ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধনকালে ডিসি কিসিঞ্জার চাকমা

বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি লালন এবং তা ধরে রাখতেই এই উৎসব

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ইস্টিকুটুম মিষ্টিকুটুম এসো শিল্পকলায়, খেতে দিবো শীতের পিঠা, বসতে দিবো পিঁড়াই’ প্রতিপাদ্যে সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ফিতা কেটে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। পিঠা উৎসবে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন নামের সারিবদ্ধ পিঠার স্টল। যেখানে ১২টি পিঠার স্টলে রয়েছে নানা রকমের জানা-অজানা পিঠার সমাহার। বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরির এক কর্মযজ্ঞ শেষে উৎসবের মাঠে নানা ধরনের পিঠা নিয়ে হাজির হন উদ্যোক্তরা। এসব স্টলে রয়েছে প্রায় ২০০ রকমের পিঠার সমাহার।

উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল- পিঠাপুলি, পাকান পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেল পিঠা, ফুল পিঠা, ছিটা পিঠা, পাতা পিঠা, বিস্কুট পিঠা, রুটি পিঠা, জামায় ভাজা পিঠা, বউ ভুলানো পিঠা, আপেল পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সামুক পিঠা, চিংড়ি পিঠা, শিউলি ফুল পিঠা, প্রজাপতি পিঠা, ফুল পিঠা, সংসার পিঠা,বাবুই ঝাকা পিঠা,কদম ফুল পিঠা, রিদয়হরণ পিঠা, প্রভৃতি।

একদিকে যেমন নানা রকমের পিঠার সমাহার, অপরদিকে বাঙালির চিরচেনা লোক সংগীত পরিবেশনা। সংগীতের সুর আর পিঠার গন্ধে উৎসবের চারপাশে আনন্দ-উল্লাসে ভরে ওঠে। একদিকে পিঠার স্বাদ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অপরদিকে কানে আসছে বিভিন্ন সুরের লোক সংগীত। উৎসবে বিভিন্ন সাজসজ্জায় সেজে উৎসবটি উপভোগ করতে সব বয়সী মানুষেরা আসে। এখানে এসে অনেকেই জানতে পেরেছে বাঙালির বিভিন্ন রকমের পিঠার নাম ও পিঠার ঐতিহ্য। একই সাথে বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছে তাদের লোক সংস্কৃতির ভিন্ন ধারার গান।

শিরিন খাতুন নামের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘পিঠা আমাদের বাঙালির গৌরব। আর এই গৌরব টিকিয়ে রাখার জন্য এই পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব। এখানে প্রায় হরেক রকমের পিঠা আছে। খুব ভালো লাগছে এই রকম পিঠা উৎসব প্রতিবার যদি সব সেক্টরে হয়, তাহলে বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে। এখানে নানা রকম পিঠা সাজানো আছে। অনেক পিঠার নাম জানা নেই। এই পিঠা উৎসবে অজানা পিঠাগুলোর নাম জানানোর জন্য বিভিন্ন রকমের পিঠার সমাহার সাজানো হয়েছে। এই পিঠা উৎসবের মধ্যদিয়ে আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি, তারা নতুনভাবে জেগে উঠব।’

উৎসবটি উপভোগ করতে আসা এক তরুণী তামান্না খাতুন বলেন, ‘এখানে প্রায় শতাধিক পিঠা দেখলাম। নানা রকমের পিঠার স্বাদ নিচ্ছি। কিন্তু অনেক পিঠার নামই জানতাম না। এখন দেখলাম না জানা ও না দেখার অনেক পিঠা রয়েছে। এসব পিঠার সাথে নতুনভাবে পরিচিত হতে পেরে ভালোই লাগছে।’

পরে এই উৎসব উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাফুজুর রহমান মন্জু, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ পিপিএম-সেবা, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম, মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, শাহিদুল আলম, সাইফুল ইসলাম সাইফ, জেলা মার্কেটিং অফিসার সহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাড. মানিক আকবর, ডিবিসির সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম, দৈনিক আকাশ খবরের সম্পাদক জান্নাতুল আওলিয়া নিশি প্রমুখ।

আলোচনার শেষ পর্বে সকল স্টল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মূলত বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি লালন এবং তা ধরে রাখতেই এই উৎসব। পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য। পিঠা ছাড়া আমরা বাঙালি জাতি কল্পনা করতে পারি না। সারা বাংলাদেশে এই পিঠা ও লোকসংস্কৃতি উৎসব পালন হচ্ছে একযোগে। স্থান ও কাল ভেদে এই উৎসবের আয়োজন। এখানে এসে এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে এবং বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে বলেও প্রত্যাশাও করি। উৎসব থেকে সবার প্রত্যাশা আগামী তরুণ প্রজন্ম নতুন রুপে নতুন জাগরণে জেগে উঠবে। একই সাথে বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসবের উদ্বোধনকালে ডিসি কিসিঞ্জার চাকমা

বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি লালন এবং তা ধরে রাখতেই এই উৎসব

