ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টানা ৪র্থ বার এমপি নির্বাচিত হলেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও টগর

দুটি আসনে ভোট পড়েছে ৪৯ ও ৪৬ শতাংশ, প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১৬০ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসনে টানা চতুর্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও আলী আজগার টগর। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পরে ভোট গণণা শেষে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৬৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭৬৮ ভোট। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলী আজগার টগর ১ লাখ ৭ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাসেম রেজা পেয়েছেন ৬০ হাজার ৮৩৪ ভোট।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল রোববার সকাল থেকেই দুটি আসনের ৩৫৪টি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে শুরু করেন ভোটাররা। তবে কয়েকটি কেন্দ্র বাদে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। অন্যান্যবার ভোটের সময় ভোটারদের যে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে, এবারের ভোটে সে চিত্র খুব একটা দেখা যায়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রদত্ত ভোটের হার ৪৯ শতাংশ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ৪৬ শতাংশ। প্রতিটি কেন্দ্রে উপস্থিত ছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি ছিল র‌্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ। সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদেরও। সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা এবং পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গতকাল সকাল ৮টার পরপরই চুয়াডাঙ্গা একাডেমী বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট দেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমীর ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। অপর দিকে, সকাল সোয়া ৮টার দিকে বুজরুকগড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাটকেন্দ্রে স্বস্ত্রীক ভোট প্রদান করেন ফ্রিজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক।

চুয়াডাঙ্গা-১ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কয়েকটি কেন্দ্রে ধীরে ধীরে ভোটাররা আসতে শুরু করেন। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বেলা গড়ালেও ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক দেখা যায়নি। দুপুর পর্যন্ত অল্প সংখ্যক নারী ভোটারের লাইন চোখে পড়লেও কয়েকটি কেন্দ্র বাদে সব কেন্দ্রেই চোখে পড়ার মতো ভোটারদের লাইন দেখা যায়নি। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। টহলে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও নির্বাহী এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ভোটগণণা শেষে রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ফলাফল ঘোষণা করেন। সময় পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণ ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোতাওয়াক্কিল রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি ফলাফলে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৬৬টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭৬৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক খান ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৯ হাজার ১৮০, এম এ শহিদুর রহমান পেয়েছেন ৯৫৮ ভোট, জাতীয় পার্টির মো. সোহরাব হোসেন পেয়েছেন ৫৭১ ভোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী পেয়েছেন ৫৪০ ভোট।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৩টি। বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ৫৩৪টি। ভোট পড়েছে ৪৯ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির অ্যাড. সোহরাব হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, এম এ রাজ্জাক খান, এম শহিদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫৭৪ ভোট, এম এ রাজ্জাক খান পেয়েছেন ৩১ হাজার ৫০৮ ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা পেয়েছেন ২২ হাজার ৮২৯ ভোট। আলমডাঙ্গা উপজেলায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৬৯২ ভোট, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৩৯ ভোট ও এম এ রাজ্জাক খান পেয়েছেন ২৭ হাজার ৬৭২ ভোট।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আলী আজগার টগর ১ লাখ ৭ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসেম রেজা (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৬০ হাজার ৮৩৪ ভোট। আর আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহারিয়ার মাহমুদ লণ্টু পেয়েছেন ২৯ হাজার ৭৫১ ভোট, জাকের পার্টির মো. আব্দুল লতিফ খান গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে মো. নুর হাকিম পেয়েছেন ২ হাজার ৬৫১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল মল্লিক ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮২৯টি, জাতীয় পার্টির মো. রবিউল ইসলাম পেয়েছেন ৭৭৮টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৩০টি ভোট ও জাসদের দেওয়ান মো. ইয়াছিন উল্লাহ মশাল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২১১ ভোট। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০। ভোট পড়েছে ৪৬ শতাংশ। বৈধ ভোট পড়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮১৪টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৯টি।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করছিলেন। তবে জাতীয় পার্টি ও জাসদের (ইনু) প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে থাকা ৭ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলী আজগার টগর (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু (ঢেঁকি) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবু হাশেম রেজার (ট্রাক), নুর হাকিম (ঈগল), জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক (ফ্রিজ), জেলা জাকের পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান (গোলাপ ফুল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী (আম)।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জীবননগর উপজেলায় জাসদের দেওয়ান মোহাম্মদ ইয়াছিন উল্লাহ (মশাল) পেয়েছেন ৬৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল মল্লিক (ফ্রিজ) ৫২৭, স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু (ঢেঁকি) ১৪ হাজার ৬৫২, জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খান (গোলাপ ফুল) ৬৬৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাসেম রেজা (ট্রাক) ৮ হাজার ৬০৪, আওয়ামী লীগের আলী আজগার টগর (নৌকা) ৩৪ হাজার ৪১৭, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরী (আম) ১২৩, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর হাকিম (ঈগল) ৩০৭ ও জাতীয় পার্টির রবিউল ইসলাম (লাঙল) ৩৬৪ ভোট পেয়েছেন।
এর আগে, জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং নিরপেক্ষ করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসরা তৎপর রয়েছে। সকলের সহযোগিতায় ভোটের পরিবেশ সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ভোট শুরুর পর থেকে প্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুতই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা গেছে। সবমিলিয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করায় প্রার্থী, সমর্থক এবং ভোটারদের প্রতি ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮১টি এবং চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। সব কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

