ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতার ‘বগজোলা’ খালে ব্যর্থ অভিযান, মেলেনি লাশ

শাহিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও শিমুলের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল আনারের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:০৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪
  • / ৬৯ বার পড়া হয়েছে


কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ডিত মরদেহ এখনো উদ্ধার হয়নি। ধৃতরা লাশের খণ্ড খণ্ড টুকরো ট্রলি ও পলিথিন ব্যাগে করে ফেলার কথা বললেও এখনো এর হদিস মেলেনি। কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সেখানকার সিআইডি। আর ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ৮ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে ডিবি পুলিশ উল্লেখ করেছে খুনের দুই কারণ। কলকাতায় রিমান্ডে থাকা জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ‘বগজোলা’ খালে খণ্ডিত লাশের খোঁজ করেছে সিআইডি। এর আগে ‘হাতিশালা’ বর্জ্য খালে অভিযান চালিয়েও লাশ পাওয়া যায়নি। লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন পরও ঢাকা এবং কলকাতা পুলিশ খুনের সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি। অথচ খুন এবং লাশ গুমে জড়িত চারজন তাদের হেফাজতে রয়েছে। ঢাকায় আসা কলকাতা সিআইডির চার সদস্য সেখানে পাওয়া তথ্য ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিনিময় করেছেন। ঢাকায় ডিবি হেফাজতে তিনজনের দেয়া তথ্য সেখানে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতভর তারা ডিবি হেফাজতে থাকা তিনজনকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা টুকরো লাশের ব্যাপারে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ভারতের কারা কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। খুঁজছেন অনেক প্রশ্নের জবাব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, কলকাতা সিআইডি পুলিশ গতকাল শুক্রবার ডিবি অফিসে কর্মকর্তা ও আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তাদের পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে আর কিছু জানায়নি। গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ জানান, রিমান্ডে তিনজনকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে এমপির লাশ উদ্ধারে কলকাতা সিআইডিকে সহায়তা করা হচ্ছে।
আদালতে ডিবির দেয়া খুনের বর্ণনা :
গতকাল শুক্রবার আদালতে পাঠানো তিনি আসামির রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়- ভিকটিম আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আনারের ওপর শাহিনের ক্ষোভ ছিল যা আনার জানতেন না। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদেরও ভিকটিমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। তারা উভয়ে পরিকল্পিতভাবে আনারকে দেশের বাইরে ভারতের কলকাতায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন; যেন কেউ বুঝতে না পারে। পলাতক আসামি শাহিন গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সঙ্গে নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় গিয়ে সেখানে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করা শুরু করেন এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে থাকা অবস্থায় ভিকটিমের সঙ্গে শাহিন ব্যবসায়িক মিটিং করার কথা বলে ভারতের কলকাতায় যেতে বলেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শাহিন গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন যা আনার জানতেন না। দেশে আসার সময় শাহিন গ্রেপ্তারকৃত আসামি আমানুল্লাহ সাইদকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে। এরপর ১২ মে আনার ভারতের কলকাতায় যান এবং তার এক বন্ধুর বাসায় উঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালের দিকে আনার ব্যবসায়িক মিটিং করার জন্য আক্তারুজ্জামান শাহিনের কলকাতার নিউটাউন এলাকার ভাড়া করা বাসায় যান। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আমানুল্লাহ সাইদ, তানজীর, সেলেস্টি রহমানসহ অজ্ঞাত অন্যান্য পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় ভিকটিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশের মাংস ও হাড় আলাদা করে গুম করে ফেলে যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। আসামিরা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
এদিকে ডিবির মতিঝিল জোনের একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, আনারকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। যেন কোনোভাবেই আনারের চেহারা দেখে কেউ পরিচয় শনাক্ত করতে না পারে, সেজন্যই খুনিরা এ পরিকল্পনা করে। এরপর ট্রলি ও ব্যাগে করে খণ্ড খণ্ড লাশ বের করে নেয়া হয়। এরপর একটি ট্রলি ও তিন-চারটি পলিথিন ব্যাগে করে ১৪ মে বিকাল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে সে সব টুকরো বের করা হয়। এরপর এগুলো ফেলে দেয়া হয় কলকাতার হাতিশালা বর্জ্য খালে। আমানের স্বীকারোক্তির পর ভারতীয় পুলিশ ২৩ মে রাতে হাতিশালা বর্জ্য খালে তল্লাশি চালায়। তবে অন্ধকার হওয়ায় সেদিন মরদেহ খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরেরদিন ২৪ মে আবারো খণ্ড লাশের সন্ধান শুরু করে ভারতীয় পুলিশ।
অপর দিকে, গতকাল বিকালে কলকাতার অদূরে ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকায় বগজোলা খালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের লোকজনকে। ডুবুরিরা খালে কুচুরিপানার নিচে লাশের খোঁজ করেন। বৃহস্পতিবারও রাতভর একই এলাকার কৃষ্ণমাটি এলাকায় চলে অভিযান। এর আগে এমপি আনার হত্যায় জড়িত অভিযোগে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে শুক্রবার বারাসাতের আদালতে তোলে সিআইডি। আবেদন করা হয় ১৪ দিনের রিমান্ডের। শুনানির পর ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। জিহাদের (২৪) বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার দীঘলিয়া থানার বারাকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করতেন জিহাদ। তিনি পেশায় কসাই এবং মুম্বাইয়ের ‘শীর্ষ কসাই’। সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানায়, দুই মাস আগে এমপি আনারকে হত্যার জন্য তাকে কলকাতায় আনেন আখতারুজ্জান শাহিন। খুনের সময় আরো ৪ জন বাংলাদেশি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। কিলিং মিশন শেষে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে গুম করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, নারীর প্রলোভন দেখিয়ে ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় আনারকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ৫ কোটি টাকার চুক্তি হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কলকাতার ‘বগজোলা’ খালে ব্যর্থ অভিযান, মেলেনি লাশ

শাহিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক ও শিমুলের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল আনারের

আপলোড টাইম : ০৬:০৩:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ মে ২০২৪


কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাটে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের খণ্ডিত মরদেহ এখনো উদ্ধার হয়নি। ধৃতরা লাশের খণ্ড খণ্ড টুকরো ট্রলি ও পলিথিন ব্যাগে করে ফেলার কথা বললেও এখনো এর হদিস মেলেনি। কলকাতায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদকে ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে সেখানকার সিআইডি। আর ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে ৮ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি পুলিশ। রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে ডিবি পুলিশ উল্লেখ করেছে খুনের দুই কারণ। কলকাতায় রিমান্ডে থাকা জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল শুক্রবার বিকালে ঘটনাস্থল থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ‘বগজোলা’ খালে খণ্ডিত লাশের খোঁজ করেছে সিআইডি। এর আগে ‘হাতিশালা’ বর্জ্য খালে অভিযান চালিয়েও লাশ পাওয়া যায়নি। লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ১০ দিন পরও ঢাকা এবং কলকাতা পুলিশ খুনের সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত হতে পারেনি। অথচ খুন এবং লাশ গুমে জড়িত চারজন তাদের হেফাজতে রয়েছে। ঢাকায় আসা কলকাতা সিআইডির চার সদস্য সেখানে পাওয়া তথ্য ডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিনিময় করেছেন। ঢাকায় ডিবি হেফাজতে তিনজনের দেয়া তথ্য সেখানে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতভর তারা ডিবি হেফাজতে থাকা তিনজনকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা টুকরো লাশের ব্যাপারে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ভারতের কারা কারা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের ব্যাপারেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। খুঁজছেন অনেক প্রশ্নের জবাব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, কলকাতা সিআইডি পুলিশ গতকাল শুক্রবার ডিবি অফিসে কর্মকর্তা ও আসামিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা তাদের পরবর্তী সময়ে করণীয় সম্পর্কে আর কিছু জানায়নি। গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ জানান, রিমান্ডে তিনজনকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্যের সূত্র ধরে এমপির লাশ উদ্ধারে কলকাতা সিআইডিকে সহায়তা করা হচ্ছে।
আদালতে ডিবির দেয়া খুনের বর্ণনা :
গতকাল শুক্রবার আদালতে পাঠানো তিনি আসামির রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়- ভিকটিম আনোয়ারুল আজীম আনারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিনের ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসায়িক লেনদেনসহ কিছু বিষয় নিয়ে আনারের ওপর শাহিনের ক্ষোভ ছিল যা আনার জানতেন না। