ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিনা ছুটিতে পরিবার কল্যাণ সহকারীর কর্মস্থলে অনুপস্থিত নিয়ে তোলপাড়

ধরা পড়ায় তদন্ত কর্মকর্তাকে কেটে ফেলার হুমকি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় জেসমিন আরা খাতুন নামের এক পরিবার কল্যাণ সহকারী বিনা ছুটিতে ২১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে কাপাশহাটিয়া ২/ক ইউনিটে কর্মরত আছেন। এদিকে, বিনা ছুটিতে ও দাপ্তরিক অনাপত্তি নিয়ে ভারতে গমন করার কথা নিজেই ফাঁস করে বিপাকে পড়েছেন জেসমিন। এ ঘটনা নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের পর জেসমিন ও তার স্বজনরা তদন্ত কর্মকর্তা ডা. তানিয়া আক্তার তৃপ্তিকে মোবাইল ফোনে কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাছরিন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জেসমিন আরা আমার কাছে ছুটির জন্য আসেন। কিন্তু সামনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় তার ছুটি প্রদানের কোনো বিধান ছিল না। এরপর তিনি কোনো আবেদন ছাড়াই ২১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি দুটি পাক্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেনি এবং এক মাসে তার মাসিক রিপোর্টও দেননি। বিষয়টি কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ফিল্ড ভিজিট করে প্রতিবেদন দিলে তাকেও মুঠোফোনে ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে হুমকি প্রদান করেন জেসমিন এবং তার স্বামী জাহিদ। এরপর শুনি তিনি আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ভারতে গেছেন বলেও পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। কিন্তু হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জেসমিনকে ভারতে যাওয়ার জন্য কোনো ছুটি দেননি বলে তাকে (নাছরিনকে) জানিয়েছেন। নাছরিন আরও বলেন, পুরো বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর জেসমিন ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডে আসেন। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের উপস্থিতিতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তবে তিনি রোগের লক্ষণ বর্ণনায় বলেছেন, তার স্তনে তীব্র জ্বালাপোড়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো প্রকার টিউমার জাতীয় রোগের কথা উল্লেখ করেননি এবং এ সংক্রান্ত কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকেও দেখাননি। এ অবস্থায় জেসমিনকে দেশের মধ্যে কোনো স্তন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। মেডিকেল বোর্ডে ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ, জুনিয়র কন. ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা ইয়াসমিন। বিষয়টি ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস গত বছরের ১০ অক্টোবর ১৮৫৪ নং স্মারকে উপ-পরিচালক, ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে জানানো হয়।

পরিবার কল্যাণ সহকারী জেসমিন আরা বলেন, ‘২০২৩ সালের জুন মাস থেকে আমি অসুস্থ। তখন থেকেই ছুটি চাচ্ছি, কিন্তু দেয়নি। আমি একজন ক্যানসার রোগী। দয়া করে যদি পারেন, আপনারা আমার জন্য ছুটির ব্যবস্থা করুন, যাতে আমি  দ্রুত চিকিৎসা হতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সবই অপপ্রচার। আমি কারো হুমকি দেয়নি। আমি সবার কাছে ন্যায়বিচার চাই।’ এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মোজাম্মেল হক জানান, তার দপ্তরে জেসমিনের কোনো ছুটির আবেদন নেই। তবে ঢালাওভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জেসমিনের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বিনা ছুটিতে পরিবার কল্যাণ সহকারীর কর্মস্থলে অনুপস্থিত নিয়ে তোলপাড়

ধরা পড়ায় তদন্ত কর্মকর্তাকে কেটে ফেলার হুমকি

আপলোড টাইম : ১১:০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ঝিনাইদহ অফিস:

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় জেসমিন আরা খাতুন নামের এক পরিবার কল্যাণ সহকারী বিনা ছুটিতে ২১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে কাপাশহাটিয়া ২/ক ইউনিটে কর্মরত আছেন। এদিকে, বিনা ছুটিতে ও দাপ্তরিক অনাপত্তি নিয়ে ভারতে গমন করার কথা নিজেই ফাঁস করে বিপাকে পড়েছেন জেসমিন। এ ঘটনা নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের পর জেসমিন ও তার স্বজনরা তদন্ত কর্মকর্তা ডা. তানিয়া আক্তার তৃপ্তিকে মোবাইল ফোনে কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাছরিন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জেসমিন আরা আমার কাছে ছুটির জন্য আসেন। কিন্তু সামনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় তার ছুটি প্রদানের কোনো বিধান ছিল না। এরপর তিনি কোনো আবেদন ছাড়াই ২১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি দুটি পাক্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করেনি এবং এক মাসে তার মাসিক রিপোর্টও দেননি। বিষয়টি কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম ফিল্ড ভিজিট করে প্রতিবেদন দিলে তাকেও মুঠোফোনে ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে হুমকি প্রদান করেন জেসমিন এবং তার স্বামী জাহিদ। এরপর শুনি তিনি আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে ছুটি নিয়ে ভারতে গেছেন বলেও পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। কিন্তু হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জেসমিনকে ভারতে যাওয়ার জন্য কোনো ছুটি দেননি বলে তাকে (নাছরিনকে) জানিয়েছেন। নাছরিন আরও বলেন, পুরো বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর জেসমিন ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেডিকেল বোর্ডে আসেন। একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সের উপস্থিতিতে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে চাইলে তিনি রাজি হননি। তবে তিনি রোগের লক্ষণ বর্ণনায় বলেছেন, তার স্তনে তীব্র জ্বালাপোড়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো প্রকার টিউমার জাতীয় রোগের কথা উল্লেখ করেননি এবং এ সংক্রান্ত কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকেও দেখাননি। এ অবস্থায় জেসমিনকে দেশের মধ্যে কোনো স্তন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন ঝিনাইদহ সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। মেডিকেল বোর্ডে ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ, জুনিয়র কন. ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান ও সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারজানা ইয়াসমিন। বিষয়টি ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস গত বছরের ১০ অক্টোবর ১৮৫৪ নং স্মারকে উপ-পরিচালক, ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগকে জানানো হয়।

পরিবার কল্যাণ সহকারী জেসমিন আরা বলেন, ‘২০২৩ সালের জুন মাস থেকে আমি অসুস্থ। তখন থেকেই ছুটি চাচ্ছি, কিন্তু দেয়নি। আমি একজন ক্যানসার রোগী। দয়া করে যদি পারেন, আপনারা আমার জন্য ছুটির ব্যবস্থা করুন, যাতে আমি  দ্রুত চিকিৎসা হতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সবই অপপ্রচার। আমি কারো হুমকি দেয়নি। আমি সবার কাছে ন্যায়বিচার চাই।’ এ বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মোজাম্মেল হক জানান, তার দপ্তরে জেসমিনের কোনো ছুটির আবেদন নেই। তবে ঢালাওভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে জেসমিনের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।