ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখোমুখি ঝিনাইদহের আ.লীগের দুই গ্রুপ

হত্যার বিচার ও মিণ্টুর মুক্তির দাবিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০২:৫১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

এমপি আনার হত্যার তদন্তে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এমপি আনার হত্যা ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিমের গ্রেপ্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দুই ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষ এমপি আনার হত্যার বিচার চাচ্ছে। অন্য পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে আটকের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মিণ্টুর পক্ষে চলা আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না। তারা অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছেন। ফলে মিণ্টুর পক্ষে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজপথে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কেবলই মিণ্টুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই নেতার অনুসারিরা হুমকি-ধমকি দিতেও কসুর করছেন না।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মিণ্টুর মুক্তির আন্দোলনে গতকাল মানববন্ধনে বলেছেন, কালীগঞ্জে আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় সাইদুল করিম মিণ্টুর বিরুদ্ধে বিষাদগার করা হচ্ছে। তার সম্মানহানী করা হচ্ছে। কালীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এমপি আনার সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ও পৌর মেয়র আশরাফুলকে তিনি গ্রেপ্তার দাবি জানিয়ে বলেন, তারাই মূলত মীরজাফর হিসেবে এমপি আনারের পাশে ছিল। তারা অনেক কিছুই জানেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান মিণ্টু আটকের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করে বলেন, ‘ঢাকায় পার্টি অফিসের সামনে যখন আমি নেতার (মিণ্টু) সঙ্গে দাঁড়িয়ে তখন, নম্বর প্লেট বিহীন একটি গাড়িতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘ডিবি প্রধান আপনার সঙ্গে কথা বলবেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। নেতা তখন আমাদের দাঁড় করিয়ে বললেন, তুমরা দাঁড়াও আমি কথা বলে এখনই আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত আমার নেতাকে ছাড়া হয়নি। ডিবির পক্ষ থেকেও তিনি আটক না গ্রেপ্তার তাও বলা হচ্ছে না’।

এদিকে, গতকাল কালীগঞ্জ শহরে এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুনিদের আড়াল করার জন্য ঝিনাইদহ শহরে একের পর এক মানববন্ধন করা হলেও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না ঝিনাইদহের নেতারা। এতেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা এমপি আনার হত্যার পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘আনার হত্যার আন্দোলনে আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিচ্ছি বলে তারা আমাদের গ্রেপ্তার চান। এতো তো তাদের ভালোই হয়। আমরা গ্রেপ্তার হলে তো প্রতিবাদের মানুষ রাস্তায় থাকবে না’।

তিনি বলেন, সাইদুল করিম মিণ্টু এই হত্যায় জড়িত থাকলে তাকে বিচার করে ফাঁসি দিতে হবে। তার আগে তিনি তার দল থেকে বহিস্কার চান। বক্তৃতা ও বিবৃতিতে খুনিদের যারা আড়াল করতে চাচ্ছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আশরাফ। এদিকে এমপি আনার হত্যার পর খালি গায়ে তার হাতমুখ বাঁধা নৃশংস ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আনার সমর্থকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসন জুড়ে নিহত আনারের সমর্থকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এমপি আনার সমর্থকরা কালীগঞ্জ শহর ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। বলা যায়, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ এখন মিছিল ও প্রতিবাদের শহরে পরিণত হয়েছে। যাদের এক পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর এমপি আনার সমর্থকরা দোষী হয়ে থাকলে সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে বহিস্কারসহ ফাঁসির দাবিতে ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছেন।

এদিকে মিণ্টু মুক্তি আন্দোলন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ সফিকুল ইসলাম অপু বলেন, ‘আমি বর্ধিত সভায় নেতা-কর্মীদের পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো আন্দোলন করা যাবে না। কাজেই মিণ্টু আটক হওয়ার পর যারা আন্দোলন করছেন, সেটি আওয়ামী লীগের আন্দোলন নয়’। তিনি বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। কাজেই মিণ্টু যে দোষী, তাও বলছি না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে যারা ঝিনাইদহ শহরে মিণ্টুর পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাদেরকে অতিভক্ত বলা যায়। আর এই অতিভক্ত সব সময় যে ভালো কিছু বয়ে আনবে, তা নয়। খারাপও হতে পারে বলে সাবেক এই সাংসদ মন্তব্য করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এমপি আনার হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখোমুখি ঝিনাইদহের আ.লীগের দুই গ্রুপ

হত্যার বিচার ও মিণ্টুর মুক্তির দাবিতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

