ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা, ভোটের মাঠে চুলচেরা বিশ্লেষণ

দ্বিমুখী লড়াইয়ে নৌকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৭৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। ভোটের প্রচার শেষে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোটার ও রাজনীতি সচেতন মহলের অভিমত, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে লড়াই হবে দ্বিমুখী। নৌকার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ঈগল প্রতীকের। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনজুড়ে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আলোচনা এখন মানুষের মুখে মুখে। প্রচার-প্রচারণা ও জনপ্রিয়তায় নৌকার প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ছয়জন প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন শেষ সময় পর্যন্ত। চুয়াডাঙ্গার অলি-গলি পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা গণসংযোগ, সমাবেশ, মিছিল, জনসভার সঙ্গে মাইকে প্রচার চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও এই আসনে প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক খান ও এম শহিদুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে দলের অসহযোগিতা ও উদাসীনতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম শহিদুর রহমান ট্রাক প্রতীক বরাদ্দ পেলেও তার পক্ষে খুব একটা প্রচার চোখে পড়েনি। একই অবস্থা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরীরও। তিনি আম প্রতীক নিয়ে লড়লেও নির্বাচনী এলাকায় তার গণসংযোগ চোখে পড়েনি।

সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বেশ কিছুদিন হলো বার্ধক্যসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। তারপরও ভোটে জিততে মরিয়া হয়েই প্রচার চালিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে মানবিক এই জননেতা চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। তিনি চষে বেড়িয়েছেন এই আসনের প্রতিটি এলাকা। দিলীপ কুমারের ঈগল প্রতীক এখন এই আসনটির ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাধারণ ভোটারদের মতে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ঈগল প্রতীক নিয়ে আলোচনাও ততই বাড়ছে। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

স্থানীয়রা বলছেন, বাকি প্রার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের সঙ্গে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার। ভোটাররা বলছেন, এই আসনে নৌকার প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মধ্যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা তারা নিজেরাই উপলব্ধি করছেন। এ কারণে এই আসনে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেখছেন অনেকেই। মানুষের মুখে মুখে এখন একই কথা, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে হয় নৌকা, না হয় ঈগল, দুটোর মধ্যে একটিই জয়লাভ করবে।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নির্বাচনের অন্যতম সমম্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে। আজকে (শুক্রবার) সারদিনই আমরা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। কালকে লিখিত অভিযোগ দেব। প্রকাশ্যে বিভিন্ন পণ্য, ডিটারজেন্ট পাউডার, অর্থ, মিষ্টি বিতরণ চলছে। সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করে ভোট টানার চেষ্টা চলছে। তারা যাই করুক না কেন, আমাদের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এই জনপদে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন। আমরা আশাবাদী, সাধারণ মানুষ নৌকা মার্কাতেই ভোট দিয়ে আগামী সাত তারিখে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করবেন।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কোনো পেশি শক্তির প্রভাব থাকবে না। আমরা যেটা জানি, প্রশাসনকে সরকারিভাবেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সবাই সবার ভোটধিকার ব্যবহার করতে পারবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে বিভিন্ন স্থানে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলীয় চেয়ারম্যানরা প্রভাব বিস্তার করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছেন। তারা সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছেন। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড আটকে রেখে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ফ্রিজের প্রার্থী ডিটারজেন্ট পাউডার, তেল, সাবান ব্যাপক হারে দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ট্রাকে করে ফ্রিজ নিয়ে গিয়ে দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমার উদাত্ত আহ্বান, টাকার কাছে নিজেদের ঈমান বিক্রি করবেন না। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা আগেও বিভক্তি করে এসছিল, এখনো তারা বিভক্তি করে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর কাছে আমার আহ্বান, বিভক্তি করবেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সেন্টার শুনতে পারছি ঝুকিপূর্ণ। বহু প্রিজাইডং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার আছে এমপি সাহেবের হাতে নিয়োগকৃত। আমি শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত এনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। বিশেষ করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা বেশিরভাগই ওনার হাতে নিয়োগ দেওয়া। বা ওনার সুপারিশে চাকরি দেওয়া। এবং আজকে যেভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে, যদি আজকের পরিবেশ কালকে অব্যহত থাকে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না।’

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, আমি দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার-আলমডাঙ্গাবাসীর জন্য করে যাচ্ছি। কিন্তু এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারি না। এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সকল ভাতার সুষ্ঠু বণ্টনে ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ এসব করতে লাগে ডিও লেটার, হতে হয় জনপ্রতিনিধি। তাই তো আমি সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে যেতে চাই। স্মার্ট ও স্বনির্ভর চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা গড়ার যে উদ্যোগ আমি নিয়েছি, তাতে জেলার সাধারণ মানুষষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, জেলায় ৩৫৪টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২০৫টি কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলায় সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৯৫ জন সেনা সদস্যসহ পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের মোট এক হাজার ১৪৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা হবে। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো আছে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ সময় তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে শেষ হয়েছে প্রচার-প্রচারণা, ভোটের মাঠে চুলচেরা বিশ্লেষণ

