ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বন্যা পরিস্থিতিতে

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বন্যার্তদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সংগ্রহ

মানবিক বিপর্যয় রোধে এগিয়ে আসছেন সবাই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে সারাদেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করছে। সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা ত্রাণ সংগ্রহ, বিতরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা:
ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার পর ফেনী, কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। নিমজ্জিত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও অন্যান্য সম্পদ। পানির স্রোতে জনপথ, সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, চিকিৎসার অভাব এবং খাদ্যের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে এক গভীর মানবিক বিপর্যয়। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠন, সাধারণ জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসছেন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণসামগ্রী, অর্থ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি তারা দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সেবা এবং পুনর্বাসনের কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ সংকট মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। তারা স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাদ্য, বস্ত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করছেন। তাছাড়া আর্থিক সহায়তাও করছেন যে যার সাধ্যমত।


চুয়াডাঙ্গা বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দল ও গঠন করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অনুদান সংগ্রহ করছেন। সংগৃহীত ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বন্যাকবলিত জেলাগুলিতে।
শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীসহ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা শুধু যে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে, তাই নয়, বরং তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধও তৈরি করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের এই তৎপরতা প্রশংসনীয়। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, সংকটের মুহূর্তে কীভাবে সকলে এক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের উদ্যোগ কেবল ত্রাণ সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ না থেকে, ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। তাদের এই আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।
স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্রী সিরাজুম মনিরা বলেন, ‘বন্যাকবলিত মানুষদের অবস্থা দেখে আমরা বসে থাকতে পারিনি। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আমরা দ্রুত একটি দল গঠন করি এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করি। আমরা চাই এই সংকটে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে। আমরা একটুও ক্লান্ত বোধ করছি না, বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা গর্বিত।’

সাইফুল ইসলাম নামের অপর একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘এমন বিপর্যয়ের সময়ে আমরা যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করছি। সবাই আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন, যা আমাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করছে। আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেদের পকেটের টাকায় খাবার, পানি, এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেও পাঠাচ্ছি বন্যাকবলিত এলাকায়। ছোট থেকে বড় সবাই যদি এগিয়ে আসে, তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা অনেক সহজ হবে।’
তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা শুধু সহায়তা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না, বরং সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্বও পালন করছে, যা ভবিষ্যতের জন্য তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করবে।

উথলী:
জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামে ছাত্রসমাজের উদ্যোগে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেনেরহুদা রেলগেট থেকে শুরু করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ও উথলী বাজারের দোকান থেকে এই চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
সেনেরহুদা গ্রামের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। এখানে কারও বিপদে পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের বিপদে আমরা যতটুকু পেরেছি, তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা কখনো বিপদে পড়লে হয়ত তারাও এগিয়ে আসবে। এভাবেই আমাদের সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেনেরহুদা গ্রামের ছাত্রসমাজের উদ্যোগে ৫৮ হাজার ১২৯ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এই ফান্ড আগামীকাল আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য প্রেরণ করা হবে।