আপলোড টাইম : ০৮:৫৫:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘ইস্টিকুটুম মিষ্টিকুটুম এসো শিল্পকলায়, খেতে দিবো শীতের পিঠা, বসতে দিবো পিঁড়াই’ প্রতিপাদ্যে সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গাতেও তিন দিনব্যাপী জাতীয় পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পাঁচটায় চুয়াডাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে ফিতা কেটে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। পিঠা উৎসবে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন নামের সারিবদ্ধ পিঠার স্টল। যেখানে ১২টি পিঠার স্টলে রয়েছে নানা রকমের জানা-অজানা পিঠার সমাহার। বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরির এক কর্মযজ্ঞ শেষে উৎসবের মাঠে নানা ধরনের পিঠা নিয়ে হাজির হন উদ্যোক্তরা। এসব স্টলে রয়েছে প্রায় ২০০ রকমের পিঠার সমাহার।

উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল- পিঠাপুলি, পাকান পিঠা, চিতই পিঠা, পাটিসাপটা, নারকেল পিঠা, ফুল পিঠা, ছিটা পিঠা, পাতা পিঠা, বিস্কুট পিঠা, রুটি পিঠা, জামায় ভাজা পিঠা, বউ ভুলানো পিঠা, আপেল পিঠা, ঝিনুক পিঠা, সামুক পিঠা, চিংড়ি পিঠা, শিউলি ফুল পিঠা, প্রজাপতি পিঠা, ফুল পিঠা, সংসার পিঠা,বাবুই ঝাকা পিঠা,কদম ফুল পিঠা, রিদয়হরণ পিঠা, প্রভৃতি।

একদিকে যেমন নানা রকমের পিঠার সমাহার, অপরদিকে বাঙালির চিরচেনা লোক সংগীত পরিবেশনা। সংগীতের সুর আর পিঠার গন্ধে উৎসবের চারপাশে আনন্দ-উল্লাসে ভরে ওঠে। একদিকে পিঠার স্বাদ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। অপরদিকে কানে আসছে বিভিন্ন সুরের লোক সংগীত। উৎসবে বিভিন্ন সাজসজ্জায় সেজে উৎসবটি উপভোগ করতে সব বয়সী মানুষেরা আসে। এখানে এসে অনেকেই জানতে পেরেছে বাঙালির বিভিন্ন রকমের পিঠার নাম ও পিঠার ঐতিহ্য। একই সাথে বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছে তাদের লোক সংস্কৃতির ভিন্ন ধারার গান।

শিরিন খাতুন নামের একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘পিঠা আমাদের বাঙালির গৌরব। আর এই গৌরব টিকিয়ে রাখার জন্য এই পিঠা ও লোক সংস্কৃতি উৎসব। এখানে প্রায় হরেক রকমের পিঠা আছে। খুব ভালো লাগছে এই রকম পিঠা উৎসব প্রতিবার যদি সব সেক্টরে হয়, তাহলে বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে। এখানে নানা রকম পিঠা সাজানো আছে। অনেক পিঠার নাম জানা নেই। এই পিঠা উৎসবে অজানা পিঠাগুলোর নাম জানানোর জন্য বিভিন্ন রকমের পিঠার সমাহার সাজানো হয়েছে। এই পিঠা উৎসবের মধ্যদিয়ে আমরা যারা উদ্যোক্তা আছি, তারা নতুনভাবে জেগে উঠব।’

উৎসবটি উপভোগ করতে আসা এক তরুণী তামান্না খাতুন বলেন, ‘এখানে প্রায় শতাধিক পিঠা দেখলাম। নানা রকমের পিঠার স্বাদ নিচ্ছি। কিন্তু অনেক পিঠার নামই জানতাম না। এখন দেখলাম না জানা ও না দেখার অনেক পিঠা রয়েছে। এসব পিঠার সাথে নতুনভাবে পরিচিত হতে পেরে ভালোই লাগছে।’

পরে এই উৎসব উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গার শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাফুজুর রহমান মন্জু, চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) নাজিম উদ্দিন আল-আজাদ পিপিএম-সেবা, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুর পেয়ারা বেগম, মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, শাহিদুল আলম, সাইফুল ইসলাম সাইফ, জেলা মার্কেটিং অফিসার সহিদুল ইসলাম, সিনিয়র সাংবাদিক অ্যাড. মানিক আকবর, ডিবিসির সাংবাদিক কামরুজ্জামান সেলিম, দৈনিক আকাশ খবরের সম্পাদক জান্নাতুল আওলিয়া নিশি প্রমুখ।

আলোচনার শেষ পর্বে সকল স্টল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘মূলত বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতি লালন এবং তা ধরে রাখতেই এই উৎসব। পিঠা উৎসব বাঙালির ঐতিহ্য। পিঠা ছাড়া আমরা বাঙালি জাতি কল্পনা করতে পারি না। সারা বাংলাদেশে এই পিঠা ও লোকসংস্কৃতি উৎসব পালন হচ্ছে একযোগে। স্থান ও কাল ভেদে এই উৎসবের আয়োজন। এখানে এসে এই ঐতিহ্য সম্পর্কে জানবে এবং বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে বলেও প্রত্যাশাও করি। উৎসব থেকে সবার প্রত্যাশা আগামী তরুণ প্রজন্ম নতুন রুপে নতুন জাগরণে জেগে উঠবে। একই সাথে বাঙালির ঐতিহ্য টিকে থাকবে।’