ইপেপার । আজ শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাল এনটিআরসিএ সনদে চাকরি এক স্কুল শিক্ষিকার!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ অফিস:
ধরা পড়ার পরও জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে গুলশান আরা খাতুন নামের এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। তিনি ১২ বছর ধরে হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার কাপাশাহাটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাসহ অনেকেই এই অপকর্মের সহায়তা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গুলশান আরা খাতুন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত আমজাদ আলী বিশ্বাসের মেয়ে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গুলশান আরা খাতুন ২০১১ সালের ২৩ জুলাই জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নজির উদ্দীন আহমেদের যোগসাজশে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর তিনি এমপিওভুক্ত হন। জাল নিবন্ধন সনদের বিষয়টি জানাজানি হলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই-বাছাই করে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এক চিঠিতে তাকে সরকারি বেতন-ভাতা চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে তিনি চাকরি করে যান।
২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত অডিটে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে চাপ প্রয়োগ করে এই মর্মে অডিট রিপোর্ট প্রেরণ করে তাতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষিকা গ্রহণকৃত ৩ মাসের বেতন ভাতাদি সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন এবং বর্তমানে তিনি ওই স্কুলে কর্মরত নাই। এদিকে, সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাতে সহকারী শিক্ষিকা গুলশান আরা খাতুনের নাম নেই। অথচ তিনি এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী খাতুন জানান, তৎকালীন স্কুল কমিটির সভাপতি মশিয়ার রহমান জোয়ার্দ্দার মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনরায় নিয়োগ দেন। কিন্তু সেটি ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। এর বাইরে প্রধান শিক্ষিকা কিছু বলতে রাজি হননি। নিয়োগে না পেয়েই জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণের বিষয়ে ওই শিক্ষিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাগজ সব ঠিক আছে। বেশি কিছু জানতে চাইলে সে সময়কার সভাপতি মশিয়ার জোয়ারদার কাছে জানেন। আমি কিছু বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে স্কুলটির সাবেক সভাপতি মশিয়ার রহমান জোয়ারদার বলেন, ‘আমার সময়ে আমি কোনো বেআইনি কাজ করিনি। আমি জানি কোনটা নিয়ম, আর কোনটা অনিয়ম। আমার মনে হয় নিয়ম মেনেই সহকারী শিক্ষিকা গুলশান আরাকে নিয়োগ দিয়েছি।’ এ বিষয়ে স্কুলটির বর্তমান সভাপতি ও কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত দৌলা ঝণ্টু বলেন, যদি কোনো অনিয়ম থেকে থাকে, তাহলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষা অফিসে গিয়ে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে পুনরায় নিয়োগ না হলে যদি তিনি চাকরিতে বহাল থাকেন, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই কঠোর হাতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন তো অনলাইনের যুগ। জাল এনটিআরসিএ সনদ দিয়ে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই। ’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জাল এনটিআরসিএ সনদে চাকরি এক স্কুল শিক্ষিকার!

আপলোড টাইম : ১১:১০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

ঝিনাইদহ অফিস:
ধরা পড়ার পরও জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে গুলশান আরা খাতুন নামের এক স্কুল শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। তিনি ১২ বছর ধরে হরিণাকুণ্ডুু উপজেলার কাপাশাহাটিয়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাসহ অনেকেই এই অপকর্মের সহায়তা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গুলশান আরা খাতুন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত আমজাদ আলী বিশ্বাসের মেয়ে।
হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গুলশান আরা খাতুন ২০১১ সালের ২৩ জুলাই জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিয়ে ঘোড়াগাছা লাল মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নজির উদ্দীন আহমেদের যোগসাজশে সহকারী শিক্ষিকা পদে যোগদান করেন। ২০১২ সালের ১ নভেম্বর তিনি এমপিওভুক্ত হন। জাল নিবন্ধন সনদের বিষয়টি জানাজানি হলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যাচাই-বাছাই করে ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়। এক চিঠিতে তাকে সরকারি বেতন-ভাতা চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার কথা বলা হয়। কিন্তু প্রভাব খাটিয়ে তিনি চাকরি করে যান।
২০১৬ সালে মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত অডিটে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে চাপ প্রয়োগ করে এই মর্মে অডিট রিপোর্ট প্রেরণ করে তাতে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত শিক্ষিকা গ্রহণকৃত ৩ মাসের বেতন ভাতাদি সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন এবং বর্তমানে তিনি ওই স্কুলে কর্মরত নাই। এদিকে, সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাতে সহকারী শিক্ষিকা গুলশান আরা খাতুনের নাম নেই। অথচ তিনি এখনো বহাল তবিয়তে চাকরি করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী খাতুন জানান, তৎকালীন স্কুল কমিটির সভাপতি মশিয়ার রহমান জোয়ার্দ্দার মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনরায় নিয়োগ দেন। কিন্তু সেটি ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। এর বাইরে প্রধান শিক্ষিকা কিছু বলতে রাজি হননি। নিয়োগে না পেয়েই জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারি বেতন-ভাতা গ্রহণের বিষয়ে ওই শিক্ষিকার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাগজ সব ঠিক আছে। বেশি কিছু জানতে চাইলে সে সময়কার সভাপতি মশিয়ার জোয়ারদার কাছে জানেন। আমি কিছু বলতে পারব না।’
এ বিষয়ে স্কুলটির সাবেক সভাপতি মশিয়ার রহমান জোয়ারদার বলেন, ‘আমার সময়ে আমি কোনো বেআইনি কাজ করিনি। আমি জানি কোনটা নিয়ম, আর কোনটা অনিয়ম। আমার মনে হয় নিয়ম মেনেই সহকারী শিক্ষিকা গুলশান আরাকে নিয়োগ দিয়েছি।’ এ বিষয়ে স্কুলটির বর্তমান সভাপতি ও কাপাশহাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরাফত দৌলা ঝণ্টু বলেন, যদি কোনো অনিয়ম থেকে থাকে, তাহলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষা অফিসে গিয়ে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।’
হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল বারী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে পুনরায় নিয়োগ না হলে যদি তিনি চাকরিতে বহাল থাকেন, তাহলে বিষয়টি অবশ্যই কঠোর হাতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন তো অনলাইনের যুগ। জাল এনটিআরসিএ সনদ দিয়ে চাকরি করার কোনো সুযোগ নেই। ’