ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হরিণাকুণ্ডুতে মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ১২ নিয়োগ!

সিআইডি গেলেই দৌঁড় মারেন মাদ্রাসা সুপার

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪
  • / ৫২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারফলসি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ওই মাদ্রাসায় ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সিআইডি তদন্তে নেমেছে। অভিযোগ উঠেছে মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ দিয়ে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের আমলি আদালতে মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও জমিদাতা মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে কনক মন্ডল জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করলে আদালত ঝিনাইদহ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক কোনো সহায়তা করছেন না। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। কর্মস্থলে গেলে তিনি পালিয়ে যান। তাছাড়া নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাচ্ছেন না। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার পারফলসি গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) না হওয়ায় মাদ্রাসাটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল না। মাদ্রাসাটিতে ছিল না কোনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক। প্রয়াত সভাপতি খলিলুর রহমান মাত্র ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যান। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১১ সালে মারা যান। এমপিও না হওয়ার কারণে সুপারসহ অন্যান্য শিক্ষক মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যান।

২০২২ সালের ৬ জুলাই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে বর্তমান মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক হরিণাকুণ্ডু সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব  ছেড়ে হঠাৎ আবির্ভূত হন সুপার হিসেবে। তিনিসহ ১২ জন শিক্ষক দাবি করে বসেন, প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খলিলুর রহমান তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন। এ নিয়ে এলাকায় শোরগোল শুরু হয়। মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী শিক্ষক রাফেজা খাতুন, সহকারী মৌলভী শিক্ষক বাবলুর রশিদ ও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তারা নিজেদের নিয়োগপত্র দেখাতে পারেননি।

এছাড়া নিয়োগ বোর্ড কোথায় হয়েছিল বা নিয়োগ বোর্ডে সরকারি কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কি না তাও তারা বলতে পারেননি। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দপ্তরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনজের আলী। তিনি জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল এই ১০ বছর পর্যন্ত বর্তমান সুপার ইয়ারুল হক ছিলেন না। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর তিনি রাতারাতি উড়ে এসে জুড়ে বসেন।

এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক জানান, তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান। কোথায় কবে নিয়োগ বোর্ড বসেছিল, তা তার মনে নেই। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী জানান, নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করে যে রিপোর্ট প্রদান করবে, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসাটির বর্তমান সভাপতি আক্তার হোসেন জানান, নিয়োগের বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হরিণাকুণ্ডুতে মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ১২ নিয়োগ!

সিআইডি গেলেই দৌঁড় মারেন মাদ্রাসা সুপার

আপলোড টাইম : ০৯:৩৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারফলসি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ওই মাদ্রাসায় ১২ জন শিক্ষক নিয়োগের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর সিআইডি তদন্তে নেমেছে। অভিযোগ উঠেছে মৃত সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ দিয়ে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের আমলি আদালতে মামলা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঝিনাইদহ সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও জমিদাতা মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে কনক মন্ডল জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে তিনি শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করলে আদালত ঝিনাইদহ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক কোনো সহায়তা করছেন না। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন। কর্মস্থলে গেলে তিনি পালিয়ে যান। তাছাড়া নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাচ্ছেন না। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার পারফলসি গ্রামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার (এমপিও) না হওয়ায় মাদ্রাসাটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছিল। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়মিত আসা যাওয়া ছিল না। মাদ্রাসাটিতে ছিল না কোনো পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক। প্রয়াত সভাপতি খলিলুর রহমান মাত্র ৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যান। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১১ সালে মারা যান। এমপিও না হওয়ার কারণে সুপারসহ অন্যান্য শিক্ষক মাদ্রাসা ছেড়ে চলে যান।

২০২২ সালের ৬ জুলাই মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে বর্তমান মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক হরিণাকুণ্ডু সিদ্দিকীয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব  ছেড়ে হঠাৎ আবির্ভূত হন সুপার হিসেবে। তিনিসহ ১২ জন শিক্ষক দাবি করে বসেন, প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খলিলুর রহমান তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন। এ নিয়ে এলাকায় শোরগোল শুরু হয়। মাদ্রাসার জুনিয়র মৌলভী শিক্ষক রাফেজা খাতুন, সহকারী মৌলভী শিক্ষক বাবলুর রশিদ ও জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তারা নিজেদের নিয়োগপত্র দেখাতে পারেননি।

এছাড়া নিয়োগ বোর্ড কোথায় হয়েছিল বা নিয়োগ বোর্ডে সরকারি কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন কি না তাও তারা বলতে পারেননি। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দপ্তরি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মনজের আলী। তিনি জানান, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল এই ১০ বছর পর্যন্ত বর্তমান সুপার ইয়ারুল হক ছিলেন না। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর তিনি রাতারাতি উড়ে এসে জুড়ে বসেন।

এ বিষয়ে মাদ্রাসা সুপার ইয়ারুল হক জানান, তাদের নিয়োগ দিয়ে গেছেন সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান। কোথায় কবে নিয়োগ বোর্ড বসেছিল, তা তার মনে নেই। বিষয়টি নিয়ে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী জানান, নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করে যে রিপোর্ট প্রদান করবে, তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদ্রাসাটির বর্তমান সভাপতি আক্তার হোসেন জানান, নিয়োগের বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতাম।