ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদ দাখিল করে চাকরির অপরাধে মামলা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৮২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদপত্র দাখিল করে চাকরির অভিযোগে করা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) খাইরুল ইসলাম। জাল সনদপত্র দাখিল করে চাকরির বিষয়টি ২০১৭ সালে নজরে এলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এরপর থেকে ওই পদে নিয়োগ স্থগিত। এতে ৮ বছরে বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী কম্পিউটার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। খাইরুল ইসলাম বর্তমানে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের অফিস সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক সূত্র থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে খাইরুল ইসলাম ২০০২ সালের ১ আগস্ট যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় তার দাখিল করা সনদপত্র জাল। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জাল সনদপত্র দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে পারে এ সংশয়ে তিনি বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও বিজিবি পরিচালক বরাবর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল আবেদন করে স্বেচ্ছায় চাকরি হতে পদত্যাগ করেন। এ পর্যন্ত থেমে ছিল বিষয়টি। এরপর হঠাৎ করে খাইরুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনার বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

এ মামলাটি তদন্ত করেন সেই সময়কার সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ওহিদুল ইসলাম। তিনি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি মামলার বাদী খাইরুল ইসলামের দাখিল করা মামলা সাজানো, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন এবং মিথ্যা মামলা করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২১১ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে চাঁদা দাবি ও গ্রহণ করার স্বপক্ষে কোন সাক্ষী বা প্রমাণ না পাওয়ায় বিবাদী চুয়াডাঙ্গার গুলশানপাড়ার গোলাম ফারুকের স্ত্রী ও মরহুম মহিউদ্দিনের মেয়ে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনকে (৪৬) মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানান। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনাকে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন।

তারপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সভাপতির পক্ষে প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুন চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল আদালতে বিবাদী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের মরহুম ফয়জুর রহমানের ছেলে সাবেক পদত্যাগকারী সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিআর-৭০৫/১৭ বর্তমানে টিআর-২৫৮/১৮ মামলা করেন। এই মামলার স্বপক্ষে বিদ্যালয়ে চাকরি গ্রহণের সময় খাইরুল ইসলামের দাখিল করা বগুড়ার ফুলতলায় অবস্থিত জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নট্রামস) দাখিল করা জাল সনদ এবং ২০০২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জাল সনদ দাখিল করে বেতন হিসেবে প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪ টাকা ৯৯ পয়সা গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে করা ২০১৭ সালের ১৮ জুনে দেওয়া লিগ্যাল নোটিশের কপি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদসহ সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ মার্চে খাইরুলের চাকরির সময় জমা দেওয়া সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য বগুড়া ফুলতলায় অবস্থিত জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নট্রামস) পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ একাডেমির পরিচালক (উপসচিব) এস.এম. ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয় ‘খাইরুল ইসলাম, পিতা: ফয়জুর রহমান, সনদ নম্বর-১৯২৮৩ রেজিস্ট্রেশন-১৭৮৬১, রেজিস্টার যাচাইয়ে দেখা যায় যে, সনদপত্রটি সাবেক নট্রামস কর্তৃক ইস্যুকৃত নয়, সনদপত্রটি জাল/ভুয়া। সেই তথ্যও মামলার নথিতেও সংযুক্ত করা হয়।

মামলাটি তদন্ত করেন তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম। ওই তদন্ত করার জন্য তিনি খাইরুলকে তার সনদপত্রের মূল কপি দেখাতে বললে তিনি জানান, ‘দাখিল করা সনদপত্রটির কপি তার নয়। তাকে ফাঁসানোর জন্য ওই কপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে’। এরপর তাকে তার সঠিক সনদপত্রের ফটোকপি জমা দিতে বললে খাইরুল আবার তার সনদপত্র জমা দেন। যার সিরিয়াল নম্বর-১৩৫৯০ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৩৫৮৭। এই সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য আবারো জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমিতে (নট্রামস) পাঠানো হলে সেটাও জাল/ভুয়া প্রমাণিত হয়। এই মামলাটির অনুসন্ধান পূর্বক তদন্ত করে জানা যায়, অভিযুক্ত খাইরুল ইসলাম ভুয়া কম্পিউটার সনদপত্র দাখিল করে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং তার দেয়া জবানবন্দিটি মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয় এবং বাদী মোছা. মেহজাবিন কর্তৃক অভিযোগের আবেদনটির সত্যতা পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম আদালতে দাখিল করেন।

