ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত শরু হচ্ছে

কলেজের কোটি টাকা হাতিয়ে ভারতে পালনের চেষ্টা

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। এক ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষ বাদশা আলম হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়েছেন। তিনি কলেজে আসছেন না। শোনা যাচ্ছে কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি ভারতে পালানোর চেষ্টা করছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম আলম আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। একসময় ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন। এখনো দলিল লেখকদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ কলেজের প্রথমে প্রভাষক ও পরে এক বছরের জন্য ভাইস প্রিন্সিপাল হন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগ্যতা না থাকার পরও প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ দখল করেন। চাকরি জীবন থেকেই তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। ফলে তিনি কলেজ ঠিকমতো আসতেন না। আসলেও দুপুরের পর। যে কারণে কলেজের কাজকর্ম ব্যহত হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ পদে আসার আগে তিনি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও আরাপপুর এলাকায় এখন তার দুটি আলিশান বাড়ি। যার মধ্যে একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা বাড়ি। বাড়ি দুটির আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা হবে বলে তার প্রতিবেশীরা দাবি করেন। বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষের এমন দুটি আলিশান বাড়ি কীভাবে হলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ১৩ বছর অধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে তিনি কলেজের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। কলেজে ভর্তির সময় নেওয়া টাকার কোনো হিসাব নেই। লাইব্রেরি ফান্ডে টাকা নেওয়া হলেও বই কেনা হয় না। শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড বাবদ ভর্তির সময় টাকা নেওয়া হয়, কিন্তু আইডি কার্ড দেওয়া হয় না। ভর্তির সময় বিজ্ঞানাগারের জন্য টাকা কেটে রাখা হলেও ১৩ বছরে কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।

আইসিটি ও কৃষিশিক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে ৩০০ টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। অনার্স লেভেলে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে আদায় করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভাইভা পরীক্ষার নামে ছাত্র প্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এ নিয়ে ২০২৩ সালে ছাত্রলীগ কলেজে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করলেও অধ্যক্ষ বাদশা আলম এখনো জোরপূর্বক টাকা আদায় অব্যাহত রেখেছেন।

কলেজে প্রতিটি নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার শিক্ষকেরা নিয়মিত কলেজ করেন না। এ জন্য তাদের প্রতি মাসে অধ্যক্ষকে মাসোহারা দিতে হয়। ডিগ্রি ও উন্মুক্ত পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য কলেজের মালি আসলামের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় উন্নয়ন বাবদ টাকা আদায় করা হলেও ১৩ বছরে কলেজের ফান্ড থেকে দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ কলেজের ৬টি অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে মো. আইয়ুব হোসেনের সহায়তায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া অধ্যক্ষ বাদশা আলমের চাকরির বয়স শেষ হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল কাগজ করে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে বসে আছেন।

অর্থ আত্মসাৎ ও অবসরের পরও অবৈধভাবে চেয়ার দখল করা নিয়ে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের কাছে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসে গিয়ে জানা যায়, সরকার পতনের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস জানান, অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করবেন। তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত শরু হচ্ছে

কলেজের কোটি টাকা হাতিয়ে ভারতে পালনের চেষ্টা

আপলোড টাইম : ০৯:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

ঝিনাইদহ অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে। এক ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষ বাদশা আলম হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়েছেন। তিনি কলেজে আসছেন না। শোনা যাচ্ছে কলেজ ফান্ডের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি ভারতে পালানোর চেষ্টা করছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বাদশা আলম আলম আপাদমস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। একসময় ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকের কাজ করতেন। এখনো দলিল লেখকদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। তিনি ঝিনাইদহ কলেজের প্রথমে প্রভাষক ও পরে এক বছরের জন্য ভাইস প্রিন্সিপাল হন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগ্যতা না থাকার পরও প্রভাব খাটিয়ে অধ্যক্ষের পদ দখল করেন। চাকরি জীবন থেকেই তিনি মাদকাসক্ত ছিলেন। ফলে তিনি কলেজ ঠিকমতো আসতেন না। আসলেও দুপুরের পর। যে কারণে কলেজের কাজকর্ম ব্যহত হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ পদে আসার আগে তিনি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করলেও আরাপপুর এলাকায় এখন তার দুটি আলিশান বাড়ি। যার মধ্যে একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা বাড়ি। বাড়ি দুটির আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা হবে বলে তার প্রতিবেশীরা দাবি করেন। বেসরকারি কলেজের একজন অধ্যক্ষের এমন দুটি আলিশান বাড়ি কীভাবে হলো, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ১৩ বছর অধ্যক্ষ হওয়ার সুবাদে তিনি কলেজের কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করেছেন। কলেজে ভর্তির সময় নেওয়া টাকার কোনো হিসাব নেই। লাইব্রেরি ফান্ডে টাকা নেওয়া হলেও বই কেনা হয় না। শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড বাবদ ভর্তির সময় টাকা নেওয়া হয়, কিন্তু আইডি কার্ড দেওয়া হয় না। ভর্তির সময় বিজ্ঞানাগারের জন্য টাকা কেটে রাখা হলেও ১৩ বছরে কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি।

আইসিটি ও কৃষিশিক্ষার ব্যবহারিক পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে ৩০০ টাকা করে জোরপূর্বক আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। অনার্স লেভেলে ইনকোর্স পরীক্ষার নামে প্রতি ছাত্রের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে আদায় করেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভাইভা পরীক্ষার নামে ছাত্র প্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এ নিয়ে ২০২৩ সালে ছাত্রলীগ কলেজে তালা ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করলেও অধ্যক্ষ বাদশা আলম এখনো জোরপূর্বক টাকা আদায় অব্যাহত রেখেছেন।

কলেজে প্রতিটি নিয়োগে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। খুলনা, যশোর ও কুষ্টিয়ার শিক্ষকেরা নিয়মিত কলেজ করেন না। এ জন্য তাদের প্রতি মাসে অধ্যক্ষকে মাসোহারা দিতে হয়। ডিগ্রি ও উন্মুক্ত পরীক্ষায় নকল সরবরাহের জন্য কলেজের মালি আসলামের মাধ্যমে অর্থ আদায় করেন অধ্যক্ষ বাদশা আলম। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় উন্নয়ন বাবদ টাকা আদায় করা হলেও ১৩ বছরে কলেজের ফান্ড থেকে দৃশ্যত কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। অথচ কলেজের ৬টি অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে মো. আইয়ুব হোসেনের সহায়তায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুরে দুটি বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া অধ্যক্ষ বাদশা আলমের চাকরির বয়স শেষ হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জাল কাগজ করে জোরপূর্বক অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে বসে আছেন।

অর্থ আত্মসাৎ ও অবসরের পরও অবৈধভাবে চেয়ার দখল করা নিয়ে অধ্যক্ষ বাদশা আলমের কাছে ফোন করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার অফিসে গিয়ে জানা যায়, সরকার পতনের পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস জানান, অধ্যক্ষ বাদশা আলমের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে তিনি তদন্ত করবেন। তদন্ত করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।