টানা ৪র্থ বার এমপি নির্বাচিত হলেন ছেলুন জোয়ার্দ্দার ও টগর

দুটি আসনে ভোট পড়েছে ৪৯ ও ৪৬ শতাংশ, প্রশাসন-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা

আপলোড টাইম : ০২:৪৮:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসনে টানা চতুর্থ বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও আলী আজগার টগর। গতকাল রোববার সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণের মূল আনুষ্ঠানিকতা। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া চুয়াডাঙ্গার দুটি আসনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। পরে ভোট গণণা শেষে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৬৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭৬৮ ভোট। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আলী আজগার টগর ১ লাখ ৭ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাসেম রেজা পেয়েছেন ৬০ হাজার ৮৩৪ ভোট।

এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল রোববার সকাল থেকেই দুটি আসনের ৩৫৪টি কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে শুরু করেন ভোটাররা। তবে কয়েকটি কেন্দ্র বাদে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই ভোটার উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। অন্যান্যবার ভোটের সময় ভোটারদের যে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে, এবারের ভোটে সে চিত্র খুব একটা দেখা যায়নি। তবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে প্রদত্ত ভোটের হার ৪৯ শতাংশ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ৪৬ শতাংশ। প্রতিটি কেন্দ্রে উপস্থিত ছিল পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশের পাশাপাশি ছিল র‌্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যরা। দায়িত্ব পালন করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ। সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদেরও। সকাল থেকেই বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা এবং পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গতকাল সকাল ৮টার পরপরই চুয়াডাঙ্গা একাডেমী বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট দেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি রাহেলা খাতুন গার্লস একাডেমীর ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন। অপর দিকে, সকাল সোয়া ৮টার দিকে বুজরুকগড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভাটকেন্দ্রে স্বস্ত্রীক ভোট প্রদান করেন ফ্রিজ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক।

চুয়াডাঙ্গা-১ ও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৮টা থেকেই বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। কয়েকটি কেন্দ্রে ধীরে ধীরে ভোটাররা আসতে শুরু করেন। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বেলা গড়ালেও ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক দেখা যায়নি। দুপুর পর্যন্ত অল্প সংখ্যক নারী ভোটারের লাইন চোখে পড়লেও কয়েকটি কেন্দ্র বাদে সব কেন্দ্রেই চোখে পড়ার মতো ভোটারদের লাইন দেখা যায়নি। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিলেন। টহলে স্ট্রাইকিং ফোর্স ও নির্বাহী এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

