ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কান্না যেন থামছেই না মায়ের, চান খুনের বদলে খুন

ছবি দেখে সন্দেহজনক আসামি ফটিককে শনাক্ত, ছেলেকে হত্যা করতে বললেন ফটিকের মা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১৯:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে শিশু ময়িরমকে ধর্ষণের পর হত্যার হত্যার ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে জড়িত সন্দেহে আবুল হোসেন ফটিক (৩০) নামের এক যুবককে শনাক্ত করেছে তারা। ছবি দেখে ফটিককে শনাক্ত করেছে মরিয়মের সঙ্গে ঘটনার দিন মাঠে শাক তুলতে যাওয়া শিশু সিনহা ও আসিয়া। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পলাতক রয়েছে ফটিক।
শিশু ময়িরম হত্যার বিষয়ে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘আসামিকে আটক করতে পুলিশ কাজ করছে। মরিয়মের সঙ্গে যে শিশুরা মাঠে শাক তুলতে গিয়েছিল, তাদের দেওয়া বর্ণনা ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আমরা তাকে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করছি। তাকে আটকের পর সে এই ঘটনায় জড়িত কি না, জানা যাবে।’
এদিকে, নিজের ছেলের ফাঁসির দাবি করেছেন ফটিকের মা। তিনি বলেন, ‘এর আগে গ্রামের এক ঘটনায় ফটিক ১০ বছর জেলে ছিল। ৮-৯ মাস আগে জেল থেকে সে ছাড়া পেয়েছে। গ্রামের লোকজন তখন বলছিল, ছেলের বিয়ে দাও। গত রোজার মাসে ফটিকের বিয়ে দিয়েছিলাম। তবে এক মাসের মধ্যে বউ তালাক নিয়ে চলে গেছে।’ ফটিকের মা বলেন, ‘এমন কাজ করেছে বাবা, আপনারা পেলে তাঁকে হত্যা করে দিবেন। তাঁর ওপর আমার দায় নেই। আমি আমার বাকি দুই সন্তান নিয়েই বেঁচে থাকব।’
শিশু মরিয়মের সঙ্গে মাঠে শাক তুলতে যাওয়া শিশুরা জানায়, ঘটনার আগের দিন তারা মাঠে খড়ি (লাকড়ি) কুড়াচ্ছিল। ওই দিন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি তাদের কিছু বলেনি। পরদিন আবার মাঠে শাক তুলতে গেলে ওই ব্যক্তি ইন্তাজের স্কুলের পাশ থেকে তাদের শাক তুলে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে শাক তোলার একপর্যায়ে শাক রেখে আসার জন্য ময়িরম উঠে পড়ে। এরপর আর ময়িরমকে খুঁজে পায়নি তারা।
শিশুরা আরও জানায়, বেশ কিছু সময় পর ওই ব্যক্তি ভুট্টা খেত থেকে বের হয়। ওই ব্যক্তি ভুট্টা খেতে ঢোকার সময় তার হাতের হাসুয়া চকচকে ছিল। কিন্তু বের হওয়ার পর সেটিতে কালো রঙের ছোপ-ছোপ দাগ ছিল। পরে ওই ব্যক্তি লাল-হলুদ রঙের ভ্যানে করে চলে যায়।
নিহত শিশুর ময়িরমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঝিকে (মেয়ে) খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। হত্যার করার আগে খারাপ কাজ করেছে। বাধা দেওয়ায় আমার মেয়ের পা-হাত ভেঙে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। আমার মেয়ের পায়ের স্যান্ডেল তাই কিনে দিতে পারিনি। আমার মেয়ে যে প্যান্ট পরে মাঠে গিয়েছিল, সেটাও লোকে দান করেছে। আমি মেয়েকে কিছুই দিতে পারিনি। আমি খুনের বিচার চাই।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যাবে।’ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭-৮ জনকে থানায় আনা হয়েছিল। তবে তাদের সঙ্গে এর সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তাই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গোয়ালপাড়া দক্ষিণ নতুন মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা ইকবাল মণ্ডলের মেয়ে ময়িরমের (১১) গলাকাটা মরদেহ ভুট্টা খেত থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২২ ডিসেম্বর ইকবাল মণ্ডল বাদী হয়ে জীবননগর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কান্না যেন থামছেই না মায়ের, চান খুনের বদলে খুন

