ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকের বদলে গুদামে ঢুকছে সিন্ডিকেটের ধান!

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি চাল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ১১:০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভিজিএফ কর্মসূচির চাল পাচারের রেশ কাটতে না কাটতে এবার খাদ্যগুদামে ঢোকানো হচ্ছে সিন্ডিকেটের ধান। সরকার নির্ধারিত মূল্যে উপজেলার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ধান কিনে খাদ্যগুদামে ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়া গ্রামের আরিফুজ্জামান নামের এক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী হতকাল সোমবার প্রায় ৪৫০ বস্তা ধান লটারিতে বিজয়ী দেখিয়ে কৃষকের নামে গুদামে সরবরাহ করেছেন। আর এই কাজে সহায়তা করেছেন কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি নাইমুল ইসলাম।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের পিছনের একটি নির্জন জঙ্গলের মধ্যে সিন্ডিকেটের কেনা এই ধান ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৭৭০৩) থেকে আনলোড করা হচ্ছিল। এ নিয়ে কালীগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গলের মধ্যে একটি ট্রাক থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা থেকে ৪৫০ বস্তা ধান নামানো হচ্ছে। এই ধান কালীগেঞ্জর কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে নড়াইল থেকে আনা হয়েছে। ট্রাক থেকে নামিয়ে সেখান থেকে ট্রলিতে করে কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এ সময় জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৪০০টি খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে লটারিতে বিজয়ী ৫৫৮ জন কৃষকের কাছ ১৬৭৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান গুদামে দিতে পারবেন। সরকার এ বছর ১২৮০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান কিনছে। এখন পর্যন্ত ৫০% লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

কৃষকদের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছরই এই ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে ধান প্রবেশ করানো হয়। এর সাথে কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি নাইমুল ইসলামসহ অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত। তবে ধান কেনা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, কিন্তু বিল হয় কৃষকের নামে। অগ্রণী ব্যাংক থেকে এই বিল প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাঈমুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর তিনি জানান, কিছু ধান গুদামে ঢুকেছিল সেগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের এই বস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যায়। জঙ্গলে পাওয়া বস্তা গুদাম থেকে দেওয়া হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহদী হাসান শিহাব বলেন, সকালে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এভাবে ধান ক্রয় করার কোনো সুযোগ নেই। সোমবার সকালে যে ধান গুদামে ঢুকেছে, এই ধানের কোনো বিল দেওয়া হবে না। ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান জানান, বিষয়টি শুনে তিনি খাদ্যগুদামে গিয়েছিলেন এবং প্রকৃত লটারিতে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে গুদামে প্রবেশ করা ধানগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বলে এসেছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কৃষকের বদলে গুদামে ঢুকছে সিন্ডিকেটের ধান!

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে সরকারি চাল ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ১১:০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভিজিএফ কর্মসূচির চাল পাচারের রেশ কাটতে না কাটতে এবার খাদ্যগুদামে ঢোকানো হচ্ছে সিন্ডিকেটের ধান। সরকার নির্ধারিত মূল্যে উপজেলার প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান না নিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই ধান কিনে খাদ্যগুদামে ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়া গ্রামের আরিফুজ্জামান নামের এক সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী হতকাল সোমবার প্রায় ৪৫০ বস্তা ধান লটারিতে বিজয়ী দেখিয়ে কৃষকের নামে গুদামে সরবরাহ করেছেন। আর এই কাজে সহায়তা করেছেন কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি নাইমুল ইসলাম।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের পিছনের একটি নির্জন জঙ্গলের মধ্যে সিন্ডিকেটের কেনা এই ধান ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২০-৭৭০৩) থেকে আনলোড করা হচ্ছিল। এ নিয়ে কালীগঞ্জে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জঙ্গলের মধ্যে একটি ট্রাক থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা থেকে ৪৫০ বস্তা ধান নামানো হচ্ছে। এই ধান কালীগেঞ্জর কৃষকদের কাছ থেকে না কিনে নড়াইল থেকে আনা হয়েছে। ট্রাক থেকে নামিয়ে সেখান থেকে ট্রলিতে করে কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এ সময় জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৪০০টি খাদ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো বস্তা পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে লটারিতে বিজয়ী ৫৫৮ জন কৃষকের কাছ ১৬৭৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি কৃষক সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন ধান গুদামে দিতে পারবেন। সরকার এ বছর ১২৮০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান কিনছে। এখন পর্যন্ত ৫০% লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

কৃষকদের একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছরই এই ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে না কিনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গুদামে ধান প্রবেশ করানো হয়। এর সাথে কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ওসিএলএসডি নাইমুল ইসলামসহ অসাধু কিছু কর্মকর্তা জড়িত। তবে ধান কেনা হয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে, কিন্তু বিল হয় কৃষকের নামে। অগ্রণী ব্যাংক থেকে এই বিল প্রদান করা হয়। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাঈমুল ইসলাম প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। এরপর তিনি জানান, কিছু ধান গুদামে ঢুকেছিল সেগুলো ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের এই বস্তা বাইরে কিনতে পাওয়া যায়। জঙ্গলে পাওয়া বস্তা গুদাম থেকে দেওয়া হয়নি।

কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহদী হাসান শিহাব বলেন, সকালে বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এভাবে ধান ক্রয় করার কোনো সুযোগ নেই। সোমবার সকালে যে ধান গুদামে ঢুকেছে, এই ধানের কোনো বিল দেওয়া হবে না। ধান ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান জানান, বিষয়টি শুনে তিনি খাদ্যগুদামে গিয়েছিলেন এবং প্রকৃত লটারিতে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। সকালে গুদামে প্রবেশ করা ধানগুলো ফেরত দেওয়ার জন্য বলে এসেছি।