ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণহত্যার বিচার হবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে

৬০ দিনের মধ্যে বিচার, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার নাই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। গতকাল বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধ আইনে গণহত্যার বিচারের বিধান রয়েছে। জেনেভা কনভেনশন ও রোমস স্ট্যাটারি ঘোষণায়ও অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করা যায় কি না। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি। আমাদের ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে। জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উক্ত আইনের আওতায় গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের বিষয়ে ইতিমধ্যে ছোটখাটো গবেষণার মতো কাজ করা হয়েছে। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের উক্ত আইনের আওতায় বিচার করা সম্ভব। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন করার জন্য যেসব ‘গণহত্যা ও গুলিবর্ষণ’ হয়েছে, তার বিচারের জন্য তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার প্রক্রিয়া চলছে।
১৯৭৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) অনুচ্ছেদ বা ধারায় ট্রাইব্যুনালে বিচার্য অপরাধের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে কৃত খুন, ধর্ষণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, আগ্রাসনজনিত শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনবিরোধী কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য অপরাধ ছাড়াও ওই সব অপরাধ সংঘটনে অপতৎপরতা, উৎসাহ বা ষড়যন্ত্র বা ঐসব অপরাধ সংঘটনে তা নিরোধে ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ কার্যকর হয় ২০ জুলাই ১৯৭৩ সালে। এ আইন পুনরায় সংশোধন করা হয় ৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে। এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর কিছু বিধানের সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আইনটির অধিকতর সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না, এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা কিছুই জানায়নি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ইনভেস্টিগেশন টিম ও একটি প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ গণহত্যার ইনভেস্টিগেশন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে আমাদের বারবার এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিচারে সত্যিকারের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে তদন্তকাজ করার প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা তার কাছে সহযোগিতা চাইব। এছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কনসার্ন এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এটা শুরু করতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তরা আন্তর্জাতিকভাবে যে কোনো দেশ থেকে আইনজীবী আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকার বাধা দেবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইনানুযায়ী গণহত্যার বিচার ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত এই আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ : আইনের ৩(১) ধারায় আইন প্রণয়নের তারিখের পূর্বের ঘটনাকেও এই আইনে বিচারের আওতায় আনয়ন করা হয়। আইনের ৫(২) ধারায় কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি তার নিজের দেশের আইন বা সরকারের আদেশ বা ঊর্ধ্বতনের আদেশ পালন করতে গিয়ে বর্ণিত অপরাধ করে থাকলেও তাতে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না, তবে দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচনা করা যাবে। আইনের ১৭(২) অনুযায়ী অভিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে এবং (৩) উপধারামতে সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবে। আইনের ১৯ (২) অনুযায়ী মৃত বা কোনো সাক্ষীকে উপস্থিত করা দুরূহ হলে ম্যাজিস্ট্রেট বা তদন্তকারীর নিকট প্রদত্ত তার জবানবন্দি উচিত মনে করলে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। আইনের ২০(২) ধারা মতে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আরোপ করতে পারবে। বাদী ও আসামি উভয় পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলাত ডিভিশনে আপিল করতে পারবে। দেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এবং ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন ট্রাইব্যুনালের জন্য প্রযোজ্য হবে না। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ব্যতীত ট্রাইব্যুনালের অন্য কোনো আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে আপিল করা যাবে না। এই আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে গৃহীত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য যে নূরেনবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ প্রনয়ণ করে। এর ২০ বছর পর ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম বিশ্বের যে কোনো স্থানে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য নিজ দেশে বিচারের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এ আইনে দুজন রোয়ান্ডান নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডদান করা হয়। কিন্তু বেলজিয়াম কর্তৃক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক বিচারাদালত ২০০২ সালে অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম স্ট্যাটুস রেটিফাই বা অনুসমর্থন করেছে। রোম স্ট্যাটুস বিশ্বে যুদ্ধাপরাধের সর্বশেষ ও জাতিসংঘ সমর্থিত আইন।
রোম স্ট্যাটুস-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ রোম স্ট্যাটুস-এর ১১(১) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে কেবল রোম স্ট্যাটুসের আইন বলবৎ হওয়ার দিন ও তারপরে সংঘটিত অপরাধের বিচার করা যাবে। বাংলাদেশের আইনে আইন প্রণয়নের আগে ও পরে সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের ওপর। এ বিষয়ে স্ট্যাটুসের ২৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে স্ট্যাটুস বলবৎ হওয়ার আগে করা কোনো কাজের জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না। রোম স্ট্যাটুস-এর ৭৭(১) এ অনুচ্ছেদে ক্ষেত্রমত সর্বাধিক ৩০ বছরের জেল এবং বি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষেত্রমত যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান করা হয়। স্ট্যাটুস-এ গণহত্যার মতো অপরাধের জন্যও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা আছে। স্ট্যাটুস-এর ৮২ অনুচ্ছেদে রায় ব্যতীত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আদেশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আপিলের অধিকার প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে আপিলের অধিকার দেওয়া হয় কেবল রায়ের বিরুদ্ধে, ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অধিকার দেওয়া হয়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গণহত্যার বিচার হবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে

৬০ দিনের মধ্যে বিচার, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে প্রতিকার নাই

