ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দর্শনা-গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠক

পাঁচ বছর জেল খেটে দেশে ফিরলেন ভারতীয় নাগরিক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এবং ভারতের গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিক মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক কুমারকে (৪০) ছয় মাস পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর রাজশাহীর জেলখানায় আটক ভারসাম্যহীন অভিষেকের বিষয়ে জানতে পারেন চিত্রসাংবাদিক ও সংগঠক শামসুল হুদা। এসময় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিন দিনের মধ্যে তার বাড়ির ঠিকানা ও পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় তিনি গতকাল পর্যন্ত জেলখানায় আটক ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বরাকাও জেলার গান্ধীনগর থানার জারিদি গ্রামের ঘনশ্যাম প্রসাদের ছেলে। বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে তাকে রাজশাহী কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৫ বছর বন্দি ছিলেন। তার ভারতীয় আধার কার্ড নম্বর ৮৫৯৯ ৪৯৯১ ৮০১৪।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ মার্চ সুরক্ষা সেবা বিভাগ বহিরাগমন-১ থেকে ভারত প্রত্যাবাসনের চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু অভিষেকের পারিবারের সন্ধান না পাওয়ায় দায়িত্বশীল কারো কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর একাত্তর টিভির জেষ্ঠ্য চিত্রসাংবাদিক ও অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি বাংলাদেশের সাংগঠনিক স¤পাদক শামসুল হুদার প্রত্যাবাসনবিষয়ক বেশকিছু সাফল্যের কথা জানতে পেরে অভিষেককে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। পরে শামসুল হুদা রাজশাহী জেলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিষেকের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তারপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিষেকের মা পুষ্পা দেবী ও বোন নিতু দেবীকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।
অভিষেকের মা পুস্পা দেবী বলেন, ‘অভিষেক কোচিংয়ে অংক ও জীববিজ্ঞান পড়াত। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ছেলের শোকে অভিষেকের বাবা মারা যান। দুদেশের সরকার ও শাসসুল হুদা সাহেবের প্রচেষ্টায় আমার ছেলেকে ফেরত পেয়েছি। সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা বলেন, ‘অভিষেক কুমারের বিষয়টি জানার পর প্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র ৭২ ঘণ্টায় তার পরিবারের ঠিকানা খুঁজে পাই। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় আরো ৬ মাস লেগে যায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া করতে। দুই দেশের বন্দিদের সাজাভোগ শেষে নিজ দেশে পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ে সহজতর করা দরকার।’

হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির দর্শনা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মন মোহন, দর্শনা আইসিপি কমান্ডার সুবেদার এনামুল হক, হাবিলদার সাকার উদ্দিন, দর্শনা থানার সেকেন্ড কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমান, দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই আতিক, এএসআই মোমিন ও বাংলাদেশের চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা। এছাড়াও ভারতের গেদে বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এসি বিতাশা, এসআইপি মুখার্জি, এসআই মজুমদার, গেদে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ জেসি দে, কাস্টমস কর্মকর্তা রামাতার পি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার এএসআই তন্ময় দাস, ডিআইবি সাধন মন্ডল, রেডক্রস প্রতিনিধি চিত্তরঞ্জন প্রমুখ। দর্শনা সীমান্তে অভিষেক কুমারকে ফিরিয়ে নিতে আসেন অভিষেকের মা পুস্পা দেবী, কাকা মুকেশ কুমার সিনহা ও ভাই পংকজ কুমার সিনহা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দর্শনা-গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠক

পাঁচ বছর জেল খেটে দেশে ফিরলেন ভারতীয় নাগরিক

আপলোড টাইম : ০৯:২৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মার্চ ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা এবং ভারতের গেদে বন্দরের শূন্য রেখায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশে আটকে থাকা ভারতীয় নাগরিক মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক কুমারকে (৪০) ছয় মাস পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর রাজশাহীর জেলখানায় আটক ভারসাম্যহীন অভিষেকের বিষয়ে জানতে পারেন চিত্রসাংবাদিক ও সংগঠক শামসুল হুদা। এসময় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিন দিনের মধ্যে তার বাড়ির ঠিকানা ও পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পাওয়া যায়। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় তিনি গতকাল পর্যন্ত জেলখানায় আটক ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন অভিষেক পূর্ব ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের বরাকাও জেলার গান্ধীনগর থানার জারিদি গ্রামের ঘনশ্যাম প্রসাদের ছেলে। বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে তাকে রাজশাহী কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ৫ বছর বন্দি ছিলেন। তার ভারতীয় আধার কার্ড নম্বর ৮৫৯৯ ৪৯৯১ ৮০১৪।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২২ মার্চ সুরক্ষা সেবা বিভাগ বহিরাগমন-১ থেকে ভারত প্রত্যাবাসনের চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু অভিষেকের পারিবারের সন্ধান না পাওয়ায় দায়িত্বশীল কারো কাছে হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর একাত্তর টিভির জেষ্ঠ্য চিত্রসাংবাদিক ও অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি বাংলাদেশের সাংগঠনিক স¤পাদক শামসুল হুদার প্রত্যাবাসনবিষয়ক বেশকিছু সাফল্যের কথা জানতে পেরে অভিষেককে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানান ভারতীয় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। পরে শামসুল হুদা রাজশাহী জেলারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিষেকের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। তারপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিষেকের মা পুষ্পা দেবী ও বোন নিতু দেবীকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।
অভিষেকের মা পুস্পা দেবী বলেন, ‘অভিষেক কোচিংয়ে অংক ও জীববিজ্ঞান পড়াত। একপর্যায়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরই মধ্যে ছেলের শোকে অভিষেকের বাবা মারা যান। দুদেশের সরকার ও শাসসুল হুদা সাহেবের প্রচেষ্টায় আমার ছেলেকে ফেরত পেয়েছি। সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা বলেন, ‘অভিষেক কুমারের বিষয়টি জানার পর প্রযুক্তির সহায়তায় মাত্র ৭২ ঘণ্টায় তার পরিবারের ঠিকানা খুঁজে পাই। তবে অভিভাসন প্রত্যাবসন জটিলতায় আরো ৬ মাস লেগে যায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া করতে। দুই দেশের বন্দিদের সাজাভোগ শেষে নিজ দেশে পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া স্বল্প সময়ে সহজতর করা দরকার।’

হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পতাকা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির দর্শনা কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মন মোহন, দর্শনা আইসিপি কমান্ডার সুবেদার এনামুল হক, হাবিলদার সাকার উদ্দিন, দর্শনা থানার সেকেন্ড কর্মকর্তা এসআই আব্দুর রহমান, দর্শনা ইমিগ্রেশন ইনচার্জ এসআই আতিক, এএসআই মোমিন ও বাংলাদেশের চিত্রসাংবাদিক মো. শামসুল হুদা। এছাড়াও ভারতের গেদে বিএসএফ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এসি বিতাশা, এসআইপি মুখার্জি, এসআই মজুমদার, গেদে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ জেসি দে, কাস্টমস কর্মকর্তা রামাতার পি যাদব, কৃষ্ণগঞ্জ থানার এএসআই তন্ময় দাস, ডিআইবি সাধন মন্ডল, রেডক্রস প্রতিনিধি চিত্তরঞ্জন প্রমুখ। দর্শনা সীমান্তে অভিষেক কুমারকে ফিরিয়ে নিতে আসেন অভিষেকের মা পুস্পা দেবী, কাকা মুকেশ কুমার সিনহা ও ভাই পংকজ কুমার সিনহা।