ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেহেরপুরে কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ উন্মুক্তে মানববন্ধন

প্রতিবেদক, গাংনী:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ উন্মুক্ত করা, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলাকারীদের বিচার ও স্থানীয়দের নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

পিরোজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশাদুল ইসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধনে পিরোজপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আশান্নুরী, সালমা বেগম, আওয়ামী লীগ মেতা আব্দুল লতিফ, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক, কাঁঠালপোতা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, শহিদুল ইসলাম, কাঠালপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সামাদ, সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দীন, নাজমুল হাসান শুভ, মৎস্যজীবী রহিদুল ইসলাম, শরিয়ত, জিনারুল, মিয়ারুল, মিজান, ফারুক, আজিজুল, কামরুল, মিজানুর, মেণ্টুলসহ কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামের বিভিন্ন বয়সী সহস্রাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গোপালপুর মৌজার দাদপুর বিল (বদ্ধ), যেটি টুপলা ও নেংড়ো বিল দুটি দাদপুর বিল নামে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ইজারা গ্রহণ করে গোপালপুর মাঝপুর মৎস্যজীবী সমিতি লি.। যার সভাপতি মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত ওয়াজ আলীর ছেলে সাহেব আলী। বিলটি ৪ বছরের লিজ মূল্য ১৫ লাল ৬২ হাজার ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী ২ বছর তার সঙ্গে ২৫ শতাংশ বর্ধিত মূল্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু দাদপুর বিল চাষের বন্দোবস্ত নিয়ে খননকৃত স্রোত প্রবাহিত কাজলা নদীও চাষের আওতায় জোরপূর্বক দখল করে নেয় সমিতির সদস্যরা। যেখানে সোনাপুর, কাঁঠালপোতা ও টুঙ্গী কাজলা নদীর অংশটি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।

কাজলা নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে ফসল হতে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। আর পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে ফসলে যে মাছ চলে যায় তা বন্দোবস্তকারীরা জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। সেখানে পাটের জাগ দিতে দেওয়া হয় না। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে এলাকার নিবন্ধিত অসংখ্য গরীব মৎস্যজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। যারা বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারা এখন বেকারত্ব জীবনযাপন করছে।

অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় ছোট মাছ ধরাতো দূরের কথা সেখানে গোসল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি ও গালিগালাজ করা হয়। খরা মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হলে তাতেও বাধা দেওয়া ও মারধর করা হয়। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিলের অবৈধ বাঁধ কেটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। একই সাথে এলাকার বেশকিছু লোকজনের নামে ৬০ লাখ টাকার মাছ ধরে নেওয়ার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ মামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ইতিপূর্বে নদীতে অবৈধভাবে মাছ চাষ বন্ধে ও জনসাধারণের সুবিধার্থে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসানকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। যা তদন্ত সাপেক্ষে সহযোগিতার জন্য সুপারিশ করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি। এ সংক্রান্ত অনুলিপি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মেহেরপুর, নির্বাহী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মেহেরপুর ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরপুরে প্রেরণ করা হয়েছে।

তাছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসও নদী উন্মুক্ত করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। যা এখন জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে পড়েছে। সুতরাং জনগণের সুবিধার্থে অবিলম্বে কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ কেটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এমনটাই দাবি মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীদের। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হলে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক শামীম হাসান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুরে কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ উন্মুক্তে মানববন্ধন

আপলোড টাইম : ০৯:০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ উন্মুক্ত করা, ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলাকারীদের বিচার ও স্থানীয়দের নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

পিরোজপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আশাদুল ইসলামের নেতৃত্বে মানববন্ধনে পিরোজপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আশান্নুরী, সালমা বেগম, আওয়ামী লীগ মেতা আব্দুল লতিফ, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মানিক, কাঁঠালপোতা দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন, শহিদুল ইসলাম, কাঠালপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সামাদ, সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কফিল উদ্দীন, নাজমুল হাসান শুভ, মৎস্যজীবী রহিদুল ইসলাম, শরিয়ত, জিনারুল, মিয়ারুল, মিজান, ফারুক, আজিজুল, কামরুল, মিজানুর, মেণ্টুলসহ কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামের বিভিন্ন বয়সী সহস্রাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধনে অংশ নেয়।

মানববন্ধনে বক্তারা লিখিত বক্তব্যে বলেন, গোপালপুর মৌজার দাদপুর বিল (বদ্ধ), যেটি টুপলা ও নেংড়ো বিল দুটি দাদপুর বিল নামে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ইজারা গ্রহণ করে গোপালপুর মাঝপুর মৎস্যজীবী সমিতি লি.। যার সভাপতি মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মৃত ওয়াজ আলীর ছেলে সাহেব আলী। বিলটি ৪ বছরের লিজ মূল্য ১৫ লাল ৬২ হাজার ৫০০ টাকা এবং পরবর্তী ২ বছর তার সঙ্গে ২৫ শতাংশ বর্ধিত মূল্যে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু দাদপুর বিল চাষের বন্দোবস্ত নিয়ে খননকৃত স্রোত প্রবাহিত কাজলা নদীও চাষের আওতায় জোরপূর্বক দখল করে নেয় সমিতির সদস্যরা। যেখানে সোনাপুর, কাঁঠালপোতা ও টুঙ্গী কাজলা নদীর অংশটি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন।

কাজলা নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও টুঙ্গী গ্রামের হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ফলে ফসল হতে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকাবাসী। আর পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে ফসলে যে মাছ চলে যায় তা বন্দোবস্তকারীরা জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। সেখানে পাটের জাগ দিতে দেওয়া হয় না। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের কারণে এলাকার নিবন্ধিত অসংখ্য গরীব মৎস্যজীবীরা বিপাকে পড়েছেন। যারা বিলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারা এখন বেকারত্ব জীবনযাপন করছে।

অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় ছোট মাছ ধরাতো দূরের কথা সেখানে গোসল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। প্রতিবাদ করলে হুমকি-ধমকি ও গালিগালাজ করা হয়। খরা মৌসুমে সেচের প্রয়োজন হলে তাতেও বাধা দেওয়া ও মারধর করা হয়। এমতাবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিলের অবৈধ বাঁধ কেটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। একই সাথে এলাকার বেশকিছু লোকজনের নামে ৬০ লাখ টাকার মাছ ধরে নেওয়ার মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ মামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ইতিপূর্বে নদীতে অবৈধভাবে মাছ চাষ বন্ধে ও জনসাধারণের সুবিধার্থে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক শামীম হাসানকে লিখিতভাবে অবগত করা হয়েছে। যা তদন্ত সাপেক্ষে সহযোগিতার জন্য সুপারিশ করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি। এ সংক্রান্ত অনুলিপি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মেহেরপুর, নির্বাহী প্রকৌশলী, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মেহেরপুর ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেরপুরে প্রেরণ করা হয়েছে।

তাছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন ও পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসও নদী উন্মুক্ত করে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। যা এখন জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে পড়েছে। সুতরাং জনগণের সুবিধার্থে অবিলম্বে কাজলা নদীর অবৈধ বাঁধ কেটে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এমনটাই দাবি মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগীদের। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হলে আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক শামীম হাসান।