ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, অভিভাবকদের ক্ষোভ!

তীব্র শীতের কারণে চুয়াডাঙ্গার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল প্রাথমিক স্কুল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করায় জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বন্ধ ছিল না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বিদ্যালয় বন্ধের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে গত বুধবার সকাল নয়টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও ওই দিন জেলার কোনো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়নি। পরে বুধবার রাতে জেলা শিক্ষা অফিস বৃহস্পতিবারের জন্য সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এসে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। অপরদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা ছিল আগের মতোই। তবে শীত ও বৃষ্টির কারণে এদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগের দিন রাতে স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় স্কুল খোলা ছিল আগের নিয়মেই।

দামুড়হুদার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে, তাতে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষজনই ঠিক মতো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এই তীব্র শীত ও কুয়াশা উপক্ষো করে শিশুরা কীভাবে স্কুলে যাবে? তারা তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’ সাবিনা খাতুন নামের অপর এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘যেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় কীভাবে খোলা থাকে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শিশু শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনার কথা শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেয়নি বলে বুধবারও আমার প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার নির্দেশনা পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি জে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা জেলা শিক্ষা অফিস দিয়েছিল না। তবে বুধবার রাতে নির্দেশনা পেয়ে রাতেই বৃহস্পতিবারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিলকিস জাহান বলেন, ‘টেলিভিশনে নির্দেশনার ব্যাপারে দেখেছিলাম। তবে জেলা শিক্ষা অফিস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় বুধবার বিদ্যালয় চালুই ছিল। রাতে মেসেজ পেয়ে বৃহস্পতিবারের জন্য বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি।’

চুয়াডাঙ্গার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চালু ছিল। তবে তীব্র শীত ও সকালের বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষাথীদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কথা উল্লেখ আছে। স্পষ্ট করে বলা আছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামেনি। সে জন্য এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিকের উপ-পরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহস্পতিবার জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সামনে সপ্তাহে তাপমাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল-কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ। এছাড়া গতকাল ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শেষ হয়। এসময় মোট ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি, অভিভাবকদের ক্ষোভ!

তীব্র শীতের কারণে চুয়াডাঙ্গার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও খোলা ছিল প্রাথমিক স্কুল

আপলোড টাইম : ০৯:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীতের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করায় জেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বন্ধ ছিল না প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। ফলে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, বিদ্যালয় বন্ধের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এর আগে গত বুধবার সকাল নয়টায় চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলেও ওই দিন জেলার কোনো মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়নি। পরে বুধবার রাতে জেলা শিক্ষা অফিস বৃহস্পতিবারের জন্য সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এসে তাদের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। অপরদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা ছিল আগের মতোই। তবে শীত ও বৃষ্টির কারণে এদিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগের দিন রাতে স্কুল বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান বন্ধ রাখা হয়। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় স্কুল খোলা ছিল আগের নিয়মেই।

দামুড়হুদার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে, তাতে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষজনই ঠিক মতো ঘর থেকে বের হতে পারছে না। এই তীব্র শীত ও কুয়াশা উপক্ষো করে শিশুরা কীভাবে স্কুলে যাবে? তারা তো অসুস্থ হয়ে যাবে।’ সাবিনা খাতুন নামের অপর এক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘যেখানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হচ্ছে, সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় কীভাবে খোলা থাকে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। শিশু শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’

চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের নির্দেশনার কথা শুনেছি। তবে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে নির্দেশনা দেয়নি বলে বুধবারও আমার প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার নির্দেশনা পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি (ভি জে) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা জেলা শিক্ষা অফিস দিয়েছিল না। তবে বুধবার রাতে নির্দেশনা পেয়ে রাতেই বৃহস্পতিবারের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

চুয়াডাঙ্গা আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা বিলকিস জাহান বলেন, ‘টেলিভিশনে নির্দেশনার ব্যাপারে দেখেছিলাম। তবে জেলা শিক্ষা অফিস এ ধরনের কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় বুধবার বিদ্যালয় চালুই ছিল। রাতে মেসেজ পেয়ে বৃহস্পতিবারের জন্য বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দিয়েছি।’

চুয়াডাঙ্গার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় চালু ছিল। তবে তীব্র শীত ও সকালের বৃষ্টিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষাথীদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কথা উল্লেখ আছে। স্পষ্ট করে বলা আছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে সাময়িক বন্ধের সিদ্ধান্ত হতে পারে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামেনি। সে জন্য এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।’

তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসক এবং মাধ্যমিকের উপ-পরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বৃহস্পতিবার জেলার সকল মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সামনে সপ্তাহে তাপমাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, শৈত্যপ্রবাহ ও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে স্কুল-কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর বাতাসের আর্দ্রতা ৯২ শতাংশ। এছাড়া গতকাল ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে শেষ হয়। এসময় মোট ১৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।