ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ জেলায় বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা

৬ মাসে ১২৯ জনের আত্মহত্যা

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যা প্রবণতা আবার ভয়ংকর রূপে ফিরেছে। প্রায় প্রতিদিন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ঝিনাইদহে তুচ্ছ কারণে জীবনকে আত্মঘাতী করে তোলার এই ভয়ংকর প্রচেষ্টা বিশ্ব ও বাংলাদেশের গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, পুলিশ, মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন জার্নালে ঝিনাইদহে আত্মহত্যার এই ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এদিকে ২০২৪ সালের গত ৬ মাসে ঝিনাইদহে ১২৯ জন নর-নারী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭১ জন ও নারী ৫৮ জন। এদিকে, আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে শৈলকুপাকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষে নাম উঠে এসেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার।

ঝিনাইদহের মানবাধিকার সংগঠন আরডিসির এক জরিপ তথ্যে জানানো হয়, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গলায় ফাঁস ও বিষপান করে জেলায় আত্মহত্যা করেছে ১২৯ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৩৮ জন, মহেশপুরে ২৮ জন, শৈলকুপায় ২৬ জন, কালীগঞ্জে ১৭ জন, হরিণাকুণ্ডুতে ১১ জন ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৯ জন। গড়ে প্রতি মাসে ২১ দশমিক ৫ জন করে আত্মহত্যা করছেন।

আরডিসির নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান জানান, জুন-জুলাই মাসে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে স্বল্প আয়ের কারণে পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এ নিয়ে সংসারে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যা নিয়ে ২০ বছর ধরে কাজ করা ঝিনাইদহের শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ আবেগ প্রবণ। অল্পতেই তার ভেঙে পড়েন। যে কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছেন। মানুষকে বোঝাচ্ছেন কিন্তু তারপরও সামান্য ঘটনায় মানুষ নিজেকে আত্মঘাতী করে তুলছেন। আত্মহত্যায় দেশের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা শীর্ষে রয়েছে বলেও তিনি জানান।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে আত্মহত্যার ছয়টি ঘটনা ঘটে। সারা দেশে যেখানে গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, সেখানে ঝিনাইদহে প্রতিদিন গড়ে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষে আত্মহত্যার হার ২২ শতাংশ।
পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহে ৩ হাজার ১৫২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এই বছরগুলোতে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর সংখ্যা ২২ হাজার ৬৭৫ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই ২৬ বছরে ঝিনাইদহে ১৮ হাজার নরনারী আত্মহত্যা করেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২২৮ জন।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন সংস্থা কাজ করার ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে আত্মহত্যার সংখ্যা কমতে থাকে। তারপরও বিশে^র মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঝিনাইদহ। শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, হরিণাকুণ্ডুর একটি পরিবার আছেন। যার চারটি মেয়েই দেখাদেখি আত্মহত্যা করেছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গৃহবধূ পারভিন আক্তার যিনি তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রামে আত্মহত্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে যা বাংলাদেশে তো বটেই, বিশে^ নজিরবিহীন কাণ্ড।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল ফাত্তাহ জানান, মানুষের শরীরে একটি হরমোন রয়েছে। যা ক্রোধ বা রাগ, দুঃখ, হাসি ও কান্না নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরক্সিন হরমোন মানুষের গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখন দেখতে হবে যে সব মানুষ অল্পতে আত্মহত্যা করেন, তাদের শরীরে এই থাইরক্সিন হরমোনের পরিমাণ কেমন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহ জেলায় বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা

৬ মাসে ১২৯ জনের আত্মহত্যা

আপলোড টাইম : ০৯:০৩:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪

ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যা প্রবণতা আবার ভয়ংকর রূপে ফিরেছে। প্রায় প্রতিদিন মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ঝিনাইদহে তুচ্ছ কারণে জীবনকে আত্মঘাতী করে তোলার এই ভয়ংকর প্রচেষ্টা বিশ্ব ও বাংলাদেশের গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, পুলিশ, মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন জার্নালে ঝিনাইদহে আত্মহত্যার এই ভয়াবহতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এদিকে ২০২৪ সালের গত ৬ মাসে ঝিনাইদহে ১২৯ জন নর-নারী আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭১ জন ও নারী ৫৮ জন। এদিকে, আত্মহত্যার পরিসংখ্যানে শৈলকুপাকে পেছনে ফেলে এবার শীর্ষে নাম উঠে এসেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার।

ঝিনাইদহের মানবাধিকার সংগঠন আরডিসির এক জরিপ তথ্যে জানানো হয়, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত গলায় ফাঁস ও বিষপান করে জেলায় আত্মহত্যা করেছে ১২৯ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ৩৮ জন, মহেশপুরে ২৮ জন, শৈলকুপায় ২৬ জন, কালীগঞ্জে ১৭ জন, হরিণাকুণ্ডুতে ১১ জন ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৯ জন। গড়ে প্রতি মাসে ২১ দশমিক ৫ জন করে আত্মহত্যা করছেন।

আরডিসির নির্বাহী প্রধান আব্দুর রহমান জানান, জুন-জুলাই মাসে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে স্বল্প আয়ের কারণে পরিবারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। এ নিয়ে সংসারে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যে কেউ আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যা নিয়ে ২০ বছর ধরে কাজ করা ঝিনাইদহের শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ জেলার মানুষ আবেগ প্রবণ। অল্পতেই তার ভেঙে পড়েন। যে কারণে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করছেন। মানুষকে বোঝাচ্ছেন কিন্তু তারপরও সামান্য ঘটনায় মানুষ নিজেকে আত্মঘাতী করে তুলছেন। আত্মহত্যায় দেশের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা শীর্ষে রয়েছে বলেও তিনি জানান।

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি এক লাখে আত্মহত্যার ছয়টি ঘটনা ঘটে। সারা দেশে যেখানে গড়ে ২৮ জন মানুষ আত্মহত্যা করেন, সেখানে ঝিনাইদহে প্রতিদিন গড়ে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করছেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ও পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষে আত্মহত্যার হার ২২ শতাংশ।
পরিসংখ্যান মতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ঝিনাইদহে ৩ হাজার ১৫২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এই বছরগুলোতে আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর সংখ্যা ২২ হাজার ৬৭৫ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এই ২৬ বছরে ঝিনাইদহে ১৮ হাজার নরনারী আত্মহত্যা করেছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১১ সালের জুন পর্যন্ত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ২২৮ জন।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন সংস্থা কাজ করার ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে আত্মহত্যার সংখ্যা কমতে থাকে। তারপরও বিশে^র মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ঝিনাইদহ। শোভা এনজিওর নির্বাহী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম জানান, হরিণাকুণ্ডুর একটি পরিবার আছেন। যার চারটি মেয়েই দেখাদেখি আত্মহত্যা করেছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ধনঞ্জয়পুর গ্রামের গৃহবধূ পারভিন আক্তার যিনি তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। এভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রামে আত্মহত্যার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে যা বাংলাদেশে তো বটেই, বিশে^ নজিরবিহীন কাণ্ড।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সাবেক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আব্দুল ফাত্তাহ জানান, মানুষের শরীরে একটি হরমোন রয়েছে। যা ক্রোধ বা রাগ, দুঃখ, হাসি ও কান্না নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরক্সিন হরমোন মানুষের গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এখন দেখতে হবে যে সব মানুষ অল্পতে আত্মহত্যা করেন, তাদের শরীরে এই থাইরক্সিন হরমোনের পরিমাণ কেমন।