ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাগদিদের জীবিকা নির্বাহে নামতে দেওয়া হয় না কোনো খাল-বিলে

কার্ডধারী হলেও পায় না কোনো সুযোগ-সুবিধা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষেরা খাল-বিলে ছোট মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে এখন আর তাদের খাল-বিলে নামতে দেওয়া হয় না। কার্ডধারী হলেও পায় না কোনো সুযোগ-সুবিধা। এখন মাঠে হলুদ, একানি, কচু, ধান, ভুট্টা, মসুরি ও আলু কুড়িয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে চলে তাদের সংসার। গত শনিবার দর্শনা আদিবাসী বাগদি পাড়ায় গেলে সুদির বিশ্বাসের ছেলে শম্ভু বিশ্বাস , নানি গোপালের ছেলে নির্মল বিশ্বস ও নরেন বিশ্বাসের ছেলে সালমত বিশ্বাস তাদের কষ্টের কথা জানান।

তারা বলেন, তারা রায়সা বিল, ছয়ঘরিয়া বিল, বাড়াদী বিল, নলগাড়ী বিল, কয়া বিল, কাইন জিয়াল বিল, পদ্মবিল, দুধপাতিলা বিল, কাতলামারী বিল, শৈলমারী বিল, উজ্জলপুর বিল, উক্ত বিল, ভরাট, মৃগমারী, বিশুদা বিল, মরা গাং, শিংনগর বাঁওড়, পদ্ম গঙ্গা, তেতলের বিল, সোলা গাড়ী, আড়াইপোতা, সুনডো ও বেঁতোগাড়ীসহ বহু বিলে মাছ ধরে ৬ মাস সংসার চালাতো। তাদের ৭০-৭২টি পরিবারের মানুষ বছরে ৬ মাস খাল-বিলে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। ১৯৯৬ সাল থেকে কোনো খাল-বিলে আর তাদের নামতে দেওয়া হয় না। এতে দর্শনা আদিবাসী ও জেলে সম্প্রদায়ের কার্ডধারী ৩০০ জন বঞ্চিত হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ‘আগে বিলে ছোট মাছ ধরতে গেলে বিলের মালিকেরা হাড়ি চেক করে দেখতো বড় মাছ ধরেছি কি না। এরপর ছোট মাছ দেখে ছেড়ে দিত। আমরা ঝাঁইয়া, পুঁটি, চ্যাং, জিওল, দেশী মাগুর, শৈল, গজাড়, টেংরা, অকল, খয়রা, ভেদা, খরশলা, কাইকলে ডাটা, তারা গুতেল, পাঁকাল, তোড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাইছি। এখন কোনো বিলেই নামতে দেয় না। এছাড়া অনেক বিল শুকিয়ে গেছে। আবার মাছ চাষ করতে গিয়ে খাল-বিলে বিষ ও সার দেওয়ায় দেশী মাছগুলো হারিয়ে গেছে। এখন মাথাভাঙ্গা নদীতেও মাছ পাওয়া যায় না।’

তারা বলেন, এখন হলুদ, একানি, কচু, ধান, ভুট্টা, মসুরি ও আলু কুড়িয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি। হিন্দু ও মুসলিম ৩০০ মৎস্যজীবীকে ৩ বছর আগে মৎস্যজীবী হিসেবে কার্ড দিলেও তারা কোনো সহায়তা পায়নি। ফলে অতিকষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে আদিবাসী বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষদের।

এ বিষয় অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু হওয়ার কারণে পানিতে ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। হাওড়, বাঁওড়, বিল-খাল ও ডোবা-নালা পানি শুকিয়ে কার্প জাতীয় মাছ চাষাবাদ করাও একটি কারণ। বিল-খাল ও পুকুরের পানি সেচে ফেলে চুন, রোটেননসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষ প্রয়োগ করে মাছ চাষ করছে। যার ফলে দেশীয় ছোট মাছগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই ডিম পর্যন্ত নষ্ট হচ্ছে। ফলে দেশীয় মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হাওড়, বাঁওড়, বিল-খাল ও ডোবা-নালার পাশে ধান ও পাট চাষ হচ্ছে। এসব ধান-পাটে বিষ প্রয়োগ করছে। যার কারণে বিষয়গুলো বৃষ্টির সময় ধুয়ে ডোবা-নালা ও খাল বিলে মিশে দেশীয় মাছ বিলীন হচ্ছে। ফলে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো, তাদের জীবিকা হারিয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বাগদিদের জীবিকা নির্বাহে নামতে দেওয়া হয় না কোনো খাল-বিলে