মেহেরপুর:
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ স্লোগানে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মেহেরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে কর্মসূচির আওয়াজন করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, দেশ একটা বিশাল ক্রান্তিকাল পার করছে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর থেকেই একটি চক্র ষড়যন্ত্রের কারণই এই ভয়াবহ বন্যার কারণ। আন্দোলনে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে ছিল বলেই এ বিজয় সম্ভব হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সে জন্য যার যতটুকু সাধ্য আছে, তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব এবং এ বন্ধন অটুট থাকবে। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরমা খাতুন, তামিম ইসলাম, তাহসিন রাব্বিসহ শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী:
মেহেরপুর জেলা সুজন ও গাংনী উপজেলা হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে গাংনী উপজেলা চত্বর থেকে বের হয়ে পদযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাজার বাসস্ট্যান্ডে আলোচনা সভার মধ্যেদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সুজনের মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ও গাংনী উপজেলা সুজনের সম্পাদক এএসএম সায়েম পল্টুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাংনী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম, ষোলটাকা ইউনিয়ন সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, ধানখোলা ইউনিয়ন সুজনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা জিজিএসের সভাপতি আব্দুর রব,মটমুড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের সম্পাদক নুরুজ্জামান,বামুন্দী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান, ইয়ূথ লিডার রাকিবুল ইসলাম রকি, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ৫ জন ইউনিয়ন সমন্বয়কারী প্রমুখ। এসময় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন গাংনী উপজেলা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন।
পদযাত্রা শেষে গাংনী বাজার কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বাজারে অর্থ সংগ্রহকারীদের সঙ্গে একাত্ব ঘোষণা করা হয় এবং সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এ সংকটময় মুহূর্তে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন বন্যার্তদের সহযোগিতায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে, বানভাসি মানুষদের সহায়তায় ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মেহেরপুর জেলা বিএনপির একাংশ। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের টিএনটি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বন্যা কবলিত অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওমর ফারুক লিটন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর খান ছাতু। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ।
বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেছি। আপনারাও যার যার জায়গা থেকে ত্রাণ কর্মসূচিতে সবাই অংশগ্রহণ করুন। জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দুলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ফরিদুল হক, রেজাউল হক, খাইরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সহসভাপতি আনিসুর রহমান লাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক, সাবেক ইউপি সদস্য মুস্তাক রাজা, সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি হাসিবুজ্জামান স্বপন, জেলা জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, সদস্যসচিব মনিরুল ইসলাম মনি, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাহিদ মাহবুব সানি প্রমুখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বন্যা পরিস্থিতিতে

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে বন্যার্তদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের ত্রাণ সংগ্রহ

মানবিক বিপর্যয় রোধে এগিয়ে আসছেন সবাই

আপলোড টাইম : ১১:৪৫:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদন:
বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে সারাদেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান একত্রে কাজ করছে। সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা ত্রাণ সংগ্রহ, বিতরণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা:
ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার পর ফেনী, কুমিল্লাসহ বাংলাদেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। নিমজ্জিত হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও অন্যান্য সম্পদ। পানির স্রোতে জনপথ, সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, চিকিৎসার অভাব এবং খাদ্যের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে এক গভীর মানবিক বিপর্যয়। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগঠন, সাধারণ জনগণ এবং শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসছেন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণসামগ্রী, অর্থ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি তারা দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ, চিকিৎসা সেবা এবং পুনর্বাসনের কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ সংকট মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। তারা স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শিক্ষার্থীদের এই উদ্যোগে অনেকেই সাড়া দিয়েছেন এবং তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাদ্য, বস্ত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রদান করছেন। তাছাড়া আর্থিক সহায়তাও করছেন যে যার সাধ্যমত।


চুয়াডাঙ্গা বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন দল ও গঠন করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অনুদান সংগ্রহ করছেন। সংগৃহীত ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হচ্ছে বন্যাকবলিত জেলাগুলিতে।
শিক্ষার্থীদের এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীসহ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা শুধু যে মানবিক সহায়তা প্রদান করছে, তাই নয়, বরং তাদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধও তৈরি করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের এই তৎপরতা প্রশংসনীয়। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, সংকটের মুহূর্তে কীভাবে সকলে এক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। তাদের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের উদ্যোগ কেবল ত্রাণ সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ না থেকে, ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর পর্যায়ে কাজ করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে সহায়তা করবে। তাদের এই আত্মত্যাগ ও পরিশ্রম আমাদের সকলের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ।
স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ছাত্রী সিরাজুম মনিরা বলেন, ‘বন্যাকবলিত মানুষদের অবস্থা দেখে আমরা বসে থাকতে পারিনি। বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আমরা দ্রুত একটি দল গঠন করি এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ শুরু করি। আমরা চাই এই সংকটে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে। আমরা একটুও ক্লান্ত বোধ করছি না, বরং মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা গর্বিত।’

সাইফুল ইসলাম নামের অপর একজন স্বেচ্ছাসেবক বলেন, ‘এমন বিপর্যয়ের সময়ে আমরা যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছ থেকে অনুদান সংগ্রহ করছি। সবাই আমাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন, যা আমাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করছে। আমরা বন্ধুরা মিলে নিজেদের পকেটের টাকায় খাবার, পানি, এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কিনেও পাঠাচ্ছি বন্যাকবলিত এলাকায়। ছোট থেকে বড় সবাই যদি এগিয়ে আসে, তাহলে এই সংকট মোকাবিলা করা অনেক সহজ হবে।’
তাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা শুধু সহায়তা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না, বরং সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্বও পালন করছে, যা ভবিষ্যতের জন্য তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি করবে।

