ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে গরম কাপড় বেচাকেনা

অন্যবারের তুলনায় পোশাকের দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতাদের

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৮ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকেই হাড় কাপানো শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতের শুরু থেকেই শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে দোকানিরা শীত বস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। গতকাল সোমবার মাঘের প্রথম দিনে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় সারাদিনে সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আর শীত নিবারণে তাই নিম্ন আয়ের মানুুষেরা কম দামে শীতের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন শহরের নিক্সন পট্টিসহ (পুরাতন কাপড়ের দোকান) ফুটপাতের দোকানগুলোতে। খুঁজে নিচ্ছেন সাধ্যের মধ্যে গরম কাপড়।

গতকাল সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশু, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে দোকানগুলোতে। চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেট, বড় বাজার পুরাতন গলির মার্কেট, পোস্ট অফিসের সামনে, কোর্ট মোড় থেকে শুরু করে রেলবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন পোশাকের দোকান এখন শীতপোশাক ও পোশাক বিক্রেতাদের দখলে। বিভিন্ন হকারেরা মোজা, হাতমোজা, টুপি, মাফলারসহ বিভিন্ন ছোঠ-বড় শীতের পোশাকে সাজিয়েছেন তাঁদের ভ্রাম্যমাণ দোকান। আবার শহরের বড় বড় দোকানগুলোতে মিলছে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, কার্ডিগান, শাল, চাদর, হাতমোজা, কান টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড়। খুব কম দামে পাওয়া না গেলেও এ বছর শীতবস্ত্র ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

কথা হয় চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় নিক্সন পট্টিতে পরিবার নিয়ে শীতের পোশাক কিনতে আসা জবেদা বেগম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাঁচ্চাদের ও নিজের জন্য গরম কাপড় কিনব। বৃদ্ধ মায়ের জন্য হাতমোজা, পা মোজা নেব। শহরের বড় দোকানগুলোতেও গিয়েছি প্রথমে, কিন্তু সাধ্যের মধ্যে ভালো পোশাক পাওয়া মুশকিল। যে কারণে এসেছি নিক্সন পট্টিতে। এখানে পুরাতন কাপড় মানভেদে কোনটা ১০০ টাকা আবার কোনটা ২০০ টাকাও চাচ্ছে।’

শহরের নিউ মার্কেট, আব্দুল্লাহ সিটি ও পুরাতন গলির বাজার ঘুরেও শীতবস্ত্রের কেনা-বেচা দেখা যায়। কথা হয় মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নামের আরও এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, দুই মেয়ে, স্ত্রী ও পিতার জন্য শীতের পোশাক কিনতে এসেছেন তিনি। ইতঃমধ্যে দুই মেয়ের জন্য গরম পোশাক কেনাও হয়েছে তাঁর। তবে স্ত্রী ও পিতার জন্য পোশাক কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে। পছন্দ মতো পোশাক মেলানো মুশকিল হয়ে পড়েছে, বেশিরভাগ দোকানে নারী ও বৃদ্ধদের পোশাক খুবই কম, তবে তরুণ ও যুবকদের জন্য পোশাকের কোনো কমতি নেই।

সেখানে কথা হয় আরও একজন ক্রেতা সাদিকুর ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, শীতের শুরুতে নিজের জন্য একটি নতুন জ্যাকেট কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন বছরে শীতের দাপট বাড়ায় আরও একটি জ্যাকেট ও হুডি কিনতে এসেছেন তিনি। তবে শো-রুম ও বাজারের বিভিন্ন দোকানে গত বছরের তুলনায় দাম অনেক বেশি।

শহরে ফেরি করে বেড়ানো সজিব হোসেন নামের এক হকার বলেন, ‘আমার বাড়ি খুলনা জেলায়। শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় শীত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ফেরি করে বিভিন্ন শীতবস্ত্র বিক্রি করি। এবছর ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে গত শীতে মানুষ যে দামে গরম কাপড় কিনেছে, এবার তা পাবে না। কারণ গতবারের চেয়ে সব কাপড়ের দাম বেশি ধরছেন পাইকাররা। কাল (আজ সোমবার) মাঘ মাসের শুরু, শীত বাড়লে বিক্রি আরও কিছুটা বাড়বে।’

