে আসা বিপর্যয়ের জন্য লোকজন মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। ফলে বন্যাকবলিত জনপদে সবার জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। দুর্গত এলাকায় এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
মানুষ মানুষের জন্য, সঙ্গতকারণে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে সবার হাত প্রসারিত করতে হবে; যাতে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এটিই মানবতার দাবি। তাই দেশের বন্যাকবলিত সব জেলার মানুষের পাশে আমাদের সবাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। তাদের দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে এখনকার কাজ। এ কাজে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসহ ব্যক্তিপর্যায়ে সবাইকে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণসহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। কারণ দেশের এতবড় বিপদ সরকারের একার পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এর জন্য চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টায় উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ বিতরণে অবশ্যই সমন্বয় থাকতে হবে; যাতে দুর্গতরা সঠিকভাবে সহায়তা পেয়ে উপকৃত হতে পারেন।
আশার কথা হলো, এখন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় এবারের বন্যায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। এই প্রবণতা আশা জাগায়। সদ্য ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে এমন দৃশ্য দেখা যায়নি। আল্লাহ চাহেন তো আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন