ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষার আবাদ

মেটানো সম্ভব হবে ভোজ্য তেলের চাহিদা : উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার মাঠের পর মাঠ ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। সবুজ আর হলুদের মিতালীতে সেজেছে খেতগুলো। ফুলের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছিরা প্রকৃতিকে আরও অপরূপ করে তুলছে। এসব সরিষা খেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকাল বেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধ করে তোলে। জেলায় বর্তমানে ধান, ভুট্টা, ফলমূল ও সবজির অঞ্চল নামে পরিচিত। জেলা ছোট হলেও এখানে মৌসুম ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর পর্যন্ত জমি ধান, ভুট্টা ও সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এখানে এক সময় আখ, পাট, মসুর ও গমের আবাদ বেশি হতো। কালের বিবর্তনে আবাদ কমে এসব ফসলের জায়গায় অন্য ফসল দখল করে নিয়েছে। তবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে চুয়াডাঙ্গায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা না থাকায় জেলার কৃষকেরা ক্যাশ ক্রপ হিসেবে সরিষার আবাদ করেছেন। আমন কাটার পর এই সময় জমি সাধারণত পড়ে থাকে। সরিষা আবাদ করে জমি ফেলে না রেখে কাজে লাগিয়েছেন কৃষকরা। সরিষা কর্তনের পর এই জমিতে আবার বোরো ধানের আবাদ করবেন কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩১০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে তিন হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ মৌসুমে সরিষার আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য মোটিভেট চালানো হয়। ফলে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, রোপা আউশ কাটার পর জমি ফেলে না রেখে তিনি ৫০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। লেবার, সার, সেচ ও জমি প্রস্তুত দিয়ে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই জমিতে সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এ বছর প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ সরিষা পাবেন। বর্তমান প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায়। তিনি আশা করেন, ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকায় সরিষা বিক্রয় করতে পারবেন। বাড়তি সময়ে সরিষা বিক্রি করে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যায়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাধীন দিগড়ী গ্রামের কৃষক আনসার আলী ও সহোদর ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমরা দুই ভাই মিলে চার বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করি। চুয়াডাঙ্গা সদর অফিস আমাদের ৫০ শতক, ৫০ শতক করে ১০০ শতকের জন্য প্রদর্শনী প্লটের সাথে সাইন বোর্ড ও সার, বীজ প্রদান করে। আমাদের সরিষার খেত অনেক ভালো হয়েছে। গত বছর ১৪ মণ সরিষা উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আরও বেশি হবে। সরিষা কাটার সময় হলেও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটা পায় নাই। সুবিধা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দামুড়হুদা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন জানান, জেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সরিষা আবাদের জন্য কৃষকদের আমরা মোটিভেট করছি। উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, আমন ধান কাটার আগে সর্বশেষ সেচ দেওয়ার সময় ধানের মধ্যে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সরিষা আবাদের কৃষকদের খরচ কম হয়। পরবর্তীতে একটি সেচ ও অল্প সার দিয়ে কৃষকরা দেড় হাজার বা দুই হাজার টাকা খরচের বিনিময়ে ৮-১০ হাজার হাজার অতিরিক্ত আয় করছেন।