দোকানিরা বলছেন, শীতের শুরুতে খুব একটা বেচা-কেনা না হলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বেচা-কেনা বেড়েছে। সব থেকে ভালো বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের জ্যাকেট, টুপি, হুডিসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র। গত বছরের তুলনায় ঢাকা পাইকাররা সব পোশাকের দাম বাড়িয়েছে। নতুন ডিজাইনের পোশাকের দাম একটু বেশি।

দামুড়হুদার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, ‘শীত পড়ে পর্যন্ত বেচাবিক্রি কম ছিল। কিন্তু দুই-তিন দিন ধরে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আমার কাছে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৫ শ টাকার জ্যাকেট সোয়েটার আছে। কয়েকদিন আগে প্রতিদিন বিক্রি হত ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এ দুদিন ধরে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে মোকামে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। আমার কাছে যা আছে তাই বিক্রি করছি।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোকসানা মিতা বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন আগে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩ হাজার ৬৯৫টি কম্বল বিতরণ করেছি। আজ থেকে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবদের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হবে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। সূর্যের আলো ও তাপ ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত না পৌঁছানোর কারণে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও দুদিন কুয়াশা থাকবে। ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে কুয়াশা কেটে যাবে। এসময় তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলেও সূর্যের তাপে শীত কম অনুভূত হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে গরম কাপড় বেচাকেনা

অন্যবারের তুলনায় পোশাকের দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতাদের

আপলোড টাইম : ১০:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় পৌষের মাঝামাঝি সময় থেকেই হাড় কাপানো শীত পড়তে শুরু করেছে। আর শীতের শুরু থেকেই শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে দোকানিরা শীত বস্ত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। গতকাল সোমবার মাঘের প্রথম দিনে এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় সারাদিনে সূর্যের দেখা না মেলায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আর শীত নিবারণে তাই নিম্ন আয়ের মানুুষেরা কম দামে শীতের পোশাক কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন শহরের নিক্সন পট্টিসহ (পুরাতন কাপড়ের দোকান) ফুটপাতের দোকানগুলোতে। খুঁজে নিচ্ছেন সাধ্যের মধ্যে গরম কাপড়।

গতকাল সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শিশু, নারী-পুরুষসহ সব বয়সের মানুষের শীতের পোশাক রয়েছে দোকানগুলোতে। চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেট, বড় বাজার পুরাতন গলির মার্কেট, পোস্ট অফিসের সামনে, কোর্ট মোড় থেকে শুরু করে রেলবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন পোশাকের দোকান এখন শীতপোশাক ও পোশাক বিক্রেতাদের দখলে। বিভিন্ন হকারেরা মোজা, হাতমোজা, টুপি, মাফলারসহ বিভিন্ন ছোঠ-বড় শীতের পোশাকে সাজিয়েছেন তাঁদের ভ্রাম্যমাণ দোকান। আবার শহরের বড় বড় দোকানগুলোতে মিলছে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, মাফলার, কার্ডিগান, শাল, চাদর, হাতমোজা, কান টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড়। খুব কম দামে পাওয়া না গেলেও এ বছর শীতবস্ত্র ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

কথা হয় চুয়াডাঙ্গা কোর্ট মোড় নিক্সন পট্টিতে পরিবার নিয়ে শীতের পোশাক কিনতে আসা জবেদা বেগম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাঁচ্চাদের ও নিজের জন্য গরম কাপড় কিনব। বৃদ্ধ মায়ের জন্য হাতমোজা, পা মোজা নেব। শহরের বড় দোকানগুলোতেও গিয়েছি প্রথমে, কিন্তু সাধ্যের মধ্যে ভালো পোশাক পাওয়া মুশকিল। যে কারণে এসেছি নিক্সন পট্টিতে। এখানে পুরাতন কাপড় মানভেদে কোনটা ১০০ টাকা আবার কোনটা ২০০ টাকাও চাচ্ছে।’