উথলী:
জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের সেনেরহুদা গ্রামে ছাত্রসমাজের উদ্যোগে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে চাঁদা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেনেরহুদা রেলগেট থেকে শুরু করে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি ও উথলী বাজারের দোকান থেকে এই চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
সেনেরহুদা গ্রামের ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন, এই বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। এখানে কারও বিপদে পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাদের বিপদে আমরা যতটুকু পেরেছি, তা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা কখনো বিপদে পড়লে হয়ত তারাও এগিয়ে আসবে। এভাবেই আমাদের সম্প্রীতি অটুট থাকবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেনেরহুদা গ্রামের ছাত্রসমাজের উদ্যোগে ৫৮ হাজার ১২৯ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। এই ফান্ড আগামীকাল আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বন্যার্তদের জন্য প্রেরণ করা হবে।

মেহেরপুর:
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না’ স্লোগানে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মেহেরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের ড. শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে কর্মসূচির আওয়াজন করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, দেশ একটা বিশাল ক্রান্তিকাল পার করছে। ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর থেকেই একটি চক্র ষড়যন্ত্রের কারণই এই ভয়াবহ বন্যার কারণ। আন্দোলনে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে ছিল বলেই এ বিজয় সম্ভব হয়েছে। বন্যার্তদের সহযোগিতার জন্য ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সে জন্য যার যতটুকু সাধ্য আছে, তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এ দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব এবং এ বন্ধন অটুট থাকবে। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরমা খাতুন, তামিম ইসলাম, তাহসিন রাব্বিসহ শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

গাংনী:
মেহেরপুর জেলা সুজন ও গাংনী উপজেলা হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বানে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল দুপুরে গাংনী উপজেলা চত্বর থেকে বের হয়ে পদযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বাজার বাসস্ট্যান্ডে আলোচনা সভার মধ্যেদিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সুজনের মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে ও গাংনী উপজেলা সুজনের সম্পাদক এএসএম সায়েম পল্টুর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাংনী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলম, ষোলটাকা ইউনিয়ন সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, ধানখোলা ইউনিয়ন সুজনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, গাংনী উপজেলা জিজিএসের সভাপতি আব্দুর রব,মটমুড়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের সম্পাদক নুরুজ্জামান,বামুন্দী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান, ইয়ূথ লিডার রাকিবুল ইসলাম রকি, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের ৫ জন ইউনিয়ন সমন্বয়কারী প্রমুখ। এসময় সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন গাংনী উপজেলা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর সমন্বয়কারী হেলাল উদ্দিন।
পদযাত্রা শেষে গাংনী বাজার কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে বাজারে অর্থ সংগ্রহকারীদের সঙ্গে একাত্ব ঘোষণা করা হয় এবং সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে এ সংকটময় মুহূর্তে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন বন্যার্তদের সহযোগিতায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে, বানভাসি মানুষদের সহায়তায় ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে মেহেরপুর জেলা বিএনপির একাংশ। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের টিএনটি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে বন্যা কবলিত অসহায় মানুষদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওমর ফারুক লিটন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর খান ছাতু। বিশেষ অতিথি ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ।
বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, আমরা বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেছি। আপনারাও যার যার জায়গা থেকে ত্রাণ কর্মসূচিতে সবাই অংশগ্রহণ করুন। জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম দুলালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ফরিদুল হক, রেজাউল হক, খাইরুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সহসভাপতি আনিসুর রহমান লাবলু, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হক, সাবেক ইউপি সদস্য মুস্তাক রাজা, সদর উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি হাসিবুজ্জামান স্বপন, জেলা জিয়া মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাড. নজরুল ইসলাম, সদস্যসচিব মনিরুল ইসলাম মনি, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাহিদ মাহবুব সানি প্রমুখ।