ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছয় বিভাগে বৃষ্টির শঙ্কা, আরো বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা

১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলে বন্ধ থাকবে স্কুল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৭১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে পুরো দেশ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। এর ফলে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বেশি বিপাকে। এক সপ্তাহ যাবৎ উত্তরাঞ্চল হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র শীতের দাপট চলছে। শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতকালীন বিভিন্ন রোগে। কষ্ট হচ্ছে স্কুলে যেতে। এরই প্রভাবে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামলে স্কুল পর্যায়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ বুধবার দক্ষিণাঞ্চল এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের ছয় বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বৃষ্টি গুঁড়িগুঁড়ি থেকে মাঝারি মাত্রার হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে সারা দেশেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও কুয়াশার দাপটের কারণে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। ভোর, সকাল কিংবা দুপুর গড়িয়ে বিকাল, কুয়াশার ভারি স্তর ভেদ করে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। রোদের স্বল্পতার কারণে দিনের বেলাতেও শীতের অনুভূতির তীব্রতায় কষ্ট বাড়ছে। অন্যদিকে আকাশে নিচুস্তরে মেঘের কারণে আটকে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশ জুড়ে শীতের তীব্রতার বিস্তার বাড়ছে। উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে নৌযান ও সড়কের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দেশের হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সূর্য তাপের অভাবে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা সোমবারের চেয়ে হ্রাস পায়। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আজ বুধবার ভোর ৪টার পর থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা অনেক বেশি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ওপরে সরে গেছে।
আরো বেশি দক্ষিণে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। ফলে পূর্বে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ওপরে বৃষ্টি শুরু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ওপরে দিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলেগুলোর ওপর দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশের সম্ভাবনা নির্দেশ করলেও গতকাল ১৬ জানুয়ারি সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দক্ষিণ ও ওড়িশা রাজ্যের ওপরে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ওপরে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত মূলত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপরে স্থানভেদে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত। এই বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আজ থেকে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার ৬টার মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আজ বুধবার গভীর বা ভোররাত থেকে খুলনা বিভাগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দিন আকাশ মেঘলা থাকবে। জানুয়ারি মাস জুড়ে কুয়াশা থাকবে। তবে ১৯ ও ২০ জানুয়ারির দিকে কুয়াশা কম থাকবে। এর মধ্যে আবার আজ, আগামীকাল ও ১৯ জানুয়ারি মেঘলা আকাশ থাকবে। কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা কমবে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, আজকালের এই বৃষ্টির কারণে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। তবে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল ১৮ জানুয়ারি রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হলে আবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাবে। কুয়াশার অবস্থা প্রায় একই থাকতে পারে। আজ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়—রাজশাহী, ঢাকা,খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা অথবা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আজ ১৭ জানুয়ারির পর সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে আজও দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির আগে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। আবার কোনো কোনো জায়গায় কুয়াশার পরিমাণটা কমে আসবে। মূলত বৃষ্টির কারণে বাতাসে শুষ্কভাব থাকবে। তবে শুষ্কভাব কেটে গেলে আবারও শীত পড়তে শুরু করবে। বিশেষ করে আগামী ২০ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা আবারও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোসাম্মৎ সালমা পারভীন বলেন, সপ্তাহব্যাপী টানা তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলায় থাকা চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে চলে গেলে ধানের চারাগাছ হলুদ হয়ে যেতে পারে, তখন তা খাদ্য তৈরি করতে পারবে না। চারা মরে যেতে পারে। চারা যাতে মরে না যায় সেজন্য স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে বাঁশের মাচার মতো তৈরি করে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক বিন হোসেন বলেন, রাতের তাপমাত্রা যখন ২০ ডিগ্রির নিচে চলে আসে ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য আর্দ্রতা ৮০ বা ৯০ পারসেন্ট হয়ে যায় তখন শীতকালীন ফসলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হয়। এ সময় মূলত আলু, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল চাষ হয়। ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়া এসব ফসলে রোগ বিস্তারের জন্য অনুকূল। তাই ফসল রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগের আক্রমণ এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, নতুবা ব্যাপক ফসলহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ:
যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মর্মে জানা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে যে সব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে গেলে আঞ্চলিক উপপরিচালকগণ ঐ সব জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ্ব না হওয়া পর্যন্ত) রাখার নির্দেশনা প্রদান করবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতেও অনুরূপ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ছয় বিভাগে বৃষ্টির শঙ্কা, আরো বাড়তে পারে শীতের তীব্রতা

