ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রেনু উৎপাদনে সমৃদ্ধ ভান্ডার এখন বলুহর মৎস্য হ্যাচারি

উন্নত জাতের পোণা সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

রেণু পোনা নিয়ে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে উঠেছে কোটচাঁদপুরের বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। গোটা দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে বলুহর হ্যাচারির রেণু ঢাকা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বলুহর হ্যাচারির এই রেণু চাষ করে মৎস্যজীবীরা আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছেন। আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি বেকার যুবকরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী। বর্তমান এই হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানিকৃত সিলবার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের রেণু ও ভিয়েতনামীয় পাঙ্গাস, কালিবাউস এবং সুবর্ণ রুই মাছ লালন-পালন করা হচ্ছে। শুধু রেণু উৎপাদনই নয়, দেশের খ্যাতনামা বিশ^বিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা রেণু পোনা উৎপাদনে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে এখানে আসছেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উন্নত জাতের কার্প জাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আমিষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই হ্যচারির উৎপাদিত রেণু পৌঁছে যাচ্ছে।
হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জানান, এ বছর রেণু বিক্রি করে ৩৫ লাখ ও টেবিল ফিশ এবং পোনা বিক্রির ১৭ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। হ্যাচারি ম্যানেজার আরও জানান, তিনি যোগদানের পর থেকে পরিত্যক্ত ভবনগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে চালু করা হয়েছে। হ্যাচারির মধ্যে আবর্জনা স্তুপে ভরা ছিল। সেগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগান তৈরির মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে হ্যাচারি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারিতে দেশের খ্যতনামা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছেন হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে। তাদেরকে আধুনিক কলাকৌশল ও সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পুকুর থেকে ব্রুড সংগ্রহ পদ্ধতি, মাছে ইনজেকশন পুশ, ডিম সংগ্রহ ও বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের মাছ চাষী আতিয়ার রহমান বিশ^াস জানান, বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তার মতো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জীবননগরের মাছচাষী রুস্তম আলী জানান, তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকার রেণু পোনা নিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাছি বিক্রি করেছেন। এদিকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে লোকবলের অভাবে কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। মোট ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি পদ শূন্য রয়েছে। অনেক ভবন এখনো জরাজীর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হলে বলুহর হ্যাচারি রেণু উৎপাদনে দেশে নজির সৃষ্টি করতে পারতো বলে অনেকে মনে করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের রেনু উৎপাদনে সমৃদ্ধ ভান্ডার এখন বলুহর মৎস্য হ্যাচারি

উন্নত জাতের পোণা সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

আপলোড টাইম : ০৯:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

রেণু পোনা নিয়ে এক সমৃদ্ধ ভান্ডার গড়ে উঠেছে কোটচাঁদপুরের বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি। গোটা দক্ষিণাঞ্চল ছাড়িয়ে বলুহর হ্যাচারির রেণু ঢাকা, বরিশাল ও গাজীপুর জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। বলুহর হ্যাচারির এই রেণু চাষ করে মৎস্যজীবীরা আশানুরূপ সাফল্য পাচ্ছেন। আর্থিক সচ্ছলতার পাশাপাশি বেকার যুবকরা হচ্ছেন স্বাবলম্বী। বর্তমান এই হ্যাচারিতে চীন থেকে আমদানিকৃত সিলবার, বিগহেড ও গ্রাসকার্পের রেণু ও ভিয়েতনামীয় পাঙ্গাস, কালিবাউস এবং সুবর্ণ রুই মাছ লালন-পালন করা হচ্ছে। শুধু রেণু উৎপাদনই নয়, দেশের খ্যাতনামা বিশ^বিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা রেণু পোনা উৎপাদনে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে এখানে আসছেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উন্নত জাতের কার্প জাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করে আমিষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুরের বলুহর গ্রামে দেশের সর্ববৃহৎ মৎস্য হ্যাচারি কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১০৩ একর আয়তন বিশিষ্ট এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি দৃষ্টিনন্দন পুকুর। ঝিনাইদহ ছাড়াও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরাসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই হ্যচারির উৎপাদিত রেণু পৌঁছে যাচ্ছে।
হ্যাচারি ম্যানেজার মো. আশরাফ-উল-ইসলাম জানান, নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও হ্যাচারিতে রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি জানান, এ বছর রেণু বিক্রি করে ৩৫ লাখ ও টেবিল ফিশ এবং পোনা বিক্রির ১৭ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যা ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন রাষ্ট্রের লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। হ্যাচারি ম্যানেজার আরও জানান, তিনি যোগদানের পর থেকে পরিত্যক্ত ভবনগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে চালু করা হয়েছে। হ্যাচারির মধ্যে আবর্জনা স্তুপে ভরা ছিল। সেগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুল বাগান তৈরির মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।
এদিকে হ্যাচারি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারিতে দেশের খ্যতনামা ভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আসছেন হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে। তাদেরকে আধুনিক কলাকৌশল ও সর্বশেষ লাগসই প্রযুক্তি শেখানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পুকুর থেকে ব্রুড সংগ্রহ পদ্ধতি, মাছে ইনজেকশন পুশ, ডিম সংগ্রহ ও বিপণন পদ্ধতি সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে, যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পারেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বংকিরা গ্রামের মাছ চাষী আতিয়ার রহমান বিশ^াস জানান, বলুহর হ্যাচারির রেণু নিয়ে মাছ চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। তার মতো অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জীবননগরের মাছচাষী রুস্তম আলী জানান, তিনি মাত্র ৫ হাজার টাকার রেণু পোনা নিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাছি বিক্রি করেছেন। এদিকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারিতে লোকবলের অভাবে কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। মোট ২৭টি পদের মধ্যে ১৯টি পদ শূন্য রয়েছে। অনেক ভবন এখনো জরাজীর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে জনবল নিয়োগ করা হলে বলুহর হ্যাচারি রেণু উৎপাদনে দেশে নজির সৃষ্টি করতে পারতো বলে অনেকে মনে করেন।