ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় পুত্র সন্তানের আশা, তিন মেয়ের পর আবারও কন্যাশিশুর জন্ম

তালাকের ভয়ে বাঁচ্চাকে অন্যকে দিয়ে গেলেন মা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুত্র সন্তানের আশায় পরপর চারবার কন্যাশিশু জন্ম নেওয়ায় হাসপাতালেই আরেক রোগীর স্বজনের কাছে বাঁচ্চা রেখে গেছেন পরিবারের লোকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। বিকেলে ঘটনাটি জানাজানি হলে অনেকেই ওই কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ওই শিশুটিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই রাখা হয়েছে। তবে ওই ফুটফুটে কন্যা শিশুটির পরিবারের পরিচয় জানা যায়নি। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিবারটির সঠিক পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার পর জরুরি বিভাগে এক প্রসূতিকে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা আলমডাঙ্গা উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন পরিচয়ে ওই প্রসূতিকে ভর্তি করেন। ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষেই একটি ফুটফুটে কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠ হয়। গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তিরত অবস্থায় এক রোগীর স্বজন আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়া গ্রামের বিলকিস বানু নামের এক নারীর কাছে দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান প্রসূতি ও সঙ্গে আসা স্বজনেরা।

খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী। পরে নবজাতকটি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা খাতুনের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা ওই নবজাতকের নামকরণ করেন ‘পুষ্প’। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছেন। বিলকিস বানু বলেন, ‘ওই প্রসূতির তিন মেয়ে আছে, চতুর্থ সন্তানও মেয়ে হওয়ায় বাঁচ্চাটিকে আমাকে দিয়ে তারা চলে যায়। ফুটফুটে মেয়েটিকে আমি দত্তক নিতে চাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, জরুরি বিভাগে ওই প্রসূতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি কন্যাশিশু জন্ম দেন। এক রোগীর স্বজনের কাছে জানতে পেরেছি, ওই দম্পতির তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। আবারও কন্যা সন্তান হলে স্বামী তালাক দেবে বলে জানিয়ে বাঁচ্চাকে ওই নারীর কাছে রেখে পালিয়ে গেছে তারা। আপাতত হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা খাতুনের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে নবজাতকটি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, ওই দম্পতি হাসপাতালে যে নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন, তা যাচাই করা হয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ছবি দেখে ওই নারী ও তার স্বজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, সদর হাসপাতালে রেখে যাওয়া কন্যাশিশুটিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানেই আপাতত তার পরিচর্যা হচ্ছে। মা ও পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও শিশুটির সর্বোত্তম কল্যাণের জন্য আইন এবং বিধি বিধান মেনে যতটুকু করা সম্ভব আমরা তা করব।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় পুত্র সন্তানের আশা, তিন মেয়ের পর আবারও কন্যাশিশুর জন্ম

তালাকের ভয়ে বাঁচ্চাকে অন্যকে দিয়ে গেলেন মা

আপলোড টাইম : ০৯:২৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পুত্র সন্তানের আশায় পরপর চারবার কন্যাশিশু জন্ম নেওয়ায় হাসপাতালেই আরেক রোগীর স্বজনের কাছে বাঁচ্চা রেখে গেছেন পরিবারের লোকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। বিকেলে ঘটনাটি জানাজানি হলে অনেকেই ওই কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ওই শিশুটিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই রাখা হয়েছে। তবে ওই ফুটফুটে কন্যা শিশুটির পরিবারের পরিচয় জানা যায়নি। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পরিবারটির সঠিক পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার পর জরুরি বিভাগে এক প্রসূতিকে আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা আলমডাঙ্গা উপজেলার কেষ্টপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী পাপিয়া খাতুন পরিচয়ে ওই প্রসূতিকে ভর্তি করেন। ৭টা ৪৫ মিনিটের দিকে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের কক্ষেই একটি ফুটফুটে কন্যাশিশু ভূমিষ্ঠ হয়। গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তিরত অবস্থায় এক রোগীর স্বজন আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়া গ্রামের বিলকিস বানু নামের এক নারীর কাছে দিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান প্রসূতি ও সঙ্গে আসা স্বজনেরা।

খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী। পরে নবজাতকটি সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা খাতুনের তত্ত্বাবধায়নে রাখা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা ওই নবজাতকের নামকরণ করেন ‘পুষ্প’। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই শিশুটিকে দত্তক নিতে চেয়েছেন। বিলকিস বানু বলেন, ‘ওই প্রসূতির তিন মেয়ে আছে, চতুর্থ সন্তানও মেয়ে হওয়ায় বাঁচ্চাটিকে আমাকে দিয়ে তারা চলে যায়। ফুটফুটে মেয়েটিকে আমি দত্তক নিতে চাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, জরুরি বিভাগে ওই প্রসূতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একটি কন্যাশিশু জন্ম দেন। এক রোগীর স্বজনের কাছে জানতে পেরেছি, ওই দম্পতির তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। আবারও কন্যা সন্তান হলে স্বামী তালাক দেবে বলে জানিয়ে বাঁচ্চাকে ওই নারীর কাছে রেখে পালিয়ে গেছে তারা। আপাতত হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা খাতুনের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে নবজাতকটি।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, ওই দম্পতি হাসপাতালে যে নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন, তা যাচাই করা হয়েছে। তারা ভুল তথ্য দিয়েছেন। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ছবি দেখে ওই নারী ও তার স্বজনদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, সদর হাসপাতালে রেখে যাওয়া কন্যাশিশুটিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে। সেখানেই আপাতত তার পরিচর্যা হচ্ছে। মা ও পরিবারের সদস্যদের শনাক্ত করে শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়াও শিশুটির সর্বোত্তম কল্যাণের জন্য আইন এবং বিধি বিধান মেনে যতটুকু করা সম্ভব আমরা তা করব।