শহরের নিউ মার্কেট, আব্দুল্লাহ সিটি ও পুরাতন গলির বাজার ঘুরেও শীতবস্ত্রের কেনা-বেচা দেখা যায়। কথা হয় মুদি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন নামের আরও এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জানান, দুই মেয়ে, স্ত্রী ও পিতার জন্য শীতের পোশাক কিনতে এসেছেন তিনি। ইতঃমধ্যে দুই মেয়ের জন্য গরম পোশাক কেনাও হয়েছে তাঁর। তবে স্ত্রী ও পিতার জন্য পোশাক কিনতে বেগ পেতে হচ্ছে। পছন্দ মতো পোশাক মেলানো মুশকিল হয়ে পড়েছে, বেশিরভাগ দোকানে নারী ও বৃদ্ধদের পোশাক খুবই কম, তবে তরুণ ও যুবকদের জন্য পোশাকের কোনো কমতি নেই।

সেখানে কথা হয় আরও একজন ক্রেতা সাদিকুর ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, শীতের শুরুতে নিজের জন্য একটি নতুন জ্যাকেট কিনেছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন বছরে শীতের দাপট বাড়ায় আরও একটি জ্যাকেট ও হুডি কিনতে এসেছেন তিনি। তবে শো-রুম ও বাজারের বিভিন্ন দোকানে গত বছরের তুলনায় দাম অনেক বেশি।

শহরে ফেরি করে বেড়ানো সজিব হোসেন নামের এক হকার বলেন, ‘আমার বাড়ি খুলনা জেলায়। শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় শীত মৌসুমে চুয়াডাঙ্গায় ফেরি করে বিভিন্ন শীতবস্ত্র বিক্রি করি। এবছর ভালোই বিক্রি হচ্ছে। তবে গত শীতে মানুষ যে দামে গরম কাপড় কিনেছে, এবার তা পাবে না। কারণ গতবারের চেয়ে সব কাপড়ের দাম বেশি ধরছেন পাইকাররা। কাল (আজ সোমবার) মাঘ মাসের শুরু, শীত বাড়লে বিক্রি আরও কিছুটা বাড়বে।’

দোকানিরা বলছেন, শীতের শুরুতে খুব একটা বেচা-কেনা না হলেও ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বেচা-কেনা বেড়েছে। সব থেকে ভালো বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের জ্যাকেট, টুপি, হুডিসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র। গত বছরের তুলনায় ঢাকা পাইকাররা সব পোশাকের দাম বাড়িয়েছে। নতুন ডিজাইনের পোশাকের দাম একটু বেশি।

দামুড়হুদার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী জয়নাল বলেন, ‘শীত পড়ে পর্যন্ত বেচাবিক্রি কম ছিল। কিন্তু দুই-তিন দিন ধরে ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আমার কাছে সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে ৫ শ টাকার জ্যাকেট সোয়েটার আছে। কয়েকদিন আগে প্রতিদিন বিক্রি হত ৫ হাজার টাকা। কিন্তু এ দুদিন ধরে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে মোকামে মাল পাওয়া যাচ্ছে না। আমার কাছে যা আছে তাই বিক্রি করছি।’

দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোকসানা মিতা বলেন, ‘আমরা কয়েকদিন আগে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩ হাজার ৬৯৫টি কম্বল বিতরণ করেছি। আজ থেকে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেবদের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হবে।’

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের দেখা মিলছে না। সূর্যের আলো ও তাপ ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত না পৌঁছানোর কারণে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও দুদিন কুয়াশা থাকবে। ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলে কুয়াশা কেটে যাবে। এসময় তাপমাত্রা কিছুটা কমে এলেও সূর্যের তাপে শীত কম অনুভূত হবে।’