ছবি দেখে সন্দেহজনক আসামি ফটিককে শনাক্ত, ছেলেকে হত্যা করতে বললেন ফটিকের মা

আপলোড টাইম : ১২:১৯:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩

জীবননগর অফিস:
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে শিশু ময়িরমকে ধর্ষণের পর হত্যার হত্যার ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে জড়িত সন্দেহে আবুল হোসেন ফটিক (৩০) নামের এক যুবককে শনাক্ত করেছে তারা। ছবি দেখে ফটিককে শনাক্ত করেছে মরিয়মের সঙ্গে ঘটনার দিন মাঠে শাক তুলতে যাওয়া শিশু সিনহা ও আসিয়া। তবে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পলাতক রয়েছে ফটিক।
শিশু ময়িরম হত্যার বিষয়ে জীবননগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, ‘আসামিকে আটক করতে পুলিশ কাজ করছে। মরিয়মের সঙ্গে যে শিশুরা মাঠে শাক তুলতে গিয়েছিল, তাদের দেওয়া বর্ণনা ও বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকের বর্ণনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আমরা তাকে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করছি। তাকে আটকের পর সে এই ঘটনায় জড়িত কি না, জানা যাবে।’
এদিকে, নিজের ছেলের ফাঁসির দাবি করেছেন ফটিকের মা। তিনি বলেন, ‘এর আগে গ্রামের এক ঘটনায় ফটিক ১০ বছর জেলে ছিল। ৮-৯ মাস আগে জেল থেকে সে ছাড়া পেয়েছে। গ্রামের লোকজন তখন বলছিল, ছেলের বিয়ে দাও। গত রোজার মাসে ফটিকের বিয়ে দিয়েছিলাম। তবে এক মাসের মধ্যে বউ তালাক নিয়ে চলে গেছে।’ ফটিকের মা বলেন, ‘এমন কাজ করেছে বাবা, আপনারা পেলে তাঁকে হত্যা করে দিবেন। তাঁর ওপর আমার দায় নেই। আমি আমার বাকি দুই সন্তান নিয়েই বেঁচে থাকব।’
শিশু মরিয়মের সঙ্গে মাঠে শাক তুলতে যাওয়া শিশুরা জানায়, ঘটনার আগের দিন তারা মাঠে খড়ি (লাকড়ি) কুড়াচ্ছিল। ওই দিন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি তাদের কিছু বলেনি। পরদিন আবার মাঠে শাক তুলতে গেলে ওই ব্যক্তি ইন্তাজের স্কুলের পাশ থেকে তাদের শাক তুলে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে শাক তোলার একপর্যায়ে শাক রেখে আসার জন্য ময়িরম উঠে পড়ে। এরপর আর ময়িরমকে খুঁজে পায়নি তারা।
শিশুরা আরও জানায়, বেশ কিছু সময় পর ওই ব্যক্তি ভুট্টা খেত থেকে বের হয়। ওই ব্যক্তি ভুট্টা খেতে ঢোকার সময় তার হাতের হাসুয়া চকচকে ছিল। কিন্তু বের হওয়ার পর সেটিতে কালো রঙের ছোপ-ছোপ দাগ ছিল। পরে ওই ব্যক্তি লাল-হলুদ রঙের ভ্যানে করে চলে যায়।
নিহত শিশুর ময়িরমের মা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ঝিকে (মেয়ে) খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে। হত্যার করার আগে খারাপ কাজ করেছে। বাধা দেওয়ায় আমার মেয়ের পা-হাত ভেঙে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। আমার মেয়ের পায়ের স্যান্ডেল তাই কিনে দিতে পারিনি। আমার মেয়ে যে প্যান্ট পরে মাঠে গিয়েছিল, সেটাও লোকে দান করেছে। আমি মেয়েকে কিছুই দিতে পারিনি। আমি খুনের বিচার চাই।’
জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে হত্যার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি ডাক্তারি পরীক্ষার পর জানা যাবে।’ এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭-৮ জনকে থানায় আনা হয়েছিল। তবে তাদের সঙ্গে এর সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। তাই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার গোয়ালপাড়া দক্ষিণ নতুন মসজিদ পাড়ার বাসিন্দা ইকবাল মণ্ডলের মেয়ে ময়িরমের (১১) গলাকাটা মরদেহ ভুট্টা খেত থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২২ ডিসেম্বর ইকবাল মণ্ডল বাদী হয়ে জীবননগর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।