ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বশির মাজমাদার, আনোয়ার জাহিদ ও আব্দুল হাইয়ের পর এবার কে?

মন্ত্রী না পাওয়ার হতাশা ঝিনাইদহবাসীর!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহে ডাকসাইটে, প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্ববান নেতার অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত জেলার মানুষ। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার বেদনা তাই জেলাবাসীর মনে গভীর দাগ কেটেেেছ। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিত ডাকসাইটে কোনো ব্যক্তি ঝিনাইদহ জেলা থেকে এমপি না হলেও মন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সেই জায়গা থেকে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীপরিষদে ঝিনাইদহবাসী একজন মন্ত্রী আশা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে।

১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন মিয়াজীর ছেলে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ্ উদ্দিন মিয়াজী মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই পাবেন এমন আশা ছিল ঝিনাইদহবাসীসহ নেতা-কর্মীদের মনে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা ও অভিজ্ঞতার জায়গা খেকে তিনি মন্ত্রী হবেন এমনটা ভাবনা ছিল ঝিনাইদহবাসীর। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলও মন্ত্রী পরিষদে ঠাই পাওয়ার দাবিদার বলে অনেকে মনে করেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই এই দাবি ও জেলাবাসীর চাওয়া পাওয়ার বাইরে নন। তিনি এই লাইনে বেশ অভিজ্ঞ।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম ঝিনাইদহ থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিত্ব লাভ করেন ঝিনাইদহের কৃতী সন্তান বশির উদ্দিন মাজমাদার। তিনি সে সময়ে পাকিস্তান সরকারের পূর্ত, সেচ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালায়ের দায়িত্ব পেয়েই নিজের জেলায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সে সময় তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, মোবারকগঞ্জ চিনিকল, যশোর শিক্ষা বোর্ড, ঝিনাইদহ শহরে বিদ্যুতায়ন, কেসি কলেজকে ডিগ্রিতে উন্নীতকরণ, ঝিনাইদহ-যশোর সড়কসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে উন্নায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বশির মাজমাদারের প্রায় ২৫ বছর পর ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহের আরেক কৃতী সন্তান বিশিষ্ট সাংবাদিক আনোয়ার জাহিদ এরশাদ সরকারের তথ্য ও শ্রম মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আনোয়ার জাহিদের পর অনেকের আশা ছিল বিএনপি নেতা মসিউর রহমান মন্ত্রিত্ব লাভ করবেন। কিন্তু হয়নি।

২৫ বছর পর নবম জাতীয় সংসদের শেষ বছরে ২০১২ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বর্ষিয়ান নেতা ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। এরপর তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলেও ঝিনাইদহবাসীর মন্ত্রিত্ব পাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। আর মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় ঝিনাইদহবাসীর অনেক চাওয়া-পাওয়া অপূরণ রয়ে গেছে। দুর্বল নেতৃত্ব আর সংসদে প্রভাব না থাকায় মেডিকেল কলেজ ও রেললাইন স্থাপন হয়নি। অথচ মেডিকেল কলেজ হওয়ার জন্য সব সহযোগী প্রতিষ্ঠান করেছিলেন সাবেক সাংসদ মসিউর রহমান। এবার ঝিনাইদহবাসীর দাবি, জেলা শহরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর বঙ্গের রেল যোগাযোগ, মেডিকেল কলেজ ও দত্তনগর কৃষি ফার্ম এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মো. সালাহ্ উদ্দীন মিয়াজী একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর পিতা মঈন উদ্দীন মিয়াজীও এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সেই বিবেচনায় আমরা ঝিনাইদহবাসী তার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার অন্যতম দাবিদার। আশা করি, মন্ত্রী পরিষদ সম্প্রাসারিত হলে তিনি মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।’

ঝিনাইদহের বিশিষ্ট সুধীজন ও মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে ঝিনাইদহবাসী মন্ত্রিত্ব থেকে যেমন বঞ্চিত, একইভাবে উন্নায়ন থেকেও বঞ্চিত। নতুন সরকারে ঝিনাইদহ জেলাসহ বৃহত্তর যশোর জেলা থেকে কেউ মন্ত্রীসভায় স্থান পাননি। ঝিনাইদহে সরকারের মন্ত্রীসভায় সদস্য থাকলে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি রেললাইন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হতো।

ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচিত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহারিয়ার জাহেদী মহুলকে মন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নাসের শাহারিয়ার জাহেদী মহুল একজন সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁকে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীকেও মন্ত্রিত্ব দেয়ার পক্ষে মত দেন। এদিকে, নতুন মন্ত্রীসভায় মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় ঝিনাইদহবাসীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দিচ্ছেন তিনি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বশির মাজমাদার, আনোয়ার জাহিদ ও আব্দুল হাইয়ের পর এবার কে?

মন্ত্রী না পাওয়ার হতাশা ঝিনাইদহবাসীর!