দ্বিমুখী লড়াইয়ে নৌকার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল

আপলোড টাইম : ০৪:০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারের সময় শেষ হয়েছে। ভোটের প্রচার শেষে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ভোটার ও রাজনীতি সচেতন মহলের অভিমত, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে লড়াই হবে দ্বিমুখী। নৌকার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ঈগল প্রতীকের। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনজুড়ে দ্বিমুখী লড়াইয়ের আলোচনা এখন মানুষের মুখে মুখে। প্রচার-প্রচারণা ও জনপ্রিয়তায় নৌকার প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের ছয়জন প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন শেষ সময় পর্যন্ত। চুয়াডাঙ্গার অলি-গলি পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা গণসংযোগ, সমাবেশ, মিছিল, জনসভার সঙ্গে মাইকে প্রচার চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও এই আসনে প্রার্থী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. ইদ্রিস চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগারওয়ালা, স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক খান ও এম শহিদুর রহমান। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে দলের অসহযোগিতা ও উদাসীনতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জন করেছেন। এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম শহিদুর রহমান ট্রাক প্রতীক বরাদ্দ পেলেও তার পক্ষে খুব একটা প্রচার চোখে পড়েনি। একই অবস্থা ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইদ্রিস চৌধুরীরও। তিনি আম প্রতীক নিয়ে লড়লেও নির্বাচনী এলাকায় তার গণসংযোগ চোখে পড়েনি।

সবমিলিয়ে ভোটের মাঠে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে টানা তিন মেয়াদের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। বেশ কিছুদিন হলো বার্ধক্যসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি। তারপরও ভোটে জিততে মরিয়া হয়েই প্রচার চালিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে অংশ নিয়ে মানবিক এই জননেতা চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বেশ সাড়া ফেলেছেন। তিনি চষে বেড়িয়েছেন এই আসনের প্রতিটি এলাকা। দিলীপ কুমারের ঈগল প্রতীক এখন এই আসনটির ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সাধারণ ভোটারদের মতে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ঈগল প্রতীক নিয়ে আলোচনাও ততই বাড়ছে। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী বলেও জানিয়েছেন দিলীপ কুমার আগরওয়ালা।

স্থানীয়রা বলছেন, বাকি প্রার্থীদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে মূল লড়াই হবে নৌকা প্রতীকের সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের সঙ্গে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার। ভোটাররা বলছেন, এই আসনে নৌকার প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার মধ্যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা তারা নিজেরাই উপলব্ধি করছেন। এ কারণে এই আসনে দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দেখছেন অনেকেই। মানুষের মুখে মুখে এখন একই কথা, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে হয় নৌকা, না হয় ঈগল, দুটোর মধ্যে একটিই জয়লাভ করবে।

চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের নির্বাচনের অন্যতম সমম্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বেশি দেখা যাচ্ছে। আজকে (শুক্রবার) সারদিনই আমরা জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। কালকে লিখিত অভিযোগ দেব। প্রকাশ্যে বিভিন্ন পণ্য, ডিটারজেন্ট পাউডার, অর্থ, মিষ্টি বিতরণ চলছে। সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করে ভোট টানার চেষ্টা চলছে। তারা যাই করুক না কেন, আমাদের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এই জনপদে দীর্ঘদিন রাজনীতি করছেন। আমরা আশাবাদী, সাধারণ মানুষ নৌকা মার্কাতেই ভোট দিয়ে আগামী সাত তারিখে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করবেন।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। কোনো পেশি শক্তির প্রভাব থাকবে না। আমরা যেটা জানি, প্রশাসনকে সরকারিভাবেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। সবাই সবার ভোটধিকার ব্যবহার করতে পারবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ঈগল প্রতীকের দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। তবে বিভিন্ন স্থানে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলীয় চেয়ারম্যানরা প্রভাব বিস্তার করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছেন। তারা সাধারণ ভোটারদের বিভ্রান্ত করার জন্য নানা রকম গুজব ছড়াচ্ছেন। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড আটকে রেখে সাধারণ ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এতে করে ভোটাররা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, ফ্রিজের প্রার্থী ডিটারজেন্ট পাউডার, তেল, সাবান ব্যাপক হারে দিয়ে বেড়াচ্ছেন। ট্রাকে করে ফ্রিজ নিয়ে গিয়ে দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমার উদাত্ত আহ্বান, টাকার কাছে নিজেদের ঈমান বিক্রি করবেন না। ধর্মের দোহাই দিয়ে যারা আগেও বিভক্তি করে এসছিল, এখনো তারা বিভক্তি করে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলাবাসীর কাছে আমার আহ্বান, বিভক্তি করবেন না।

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সেন্টার শুনতে পারছি ঝুকিপূর্ণ। বহু প্রিজাইডং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার আছে এমপি সাহেবের হাতে নিয়োগকৃত। আমি শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত এনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। বিশেষ করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসাররা বেশিরভাগই ওনার হাতে নিয়োগ দেওয়া। বা ওনার সুপারিশে চাকরি দেওয়া। এবং আজকে যেভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়েছে, যদি আজকের পরিবেশ কালকে অব্যহত থাকে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমি মনে করি না।’

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব, আমি দীর্ঘদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার-আলমডাঙ্গাবাসীর জন্য করে যাচ্ছি। কিন্তু এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারি না। এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারি না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সকল ভাতার সুষ্ঠু বণ্টনে ব্যবস্থা নিতে পারি না। কারণ এসব করতে লাগে ডিও লেটার, হতে হয় জনপ্রতিনিধি। তাই তো আমি সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন করার লক্ষ্যে মহান জাতীয় সংসদে যেতে চাই। স্মার্ট ও স্বনির্ভর চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা গড়ার যে উদ্যোগ আমি নিয়েছি, তাতে জেলার সাধারণ মানুষষের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ বলেন, জেলায় ৩৫৪টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ২০৫টি কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলায় সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৯৫ জন সেনা সদস্যসহ পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের মোট এক হাজার ১৪৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

জেলা রিটানিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশনা দিয়েছে, তার অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করা হবে। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো আছে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এ সময় তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।