ভোটগণণা শেষে রাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা ফলাফল ঘোষণা করেন। সময় পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কবীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারগণ ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোতাওয়াক্কিল রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসরকারি ফলাফলে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৯৬ হাজার ২৬৬টি ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭৬৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক খান ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৯ হাজার ১৮০, এম এ শহিদুর রহমান পেয়েছেন ৯৫৮ ভোট, জাতীয় পার্টির মো. সোহরাব হোসেন পেয়েছেন ৫৭১ ভোট ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী পেয়েছেন ৫৪০ ভোট।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৩টি। বাতিল হয়েছে ৫ হাজার ৫৩৪টি। ভোট পড়েছে ৪৯ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন ছয়জন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির অ্যাড. সোহরাব হোসেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, এম এ রাজ্জাক খান, এম শহিদুর রহমান ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫৭৪ ভোট, এম এ রাজ্জাক খান পেয়েছেন ৩১ হাজার ৫০৮ ও দিলীপ কুমার আগরওয়ালা পেয়েছেন ২২ হাজার ৮২৯ ভোট। আলমডাঙ্গা উপজেলায় সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৬৯২ ভোট, দিলীপ কুমার আগরওয়ালা পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৩৯ ভোট ও এম এ রাজ্জাক খান পেয়েছেন ২৭ হাজার ৬৭২ ভোট।

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে আলী আজগার টগর ১ লাখ ৭ হাজার ৫৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসেম রেজা (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ৬০ হাজার ৮৩৪ ভোট। আর আওয়ামী লীগের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহারিয়ার মাহমুদ লণ্টু পেয়েছেন ২৯ হাজার ৭৫১ ভোট, জাকের পার্টির মো. আব্দুল লতিফ খান গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩ হাজার ২৭১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে মো. নুর হাকিম পেয়েছেন ২ হাজার ৬৫১টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল মল্লিক ফ্রিজ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮২৯টি, জাতীয় পার্টির মো. রবিউল ইসলাম পেয়েছেন ৭৭৮টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী আম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৩০টি ভোট ও জাসদের দেওয়ান মো. ইয়াছিন উল্লাহ মশাল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২১১ ভোট। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। মোট ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮০। ভোট পড়েছে ৪৬ শতাংশ। বৈধ ভোট পড়েছিল ২ লাখ ৫ হাজার ৮১৪টি। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৯টি।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করছিলেন। তবে জাতীয় পার্টি ও জাসদের (ইনু) প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। নির্বাচনে থাকা ৭ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলী আজগার টগর (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু (ঢেঁকি) ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য আবু হাশেম রেজার (ট্রাক), নুর হাকিম (ঈগল), জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক (ফ্রিজ), জেলা জাকের পার্টির সভাপতি আব্দুল লতিফ খান (গোলাপ ফুল) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহাসচিব ইদ্রিস চৌধুরী (আম)।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জীবননগর উপজেলায় জাসদের দেওয়ান মোহাম্মদ ইয়াছিন উল্লাহ (মশাল) পেয়েছেন ৬৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল মল্লিক (ফ্রিজ) ৫২৭, স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর্জা শাহরিয়ার মাহমুদ লণ্টু (ঢেঁকি) ১৪ হাজার ৬৫২, জাকের পার্টির আব্দুল লতিফ খান (গোলাপ ফুল) ৬৬৮, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু হাসেম রেজা (ট্রাক) ৮ হাজার ৬০৪, আওয়ামী লীগের আলী আজগার টগর (নৌকা) ৩৪ হাজার ৪১৭, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরী (আম) ১২৩, স্বতন্ত্র প্রার্থী নুর হাকিম (ঈগল) ৩০৭ ও জাতীয় পার্টির রবিউল ইসলাম (লাঙল) ৩৬৪ ভোট পেয়েছেন।
এর আগে, জেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে এবং নিরপেক্ষ করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসরা তৎপর রয়েছে। সকলের সহযোগিতায় ভোটের পরিবেশ সুন্দর ও সুষ্ঠু হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, ভোট শুরুর পর থেকে প্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুতই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা গেছে। সবমিলিয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করায় প্রার্থী, সমর্থক এবং ভোটারদের প্রতি ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ১৮১টি এবং চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৭৩টি। সব কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।