আপলোড টাইম : ০২:৫১:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

এমপি আনার হত্যার তদন্তে নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসার ফলে ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এমপি আনার হত্যা ও দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিমের গ্রেপ্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ এখন কার্যত দুই ধারায় বিভক্ত। এক পক্ষ এমপি আনার হত্যার বিচার চাচ্ছে। অন্য পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে আটকের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মিণ্টুর পক্ষে চলা আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না। তারা অনেকটাই নিশ্চুপ রয়েছেন। ফলে মিণ্টুর পক্ষে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত রাজপথে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কেবলই মিণ্টুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের এই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে দুই নেতার অনুসারিরা হুমকি-ধমকি দিতেও কসুর করছেন না।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম মিণ্টুর মুক্তির আন্দোলনে গতকাল মানববন্ধনে বলেছেন, কালীগঞ্জে আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় সাইদুল করিম মিণ্টুর বিরুদ্ধে বিষাদগার করা হচ্ছে। তার সম্মানহানী করা হচ্ছে। কালীগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা এমপি আনার সমর্থক উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী ও পৌর মেয়র আশরাফুলকে তিনি গ্রেপ্তার দাবি জানিয়ে বলেন, তারাই মূলত মীরজাফর হিসেবে এমপি আনারের পাশে ছিল। তারা অনেক কিছুই জানেন।

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান মিণ্টু আটকের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করে বলেন, ‘ঢাকায় পার্টি অফিসের সামনে যখন আমি নেতার (মিণ্টু) সঙ্গে দাঁড়িয়ে তখন, নম্বর প্লেট বিহীন একটি গাড়িতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘ডিবি প্রধান আপনার সঙ্গে কথা বলবেন, আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। নেতা তখন আমাদের দাঁড় করিয়ে বললেন, তুমরা দাঁড়াও আমি কথা বলে এখনই আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত আমার নেতাকে ছাড়া হয়নি। ডিবির পক্ষ থেকেও তিনি আটক না গ্রেপ্তার তাও বলা হচ্ছে না’।

এদিকে, গতকাল কালীগঞ্জ শহরে এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, ‘খুনিদের আড়াল করার জন্য ঝিনাইদহ শহরে একের পর এক মানববন্ধন করা হলেও এমপি আনার হত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন না ঝিনাইদহের নেতারা। এতেই আমরা নিশ্চিত হয়েছি তারা এমপি আনার হত্যার পক্ষে।’ তিনি বলেন, ‘আনার হত্যার আন্দোলনে আমি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নেতৃত্ব দিচ্ছি বলে তারা আমাদের গ্রেপ্তার চান। এতো তো তাদের ভালোই হয়। আমরা গ্রেপ্তার হলে তো প্রতিবাদের মানুষ রাস্তায় থাকবে না’।

তিনি বলেন, সাইদুল করিম মিণ্টু এই হত্যায় জড়িত থাকলে তাকে বিচার করে ফাঁসি দিতে হবে। তার আগে তিনি তার দল থেকে বহিস্কার চান। বক্তৃতা ও বিবৃতিতে খুনিদের যারা আড়াল করতে চাচ্ছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান আশরাফ। এদিকে এমপি আনার হত্যার পর খালি গায়ে তার হাতমুখ বাঁধা নৃশংস ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আনার সমর্থকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসন জুড়ে নিহত আনারের সমর্থকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এমপি আনার সমর্থকরা কালীগঞ্জ শহর ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ বাজারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছেন। বলা যায়, ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জ এখন মিছিল ও প্রতিবাদের শহরে পরিণত হয়েছে। যাদের এক পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আর এমপি আনার সমর্থকরা দোষী হয়ে থাকলে সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে বহিস্কারসহ ফাঁসির দাবিতে ক্রমশ সোচ্চার হচ্ছেন।

এদিকে মিণ্টু মুক্তি আন্দোলন নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ সফিকুল ইসলাম অপু বলেন, ‘আমি বর্ধিত সভায় নেতা-কর্মীদের পরিষ্কার ভাষায় বলেছি, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কোনো আন্দোলন করা যাবে না। কাজেই মিণ্টু আটক হওয়ার পর যারা আন্দোলন করছেন, সেটি আওয়ামী লীগের আন্দোলন নয়’। তিনি বলেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না। কাজেই মিণ্টু যে দোষী, তাও বলছি না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করে যারা ঝিনাইদহ শহরে মিণ্টুর পক্ষে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাদেরকে অতিভক্ত বলা যায়। আর এই অতিভক্ত সব সময় যে ভালো কিছু বয়ে আনবে, তা নয়। খারাপও হতে পারে বলে সাবেক এই সাংসদ মন্তব্য করেন।