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদেরও ভিকটিমের সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব ছিল। তারা উভয়ে পরিকল্পিতভাবে আনারকে দেশের বাইরে ভারতের কলকাতায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন; যেন কেউ বুঝতে না পারে। পলাতক আসামি শাহিন গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের সঙ্গে নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় গিয়ে সেখানে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস করা শুরু করেন এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে থাকা অবস্থায় ভিকটিমের সঙ্গে শাহিন ব্যবসায়িক মিটিং করার কথা বলে ভারতের কলকাতায় যেতে বলেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শাহিন গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন যা আনার জানতেন না। দেশে আসার সময় শাহিন গ্রেপ্তারকৃত আসামি আমানুল্লাহ সাইদকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ যাতে না থাকে। এরপর ১২ মে আনার ভারতের কলকাতায় যান এবং তার এক বন্ধুর বাসায় উঠেন। পরদিন ১৩ মে সকালের দিকে আনার ব্যবসায়িক মিটিং করার জন্য আক্তারুজ্জামান শাহিনের কলকাতার নিউটাউন এলাকার ভাড়া করা বাসায় যান। সেখানে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ মে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আমানুল্লাহ সাইদ, তানজীর, সেলেস্টি রহমানসহ অজ্ঞাত অন্যান্য পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় ভিকটিমকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশের মাংস ও হাড় আলাদা করে গুম করে ফেলে যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। আসামিরা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
এদিকে ডিবির মতিঝিল জোনের একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ জানিয়েছেন, আনারকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যার পর হাত-পাসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা করা হয়। যেন কোনোভাবেই আনারের চেহারা দেখে কেউ পরিচয় শনাক্ত করতে না পারে, সেজন্যই খুনিরা এ পরিকল্পনা করে। এরপর ট্রলি ও ব্যাগে করে খণ্ড খণ্ড লাশ বের করে নেয়া হয়। এরপর একটি ট্রলি ও তিন-চারটি পলিথিন ব্যাগে করে ১৪ মে বিকাল ৫টা ১১ মিনিটের দিকে সে সব টুকরো বের করা হয়। এরপর এগুলো ফেলে দেয়া হয় কলকাতার হাতিশালা বর্জ্য খালে। আমানের স্বীকারোক্তির পর ভারতীয় পুলিশ ২৩ মে রাতে হাতিশালা বর্জ্য খালে তল্লাশি চালায়। তবে অন্ধকার হওয়ায় সেদিন মরদেহ খুঁজে পায়নি পুলিশ। পরেরদিন ২৪ মে আবারো খণ্ড লাশের সন্ধান শুরু করে ভারতীয় পুলিশ।
অপর দিকে, গতকাল বিকালে কলকাতার অদূরে ভাঙ্গরের কৃষ্ণমাটি এলাকায় বগজোলা খালে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সরিয়ে দেয়া হয় আশপাশের লোকজনকে। ডুবুরিরা খালে কুচুরিপানার নিচে লাশের খোঁজ করেন। বৃহস্পতিবারও রাতভর একই এলাকার কৃষ্ণমাটি এলাকায় চলে অভিযান। এর আগে এমপি আনার হত্যায় জড়িত অভিযোগে কলকাতায় গ্রেপ্তার জিহাদ হাওলাদারকে শুক্রবার বারাসাতের আদালতে তোলে সিআইডি। আবেদন করা হয় ১৪ দিনের রিমান্ডের। শুনানির পর ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক। জিহাদের (২৪) বাড়ি বাংলাদেশের খুলনা জেলার দীঘলিয়া থানার বারাকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করতেন জিহাদ। তিনি পেশায় কসাই এবং মুম্বাইয়ের ‘শীর্ষ কসাই’। সিআইডির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানায়, দুই মাস আগে এমপি আনারকে হত্যার জন্য তাকে কলকাতায় আনেন আখতারুজ্জান শাহিন। খুনের সময় আরো ৪ জন বাংলাদেশি ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। কিলিং মিশন শেষে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে গুম করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, নারীর প্রলোভন দেখিয়ে ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় আনারকে। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ৫ কোটি টাকার চুক্তি হয়।