ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার উক্তগ্রামে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিসা কারখানা

বাড়তে পাড়ে হৃদ্রোগ: হুমকির মুখে পরিবেশ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬১ বার পড়া হয়েছে

আরিফ হাসান, হিজলগাড়ী:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামের আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাসখানেক আগে স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ নামের এক ব্যক্তির জমি ভাড়া নিয়ে বগুড় জেলার শাহীন অবৈধভাবে সিসা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। সেখানে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। এই কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে বিরূপ প্রভাব।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার ভিতর প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ ব্যাটারি ভাঙছেন, কেউবা আবার ভাঙা ব্যাটারির অংশবিশেষ এক জায়গায় স্তূপ করছেন। যার গভীর রাতে আগুনে পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হবে। এই কারখানায় কাজ করা শ্রমিকেরা বগুড়া, গাইবান্ধা ও নওগাঁ জেলার বাসিন্দা। কারখানার শ্রমিক গাইবান্ধা জেলার লতিফ বলেন, বগুড়ার শাহীন এই কারখানার মালিক। মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে এখানে এসেছি। মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। বিভিন্ন জেলা থেকে পুরানো ব্যাটারি সংগ্রহ করে এখানে এনে পুড়িয়ে সিসা বের করি।

সিসার ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কিছু জানেন কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এর আগে যেখানে ছিলাম সেখানে প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালিয়ে কারখানা গুড়িয়ে দিয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবারই প্রথম কারখানা করেছে, এর আগে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, সাভারের আমীন বাজার, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী এলাকায় ছিলাম। বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করেই আমরা কারখানা চালাই।’

দোস্ত গ্রামের মনু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমাদের মাঠে টিন আর চাটাই এর বেড়া দিয়ে ওরা কি যেন করে। সারাদিন এখানে ট্রাক আসে যায়। গভীর রাতে প্রচুর আগুন জ্বলতে দেখি। তখন কেমন জানি ঝাঁঝালো গন্ধ আসে। লিয়াকত নামের আরেকজন বলেন, ওই মাঠেই আমার চাষ। এরা প্রায় একমাস আগে এখানে এসে ব্যাটারি ভাঙার কাজ শুরু করেছে। রাতে আগুনও জ্বালায়। যখন আগুন জ্বালায় তখন চোখ মুখ জ্বলে। মাঠের গাছগুলোর পাতা দিনদিনে লাল হয়ে যাচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, আগে এই সিসা তৈরির কারখানা ছিল ঢাকার আশপাশ এলাকায়। প্রশাসনের অভিযানে ওই এলাকায় টিকতে না পেরে প্রত্যন্ত এই এলাকায় এসে ঘাটি গেড়েছে তারা।

চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সীসা দূষণের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সীসা দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদ্রোগে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। একই কারণে দেশের শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যার ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ- জোহরা বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু জানতে পেরেছি এই কারখানার বিরুদ্ধে খুব দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার উক্তগ্রামে গড়ে উঠেছে অবৈধ সিসা কারখানা

বাড়তে পাড়ে হৃদ্রোগ: হুমকির মুখে পরিবেশ

আপলোড টাইম : ১১:১৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আরিফ হাসান, হিজলগাড়ী:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামের আঞ্চলিক সড়কের পাশে মাসখানেক আগে স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ নামের এক ব্যক্তির জমি ভাড়া নিয়ে বগুড় জেলার শাহীন অবৈধভাবে সিসা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছেন। সেখানে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে। এই কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে বিরূপ প্রভাব।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার ভিতর প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ ব্যাটারি ভাঙছেন, কেউবা আবার ভাঙা ব্যাটারির অংশবিশেষ এক জায়গায় স্তূপ করছেন। যার গভীর রাতে আগুনে পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হবে। এই কারখানায় কাজ করা শ্রমিকেরা বগুড়া, গাইবান্ধা ও নওগাঁ জেলার বাসিন্দা। কারখানার শ্রমিক গাইবান্ধা জেলার লতিফ বলেন, বগুড়ার শাহীন এই কারখানার মালিক। মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে এখানে এসেছি। মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। বিভিন্ন জেলা থেকে পুরানো ব্যাটারি সংগ্রহ করে এখানে এনে পুড়িয়ে সিসা বের করি।

সিসার ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কিছু জানেন কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এর আগে যেখানে ছিলাম সেখানে প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালিয়ে কারখানা গুড়িয়ে দিয়েছিল। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবারই প্রথম কারখানা করেছে, এর আগে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, সাভারের আমীন বাজার, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী এলাকায় ছিলাম। বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করেই আমরা কারখানা চালাই।’

দোস্ত গ্রামের মনু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সময়ের সমীকরণকে বলেন, আমাদের মাঠে টিন আর চাটাই এর বেড়া দিয়ে ওরা কি যেন করে। সারাদিন এখানে ট্রাক আসে যায়। গভীর রাতে প্রচুর আগুন জ্বলতে দেখি। তখন কেমন জানি ঝাঁঝালো গন্ধ আসে। লিয়াকত নামের আরেকজন বলেন, ওই মাঠেই আমার চাষ। এরা প্রায় একমাস আগে এখানে এসে ব্যাটারি ভাঙার কাজ শুরু করেছে। রাতে আগুনও জ্বালায়। যখন আগুন জ্বালায় তখন চোখ মুখ জ্বলে। মাঠের গাছগুলোর পাতা দিনদিনে লাল হয়ে যাচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, আগে এই সিসা তৈরির কারখানা ছিল ঢাকার আশপাশ এলাকায়। প্রশাসনের অভিযানে ওই এলাকায় টিকতে না পেরে প্রত্যন্ত এই এলাকায় এসে ঘাটি গেড়েছে তারা।

চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সীসা দূষণের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সীসা দূষণের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। সীসা দূষণের ফলে বাংলাদেশে প্রতিবছর হৃদ্রোগে আক্রান্ত ১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে। একই কারণে দেশের শিশুদের আইকিউ কমে যাচ্ছে, যার ফলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ- জোহরা বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু জানতে পেরেছি এই কারখানার বিরুদ্ধে খুব দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।