১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা নামলে বন্ধ থাকবে স্কুল

আপলোড টাইম : ০৮:৫৩:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদন:
কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে পুরো দেশ। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত জনজীবন। এর ফলে খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছে বেশি বিপাকে। এক সপ্তাহ যাবৎ উত্তরাঞ্চল হয়ে মধ্যাঞ্চল, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত তীব্র শীতের দাপট চলছে। শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হচ্ছে শীতকালীন বিভিন্ন রোগে। কষ্ট হচ্ছে স্কুলে যেতে। এরই প্রভাবে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নামলে স্কুল পর্যায়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আজ বুধবার দক্ষিণাঞ্চল এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার দেশের ছয় বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বৃষ্টি গুঁড়িগুঁড়ি থেকে মাঝারি মাত্রার হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, গতকাল মঙ্গলবার সকালে সারা দেশেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকলেও কুয়াশার দাপটের কারণে ঠান্ডা জেঁকে বসেছে। ভোর, সকাল কিংবা দুপুর গড়িয়ে বিকাল, কুয়াশার ভারি স্তর ভেদ করে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। রোদের স্বল্পতার কারণে দিনের বেলাতেও শীতের অনুভূতির তীব্রতায় কষ্ট বাড়ছে। অন্যদিকে আকাশে নিচুস্তরে মেঘের কারণে আটকে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমা। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় দেশ জুড়ে শীতের তীব্রতার বিস্তার বাড়ছে। উড়োজাহাজ থেকে শুরু করে নৌযান ও সড়কের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। দেশের হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল সূর্য তাপের অভাবে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা সোমবারের চেয়ে হ্রাস পায়। রাজধানীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আজ বুধবার ভোর ৪টার পর থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে তা অনেক বেশি দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের ওপরে সরে গেছে।
আরো বেশি দক্ষিণে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। ফলে পূর্বে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ওপরে বৃষ্টি শুরু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ওপরে দিয়ে বাংলাদেশের রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের জেলেগুলোর ওপর দিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশের সম্ভাবনা নির্দেশ করলেও গতকাল ১৬ জানুয়ারি সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দক্ষিণ ও ওড়িশা রাজ্যের ওপরে। সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ওপরে সামান্য পরিমাণ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টিপাত মূলত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে খুলনা বিভাগ ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ওপরে স্থানভেদে সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০ থেকে ৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত। এই বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আজ থেকে ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার ৬টার মধ্যে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আজ বুধবার গভীর বা ভোররাত থেকে খুলনা বিভাগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কয়েক দিন আকাশ মেঘলা থাকবে। জানুয়ারি মাস জুড়ে কুয়াশা থাকবে। তবে ১৯ ও ২০ জানুয়ারির দিকে কুয়াশা কম থাকবে। এর মধ্যে আবার আজ, আগামীকাল ও ১৯ জানুয়ারি মেঘলা আকাশ থাকবে। কুয়াশা কেটে গেলে রাতের তাপমাত্রা কমবে।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, আজকালের এই বৃষ্টির কারণে আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। তবে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল ১৮ জানুয়ারি রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা বৃষ্টি বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। তিনি বলেন, বৃষ্টির পর আকাশ পরিষ্কার হলে আবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাবে। কুয়াশার অবস্থা প্রায় একই থাকতে পারে। আজ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়—রাজশাহী, ঢাকা,খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে হালকা অথবা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আজ ১৭ জানুয়ারির পর সারা দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে আজও দেশের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টির আগে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। আবার কোনো কোনো জায়গায় কুয়াশার পরিমাণটা কমে আসবে। মূলত বৃষ্টির কারণে বাতাসে শুষ্কভাব থাকবে। তবে শুষ্কভাব কেটে গেলে আবারও শীত পড়তে শুরু করবে। বিশেষ করে আগামী ২০ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা আবারও কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোসাম্মৎ সালমা পারভীন বলেন, সপ্তাহব্যাপী টানা তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে বীজতলায় থাকা চারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে চলে গেলে ধানের চারাগাছ হলুদ হয়ে যেতে পারে, তখন তা খাদ্য তৈরি করতে পারবে না। চারা মরে যেতে পারে। চারা যাতে মরে না যায় সেজন্য স্বচ্ছ সাদা পলিথিন দিয়ে বাঁশের মাচার মতো তৈরি করে বীজতলা ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ফারুক বিন হোসেন বলেন, রাতের তাপমাত্রা যখন ২০ ডিগ্রির নিচে চলে আসে ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য আর্দ্রতা ৮০ বা ৯০ পারসেন্ট হয়ে যায় তখন শীতকালীন ফসলে বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হয়। এ সময় মূলত আলু, ডাল ও তেল জাতীয় ফসল চাষ হয়। ঠান্ডা ও ভেজা আবহাওয়া এসব ফসলে রোগ বিস্তারের জন্য অনুকূল। তাই ফসল রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগের আক্রমণ এড়াতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, নতুবা ব্যাপক ফসলহানি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ:
যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে গতকাল শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হচ্ছে। চলমান শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে মর্মে জানা যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে যে সব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণক অনুযায়ী) নেমে গেলে আঞ্চলিক উপপরিচালকগণ ঐ সব জেলার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ বন্ধ (সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তদূর্ধ্ব না হওয়া পর্যন্ত) রাখার নির্দেশনা প্রদান করবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতেও অনুরূপ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।