আপলোড টাইম : ০৯:২৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৪

জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হবে। গতকাল বুধবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধ আইনে গণহত্যার বিচারের বিধান রয়েছে। জেনেভা কনভেনশন ও রোমস স্ট্যাটারি ঘোষণায়ও অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজপথে থাকা বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, জনগণের বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি করেছেন যে, এটাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিচার করা যায় কি না। আমরা সেটা খতিয়ে দেখেছি। আমাদের ১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট আছে। জুলাই ও আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উক্ত আইনের আওতায় গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের বিষয়ে ইতিমধ্যে ছোটখাটো গবেষণার মতো কাজ করা হয়েছে। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের উক্ত আইনের আওতায় বিচার করা সম্ভব। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমন করার জন্য যেসব ‘গণহত্যা ও গুলিবর্ষণ’ হয়েছে, তার বিচারের জন্য তদন্ত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার প্রক্রিয়া চলছে।
১৯৭৩ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২) অনুচ্ছেদ বা ধারায় ট্রাইব্যুনালে বিচার্য অপরাধের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে কৃত খুন, ধর্ষণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ, আগ্রাসনজনিত শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনবিরোধী কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য অপরাধ ছাড়াও ওই সব অপরাধ সংঘটনে অপতৎপরতা, উৎসাহ বা ষড়যন্ত্র বা ঐসব অপরাধ সংঘটনে তা নিরোধে ব্যর্থতা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ কার্যকর হয় ২০ জুলাই ১৯৭৩ সালে। এ আইন পুনরায় সংশোধন করা হয় ৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে। এদিকে ধারণা করা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর কিছু বিধানের সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আইনটির অধিকতর সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না, এ বিষয়ে আইন উপদেষ্টা কিছুই জানায়নি।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি ইনভেস্টিগেশন টিম ও একটি প্রসিকিউশন টিম আছে। এগুলোকে পুনর্গঠন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ গণহত্যার ইনভেস্টিগেশন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ থেকে আমাদের বারবার এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিচারে সত্যিকারের স্বচ্ছতা-নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের ইনভেস্টিগেশন টিম জাতিসংঘের সর্বাত্মক তত্ত্বাবধানে তদন্তকাজ করার প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা তার কাছে সহযোগিতা চাইব। এছাড়া জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের কনসার্ন এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এটা শুরু করতে পারব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাই হত্যাকাণ্ডের অভিযুক্তরা আন্তর্জাতিকভাবে যে কোনো দেশ থেকে আইনজীবী আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সরকার বাধা দেবে না।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইনানুযায়ী গণহত্যার বিচার ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত এই আইনের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ : আইনের ৩(১) ধারায় আইন প্রণয়নের তারিখের পূর্বের ঘটনাকেও এই আইনে বিচারের আওতায় আনয়ন করা হয়। আইনের ৫(২) ধারায় কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তি তার নিজের দেশের আইন বা সরকারের আদেশ বা ঊর্ধ্বতনের আদেশ পালন করতে গিয়ে বর্ণিত অপরাধ করে থাকলেও তাতে দায়মুক্তি পাওয়া যাবে না, তবে দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের বিবেচনা করা যাবে। আইনের ১৭(২) অনুযায়ী অভিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে এবং (৩) উপধারামতে সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবে। আইনের ১৯ (২) অনুযায়ী মৃত বা কোনো সাক্ষীকে উপস্থিত করা দুরূহ হলে ম্যাজিস্ট্রেট বা তদন্তকারীর নিকট প্রদত্ত তার জবানবন্দি উচিত মনে করলে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। আইনের ২০(২) ধারা মতে ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড আরোপ করতে পারবে। বাদী ও আসামি উভয় পক্ষ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলাত ডিভিশনে আপিল করতে পারবে। দেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এবং ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইন ট্রাইব্যুনালের জন্য প্রযোজ্য হবে না। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ব্যতীত ট্রাইব্যুনালের অন্য কোনো আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে আপিল করা যাবে না। এই আইনের অধীনে সরল বিশ্বাসে গৃহীত কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য যে নূরেনবার্গ ও টোকিও ট্রায়ালের পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ প্রনয়ণ করে। এর ২০ বছর পর ১৯৯৩ সালে বেলজিয়াম বিশ্বের যে কোনো স্থানে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের জন্য নিজ দেশে বিচারের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এ আইনে দুজন রোয়ান্ডান নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডদান করা হয়। কিন্তু বেলজিয়াম কর্তৃক আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক বিচারাদালত ২০০২ সালে অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের ২৩ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম স্ট্যাটুস রেটিফাই বা অনুসমর্থন করেছে। রোম স্ট্যাটুস বিশ্বে যুদ্ধাপরাধের সর্বশেষ ও জাতিসংঘ সমর্থিত আইন।
রোম স্ট্যাটুস-এর বৈশিষ্ট্যসমূহ রোম স্ট্যাটুস-এর ১১(১) অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে কেবল রোম স্ট্যাটুসের আইন বলবৎ হওয়ার দিন ও তারপরে সংঘটিত অপরাধের বিচার করা যাবে। বাংলাদেশের আইনে আইন প্রণয়নের আগে ও পরে সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের ওপর। এ বিষয়ে স্ট্যাটুসের ২৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে স্ট্যাটুস বলবৎ হওয়ার আগে করা কোনো কাজের জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না। রোম স্ট্যাটুস-এর ৭৭(১) এ অনুচ্ছেদে ক্ষেত্রমত সর্বাধিক ৩০ বছরের জেল এবং বি অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ক্ষেত্রমত যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান করা হয়। স্ট্যাটুস-এ গণহত্যার মতো অপরাধের জন্যও মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়নি। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা আছে। স্ট্যাটুস-এর ৮২ অনুচ্ছেদে রায় ব্যতীত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, আদেশের বিরুদ্ধে অভিযুক্তকে আপিলের অধিকার প্রদান করা হয়। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের আইনে আপিলের অধিকার দেওয়া হয় কেবল রায়ের বিরুদ্ধে, ট্রাইব্যুনালের অন্যান্য আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অধিকার দেওয়া হয়নি।