ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আয়া করলেন প্রসূতির ডেলিভারি, ছিল না চিকিৎসক

ভূমিষ্টের পরই শিশুর মৃত্যু, চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৪:২১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভূমিষ্টের পরই এক কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ওই সময় কেনো ডাক্তারও ছিল না, আয়া ডেলিভারির কাজ সামাল দেন। আর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ছিল না। তাই শিশুটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অক্সিজেন দিতে না পারায় এ মৃত্যু ঘটেছে। তবে হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ও শিশুটি ভূমিষ্টের সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্সের দাবি, ভূমিষ্টের পর থেকে শিশুটি শ্বাস নিচ্ছিলো না। কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়া হলে শিশুটি কয়েকবার চোখ খুলে তাকায়, কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সকালে প্রসূতি রিয়া খাতুন (২০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। শনিবার বেলা ১টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে গাইনি ওয়ার্ডের লেবার রুমে নেয়া হয়। বেলা পৌনে দুইটার সময় প্রসূতি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এর ১৫ মিনিটের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। প্রসূতি রিয়া খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের বসতিপাড়ার মুকুল হোসেনের স্ত্রী। তিনি সদর হাসপাতালের জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. শাপলা খাতুনের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

প্রসূতির মামা আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শিশুটি ভূমিষ্টের পর তার অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ছিল না। এসময় নার্স আস্বু ব্যাগের মাধ্যমে শিশুটিকে অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে অন্য ওয়ার্ড থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসা হলেও অক্সিজেন দিতে পারেনি। নবজাতকটি কয়েকবার চোখ মেলে তাকালে কর্তব্যরত নার্স দ্রুত জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নিতে বলে। তবে জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক বাঁচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করেন। ডেলিভারির সময় কোনো ডাক্তার সেখানে ছিলেন না।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মমতাজ বেগম বলেন, সকালে গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. আকলিমা খাতুন প্রসূতিকে পর্যবেক্ষণ করেন। সেসময় পর্যন্ত প্রসূতি ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হয়নি। ডা. আকলিমা খাতুন আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা তা করেননি। দুপুরে প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে দ্রুত লেবার রুমে নেয়া হয়। এসময় বাঁচ্চাটির মাথার সামান্য অংশ দেখা যাচ্ছিলো এবং ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়।

মমতাজ বেগম আরও বলেন, ভূমিষ্টের পর শিশুটি শ্বাস নিচ্ছিলো না, তার শরীর নীল বর্ণের ছিল। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে দ্রুত আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে শিশুটিকে কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়া হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত আমরা শিশুটির শ্বাস স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করলে কয়েকবার শিশুটি চোখ মেলে তাকালেও কান্না করেনি। এরপর অক্সিজেন দেয়া হয়। পরবর্তীতে শিশুটিকে জরুরি বিভাগে পাঠানো হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. আকলিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

হাসপাতালের জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. শাপলা খাতুন বলেন, কোনো শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ভূমিষ্ট হলে এরপরপরই কান্না করে। এসময় তার নাক ও মুখের ভেতরে থাকা পানি বের করা হয়। তবে এই নবজাতকের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। নবজাতকটি মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মলত্যাগ করে। যা তার নাকে ও মুখে প্রবেশ করে। ভূমিষ্টের পর শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ছিল না, তার শরীর নীল বর্ণের ছিল। কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়ার চেষ্টা করেন, যা এ ধরনের নবজাতকের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম চিকিৎসা।

ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক ছিল না, নার্স ও আয়া ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাপলা খাতুন আরও বলেন, গাইনি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকে না। জরুরি ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকই দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া গাইনি ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্সরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকেন। যে কোনো সময় প্রসূতির প্রসব বেদনা উঠলে তারা ডেলিভারি করাতে পারেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘এ ঘটনায় রোববার (আজ) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আয়া করলেন প্রসূতির ডেলিভারি, ছিল না চিকিৎসক