কার্ডধারী হলেও পায় না কোনো সুযোগ-সুবিধা

আপলোড টাইম : ১১:৩৭:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৪

আওয়াল হোসেন, দর্শনা:
বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষেরা খাল-বিলে ছোট মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে এখন আর তাদের খাল-বিলে নামতে দেওয়া হয় না। কার্ডধারী হলেও পায় না কোনো সুযোগ-সুবিধা। এখন মাঠে হলুদ, একানি, কচু, ধান, ভুট্টা, মসুরি ও আলু কুড়িয়ে কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে চলে তাদের সংসার। গত শনিবার দর্শনা আদিবাসী বাগদি পাড়ায় গেলে সুদির বিশ্বাসের ছেলে শম্ভু বিশ্বাস , নানি গোপালের ছেলে নির্মল বিশ্বস ও নরেন বিশ্বাসের ছেলে সালমত বিশ্বাস তাদের কষ্টের কথা জানান।

তারা বলেন, তারা রায়সা বিল, ছয়ঘরিয়া বিল, বাড়াদী বিল, নলগাড়ী বিল, কয়া বিল, কাইন জিয়াল বিল, পদ্মবিল, দুধপাতিলা বিল, কাতলামারী বিল, শৈলমারী বিল, উজ্জলপুর বিল, উক্ত বিল, ভরাট, মৃগমারী, বিশুদা বিল, মরা গাং, শিংনগর বাঁওড়, পদ্ম গঙ্গা, তেতলের বিল, সোলা গাড়ী, আড়াইপোতা, সুনডো ও বেঁতোগাড়ীসহ বহু বিলে মাছ ধরে ৬ মাস সংসার চালাতো। তাদের ৭০-৭২টি পরিবারের মানুষ বছরে ৬ মাস খাল-বিলে মাছ ধরে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। ১৯৯৬ সাল থেকে কোনো খাল-বিলে আর তাদের নামতে দেওয়া হয় না। এতে দর্শনা আদিবাসী ও জেলে সম্প্রদায়ের কার্ডধারী ৩০০ জন বঞ্চিত হয়েছে।

তারা আরও বলেন, ‘আগে বিলে ছোট মাছ ধরতে গেলে বিলের মালিকেরা হাড়ি চেক করে দেখতো বড় মাছ ধরেছি কি না। এরপর ছোট মাছ দেখে ছেড়ে দিত। আমরা ঝাঁইয়া, পুঁটি, চ্যাং, জিওল, দেশী মাগুর, শৈল, গজাড়, টেংরা, অকল, খয়রা, ভেদা, খরশলা, কাইকলে ডাটা, তারা গুতেল, পাঁকাল, তোড়া, বাইনসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাইছি। এখন কোনো বিলেই নামতে দেয় না। এছাড়া অনেক বিল শুকিয়ে গেছে। আবার মাছ চাষ করতে গিয়ে খাল-বিলে বিষ ও সার দেওয়ায় দেশী মাছগুলো হারিয়ে গেছে। এখন মাথাভাঙ্গা নদীতেও মাছ পাওয়া যায় না।’

তারা বলেন, এখন হলুদ, একানি, কচু, ধান, ভুট্টা, মসুরি ও আলু কুড়িয়ে কোনো মতে বেঁচে আছি। হিন্দু ও মুসলিম ৩০০ মৎস্যজীবীকে ৩ বছর আগে মৎস্যজীবী হিসেবে কার্ড দিলেও তারা কোনো সহায়তা পায়নি। ফলে অতিকষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে আদিবাসী বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষদের।

এ বিষয় অবসরপ্রাপ্ত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ শুরু হওয়ার কারণে পানিতে ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। হাওড়, বাঁওড়, বিল-খাল ও ডোবা-নালা পানি শুকিয়ে কার্প জাতীয় মাছ চাষাবাদ করাও একটি কারণ। বিল-খাল ও পুকুরের পানি সেচে ফেলে চুন, রোটেননসহ বিভিন্ন প্রকারের বিষ প্রয়োগ করে মাছ চাষ করছে। যার ফলে দেশীয় ছোট মাছগুলো যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনই ডিম পর্যন্ত নষ্ট হচ্ছে। ফলে দেশীয় মাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া হাওড়, বাঁওড়, বিল-খাল ও ডোবা-নালার পাশে ধান ও পাট চাষ হচ্ছে। এসব ধান-পাটে বিষ প্রয়োগ করছে। যার কারণে বিষয়গুলো বৃষ্টির সময় ধুয়ে ডোবা-নালা ও খাল বিলে মিশে দেশীয় মাছ বিলীন হচ্ছে। ফলে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো, তাদের জীবিকা হারিয়েছে।