ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের নতুন মোড়, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

এমপি আনার অনুসারীদের দাবি, শাহীন নয় মিণ্টুই হত্যার মাস্টারমাইন্ড

ঝিনাইদহ জেলা আ.লীগ সম্পাদক মিণ্টু আটক

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
  • / ৬১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু আটক হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মিণ্টুকে ধানমন্ডি ৩/এ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। এদিকে, দুপুর থেকেই মিণ্টু আটকের গুজব ঝিনাইদহ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। সময় যতই গড়াতে থাকে ততই গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। অনেকে ফেসবুকে আটকের সময় এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করে প্রচার করতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের পক্ষে পকপল জরুরি তারবার্তা পাঠিয়ে শহরে নিরাপত্তা জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন উদ্দীন গতকাল বিকেলে জানান, অনেকের মতো তিনিও এমন গ্রেপ্তারের কথা শুনেছেন। কিন্তু সত্য কি মিথ্যা তা তিনি জানেন না।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবু গ্রেপ্তারের পরই আলোচনায় উঠে আসে সাইদুল করিম মিণ্টুর নাম। গ্যাস বাবুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তারা এক সঙ্গে চলাফেরা করতেন সবসময়। গ্যাস বাবুর মাধ্যমে আনার হত্যার মাস্টামাইন্ড শাহিনের সঙ্গে সম্পর্ক হয় মিণ্টুর। এমপি আনার হত্যার পর ঘাতকরা তার ছবিও পাঠিয়েছিলেন মিণ্টুর কাছে। তাছাড়া এমপি কন্যা মুমতারিণ ফেরদৌস ডরিন মিণ্টুসহ ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

এদিকে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে দেখা যায়নি। এতে তার আটক হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। বর্ধিত সভায় সাইদুল করিম মিণ্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে এমন কথাও আলোচনা হয়। আর এই আলোচনার সূত্রপাত করেন ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু জীবন কুমার বিশ^াস। তিনি জানান, দলের সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে এমন কথা তিনি জানতে পেরেছেন। বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ আহম্মেদ সনজু, অ্যাড. আজিজুর রহমান, অশোক ধর, আসাদুজ্জামান আসাদ, জীবন কুমার বিশ^াস, শৈলকুপার আব্দুল হাকিম, মহেশপুরের সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, খায়রুল ইসলাম, মীর সুলতানুজ্জামান লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুসহ সকল সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে এমপি আনারের অনুসারীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে শহরের ভূষণ স্কুল সড়কের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি কালীগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান রাসেল ও ইউপি চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরী বক্তব্য দেন।

সমাবেশে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বলেন, জনপ্রিয় এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার নেপথ্যে কারা সেটা আমরা পেয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে আটক করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকেও আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন নয়, এই সাইদুল করিম মিণ্টুই হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।

কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, এমপি আনার হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে নেওয়ার যে অপচেষ্টা করা হচ্ছিল, আজ সাইদুল করিম মিণ্টু আটকের মধ্যদিয়ে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ যদি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়, তাদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

উল্লেখ্য, মিণ্টু আটকের পর ঝিনাইদহ শহরে পিনপতনের নীরবতা বিরাজ করছে। তার অনুসারীরা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিললায় শহরে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের নতুন মোড়, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

এমপি আনার অনুসারীদের দাবি, শাহীন নয় মিণ্টুই হত্যার মাস্টারমাইন্ড

ঝিনাইদহ জেলা আ.লীগ সম্পাদক মিণ্টু আটক

আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু আটক হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মিণ্টুকে ধানমন্ডি ৩/এ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। এদিকে, দুপুর থেকেই মিণ্টু আটকের গুজব ঝিনাইদহ শহরে ছড়িয়ে পড়ে। সময় যতই গড়াতে থাকে ততই গুজবের ডালপালা ছড়াতে থাকে। অনেকে ফেসবুকে আটকের সময় এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করে প্রচার করতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের পক্ষে পকপল জরুরি তারবার্তা পাঠিয়ে শহরে নিরাপত্তা জোরদার করার তাগিদ দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহিন উদ্দীন গতকাল বিকেলে জানান, অনেকের মতো তিনিও এমন গ্রেপ্তারের কথা শুনেছেন। কিন্তু সত্য কি মিথ্যা তা তিনি জানেন না।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামাল আহম্মেদ ওরফে গ্যাস বাবু গ্রেপ্তারের পরই আলোচনায় উঠে আসে সাইদুল করিম মিণ্টুর নাম। গ্যাস বাবুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তারা এক সঙ্গে চলাফেরা করতেন সবসময়। গ্যাস বাবুর মাধ্যমে আনার হত্যার মাস্টামাইন্ড শাহিনের সঙ্গে সম্পর্ক হয় মিণ্টুর। এমপি আনার হত্যার পর ঘাতকরা তার ছবিও পাঠিয়েছিলেন মিণ্টুর কাছে। তাছাড়া এমপি কন্যা মুমতারিণ ফেরদৌস ডরিন মিণ্টুসহ ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।

এদিকে গতকাল বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকে দেখা যায়নি। এতে তার আটক হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। বর্ধিত সভায় সাইদুল করিম মিণ্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে এমন কথাও আলোচনা হয়। আর এই আলোচনার সূত্রপাত করেন ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু জীবন কুমার বিশ^াস। তিনি জানান, দলের সাধারণ সম্পাদককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে এমন কথা তিনি জানতে পেরেছেন। বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ আহম্মেদ সনজু, অ্যাড. আজিজুর রহমান, অশোক ধর, আসাদুজ্জামান আসাদ, জীবন কুমার বিশ^াস, শৈলকুপার আব্দুল হাকিম, মহেশপুরের সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ, খায়রুল ইসলাম, মীর সুলতানুজ্জামান লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুসহ সকল সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করেছে এমপি আনারের অনুসারীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে শহরের ভূষণ স্কুল সড়কের দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি কালীগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আবার একই স্থানে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুজ্জামান রাসেল ও ইউপি চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরী বক্তব্য দেন।

সমাবেশে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী বলেন, জনপ্রিয় এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যার নেপথ্যে কারা সেটা আমরা পেয়েছি। জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে আটক করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টুকেও আটক করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হত্যার মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন নয়, এই সাইদুল করিম মিণ্টুই হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী।

কালীগঞ্জ পৌর মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, এমপি আনার হত্যার মোটিভ ভিন্নখাতে নেওয়ার যে অপচেষ্টা করা হচ্ছিল, আজ সাইদুল করিম মিণ্টু আটকের মধ্যদিয়ে তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ যদি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত হয়, তাদেরকেও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

উল্লেখ্য, মিণ্টু আটকের পর ঝিনাইদহ শহরে পিনপতনের নীরবতা বিরাজ করছে। তার অনুসারীরা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিললায় শহরে পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।