ভূমিষ্টের পরই শিশুর মৃত্যু, চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৪:২১:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভূমিষ্টের পরই এক কন্যাসন্তানের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, ওই সময় কেনো ডাক্তারও ছিল না, আয়া ডেলিভারির কাজ সামাল দেন। আর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ছিল না। তাই শিশুটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অক্সিজেন দিতে না পারায় এ মৃত্যু ঘটেছে। তবে হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ও শিশুটি ভূমিষ্টের সময় ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্সের দাবি, ভূমিষ্টের পর থেকে শিশুটি শ্বাস নিচ্ছিলো না। কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়া হলে শিশুটি কয়েকবার চোখ খুলে তাকায়, কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, গত শুক্রবার সকালে প্রসূতি রিয়া খাতুন (২০) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন। শনিবার বেলা ১টা ১৫ মিনিটের দিকে প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে গাইনি ওয়ার্ডের লেবার রুমে নেয়া হয়। বেলা পৌনে দুইটার সময় প্রসূতি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এর ১৫ মিনিটের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। প্রসূতি রিয়া খাতুন দামুড়হুদা উপজেলার হাতিভাঙ্গা গ্রামের বসতিপাড়ার মুকুল হোসেনের স্ত্রী। তিনি সদর হাসপাতালের জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. শাপলা খাতুনের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

প্রসূতির মামা আরিফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, শিশুটি ভূমিষ্টের পর তার অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন ছিল। তবে ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহ ছিল না। এসময় নার্স আস্বু ব্যাগের মাধ্যমে শিশুটিকে অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে অন্য ওয়ার্ড থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসা হলেও অক্সিজেন দিতে পারেনি। নবজাতকটি কয়েকবার চোখ মেলে তাকালে কর্তব্যরত নার্স দ্রুত জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে নিতে বলে। তবে জরুরি বিভাগে নিলে চিকিৎসক বাঁচ্চাটিকে মৃত ঘোষণা করেন। ডেলিভারির সময় কোনো ডাক্তার সেখানে ছিলেন না।

হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মমতাজ বেগম বলেন, সকালে গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. আকলিমা খাতুন প্রসূতিকে পর্যবেক্ষণ করেন। সেসময় পর্যন্ত প্রসূতি ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হয়নি। ডা. আকলিমা খাতুন আল্ট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু তারা তা করেননি। দুপুরে প্রসূতির প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে দ্রুত লেবার রুমে নেয়া হয়। এসময় বাঁচ্চাটির মাথার সামান্য অংশ দেখা যাচ্ছিলো এবং ডেলিভারি সম্পন্ন করা হয়।

মমতাজ বেগম আরও বলেন, ভূমিষ্টের পর শিশুটি শ্বাস নিচ্ছিলো না, তার শরীর নীল বর্ণের ছিল। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা হিসেবে দ্রুত আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে শিশুটিকে কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়া হয়। প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত আমরা শিশুটির শ্বাস স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করলে কয়েকবার শিশুটি চোখ মেলে তাকালেও কান্না করেনি। এরপর অক্সিজেন দেয়া হয়। পরবর্তীতে শিশুটিকে জরুরি বিভাগে পাঠানো হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. আকলিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

হাসপাতালের জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. শাপলা খাতুন বলেন, কোনো শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে ভূমিষ্ট হলে এরপরপরই কান্না করে। এসময় তার নাক ও মুখের ভেতরে থাকা পানি বের করা হয়। তবে এই নবজাতকের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। নবজাতকটি মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মলত্যাগ করে। যা তার নাকে ও মুখে প্রবেশ করে। ভূমিষ্টের পর শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক ছিল না, তার শরীর নীল বর্ণের ছিল। কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আম্বু ব্যাগের মাধ্যমে কৃত্তিমভাবে শ্বাস দেয়ার চেষ্টা করেন, যা এ ধরনের নবজাতকের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম চিকিৎসা।

ওয়ার্ডে কোনো চিকিৎসক ছিল না, নার্স ও আয়া ডেলিভারি সম্পন্ন করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাপলা খাতুন আরও বলেন, গাইনি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকে না। জরুরি ক্ষেত্রে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকই দায়িত্বে থাকেন। এছাড়া গাইনি ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্সরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত থাকেন। যে কোনো সময় প্রসূতির প্রসব বেদনা উঠলে তারা ডেলিভারি করাতে পারেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘এ ঘটনায় রোববার (আজ) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।