এ মামলাটি বাতিল (কোয়াশমেন্ট) চেয়ে খাইরুল ইসলাম উচ্চআদালতে মামলা করেন। যার নম্বর-১৩৩৫৫৯৮/২০২৩। টেন্ডার নম্বর-৪০৬৮৭। মামলাটি ২০২৩ সালের ৭ জুন, ওই মাসের ১৪ জুন, ২১ জুন উচ্চ আদালতের এনেক্স বিল্ডিংয়ের ১৬ নম্বর আদালতে বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি কে.এম.এমরুল কায়েশ এবং ওই বছর ১২ জুলাই ও সর্বশেষ ১৯ জুলাই বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের আদালতে উপস্থাপিত হলে কোয়াশমেন্ট বাতিল হয়। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলাটি চলমান থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. মেহজাবিন চন্দনা বলেন, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে খাইরুল ইসলাম তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সে আমেরিকা দূতাবাসে ভিসার জন্য দাঁড়াবে। আদালতের মামলা উপেক্ষা করে গোপনে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তার বিরুদ্ধে এখনই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আগামী ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় হাজিরার দিন রয়েছে। খাইরুল ইসলাম জাল সনদপত্র দিয়ে চাকরি নিয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে ওই চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া একটি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া আর একটিসহ দুটি সনদপত্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জাল প্রমাণিত হয়েছে। জাল সনদপত্র ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার পর বেতন বাবদ নেওয়া টাকাও তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেননি। তিনি আরও বলেন, খাইরুল ইসলাম বিভিন্নভাবে তাকে, তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। এ কাজে সে বিভিন্ন লোকজনকে কাজে লাগাচ্ছে। সে কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে খাইরুল ইসলাম বলেন, মামলা আদালতে চলমান। আমি উচ্চ আদালতে এ মামলাটির ব্যাপারে কোয়াশমেন্ট চেয়েছি। তার একটি আদেশ এসেছে। আদেশটি কি আপনি নিজেই জেনে নেন। বিদেশে পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সব সময় বিদেশে যাওয়া-আসা করছি। প্রয়োজন হলে আবার যাবো, এতে সমস্যা কি ?

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদ দাখিল করে চাকরির অপরাধে মামলা

আপলোড টাইম : ০৯:০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গার বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদপত্র দাখিল করে চাকরির অভিযোগে করা মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) খাইরুল ইসলাম। জাল সনদপত্র দাখিল করে চাকরির বিষয়টি ২০১৭ সালে নজরে এলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করে। এরপর থেকে ওই পদে নিয়োগ স্থগিত। এতে ৮ বছরে বিদ্যালয়ের ৩ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী কম্পিউটার শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। খাইরুল ইসলাম বর্তমানে জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি ও চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের অফিস সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।

বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক সূত্র থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) হিসেবে খাইরুল ইসলাম ২০০২ সালের ১ আগস্ট যোগদান করেন। ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয় তার দাখিল করা সনদপত্র জাল। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে জাল সনদপত্র দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পুলিশে সোপর্দ করতে পারে এ সংশয়ে তিনি বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও বিজিবি পরিচালক বরাবর ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল আবেদন করে স্বেচ্ছায় চাকরি হতে পদত্যাগ করেন। এ পর্যন্ত থেমে ছিল বিষয়টি। এরপর হঠাৎ করে খাইরুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনার বিরুদ্ধে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নিয়ে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

এ মামলাটি তদন্ত করেন সেই সময়কার সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ওহিদুল ইসলাম। তিনি মামলাটি তদন্ত করে আদালতে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি মামলার বাদী খাইরুল ইসলামের দাখিল করা মামলা সাজানো, সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন এবং মিথ্যা মামলা করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ২১১ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আদালতে প্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে চাঁদা দাবি ও গ্রহণ করার স্বপক্ষে কোন সাক্ষী বা প্রমাণ না পাওয়ায় বিবাদী চুয়াডাঙ্গার গুলশানপাড়ার গোলাম ফারুকের স্ত্রী ও মরহুম মহিউদ্দিনের মেয়ে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনকে (৪৬) মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন জানান। এরপর ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনাকে বেকসুর খালাসের আদেশ দেন।