সদর উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা আক্তার জানান, স্থানীয় জাত বিঘায় ২৩ মণ, টরি-৭ বিঘাতে ৩-৪ মন, বারি-১৪, বিনা-৯ বিঘাতে ৪৫ মণ সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, স্থানীয় জাত, বিনা-১৪ জাতের সরিষায় শতকরা ২৫ ভাগ, টরি-৭ সরিষায় শতকরা ৩০ ভাগ ও বারি-১৪ জাতের ১ মণ সরিষায় ১৩ থেকে ১৪ কেজি তেল পাওয়া যায়। সরিষা জাতভেদে উঠতে ৬০ দিন থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। জেলার আলমডাঙ্গার মাজুকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তার ব্লকে ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার রেহেনা পারভীন জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলায় গত বছর দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর দুই হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সরিষার চাষের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার শতকরা ৭১ ভাগ সরিষার আবাদ হয়েছে এই উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি-১৪। তিনি আরও জানান, এই মাঠে আমন ও বোরো মাঝখানে অন্য কোনো আবাদ হয় না। সরিষার জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কৃষকরা বেশি আবাদ করেছেন বারী -১৪ সরিষার। এর পর বারি-৯ ও বারি-১৫ সরিষার আবাদ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে। সরিষার জাতের মধ্যে বারী-১৪-১৭ বিনা ৪, ৯ এমনকি টরি (স্থানীয়) জাতের আবাদ হয়ে থাকে। বিশেষ করে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে ধান খেতের মধ্যে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে কৃষক আমনের ফলন পায় ও সেখান থেকে কৃষক সরিষায়ও পেয়ে থাকে। পরবর্তীতে ওই জমিতে কৃষক বোরো ধানের আবাদ করে।
তিনি আরও জানান, ল্যাবেল থেকে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। হেক্টর প্রতি সরিষার গড় উৎপাদন ১.৫ মেট্টিক টন হলে তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপন্ন হবে পাঁচ হাজার ২৭২ দশমিক ৫ মেট্টিক টন হবে। উৎপন্ন সরিষা থেকে তেল উৎপন্ন হবে দুই হাজার ১০৯ মেট্টিক টন। বাকিটা খৈল হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় লক্ষ্যমাত্রার বেশি সরিষার আবাদ

মেটানো সম্ভব হবে ভোজ্য তেলের চাহিদা : উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা

আপলোড টাইম : ০৬:৪৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার মাঠের পর মাঠ ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। সবুজ আর হলুদের মিতালীতে সেজেছে খেতগুলো। ফুলের ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছিরা প্রকৃতিকে আরও অপরূপ করে তুলছে। এসব সরিষা খেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকাল বেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধ করে তোলে। জেলায় বর্তমানে ধান, ভুট্টা, ফলমূল ও সবজির অঞ্চল নামে পরিচিত। জেলা ছোট হলেও এখানে মৌসুম ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার হেক্টর পর্যন্ত জমি ধান, ভুট্টা ও সবজির আবাদ হয়ে থাকে। এখানে এক সময় আখ, পাট, মসুর ও গমের আবাদ বেশি হতো। কালের বিবর্তনে আবাদ কমে এসব ফসলের জায়গায় অন্য ফসল দখল করে নিয়েছে। তবে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে চুয়াডাঙ্গায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে কোনো প্রাকৃতিক সমস্যা না থাকায় জেলার কৃষকেরা ক্যাশ ক্রপ হিসেবে সরিষার আবাদ করেছেন। আমন কাটার পর এই সময় জমি সাধারণত পড়ে থাকে। সরিষা আবাদ করে জমি ফেলে না রেখে কাজে লাগিয়েছেন কৃষকরা। সরিষা কর্তনের পর এই জমিতে আবার বোরো ধানের আবাদ করবেন কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৩১০ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে, দামুড়হুদা উপজেলায় ৩১০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে তিন হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ মৌসুমে সরিষার আবাদ হয়েছিল ২ হাজার ৮৩৬ হেক্টর জমিতে।
কৃষি অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, বিগত পাঁচ বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য মোটিভেট চালানো হয়। ফলে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক জানান, রোপা আউশ কাটার পর জমি ফেলে না রেখে তিনি ৫০ শতক জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা আবাদ করেছেন। লেবার, সার, সেচ ও জমি প্রস্তুত দিয়ে প্রায় ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই জমিতে সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এ বছর প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ মণ সরিষা পাবেন। বর্তমান প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩২০০ টাকায়। তিনি আশা করেন, ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকায় সরিষা বিক্রয় করতে পারবেন। বাড়তি সময়ে সরিষা বিক্রি করে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সরিষা কেটে আবার ওই জমিতে বোরোর আবাদ করা যায়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাধীন দিগড়ী গ্রামের কৃষক আনসার আলী ও সহোদর ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘আমরা দুই ভাই মিলে চার বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করি। চুয়াডাঙ্গা সদর অফিস আমাদের ৫০ শতক, ৫০ শতক করে ১০০ শতকের জন্য প্রদর্শনী প্লটের সাথে সাইন বোর্ড ও সার, বীজ প্রদান করে। আমাদের সরিষার খেত অনেক ভালো হয়েছে। গত বছর ১৪ মণ সরিষা উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আরও বেশি হবে। সরিষা কাটার সময় হলেও তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে যে সুবিধা পাওয়ার কথা, সেটা পায় নাই। সুবিধা না পাওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দামুড়হুদা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন জানান, জেলার মাটি সরিষা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সরিষা আবাদের জন্য কৃষকদের আমরা মোটিভেট করছি। উপজেলার নাটুদাহ ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তিনি জানান, আমন ধান কাটার আগে সর্বশেষ সেচ দেওয়ার সময় ধানের মধ্যে রিলে পদ্ধতিতে সরিষা আবাদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সরিষা আবাদের কৃষকদের খরচ কম হয়। পরবর্তীতে একটি সেচ ও অল্প সার দিয়ে কৃষকরা দেড় হাজার বা দুই হাজার টাকা খরচের বিনিময়ে ৮-১০ হাজার হাজার অতিরিক্ত আয় করছেন।
সদর উপজেলার সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তহমিনা আক্তার জানান, স্থানীয় জাত বিঘায় ২৩ মণ, টরি-৭ বিঘাতে ৩-৪ মন, বারি-১৪, বিনা-৯ বিঘাতে ৪৫ মণ সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, স্থানীয় জাত, বিনা-১৪ জাতের সরিষায় শতকরা ২৫ ভাগ, টরি-৭ সরিষায় শতকরা ৩০ ভাগ ও বারি-১৪ জাতের ১ মণ সরিষায় ১৩ থেকে ১৪ কেজি তেল পাওয়া যায়। সরিষা জাতভেদে উঠতে ৬০ দিন থেকে ১২০ দিন সময় লাগে। জেলার আলমডাঙ্গার মাজুকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তার ব্লকে ২৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৩০ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর ২২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার রেহেনা পারভীন জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলায় গত বছর দুই হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর দুই হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে সরিষার চাষের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতা করার কারণে সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার শতকরা ৭১ ভাগ সরিষার আবাদ হয়েছে এই উপজেলায়। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে বারি-১৪। তিনি আরও জানান, এই মাঠে আমন ও বোরো মাঝখানে অন্য কোনো আবাদ হয় না। সরিষার জাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কৃষকরা বেশি আবাদ করেছেন বারী -১৪ সরিষার। এর পর বারি-৯ ও বারি-১৫ সরিষার আবাদ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ব্যাপক ভুট্টার আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি সরিষার আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় সরিষা ভালো হয়েছে। উৎপাদনও ভালো হবে। সরিষার জাতের মধ্যে বারী-১৪-১৭ বিনা ৪, ৯ এমনকি টরি (স্থানীয়) জাতের আবাদ হয়ে থাকে। বিশেষ করে রিলে পদ্ধতিতে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমন ধান কাটার ১০-১৫ দিন পূর্বে ধান খেতের মধ্যে সরিষা বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এতে করে কৃষক আমনের ফলন পায় ও সেখান থেকে কৃষক সরিষায়ও পেয়ে থাকে। পরবর্তীতে ওই জমিতে কৃষক বোরো ধানের আবাদ করে।
তিনি আরও জানান, ল্যাবেল থেকে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। হেক্টর প্রতি সরিষার গড় উৎপাদন ১.৫ মেট্টিক টন হলে তিন হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা উৎপন্ন হবে পাঁচ হাজার ২৭২ দশমিক ৫ মেট্টিক টন হবে। উৎপন্ন সরিষা থেকে তেল উৎপন্ন হবে দুই হাজার ১০৯ মেট্টিক টন। বাকিটা খৈল হবে।