আপলোড টাইম : ১১:৫৮:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহে ডাকসাইটে, প্রভাবশালী ও ব্যক্তিত্ববান নেতার অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই মন্ত্রী পাওয়া থেকে বঞ্চিত জেলার মানুষ। মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার বেদনা তাই জেলাবাসীর মনে গভীর দাগ কেটেেেছ। সদ্য সমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিচিত ডাকসাইটে কোনো ব্যক্তি ঝিনাইদহ জেলা থেকে এমপি না হলেও মন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। সেই জায়গা থেকে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগের মন্ত্রীপরিষদে ঝিনাইদহবাসী একজন মন্ত্রী আশা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেই আশা দূরাশায় পরিণত হয়েছে।

১৯৭৩ সালে ঝিনাইদহ-৩ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন মিয়াজীর ছেলে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.) সালাহ্ উদ্দিন মিয়াজী মন্ত্রী পরিষদে ঠাঁই পাবেন এমন আশা ছিল ঝিনাইদহবাসীসহ নেতা-কর্মীদের মনে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা ও অভিজ্ঞতার জায়গা খেকে তিনি মন্ত্রী হবেন এমনটা ভাবনা ছিল ঝিনাইদহবাসীর। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুলও মন্ত্রী পরিষদে ঠাই পাওয়ার দাবিদার বলে অনেকে মনে করেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুল হাই এই দাবি ও জেলাবাসীর চাওয়া পাওয়ার বাইরে নন। তিনি এই লাইনে বেশ অভিজ্ঞ।

তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, এর আগে ১৯৬২ সালে সর্বপ্রথম ঝিনাইদহ থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগ থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রিত্ব লাভ করেন ঝিনাইদহের কৃতী সন্তান বশির উদ্দিন মাজমাদার। তিনি সে সময়ে পাকিস্তান সরকারের পূর্ত, সেচ ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালায়ের দায়িত্ব পেয়েই নিজের জেলায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান করে স্মরণীয় হয়ে আছেন। সে সময় তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, মোবারকগঞ্জ চিনিকল, যশোর শিক্ষা বোর্ড, ঝিনাইদহ শহরে বিদ্যুতায়ন, কেসি কলেজকে ডিগ্রিতে উন্নীতকরণ, ঝিনাইদহ-যশোর সড়কসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে উন্নায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বশির মাজমাদারের প্রায় ২৫ বছর পর ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহের আরেক কৃতী সন্তান বিশিষ্ট সাংবাদিক আনোয়ার জাহিদ এরশাদ সরকারের তথ্য ও শ্রম মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আনোয়ার জাহিদের পর অনেকের আশা ছিল বিএনপি নেতা মসিউর রহমান মন্ত্রিত্ব লাভ করবেন। কিন্তু হয়নি।

২৫ বছর পর নবম জাতীয় সংসদের শেষ বছরে ২০১২ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বর্ষিয়ান নেতা ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। এরপর তিনটি সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলেও ঝিনাইদহবাসীর মন্ত্রিত্ব পাওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। আর মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় ঝিনাইদহবাসীর অনেক চাওয়া-পাওয়া অপূরণ রয়ে গেছে। দুর্বল নেতৃত্ব আর সংসদে প্রভাব না থাকায় মেডিকেল কলেজ ও রেললাইন স্থাপন হয়নি। অথচ মেডিকেল কলেজ হওয়ার জন্য সব সহযোগী প্রতিষ্ঠান করেছিলেন সাবেক সাংসদ মসিউর রহমান। এবার ঝিনাইদহবাসীর দাবি, জেলা শহরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর বঙ্গের রেল যোগাযোগ, মেডিকেল কলেজ ও দত্তনগর কৃষি ফার্ম এলাকায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেন, ‘ঝিনাইদহ-৩ আসন থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সামরিক সচিব মো. সালাহ্ উদ্দীন মিয়াজী একজন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁর পিতা মঈন উদ্দীন মিয়াজীও এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সেই বিবেচনায় আমরা ঝিনাইদহবাসী তার মন্ত্রিত্ব পাওয়ার অন্যতম দাবিদার। আশা করি, মন্ত্রী পরিষদ সম্প্রাসারিত হলে তিনি মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।’

ঝিনাইদহের বিশিষ্ট সুধীজন ও মানবাধিকার কর্মী অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান টুকু বলেন, এক দশকের বেশি সময় ধরে ঝিনাইদহবাসী মন্ত্রিত্ব থেকে যেমন বঞ্চিত, একইভাবে উন্নায়ন থেকেও বঞ্চিত। নতুন সরকারে ঝিনাইদহ জেলাসহ বৃহত্তর যশোর জেলা থেকে কেউ মন্ত্রীসভায় স্থান পাননি। ঝিনাইদহে সরকারের মন্ত্রীসভায় সদস্য থাকলে জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি রেললাইন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হতো।

ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচিত জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেডিয়েন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসের শাহারিয়ার জাহেদী মহুলকে মন্ত্রী করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, নাসের শাহারিয়ার জাহেদী মহুল একজন সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁকে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীকেও মন্ত্রিত্ব দেয়ার পক্ষে মত দেন। এদিকে, নতুন মন্ত্রীসভায় মন্ত্রিত্ব না পাওয়ায় ঝিনাইদহবাসীর মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দিচ্ছেন তিনি।