তারপর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সভাপতির পক্ষে প্রধান শিক্ষিকা মেহজাবিন চন্দনা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ৬ জুন চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল আদালতে বিবাদী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের মরহুম ফয়জুর রহমানের ছেলে সাবেক পদত্যাগকারী সহকারী শিক্ষক খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিআর-৭০৫/১৭ বর্তমানে টিআর-২৫৮/১৮ মামলা করেন। এই মামলার স্বপক্ষে বিদ্যালয়ে চাকরি গ্রহণের সময় খাইরুল ইসলামের দাখিল করা বগুড়ার ফুলতলায় অবস্থিত জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নট্রামস) দাখিল করা জাল সনদ এবং ২০০২ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত জাল সনদ দাখিল করে বেতন হিসেবে প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৪ টাকা ৯৯ পয়সা গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে করা ২০১৭ সালের ১৮ জুনে দেওয়া লিগ্যাল নোটিশের কপি প্রাপ্তি স্বীকার রশিদসহ সংযুক্ত করা হয়। এছাড়া ২০১৭ সালের ৬ মার্চে খাইরুলের চাকরির সময় জমা দেওয়া সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য বগুড়া ফুলতলায় অবস্থিত জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমির (নট্রামস) পরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ একাডেমির পরিচালক (উপসচিব) এস.এম. ফেরদৌস আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানানো হয় ‘খাইরুল ইসলাম, পিতা: ফয়জুর রহমান, সনদ নম্বর-১৯২৮৩ রেজিস্ট্রেশন-১৭৮৬১, রেজিস্টার যাচাইয়ে দেখা যায় যে, সনদপত্রটি সাবেক নট্রামস কর্তৃক ইস্যুকৃত নয়, সনদপত্রটি জাল/ভুয়া। সেই তথ্যও মামলার নথিতেও সংযুক্ত করা হয়।

মামলাটি তদন্ত করেন তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম। ওই তদন্ত করার জন্য তিনি খাইরুলকে তার সনদপত্রের মূল কপি দেখাতে বললে তিনি জানান, ‘দাখিল করা সনদপত্রটির কপি তার নয়। তাকে ফাঁসানোর জন্য ওই কপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে’। এরপর তাকে তার সঠিক সনদপত্রের ফটোকপি জমা দিতে বললে খাইরুল আবার তার সনদপত্র জমা দেন। যার সিরিয়াল নম্বর-১৩৫৯০ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১৩৫৮৭। এই সনদপত্রটি যাচাইয়ের জন্য আবারো জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমিতে (নট্রামস) পাঠানো হলে সেটাও জাল/ভুয়া প্রমাণিত হয়। এই মামলাটির অনুসন্ধান পূর্বক তদন্ত করে জানা যায়, অভিযুক্ত খাইরুল ইসলাম ভুয়া কম্পিউটার সনদপত্র দাখিল করে সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান এবং তার দেয়া জবানবন্দিটি মিথ্যা বলে প্রতীয়মান হয় এবং বাদী মোছা. মেহজাবিন কর্তৃক অভিযোগের আবেদনটির সত্যতা পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. তরিকুল ইসলাম আদালতে দাখিল করেন।

এ মামলাটি বাতিল (কোয়াশমেন্ট) চেয়ে খাইরুল ইসলাম উচ্চআদালতে মামলা করেন। যার নম্বর-১৩৩৫৫৯৮/২০২৩। টেন্ডার নম্বর-৪০৬৮৭। মামলাটি ২০২৩ সালের ৭ জুন, ওই মাসের ১৪ জুন, ২১ জুন উচ্চ আদালতের এনেক্স বিল্ডিংয়ের ১৬ নম্বর আদালতে বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি কে.এম.এমরুল কায়েশ এবং ওই বছর ১২ জুলাই ও সর্বশেষ ১৯ জুলাই বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের আদালতে উপস্থাপিত হলে কোয়াশমেন্ট বাতিল হয়। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলাটি চলমান থাকবে।
চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. মেহজাবিন চন্দনা বলেন, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে খাইরুল ইসলাম তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সে আমেরিকা দূতাবাসে ভিসার জন্য দাঁড়াবে। আদালতের মামলা উপেক্ষা করে গোপনে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে তার বিরুদ্ধে এখনই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আগামী ৩ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় হাজিরার দিন রয়েছে। খাইরুল ইসলাম জাল সনদপত্র দিয়ে চাকরি নিয়ে গ্রেপ্তারের ভয়ে ওই চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। সীমান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জমা দেওয়া একটি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া আর একটিসহ দুটি সনদপত্রই সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে জাল প্রমাণিত হয়েছে। জাল সনদপত্র ব্যবহার করে চাকরি নেওয়ার পর বেতন বাবদ নেওয়া টাকাও তিনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দেননি। তিনি আরও বলেন, খাইরুল ইসলাম বিভিন্নভাবে তাকে, তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছেন। এ কাজে সে বিভিন্ন লোকজনকে কাজে লাগাচ্ছে। সে কারণে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া বিশেষ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে খাইরুল ইসলাম বলেন, মামলা আদালতে চলমান। আমি উচ্চ আদালতে এ মামলাটির ব্যাপারে কোয়াশমেন্ট চেয়েছি। তার একটি আদেশ এসেছে। আদেশটি কি আপনি নিজেই জেনে নেন। বিদেশে পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি সব সময় বিদেশে যাওয়া-আসা করছি। প্রয়োজন হলে আবার যাবো, এতে সমস্যা কি ?